Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্পাইডারম্যান হোমকামিং: ঘরের ছেলের ঘরে ফেরা

তৃতীয়বারের মতো রিবুট হওয়া পিটার পার্কারের কাহিনী এবার দেখা গেলো মার্ভেলের নিজের পর্দায়। প্রথমে টবি ম্যাগুইরের যুবক স্পাইডারম্যান, এরপর অ্যান্ড্রু গারফিল্ডের অপেক্ষাকৃত তরুণ ভার্শন এবং সবশেষে রূপালি পর্দায় এখন শোভা পাচ্ছে টম হল্যান্ডের কমবয়সী স্পাইডারম্যান, ঠিক যেমনটা কিনা কমিক বইতে দেখা যায়। তো, কেমন ছিল এবারের মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের স্পাইডারম্যান?

স্পাইডারম্যান হোমকামিং ছবির পোস্টার; source: Wikimedia Commons

২০০২ সালে সনি স্টুডিও টবি ম্যাগুইরে অভিনীত স্পাইডারম্যান মুক্তি দেয়, এবং সেটি প্রচণ্ড ব্যবসাসফল একটি মুভি হয়ে দাঁড়ায়। সেই ছবিতে নায়িকা এমজের চরিত্রে ছিলেন Kirsten Dunst; পরপর তিনটি ছবিতে তারা ছিলেন জুটিবদ্ধ। যদিও সবগুলো মুভির সাফল্য এক কাতারে ছিল না। মারভেল কমিক্সের চরিত্র হলেও স্বত্ব সনি কিনে নেওয়ায় লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছিল তারা অনেক। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, একটি নতুন প্রজন্মের কাছে স্পাইডারম্যান হিসেবে স্থায়ীভাবে মনে দাগ কেটে দেন টবি। তার সময় ভিলেন ছিল গ্রিন গবলিন, ডক্টর অক্টোপাস এবং ভেনম। এ সিরিজের পরিচালক ছিলেন Sam Raimi।

স্পাইডারম্যান-১ ছবির পোস্টার; source: Wikimedia Commons

২০১২তে এসে সনি স্টুডিও জোরেশোরে আবার রিবুট করে বসলো এই দর্শকপ্রিয় সিরিজটিকে, প্রযোজনায় ছিল Columbia Pictures আর Marvel Entertainment। এবার পালা অ্যান্ড্রু গারফিল্ডের, নাম হলো The Amazing Spider-Man। টবির চেয়ে ‘দেখতে’ বয়স কম বলে হয়তো কমিকের কাছাকাছি বয়স মানিয়ে যেত, কিন্তু তা-ও অনেকে মানতে পারলেন না। মুভিতে মিডটাউন সায়েন্স হাই স্কুলের টিনেজার পিটার পার্কার। রিবুটের ফলস্বরূপ আমাদের আবারও দেখতে হলো আংকেল বেনের মারা যাবার দৃশ্য। আর আন্ট মে এর বয়স গেল কমে, এবারে নায়িকা হলেন এমা স্টোন। তবে যতই সমালোচনার মুখোমুখি হোক না কেন, এই ছবিটি কিন্তু ব্যবসাসফল হয়ে সে বছরের সেরা সাত সর্বোচ্চ আয়কারী মুভির তালিকায় ঢুকে পড়ে, ঘরে আনে পৌনে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার! এই মুভির ভিলেন ছিল লিজার্ড।

স্পাইডারম্যান-২ ছবির পোস্টার; source: Wikimedia Commons

এই মুভির সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে দু’বছর বাদে ২০১৪ সালের মে মাসে মুক্তি দেওয়া হয় The Amazing Spider-Man 2; সেই একই অভিনেতা অভিনেত্রীরাই থাকলেন। এবার ভিলেন হয় জেমি ফক্সের ইলেক্ট্রো। আগের চেয়ে একটু কম আয় করলেও, বক্স অফিসে কিন্তু ধ্বসের সম্মুখীন হয়নি এই ছবিটি। কিন্তু অবশ্যই যতটা আশা করা হয়েছিল, সেটা পূরণ হয়নি। এই মুভিটি বানাবার সময় মাথায় ছিল যে, এবার থেকে একটি শেয়ারড ফিকশনাল ইউনিভার্স থাকবে, আরো দুটো সিকুয়েল আসবে এবং স্পিনঅফ মুভিও। কিন্তু কীসের কী! সব ক্যান্সেল করে দেওয়া হলো। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলো, অর্থাৎ মারভেল স্টুডিওতে। এবার নাটের গুরু মারভেল, যদিও সনির নাম এখনো আছে।

