Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্টার ওয়ার্স: দ্য লাস্ট জেডাই; মন কেড়ে নেয়া এক সিকুয়েল

“A long time ago in a galaxy far, far away….” কথাটা দিয়ে শুরু হওয়া সেই অনবদ্য মুভি সিরিজ, যার মধ্য দিয়ে “May the Force be with you” কথাটি হয়ে যায় তুমুল জনপ্রিয়! বলছি স্টার ওয়ার্স সিরিজের কথাই। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া সিরিজের অষ্টম পর্বের ধ্রুবদী প্রশংসার বন্যার চলছে। ‘দ্য লাস্ট জেডাই’ ছবির নানা কথা নিয়েই আজকের আয়োজন।

কাইলো রেন; ছবি: Wallpaper Abyss – Alpha Coders

১৯৭৭ সালে প্রথম স্টার ওয়ার্স চলচ্চিত্র নিয়ে হলিউডের পর্দায় আসেন জর্জ লুকাস। মুক্তির সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে নন্দিত হয় মুভিটি। সাফল্য পাবার পর ১৯৮০ সালে পরবর্তী ছবি ‘দ্য এম্পায়ার স্ট্রাইকস ব্যাক’ এবং ট্রিলজির শেষ ছবি ১৯৮৩ সালে ‘রিটার্ন অফ দ্য জেডাই’ মুক্তি পায়।

এরকম বড় সফলতার পর সিরিজে আরো ছবি মুক্তি পাবে এটা আশা করাই স্বাভাবিক। জর্জ লুকাস নিজেও তাই চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৮৭ সালে ডিভোর্সের মধ্য দিয়ে যাওয়া লুকাস নিজের সম্পত্তির একটা বিশাল অংশ হারিয়ে ফেলবার পর মূল ট্রিলজির সিকুয়েল সিরিজ নিয়ে হাজির হবার আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলেন।

বেশ কয়েক বছর পর নব্বইয়ের দশকে স্টার ওয়ার্সের জনপ্রিয়তা এবং কম্পিউটার গ্রাফিক্সের ব্যাপক উন্নতি খেয়াল করে জর্জ লুকাস আবার ফিরে আসেন; এবার তার লক্ষ্য একটি প্রিকুয়েল ট্রিলজি, অর্থাৎ মূল ট্রিলজির আগের কাহিনী দেখানো হবে। মূল ছবিগুলোতে ডার্থ ভেডার, লুক স্কাইওয়াকার, লিয়া স্কাইওয়াকার ও হান সলোর অ্যাডভেঞ্চার ছিল, কিন্তু প্রিকুয়েলে দেখানো হয় কীভাবে শিশু অ্যানাকিন স্কাইওয়াকার এত বড় ভিলেইন ডার্থ ভেডার হলো।

লুক স্কাইওয়াকার চরিত্রে মার্ক হ্যামিল; সূত্র: IMDb

প্রিকুয়েল ট্রিলজির প্রথম ছবি ‘দ্য ফ্যান্টম মিনেস’ ১৯৯৯ সালের ১৯ মে মুক্তি পায়। এরপরের পর্ব ‘অ্যাটাক অফ দ্য ক্লোনস’ ২০০২ সালের ১৬ মে এবং শেষ পর্ব ‘রিভেঞ্জ অফ দ্য সিথ’ বের হয় ২০০৫ সালের ১৯ মে। এ প্রিকুয়েল সিরিজ বের হবার কারণে এ ছবিগুলোর পর্ব নং যথাক্রমে এপিজোড এক, দুই আর তিন হয়ে যায়। আর ১৯৭৭ সালে শুরু হওয়া মূল মুভিগুলোর ক্রমিক হয় এপিজোড চার, পাঁচ ও ছয়! সর্বপ্রথম মুভির নাম তখন দাঁড়ায় ‘অ্যা নিউ হোপ’। পরবর্তীতে পুরনো মুভিগুলো নতুন করে গ্রাফিক্স ঢেলে সাজিয়ে মুক্তি দেয়া হয়।

