Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্লাউড সিডিং: কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের যুগান্তকারী পদ্ধতি

সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ চেষ্টা করে এসেছে প্রকৃতির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার। সেই পথে মানুষের সাফল্যের ফিরিস্তিও বেশ দীর্ঘ। মানুষ বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ বলদে দিয়েছে, প্রণালী কেটে সাগরের সাথে মিলিয়েছে মহাসাগর, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আস্তানা গেড়েছে মহাশূন্যে! প্রকৃতি শাসনের ফল কখনো হয়েছে আশীর্বাদ, কখনো বা ডেকে এনেছে চরম বিপর্যয়। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে প্রকৃতির মৌলিক কাঠামোগুলোতে মানুষের নিয়ন্ত্রণ দিন দিন আরও বহুলাংশে বাড়বে সন্দেহ নেই। এমনই এক যুগান্তকারী প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হওয়া যাক আজ।

মানুষ এবং অসংখ্য প্রাণীর টিকে থাকার অন্যতম প্রধান উপাদান স্বাদু পানি, যার একমাত্র প্রাকৃতিক উৎস বৃষ্টিপাত। কিন্তু এই বৃষ্টির উপর তো আর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রাণীকূলের প্রয়োজনমাফিক দিন-তারিখ-সময় ধরে বৃষ্টি নামবে, এমনটাও সবসময় আশা করা যায় না। কেমন হতো যদি বৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ মানুষের হাতে থাকত? যার যখন যেখানে প্রয়োজন একটু বৃষ্টি ঝরিয়ে নিলেই হল! কল্পনার মতো শোনালেও বৃষ্টির উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ মানুষ অনেক আগেই প্রতিষ্ঠা করেছে। কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত ঘটানোর সেই পদ্ধতির নামই ক্লাউড সিডিং।

ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তির মূলমন্ত্র। Image Source: Fletcher Boland
ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তির মূলমন্ত্র; Image Source: Fletcher Boland

ক্লাউড সিডিং যেভাবে কাজ করে

ক্লাউড সিডিংয়ের পদ্ধতি খুব জটিল কিছু নয়। আকাশে বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলোর উপর কেমিক্যাল ছড়িয়ে দিয়ে সময়ের আগেই বৃষ্টি ঝরিয়ে ফেলা হয়, যাকে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতও বলা যেতে পারে। 

‘ক্লাউড সিডিং’ এর পদ্ধতি জানার আগে আসুন সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক কেমন করে প্রাকৃতিকভাবে মেঘ-বৃষ্টি হয়ে থাকে।

সূর্যের প্রখর তাপে সমুদ্র, নদ-নদী বা জলাধারের পানি বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায়। অতঃপর বাতাসে ভেসে থাকা অসংখ্য ধূলিকণার সাথে মিশে জমাটবদ্ধ হয়ে এই জলীয় বাষ্পগুলোই মেঘে পরিণত হয়। আকাশের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে ভেসে থাকা এই মেঘগুলো যখন সময়ের পরিক্রমায় ঘনীভূত হতে হতে ভারী হয়ে ওঠে, তখনই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে বৃষ্টির ফোটা হয়ে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। আদতে, বৃষ্টির মূলমন্ত্র হচ্ছে মেঘের ঘনীভবন, যা প্রাকৃতিকভাবে ঘটে থাকে।

এখন এই ট্রপোস্ফিয়ারে থাকা মেঘগুলোকে যদি সময়ের আগেই কৃত্রিমভাবে ঘনীভূত করা যায়, তবেই তৎক্ষণাৎ বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যাবে। ‘ক্লাউড সিডিং’ মূলত এই কাজই করে থাকে। বিমান, রকেট বা মিসাইলের সাহায্যে মেঘের উপর ড্রাই আইস (জমাটবাধা কার্বন ডাইঅক্সাইড), সিলভার আয়োডাইড, পটাসিয়াম আয়োডাইড, তরল প্রোপেন গ্যাস, এমনকি পটাসিয়াম ক্লোরাইড (লবণ) ছড়িয়ে দিলেও তা মেঘগুলোকে দ্রুত ঘনীভূত হতে সহায়তা করে এবং যার ফলশ্রুতিতে বৃষ্টিপাতে ঘটে। একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃষ্টির পাশাপাশি কৃত্রিম তুষারপাত ঘটানো হয়। বর্তমানে ক্লাউড সিডিং করার জন্য সিলভার আয়োডাইড’ই সবচেয়ে বেশি কার্যকর ও জনপ্রিয়। 

