Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চিনুক হাওয়া: একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

বিভিন্ন ধরনের হাওয়া বা বাতাস প্রকৃতিতে দেখতে পাওয়া যায়। বাতাসের গতি, এতে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি, কোন তাপমাত্রায় বাতাস কী ধরনের আচরণ করে এসবের উপর ভিত্তি করে বাতাস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এমনই এক রকমের বাতাস হচ্ছে ফন বা চিনুক।

এই চিনুক বাতাস একবার মন্টানা, হার্ভে এই শহরগুলোর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো আর এসময় সেখানকার তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মতো বেড়ে যায়, মাত্র তিন মিনিট সময়ের ব্যবধানে; Image Source: pinterest.com

চিনুক হাওয়া গরম এবং শুষ্ক ধরনের, যা পর্বতের ঢাল দিয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এই ধরনের বাতাস প্রথম পর্যবেক্ষণ করা হয় আল্পস পর্বতে। এই বাতাস যখন প্রবাহিত হয় তখন পাহাড়ের অনেক অংশ গলে যেতে থাকে এবং অনেক সময় গলিত তরল বাষ্পীভূতও হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে এই বাতাসের নাম দেয়া হয়েছে চিনুক। চিনুক নামের একদল উপজাতির নামে এই নামকরণ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে এই বাতাস পর্যবেক্ষণ করা হয় রকি পর্বতের পূর্ব দিকের ঢাল বরাবর। এই বাতাস মাঝে মাঝে ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে। বাতাস বইতে শুরু করলে খুব কম সময়ের মধ্যে আশেপাশের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রী বেড়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে এই বাতাসের তাণ্ডবের একটি উদাহরণ আছে। চিনুক বাতাস একবার মন্টানা, হারভে এই শহরগুলোর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো এবং এই প্রবাহিত হওয়ার সময় সেখানকার তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মতো বেড়ে যায়, মাত্র তিন মিনিট সময়ের ব্যবধানে। কেন এরকমভাবে বাতাস প্রবাহিত হয়?

পর্বতের অপর দিকে আসার পর গরম বাতাস ভূমি পর্যন্ত যেতে যেতে আরও গরম হয়ে পড়ে। এ সময় সেখানকার বরফ গলে যায়; Image Source: livescience.com

কেন এমনটি হয় সেটার খুব শক্তপোক্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি। কারণ পরিবেশের কোনো অংশ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে হলে শুধু একটি বিষয়ের উপর নির্ভর করলে চলে না। অনেকগুলো বিষয় এর সাথে জড়িত থাকে। পদার্থবিজ্ঞানের কিছু ধারণা দিয়ে এটা ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন- চিনুক হাওয়ার কথা যদি ধরি, প্রশান্ত মহাসাগর থেকে বাতাস রকি পর্বতের দিকে যায়। সেখানে এর গতিপথ রকির গা ঘেষে উপরের দিকে উঠে যায়। এ সময় বাতাস জলীয়বাষ্প বের করে দিয়ে শুকিয়ে যায়। জলীয়বাষ্প তরলে পরিণত হবার সময় কিছু শক্তি বের করে দেয় এবং বাতাসকে গরম করে তোলে। এই গরম বাতাস রকি পর্বতের উপরের দিকে উঠে গিয়ে পর্বতের চূড়া পার হয়ে অন্যদিক দিয়ে (Leeward Direction) নেমে যেতে থাকে। এই নেমে যাওয়ার সময় কিন্তু বাতাস আরও বেশী গরম হয়ে পড়ে, কারণ বাতাস এসময় প্রচণ্ড চাপের ভিতর থাকে। সাইকেলের চাকা পাম্প দেয়ার সময় সেটা গরম হয়ে ওঠার ব্যাপারটির সাথে মোটামুটি এর মিল বোঝা যায়। পর্বতের অন্য দিকে চলে আসার পর গরম বাতাস ভূমি পর্যন্ত যেতে যেতে আরও গরম হয়ে পড়ে। এ সময় বরফ গলে যায় এবং অনেক সময় তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে গলে যাওয়া বরফ বাষ্পে পরিণত হয়ে পড়ে [১]

চিনুক বাতাসের কার্যপ্রণালী; Image Source: apollo.isc.vsc.edu

একবার এক গবেষক পরীক্ষা করার জন্য প্রচণ্ড ঠাণ্ডা উপত্যকা থেকে চিনুক হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে এমন জায়গায় যাচ্ছিলেন। এই বাতাসের মধ্যে প্রবেশ করার পর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গাড়ির উইন্ডশিল্ড বরফ দিয়ে ঢেকে যায়। কারণ সেই জায়গায় চিনুক হাওয়ার কারণে ইতোমধ্যেই তুষার বাষ্পীভূত হয়ে জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়ে পড়েছিল। এই জলীয়বাষ্প ঠাণ্ডা উইন্ডশিল্ডের স্পর্শে আসার সাথে সাথে ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে (Condensed)। এই পরীক্ষা খুবই বিপজ্জনক ছিল, কারণ গাড়ির গতি যদি বেশী থাকতো তাহলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শিল্ড ঢেকে যাওয়ার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো।