লিয়া স্কাইওয়াকার চরিত্রে ক্যারি ফিশার; সূত্র: IMDb

এবার বর্তমানে চলা ট্রিলজির কথা বলবার পালা। ২০১২ সালের শেষ দিকে এসে ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি কিনে নেয় ‘লুকাসফিল্ম’-কে এবং তখনই তারা ঘোষণা দেয় যে সিকুয়েল ট্রিলজি আসছে। নতুন সিরিজের প্রথম ছবির নাম রাখা হয় ‘দ্য ফোর্স অ্যাওয়েকেনস’, ক্রমিকের হিসেবে সেটি এপিসোড সাত। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পায় ছবিটি। ফিরে আসেন মার্ক হ্যামিল (লুক স্কাইওয়াকার), হ্যারিসন ফোর্ড (হান সলো), ক্যারি হিশার (লিয়া স্কাইওয়াকার) এবংপরিচালক রায়ান জনসন।

আর দ্বিতীয় ছবি এপিসোড আট ‘দ্য লাস্ট জেডাই’, যার নামে আজকের লেখার শিরোনাম, সেটি মুক্তি পায় ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর। আর পরের ছবিটি মুক্তি পাবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে।

অনেক সময়ই আশংকা করা হয়, একটি সিকুয়েল ছবি আগের ছবির চাইতে ভালো করবে না। এ আশংকায় গুঁড়ে বালি দিয়ে লাস্ট জেডাই জয় করে নিয়েছে দর্শকদের মন। উদ্বোধনী দিনেই ৪৫১ মিলিয়ন ডলার কামিয়ে নেয় ছবিটি বিশ্বজুড়ে, অর্থের তালিকায় এটি এক লাফে পঞ্চম স্থানে! এর আগে রয়েছে কেবল দ্য ফেইট অফ দ্য ফিউরিয়াস (২০১৭), স্টার ওয়ার্স: দ্য ফোর্স অ্যাওয়েকেনস (২০১৫), জুরাসিক ওয়ার্ল্ড (২০১৫) এবং হ্যারি পটার এন্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজ – পার্ট ২ (২০১১)। অর্থাৎ সিরিজের আগের ছবিটি ‘লাস্ট জেডাই’ এর তুলনায় বেশি আয় করেছিল প্রথম দিন।

রোবট BB8; সূত্রঃ IMDb

মুভিটির গ্রাফিক্সের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেই, দুর্দান্ত সব স্পেশাল ইফেক্ট আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দিতে বাধ্য। মিউজিক বা ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরে যেমন আগের ছবিগুলোর পরিচিত সুরগুলো আছে, তেমনই নতুনগুলোও অসাধারণ; জন উইলিয়ামসের কাজ কি কখনো খারাপ হতে পারে? কাহিনীর বিষয়ে বলতে গেলে- দর্শক পরতে পরতে চমকের সম্মুখীন হবেন। আর অভিনয়? রে স্কাইওয়াকার চরিত্রে ডেইজি রিডলি, লুক ও লিয়া স্কাইওয়াকারের চরিত্রে যথাক্রমে মার্ক হ্যামিল ও ক্যারি ফিশারের অভিনয় নিয়ে তো কথাই হবে না। এছাড়াও ভিলেন স্নোকের জায়গায় অ্যান্ডি সার্কিস সবসময়ের মতোই সিজিআই চরিত্রে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। তবে ক্যারি ফিশারের অকাল মৃত্যু কেউ আশা করেনি বিধায় তার অভিনীত অংশগুলোর জন্য আলাদা আবেগ কাজ করে। এমনকি অন্য সকল চরিত্রের বেলায় যা-ই করা হোক না কেন, ক্যারি ফিশার (লিয়া) এর অভিনীত কোনো দৃশ্যই বাদ দেয়া হয়নি মুভিটি থেকে।