ক্লাউড সিডিং যেভাবে কাজ করে
ক্লাউড সিডিং যেভাবে কাজ করে; Image Source: phys.org

শুরু হয়েছিল যেভাবে

‘ক্লাউড সিডিং’ এর জনক বলা হয় মার্কিন রসায়নবিদ ভিনসেন্ট শায়েফারকে। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের গবেষণাগারে শায়েফার ১৯৪৬ সালের জুলাই মাসে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের সফল ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটান। পরবর্তীতে আরেক নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী আরভিং ল্যাংমুর যোগ দেন শায়েফারের সঙ্গে। দুই বিজ্ঞানী মিলে একই বছরের ১৩ নভেম্বরে বার্কশায়ারের পাহাড়ি এলাকার উন্মুক্ত পরিবেশে মানব ইতিহাসে প্রথম ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম হন। মজার ব্যাপার হচ্ছে শায়েফারের রসায়নবিদ্যায় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীই ছিল না। মৃত্যুর আগে ১৪টি পেটেন্ট রেখে যাওয়া স্বশিক্ষিত এই বিজ্ঞানী কখনো হাইস্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি।

ভিনসেন্ট শায়েফার ও আরভিং ল্যাংমুর - যাদের হাত ধরে এসেছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রযুক্তি
ভিনসেন্ট শায়েফার ও আরভিং ল্যাংমুর, যাদের হাত ধরে এসেছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রযুক্তি; Image Source: Lake George Mirror

শায়েফারের আগে কেউ যে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করেনি তা নয়। ‘মেঘের মধ্যে তরল কার্বন ডাইঅক্সাইড ছড়িয়ে দিলে বৃষ্টিপাত হতে পারে’- এমন ধারণা প্রথম প্রদান করেন জার্মান-আমেরিকান প্রকৌশলী লুইস গথম্যান, ১৮৯১ সালে। পরবর্তীতে ১৯৩০-এর দশকে তিন ইউরোপীয় বিজ্ঞানী আলফ্রেড ওয়েগনার, টর বার্গনর ও ওয়াল্টার ফিনডেসেন শীতল মেঘের মধ্যে বরফের স্ফটিক ছড়িয়ে দিয়ে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের তাত্ত্বিক রুপরেখা প্রদান করেন, যা পরবর্তীতে জেনারেল ইলেকট্রিকের ল্যাবরেটরিতে বিমানের যন্ত্রাংশ নিয়ে গবেষণার সময় শায়েফার-ল্যাংমুর প্রমাণ করে দেখান। 

বিতর্ক বনাম সফল প্রয়োগ

ক্লাউড সিডিং কতটা কার্যকর বা এই প্রযুক্তিতে আদৌ বার্ষিক বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে যথেষ্ট আলোচনা-সমালোচনা আছে। একদল বিজ্ঞানী মনে করেন, এই পদ্ধতিতে ঘটানো কৃত্রিম বৃষ্টিপাত দীর্ঘমেয়াদে খুব সামান্যই কাজে আসে। এছাড়া অতিরিক্ত ক্লাউড সিডিংয়ের ফলে পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। এতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল স্বাস্থ্যের জন্যেও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে স্বল্পমেয়াদে বা তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে ক্লাউড সিডিংয়ের কার্যকারিতা প্রমাণিত।