Image Source: SlidePlayer.com

চিনুক হাওয়া নিয়ে অনেক কাল্পনিক ঘটনা আছে। চিনুক হাওয়ার উৎপত্তি নিয়ে কিছু প্রচলিত মিথ হচ্ছে এমন যে- দুই ভাই শিয়াল এবং খরগোশ। তারা ঠাণ্ডা পরিবেশে বাস করতো। একবার তারা মনে মনে ঠিক করলো যে, গরম কোনো জায়গা থেকে তাদের নিজেদের এলাকার জন্য গরম বাতাস নিয়ে আসবে। দুই ভাই দক্ষিণ দিকে তাদের যাত্রা শুরু করলো। যেতে যেতে তারা এমন একটি জায়গা পেলো, যেখানকার মানুষরা চিনুক বাতাস থলের ভিতর ভরে দিয়ে দেয়। দুই ভাই সেই চিনুক হাওয়া ভর্তি থলে নিয়ে তাদের জায়গায় ফিরে এলো এবং থলে থেকে চিনুক বের করে জায়গাটি গরম করে দিল।

Image Source: obekti.bg

আরেকটি মিথে বলা হয় যে, থাণ্ডারবার্ড বলে একটি কাল্পনিক পাখি আছে যেটা কিছু মানুষকে শাস্তি দিতে চায়। শাস্তি দেয়ার কারণ হচ্ছে এই পাখি যে জায়গায় বসবাস করতো সেখানে কিছু মানুষ ক্যাম্পফায়ার করে অন্যান্য সব প্রাণীকে মেরে ফেলে। তাই এই পাখি দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ঠাণ্ডা বাতাস ওই অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয় যাতে করে এই বাতাস মানুষগুলোকে সেখান মিশিয়ে দিতে পারে এবং এই ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে যেন সেখানে মানুষ বাস না করতে পারে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে ওই অঞ্চল থেকে মানুষগুলো অন্য কোথাও চলে যায়। থাণ্ডারবার্ডের তিন মেয়ে ছিল- কাক, ম্যাগপাই এবং ব্লুজে। এই তিনজনও ওই মানুষগুলোর সাথে চলে যায়। এদিকে তিন মেয়ে চলে যাওয়ার পর থাণ্ডারবার্ড একা হয়ে পড়ে। সে চিনুক হাওয়াকে আমন্ত্রণ করে, যাতে সে ওই অঞ্চলকে আবার গরম করে তোলে। চিনুক সেই অঞ্চল গরম করে দেয় এবং সবাই আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে।

Image Source: chinookjargon.com

এভাবে চিনুক হাওয়ার উৎপত্তি হয়। এগুলো শুধুই কাল্পনিক গল্প। এসব কাহিনীর মধ্যে কোনো সত্যতা নেই সেটা বলাই বাহুল্য। তবে চিনুক হাওয়া যখন প্রবাহিত হয় এটা পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেমন-

১) নদী এবং লেকগুলোর বরফের পুরুত্ব প্রতি ঘণ্টায় প্রায় এক ইঞ্চি পর্যন্ত কমে যেতে পারে, ২) চিনুক বাতাস বেশ শক্তিশালী হয়, তাই বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময় অনেক শব্দ হয়, ৩) মাটিতে পানির পরিমাণ কমে যায় এবং বাতাসের গতির কারণে অনেক জায়গার মাটি ভেঙ্গে পড়ে, ৪) গাছপালা বেঁচে থাকতে পারে না, কারণ চিনুক হাওয়ার কারণে পরিবেশের তাপমাত্রার গরমিল অনেক বেশী হয়, ৫) শীতপ্রধান জায়গাগুলোতে এই বাতাস সাধারণ মানুষের কাছে বেশ আরামের কারন, ৬) অগ্নি সংযোগের সম্ভাব্যতা বেড়ে যায়, ৭) ফরেস্ট ফায়ার বেড়ে যায় এবং বাতাসের কারণে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

চিনুক হাওয়ার কারণে কিছু কিছু জায়গায় রেড বেল্ট তৈরি হয়। শীতল পরিবেশে গাছপালা স্বাভাবিকভাবেই শুকিয়ে যায় এবং পাতা ঝরে যায়। চিনুক হাওয়ার উষ্ণতার কারণে শীতল অঞ্চলের সেই গাছপালাগুলো আবার সালোকসংশ্লেষণ শুরু করে দেয় এবং সূর্য থেকে আলো নিয়ে খাবার তৈরিও শুরু করে দিতে পারে। কিন্তু মাটির নিচের পানির অভাব তো পূরণীয় নয়, কারণ সেখানটা তো বরফে ঢাকা। তাই গাছপালা লাল হয়ে যায়।

ফিচার ইমেজ সোর্স: insideclimatenews.org

[১]  Walker, J. (2007). Flying Circus of Physics. John Wiley & Sons, Inc.

Related Articles