স্পাইডারম্যান-৩ ছবির পোস্টার; source: Wikimedia Commons

২০১৫ সালে স্পাইডারম্যান চরিত্রটি শেয়ার করবার ব্যাপারে চুক্তি হয় সনি আর মারভেলের মাঝে। অভিনেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয় টম হল্যান্ডকে। তারা চেষ্টা করলেন যেন এবারের মুভিটি আগেরগুলো থেকে আলাদা হয়। মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের আগের মুভিগুলোর (বিশেষ করে অ্যাভেঞ্জার্স ২) ধারাবাহিকতায় এই স্ট্যান্ড-এলোন ফিল্ম বানানো হয়। নাম দেওয়া হয় স্পাইডার-ম্যান: হোমকামিং

দ্য অ্যামেইজিং স্পাইডারম্যান ছবির পোস্টার; source: Wikimedia Commons

একসময়ের ডিসি কমিক্সের ব্যাটম্যান আর পরবর্তীতে বার্ডম্যানখ্যাত Michael Keaton হাজির হলেন ভিলেন হিসেবে। কিন্তু এর আগে তো গ্রিন গবলিন, অক্টোপাস, ভেনম, ইলেক্ট্রো ও লিজার্ড চিত্রায়িত হয়ে গেছে! তবে কি নতুন মুভি সিরিজের প্রথম পর্বেই পুরনো এক ভিলেনকে আনা হবে? আনা কিন্তু যেত, ভবিষ্যতে আসবেও, কিন্তু প্রথম মুভি হিসেবে তারা বেছে নিলেন ভিলেন ভালচারকে। তবে আংকেল বেনের মৃত্যু দেখানো বাদ দিয়ে দেওয়া হলো, আর হ্যাঁ, আন্ট মে এর বয়স আরো কমে গেল।

আয়রনম্যান টনি স্টার্কের অভিভাবকসুলভ আচরণের কারণে মিডটাউন স্কুল অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজির ১৫ বছর বয়সী ছাত্র পিটার পার্কার একজন পুরোপুরি অ্যাভেঞ্জার হতে পারে না, এই নিয়ে তার মনে অনেক দুঃখ। নিজেকে তার প্রমাণ করতেই হবে। এই মুভির অন্যতম একটি আকর্ষণ হলো স্পাইডারম্যানের কস্টিউম বা স্যুটটি, যাতে রয়েছে স্টার্কের দেয়া অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তি। ওদিকে এলিয়েন শিপের ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধারের কাজে নিযুক্ত অ্যাড্রিয়ান টুমস চাকরি খোয়াবার পর নবউদ্যমে একজন অ্যান্টি-অ্যাভেঞ্জার হয়ে ওঠে। কাহিনী এগোনোর সাথে সাথে স্পাইডারম্যান হয়ে দাঁড়ায় তার পথের কাঁটা। পিটার পার্কারই যে স্পাইডারম্যান, সেটা কি সে জানতে পারবে? পিটার কি পারবে নিজেকে প্রমাণ করতে একজন যোগ্য অ্যাভেঞ্জার হিসেবে?