উদাহরণ হিসেবে ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকের কথা বলা যায়। গ্রীষ্মকালীন এই অলিম্পিক শুরুর আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে গেমস উদ্বোধনের দিন বেইজিং শহরে ভারী বর্ষণের কথা বলা হয়েছিল। ১০০ মিলিয়ন ডলারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৃষ্টির উপদ্রুপ কে সহ্য করবে! অতঃপর চীন এক অভাবনীয় কাজ করে বসে। সমুদ্র থেকে বেইজিংয়ের দিকে উড়ে আসা মেঘগুলোর উপর গেমসের আগের কয়েকদিন সর্বমোট ১,১০৪টি কেমিক্যালভর্তি রকেট ছুড়ে মারে। ফলাফল? বেইজিংয়ের আকাশে ঢোকার আগেই মেঘগুলো বৃষ্টি ঝরিয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়, এবং ৮ আগস্ট ২০০৮ ঝকঝকে আকাশের নিচে বার্ডস নেস্ট স্টেডিয়ামে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

চীনের কথা যখন উঠল, তখন বলে রাখা যাক, পৃথিবীতে বর্তমানে যত পরিমাণে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয় তার অধিকাংশই করে থাকে চীন। এমনকি অনেক প্রতিবেশী রাষ্ট্র তাদের দেশে অনাবৃষ্টির জন্য চীনকে দায়ী করে আসছে। অতিরিক্ত ক্লাউড সিডিং করে চীন আগেই বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে ফেলায় একদিকে যেমন বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে শীতল মেঘের সারি অন্য দেশের আকাশে ঢোকার আগেই চীন সেগুলো নিঃশেষ করে ফেলছে বলে বিস্তর অভিযোগ আছে। ভারতের পক্ষ থেকে তো ইতিমধ্যে চীনকে ‘বৃষ্টি চোর’ উপাধিও দেয়া হয়েছে!

ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি যখন যুদ্ধাস্ত্র! 

অবাক শোনালেও এটাই সত্য! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই ১৯৬৭ সালেই ভিয়েতনাম যুদ্ধে নজিরবিহীনভাবে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। ‘অপারেশন পপাই’ নামে কুখ্যাত এই অভিযানে মার্কিনীরা ক্লাউড সিডিং করে ভিয়েতনামের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের সংযোগকারী হো চি মিন ট্রেইলের উপর প্রচুর পরিমাণে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটায়। মূলত এর ফলে বন্যা ও ভূমিধ্বসে ভিয়েতনাম বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে খাদ্য ও অস্ত্র পরিবহন কঠিন হয়ে ওঠে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় ক্লাউড সিডিং।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় ক্লাউড সিডিং; Image Source: The New York Times

কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের মতো আবহাওয়া পরিবর্তন করার প্রযুক্তিকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করলে তা যে সাধারণ মানুষের জন্য চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে- সেই বিষয়ে যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রগুলো সচেতন হয়েছে। অনেকগুলো দেশের মধ্যে ১৯৭৭ সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদিত হয়, যার মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে ক্লাউড সিডিং সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত যেমন ব্যবহৃত হয়েছে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে, আবার মানুষের জীবন বাঁচাতেও এর ব্যবহার হয়ে আসছে হরহামেশা, যার সাম্প্রতিক নজির ইন্দোনেশিয়া। গত বছরের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসে ৩ দিনেই প্রায় ৪৩ জন মানুষ প্রাণ হারায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আশঙ্কা করা হয়েছিল আরও অন্তত দু’সপ্তাহ ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ইন্দোনেশীয় সরকার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমাতে দ্রুত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার মধ্যে ক্লাউড সিডিং অন্যতম। জাকার্তা উপসাগরে উৎপন্ন মেঘগুলোর উপর সোডিয়াম ক্লোরাইড ছড়িয়ে সেগুলোকে শহরে ঢুকতে বাধা সৃষ্টি করা হয়। শহরে ঢোকার আগেই তৎসংলগ্ন নদীতে কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়ে যাওয়ায় মেঘগুলো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে, রক্ষা পায় প্রাণ ও সম্পদ।