রে স্কাইওয়াকার চরিত্রে ডেইজি রিডলি; সূত্র: IMDb

স্ক্রিপ্ট পড়বার পর পরিচালককে মার্ক হ্যামিল (লুক) বলেছিলেন, “আমি মোটামুটি এই লুক চরিত্রের যা যা এ মুভিতে আপনি রেখেছেন সবগুলোরই বিরোধিতা করি। তা-ও, আপনি যেভাবে লুককে দেখতে চান, সেভাবেই আমি অভিনয় করে ফুটিয়ে তুলব।” BAFTA স্ক্রিনিং এর সময় জানানো হয় যে, মার্ক হ্যামিল দাবি করেছিলেন তিনি সিজিআই চরিত্র করতে চান কারণ তিনি আগেও করেছিলেন। (যে চরিত্রগুলো বাস্তবে নেই, কম্পিউটার দিয়ে বানিয়ে নিতে হয় গ্রাফিক্সের কাজ করে) আসলে কিন্তু তিনি আগে এরকম কাজ করেননি! তা-ও তাকে এ মুভিতে দেয়া হয় কাজটি। ছবিতে ক্যাসিনোতে BB8 রোবটটির ভেতরে যে অদ্ভুত এলিয়েন চরিত্রটি টাকা ঢুকাবার চেষ্টা করছিলো সেটি কিন্তু মার্ক হ্যামিলই (লুক) ছিলেন! স্টার ওয়ার্স সিরিজের সবগুলো ছবিতে থাকা অভিনেতা একজনই আছেন, আর তিনি C-3PO রোবটের চরিত্রে, নাম তার অ্যান্থনি ড্যানিয়েলস

অ্যান্থনি ড্যানিয়েলস; সূত্র: Screen Rant

যে দ্বীপে লুক স্কাইওয়াকারকে (মার্ক) দেখা যায় রে-কে ট্রেনিং দিচ্ছেন, সেখানে রে এর চরিত্রে অভিনয় করা ডেইজি নিজের বাবাকে নিয়ে যান শুটিং স্পট দেখিয়ে আনবার জন্য। সেটি ছিল আয়ারল্যান্ডে। তার বাবা মার্ক হ্যামিলের সাথে দেখা হবার পর জিজ্ঞেস করেন, “তো আপনি কোন চরিত্র করছেন?” কথাটা তিনি কৌতুক করে বলেছিলেন কিনা জানা যায়নি বটে! ডেইজিকে নিয়ে একটা কথা না বললেই নয়, ছবিতে যে লাইটসেবার মারামারি থাকে সে মুভগুলো শিখতেই তিন দিন লেগে যাওয়ার কথা, কিন্তু সেগুলো ডেইজি মাত্র দেড় ঘণ্টায় শিখে ফেলেন!

কাইলো রেন চরিত্রে অ্যাডাম ড্রাইভার; সূত্র: IMDb

মুভিতে স্টর্মট্রুপার হিসেবে এক জায়গায় ক্যামিও দিয়েছেন ব্রিটিশ যুবরাজ হ্যারি আর উইলিয়াম! তারা সেটে এলে, ডেইজি রিডলি পুরো পাইনউড স্টুডিও ঘুরিয়ে দেখান। তাছাড়া টম হার্ডিও অভিনয় করেছেন একজন স্টর্মট্রুপার হিসেবে।

গেম অফ থ্রোন্সের ব্রিয়েন অফ টার্থ খ্যাত গোয়েন্ডোলাইন ক্রিস্টি আছেন এই চরিত্রে; সূত্র: IMDb

ডাইরেক্টর্স কাট মুভিটি তিন ঘন্টারও বেশি দীর্ঘ ছিল। কিন্তু হলে দেখাবার জন্য ভার্শনটি মাত্র ১৫২ মিনিট অর্থাৎ আড়াই ঘণ্টা। প্রায় ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা বাদ দেয়া হয়। অবশ্য, তা-ও এটি সিরিজের দীর্ঘতম মুভি। আইএমডিবিতে ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত রেটিং ৭.৮/১০, মেটাক্রিটিকে ৮৬% আর রটেন টমেটোজে ৯৩%; তবে অডিয়েন্স স্কোর সেখানে মাত্র ৫৫%। ক্যারি ফিশারের অভিনয় করে যাওয়া শেষ মুভি এটি। যদিও ক্যারির পরিবার তার সাম্প্রতিক ফুটেজগুলো পরের ছবিতে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুমতি দিয়েছে, তারপরেও তার কোনো উপস্থিতি পরের ফিল্মে থাকবে না বলেই জানানো হয়েছে। দেখা যাক তবে, কেমন হয় পরবর্তী পর্বগুলো। স্টার ওয়ার্স কি পারবে তার সুখ্যাতি বজায় রেখে আরো ভালো মুভি বের করতে?

ফিচার ইমেজ: BoomArt16 – DeviantArt

Related Articles