দ্য অ্যামেইজিং স্পাইডারম্যান-২ ছবির পোস্টার; source: Wikimedia Commons

এই মুভিতে প্রথমে পরিকল্পনা ছিল যে, পিটার পার্কারের মেন্টর হিসেবে স্যামুয়েল জ্যাকসন অভিনীত নিক ফিউরি স্বয়ং থাকবেন, কিন্তু পরে এই রোলে আয়রন ম্যানকে ঠিক করা হয়। Sam Raimi-র ট্রিলজিতে অভিনয় করা জে কে সিমন্স ফিরে আসতে চেয়েছিলেন এখানেও, কিন্তু তিনি কমিশনার জিম গর্ডন হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যান ডিসি কমিক্সের জাস্টিস লিগ মুভিতে।

১৫ বছরের পিটার পার্কারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১৯/২০ বছর বয়সের টম হল্যান্ড। তা-ও ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে পেরেছেন। তিনি অভ্যাস ফিরে পাবার জন্য নিউ ইয়র্কের Bronx High School of Science-এ কিছুদিন ক্লাস করেছিলেন। এখানে বলা দরকার, টবি ম্যাগুইরের বয়স ছিল ২৫ যখন তিনি স্পাইডারম্যান হন, আর অ্যান্ড্রু গারফিল্ডের বয়স ছিল ২৬। তারপরও গারফিল্ডকে অপেক্ষাকৃত কমবয়সী লাগত। আর, এই মুভিতে অষ্টমবারের মতন টনি স্টার্ক চরিত্রে অভিনয় করলেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র।

স্পাইডারম্যান হিসেবে টম হল্যান্ড; source: Wikimedia Commons

স্পাইডারম্যান চরিত্রটি প্রথম মুক্তি পায় Amazing Fantasy-র আগস্ট 1962 ইস্যুতে। মিডটাউন স্কুল অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির প্রতিষ্ঠার বছর মুভিতে দেখানো হয়েছে ১৯৬২, যেটা কিনা এই তথ্যের প্রতিই প্রচ্ছন্ন একটি ইঙ্গিত! তাছাড়া আন্ট মে এর গাড়ির নাম্বার দেখানো হয়েছে, AMF-1562; AMF হলো Amazing Fantasy; ১৫ হলো ইস্যু নাম্বার, আর ৬২ হলো ‘৬২ সাল!

স্পাইডারম্যান হিসেবে যথাক্রমে টবি ম্যাগুইরে এবং অ্যান্ড্রু গারফিল্ড; source: Wikimedia Commons

এই মুভিটি মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের ফেজ ৩ এর চ্যাপ্টার ৪। এখানে দেখানো হয়নি কীভাবে পিটার স্পাইডারম্যান হলো, বরং সে ইতোমধ্যে স্পাইডারম্যান হয়ে গেছে, এভাবেই মুভিটি শুরু হয়েছে। মুভির কোনো জায়গাতেই Oscorp এর কথা বলা হয়নি, যেটা কিনা আগের দুই সিরিজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

ট্রেলারে দেখা যায় যে, স্পাইডারম্যান একটি এটিএম বুথ ডাকাতি থামাচ্ছে। ডাকাতিটি দেখবার আগে পিটার যখন দেখছিল তাকিয়ে, তখন তার পেছনের বিল্ডিংয়ে স্প্রে করে লেখা ছিল BAGLEY, যা কিনা আসলে Amazing Spider-Man আর Ultimate Spider-Man কমিক বই এর আর্টিস্ট Mark Bagley এর প্রতি ইঙ্গিত।

এই মুভির স্পেশাল ইফেক্ট যে অসাধারণ, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। অসাধারণ গ্রাফিক্সের সাথে আছে মানানসই সাউন্ডট্র্যাক। আর স্পাইডারম্যান চরিত্রের জন্য যেমনটা কৌতুক দরকার ছিল, তা তো আছেই। তবে কাহিনী এটাই শ্রেষ্ঠ, নাকি এর চেয়ে আরো ভালো হতে পারত, সেটি বিতর্কসাপেক্ষ বিষয়।

তবে সবকিছু এক পাশে রেখে বলতে হয়, ছবিটি ব্যবসাসফল হয়েছে। আইএমডিবি রেটিংয়ে দেখা যাচ্ছে, ১০ এ পেয়েছে ৭.৮; আর রটেন টমেটোজ বলছে ৯২% স্কোর! আপনি যদি কমিক্সের ফ্যান হয়ে থাকেন, তবে এখনো দেখে না থাকলে মুভিটি অতি অবশ্যই আপনার ওয়াচলিস্টে রাখতে হবে, যত শীঘ্রই সম্ভব দেখে ফেলুন!

ফিচার ইমেজ- WallpaperSite

Related Articles