বহুবিধ ব্যবহার

বর্তমানে বহু দেশ তাদের বৃষ্টিনির্ভর শস্য উৎপাদনে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে থাইল্যান্ড। থাই সরকার ১৯৫৫ সালে থেকে সরকারিভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর প্রকল্প চালিয়ে আসছে যা প্রধানত দেশটির বৃষ্টিনির্ভর শস্যগুলো রক্ষায় কাজে আসছে।

বিমানের ডানায় লাগানো কেমিক্যাল ভর্তি যন্ত্রাংশ। Image Source: kmvt.com
বিমানের ডানায় লাগানো কেমিক্যাল ভর্তি যন্ত্রাংশ; Image Source: kmvt.com

অনাবৃষ্টি ও মরু অঞ্চলে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত যে কত বড় আশীর্বাদ হতে পারে তার সফল উদাহরণ সংযুক্ত আরব আমিরাত। মরু ও সাগর পরিবেষ্টিত নদীশূন্য এই দেশে প্রতিবছর গড়ে মাত্র দশদিন বৃষ্টি হয়, যার পরিমাণ সবমিলিয়ে মাত্র ১২০ মিলিমিটার। শুধু তা-ই নয়, দেশটির ভূগর্ভস্থ পানির শতকরা নব্বই শতাংশই লবণাক্ত। এই শতকের শুরু থেকেই সেখানকার সরকার বৃষ্টিপাত বাড়াতে বৃহৎ কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে আছে বৃষ্টি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৃহৎ পরিসরে গবেষণা, ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তির উন্নয়ন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম হ্রদ ও বাঁধ নির্মাণ। আমিরাতের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের একটি দল সার্বক্ষণিক মেঘ পর্যবেক্ষণ করে থাকে, এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে এমন মেঘ খুঁজে পেলেই ক্লাউড সিডিং অপারেশন শুরু করে।

কেবল ২০১৭ সালেই তারা ২৪২টির মতো সফল ক্লাউড সিডিং অপারেশন সম্পন্ন করে যা ১৫-৩০ শতাংশের মতো বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আমিরাত শুধু কৃত্রিম বৃষ্টিপাতই নয়, সমুদ্রের লবণাক্ত পানি পরিশোধনের ক্ষেত্রেও রোল মডেল। সেদেশের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানির ৯৯ শতাংশই পরিশোধিত সমুদ্রের পানি!

ক্লাউড সিডিং ব্যবহারে এগিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত। Image Source: Arabian Business
ক্লাউড সিডিং ব্যবহারে এগিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত। Image Source: Arabian Business

কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ভবিষ্যৎ কী? 

প্রযুক্তি থেমে থাকে না। দিন দিন এর প্রভূত উন্নয়ন যেমন হয়, আবার সম্পূর্ণ নতুন কোনো প্রযুক্তির উদ্ভাবনে আগের সব ধারণা ভেঙে যায়। ক্লাউড সিডিং এখনও যথেষ্ট ব্যয়বহুল। বিমান বা রকেটের পরিবর্তে লেজার রশ্মির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চলছে, যা কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রযুক্তিকে সহজ ও সুলভ করতে পারে।

এবার আরও একটু সামনে তাকান যাক। হয়তো অচিরেই আমরা এমন প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করতে পারব যা শুধু আকাশে ভেসে থাকা মেঘগুলোকে ছেঁকে এনে বৃষ্টি ঝরাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সমুদ্র থেকে ইচ্ছেমতো পানিকে বাষ্পীভূত করে মেঘ সৃষ্টিতেও সক্ষম হবে। চিন্তা করুন তো, ভবিষ্যতের কোনো একদিন হয়তো দিনাজপুরের কয়েক হেক্টর ধানি জমিতে সেচ দেবার জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘ তৈরি করে সেগুলোকে উড়িয়ে এনে নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট জায়গায়, ঠিক নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃষ্টিই ঝরানো হচ্ছে!

অতিকল্প মনে হচ্ছে? মানুষের কাছে অতিকল্প বলে কিছু নেই, তাই আশায় বুক বাঁধতেও বাধা নেই!

Related Articles