Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দুঃস্বপ্নের কথা

দুঃস্বপ্ন আমরা সবাই কমবেশি দেখে থাকি। দুঃস্বপ্নের দু’টি রকমফের আছে। আলোচনার সুবিধার্থে এই লেখায় ব্যাড ড্রিম এবং নাইটমেয়ার শব্দ দু’টি ব্যবহার করা হবে। ব্যাড ড্রিম বলতে সাধারণত বোঝানো হয়ে থাকে কোনো স্বপ্ন যদি দুশ্চিন্তা, ভয়, আতঙ্ক ইত্যাদি অনুভূতির জন্ম দেয়। দুঃস্বপ্নের অনুভূতির তীব্রতা যদি অত্যধিক হয় এবং ব্যক্তি যদি দিনের পর দিন দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন, তাহলে সেটিকে ব্যাড ড্রিম না বলে নাইটমেয়ার বলা হয়ে থাকে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে ব্যাড ড্রিম খুব আহামরি প্রভাব না ফেললেও নাইটমেয়ার অবশ্যই দুশ্চিন্তার কারণ।

প্রত্যেক ব্যক্তিই কমবেশি ব্যাড ড্রিম দেখে থাকেন; Image Source:BBC

করোনা মহামারির কারণে পৃথিবীব্যাপী সবাই এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী- এমন কোনো পেশার মানুষ নেই, যারা সমগ্র জীবনযাত্রায় অন্তত একবারের জন্য খেই হারিয়ে ফেলেননি করোনার ধাক্কায়। সম্মুখসারিতে যারা কর্মরত ছিলেন, তাদের অভিজ্ঞতাটা একেবারেই আলাদা। মানুষের ঘুম, মানসিক অবস্থা, দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক, অবসাদ, ট্রমা, স্বপ্ন নিয়ে গবেষণাকারীরা অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করলেন যে, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট অবস্থার কারণে মানুষের ব্যাড ড্রিম দেখার প্রবণতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এর মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে যারা নিজেরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা তুলনামূলক বেশি ব্যাড ড্রিম দেখেছিলেন। এর পাশাপাশি যেসব দেশে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কঠোরভাবে লকডাউন আরোপ করা হয়েছিল সেখানকার নাগরিকরা অধিক ব্যাড ড্রিম দেখেছিলেন। প্রথমবারের মতো লকডাউনের মাঝে থাকা, প্রিয়জনের স্পর্শের অভাব, স্বজন হারানোর বেদনা, আর্থিক সংকট ইত্যাদি নানা কিছু একইসাথে এসে পড়ায় মানুষের মস্তিষ্ক দিশেহারা অবস্থায় উপনীত হতে বাধ্য হয়। ফলাফল হিসেবে একের পর এক ব্যাড ড্রিম কিংবা ব্যক্তিবিশেষে নাইটমেয়ার।

আবেগেপূর্ণ স্বপ্নগুলো হতে পারে আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার পদক্ষেপ; Image Source: BBC

২০১৯ সালে চীনে প্রথমবারের মতো করোনা পজিটিভ ব্যক্তির খবর বেরোনোর পর উহানের ফুজিয়ান প্রদেশে সর্বমোট ১১৪ জন চিকিৎসক এবং ৪১৪ জন নার্স কর্মরত ছিলেন। এদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি জরিপ চালানো হয়। এর ফলাফলে বেরিয়ে আসে, মোট অংশগ্রহণকারীদের এক চতুর্থাংশেরও বেশি (২৭.৩ শতাংশ) মানুষ ঘন ঘন নাইটমেয়ারের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন।

ঘুমের দু’টি পর্যায় থাকে। র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM) এবং নন র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (NREM)। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের বিগত দিনটির যাবতীয় কাজকর্ম, অনুভূতি ইত্যাদিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে স্মৃতি তৈরি করে। কোন স্মৃতিগুলো লম্বা সময়ের জন্য দরকারি, কোনগুলো ভুলে যাওয়াই শ্রেয়- ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ঘুমের সময় মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে। ঘুম থেকে ওঠার ঠিক কিছুক্ষণ আগে কিংবা গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার ঠিক কিছুক্ষণ আগে আমাদের মস্তিষ্ক রেম পর্যায়ে থাকে। এ পর্যায়েই আমাদের আবেগীয় অনুভূতিগুলো মস্তিষ্কে সঞ্চিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে আমাদের স্বপ্নের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। 

ঘুমের কোন পর্যায়ে স্বপ্ন দেখছি, সেটিই ঠিক করে দেবে- স্বপ্নটি মনে থাকবে কি না; Image Source: BBC

ঘুমের মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখার একটা দিক হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে। আমাদের শরীর ও মন কোনো একটি দুঃসহ ঘটনাকে ভুলে যাওয়ার পথ হিসেবে ক্ষেত্র বিশেষে দুঃস্বপ্ন দেখাকে বেছে নেয়। ‘স্লিপ টু রিমেম্বার, স্লিপ টু ফরগেট’ এ নামে ঘুম গবেষণার জগতে একটি অতি পরিচিত তত্ত্ব আছে। ঘুমের উদ্দেশ্য হিসেবে স্মৃতিতে ধারণ করা এবং ভুলে যাওয়া, দু’টিই সমানভাবে সত্য। ধরা যাক, আপনি একদিন একটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেন। এরপর আপনার মস্তিষ্ক সেটিকে প্রক্রিয়াজাত করার কারণে আপনি কোনো একদিন রাতে প্রায় একই রকমের দুঃস্বপ্ন দেখলেন।

এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারেম আপনার মস্তিষ্ক এই অভিজ্ঞতার যে অনুভূতি ছিল, সেটির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এই স্বপ্নটি দেখল। এরে ফলস্বরূপ, পরে যদি কখনও আপনি আবার একই ঘটনার মুখোমুখি হন, তাহলে ওই ঘটনার প্রতি আপনার শারীরিক ও মানসিক সাড়ার তীব্রতা প্রথমবারের চেয়ে তুলনামূলক কম হবে। অর্থাৎ, আবেগের দিক থেকে বিবেচনা করলে একটি অস্বস্তিকর এবং নেতিবাচক অনুভূতির ঘটনার সাথে আপনাকে সহজ করে তোলার উদ্দেশ্যেই দুঃস্বপ্ন দেখা। ব্যাড ড্রিম যদিও একটি একক ঘটনা হিসেবে খুবই ক্লান্তিকর, ভয়ের, অবসাদের; তবে এর চূড়ান্ত উদ্দেশ্য আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নেওয়াও হতে পারে।

মানব মস্তিষ্ক যখন ঘুমের ‘রেম’ পর্যায়ে চলে যায়, তখন মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস এবং অ্যামিগডালা অংশদ্বয় বেশ কর্মক্ষম থাকে। হিপোক্যাম্পাসের কাজ হলো স্মৃতির বিন্যাস, ক্রম, এবং সংরক্ষণ। অন্যদিকে অ্যামিগডালা কাজ করে থাকে আবেগকে প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে। গবেষণা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এ পর্যায়ে মানুষ যে স্বপ্ন দেখে, সেটা মূলত তার মস্তিষ্কের আবেগ প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিফলন। ব্যাড ড্রিম দেখার মাধ্যমে মস্তিষ্ক একটি নির্দিষ্ট ঘটনার সাথে যে তীব্র নেতিবাচক অনুভূতি জড়িত, সেটি সহজ করে নিয়ে আসতে চায়; যাতে পরবর্তী দিনগুলোতে ওই ঘটনার স্মৃতি দ্বারা তাড়িত হলে কিংবা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ব্যক্তি সেটিকে সহজভাবে নিতে পারে। 

ব্যাড ড্রিমের উদ্দেশ্য প্রকৃতপক্ষে কী, সেটি পরীক্ষা করার জন্য দুঃস্বপ্ন দেখার পর একাধিক অংশগ্রহণকারীদের কিছু অস্বস্তিকর, ভয়ংকর ছবি দেখানো হয়েছিল। ব্যাড ড্রিম দেখার দরুন তাদের প্রত্যেকের ছবি দেখার অভিজ্ঞতাটি ছিল তুলনামূলক স্বস্তিকর, যদিও ব্যক্তিভেদে এর তারতম্য ঘটেছিল। ব্যাড ড্রিম দেখার সময় ব্যক্তি যত বেশি এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য ভয় কিংবা দুশ্চিন্তা অনুভব করেছিলেন, তার জন্য পরবর্তীতে অস্বস্তিকর ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করা তত সহজ হয়ে এসেছিল। এর কারণ হচ্ছে মস্তিষ্ক ইতোমধ্যেই ব্যাড ড্রিম দেখার কারণে নেতিবাচক অনুভূতির প্রতি কীভাবে সাড়া প্রদান করতে হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষিত হয়ে উঠেছিল। 

এবারে আসা যাক নাইটমেয়ার প্রসঙ্গে। ব্যাড ড্রিম যদি খুব উচ্চ পর্যায়ের অনুভূতি দেয়, এবং এর প্রবণতা যদি খুব ঘন ঘন হয়, তাহলে নাইটমেয়ার বলা হয়। নাইটমেয়ার হতে পারে অশনি সংকেত। ব্যাড ড্রিম দেখাটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে মুশকিলটা বাঁধে। নাইটমেয়ার দেখার জন্য সাধারণত কোনো ট্রমা দ্বারা প্রভাবিত হতে হয়। যুদ্ধফেরত সৈনিক, শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তি, পরপর একাধিক মৃত্যু দেখা কেউ, বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি, এরাই সাধারণত একই ধরণের দুঃস্বপ্ন দিনের পর দিন দেখে যেতে থাকে।

ব্যাড ড্রিমের একটি ইতিবাচক দিক থাকলেও নাইটমেয়ার শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে দায়ী। এর চিকিৎসা হিসেবে ইদানিং এক্সপোজার, রিল্যাক্সেশন, রেস্ক্রিপশন থেরাপি (ERRT) ব্যবহৃত হচ্ছে বহুলভাবে। এই পদ্ধতিতে দুঃস্বপ্ন দেখা ব্যক্তিটিকে তার স্বপ্নের বর্ণনা যতটা সম্ভব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখতে বলা হয় কাগজে-কলমে (এক্সপোজার)। এরপর রিল্যাক্সেশন হিসেবে ধ্যান কিংবা মাইন্ডফুলনেস চর্চা করা হয়। সবশেষে ব্যক্তি যে দুঃস্বপ্নটি দেখেছেন, সেই একই স্বপ্নকে ইতিবাচক কোনো পরিসমাপ্তি দিয়ে একাধিকবার কল্পনা করতে বলা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে কোনো ওষুধ ছাড়াই ক্ষেত্রবিশেষে সুফল পাওয়া সম্ভব।

নাইটমেয়ারের চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ERRT; Image Source: BBC

ব্যাড ড্রিম বনাম নাইটমেয়ারের পার্থক্য করতে পারাটা খুবই জরুরি। নাইটমেয়ার যদি জীবনের অংশ হয়ে যায়, তাহলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

This article is written in Bangla. It is about why one should not be worried about bad dreams.

All the references are hyperlinked within the article. 

Featured Image: syfy.com

Related Articles