Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একশ বছর আগেও ব্যবহার করা কিছু বিপজ্জনক চিকিৎসাপদ্ধতি

“মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়।”

‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ এর এই কথাগুলো কেবল যুদ্ধক্ষেত্র কিংবা ভালোবাসাতেই নয়, মানুষের জীবনের সবক্ষেত্রেই সত্য। একশ বছর আগে মানুষ যেভাবে ভাবতো, যা সত্য বলে জানতো, বর্তমানে সেগুলোর বেশিরভাগই আমাদের কাছে হাস্যকর বলে মনে হয়। কে জানে, হয়তো আজ আমরা যা ভাবছি, আজ থেকে একশ বছর পর সেটা কারো কাছে হাস্যকর বলে মনে হবে। মানুষের জীবনের সবক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটি সত্য, এমনকি চিকিৎসাক্ষেত্রেও। আজ থেকে একশ বছর আগে মানুষ যে পদ্ধতিকে সুস্থ হওয়ার উপায় বলে মনে করতো, সেটা বর্তমানে বিপজ্জনক পদ্ধতি বলে পরিচিত। শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও কথাগুলো বাস্তব। আর চিকিৎসাবিজ্ঞানে একশ বছর আগে প্রচলিত এমন হাস্যকর এবং অবিশ্বাস্য কিছু পদ্ধতিই আজ জানানো হবে আপনাকে।

লোবোটোমি

অমানবিক চিকিৎসাপদ্ধতি লোবোটোমি; Source: StoryCorps

সিজোফ্রেনিয়া, দ্বৈত চরিত্র, মানসিক নানাবিধ অসুস্থতার জন্য ১৯৪০ সালে লোবোটোমি নামক পদ্ধতির ব্যবহার করা হত। আর এটি তখন ব্যবহার করতেন খোদ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরাই। এ পদ্ধতিতে দুটো বরফের টুকরো নিয়ে সেটা রোগীর দুই অক্ষিকোটরে রেখে ধাক্কা মারা হতো প্রচন্ড জোরে। মানুষের সম্মুখভাগের মস্তিষ্কই যেহেতু তার আচরণ এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে, তাই লোবোটোমিতে ধারণা করা হতো সম্মুখভাগে কোনোভাবে আঘাত করা গেলে মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হয়ে মানসিক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়ায় অবশ্য মাত্র ১০ শতাংশ রোগী সুস্থ হতো। আর বেশিরভাগই মানসিকভাবে পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে পড়তো।

মজার ব্যাপার হলো- লোবোটোমির আবিষ্কারক অ্যান্টনিও এ্যাগাস মোনিজকে ১৯৪৯ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। শুধু আমেরিকাতেই প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের উপরে লোবোটোমি ব্যবহার করা হয়। ১৯৫০ সালে এই প্রক্রিয়াকে অমানবিক বলে নিষিদ্ধ করে দেয় তৎকালীন ইউএসএসআর।

তেজস্ক্রিয় পানি

কোনো স্থানে বা কোনো বস্তুতে রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ বেশি থাকলে আমরা সেটা থেকে দূরে থাকি বা সতর্কতা অবলম্বন করি। কিন্তু একশ বছর আগে ব্যাপারটি মোটেও এমন ছিল না। সেই সময় তেজস্ক্রিয়তা ছিল সম্পূর্ণ নতুন, আকর্ষণীয় ঘটনা। মানুষ এর মাধ্যমে সুস্থ থাকার চেষ্টা করতো তখন। খাবার পরিপাক থেকে শুরু করে সব রকমের সুস্থতার জন্য তখন মানুষ তেজস্ক্রিয় পানি, রেডিয়াম পেন্ডেন্ট, ইউরেনিয়াম কম্বল ইত্যাদি বাড়িতে রাখতো। অদ্ভুত মনে হলেও ব্যাপারগুলো সত্য। ১৯০০ শতকে বিখ্যাত গলফ খেলোয়াড় ও শিল্পপতি ইবেন বায়ার চিকিৎসকের পরামর্শে রেডিথর নামক একধরনের তেজস্ক্রিয় পানি নিয়মিত পান করা শুরু করেন। ১৯৩০ সালে ক্যান্সারে ভুগে মারা যান বায়ার। তার মাথার খুলিতে ফুটো ছিল। তার চোয়ালও অনেকটা খুলে গিয়েছিল। বায়ারের এই ঘটনার পর থেকে বেশ সতর্ক হয়ে যায় মানুষ। তাদের টনক নড়ে। আর এখন? এখন যতটা সম্ভব তেজস্ক্রিয় জিনিস থেকে দূরত্ব বজায় রাখে মানুষ।

হেরোইন

ঠান্ডা এবং ব্যথা দূর করতে ব্যবহার করা হত হেরোইন; Source: CNN.com

বর্তমানে এটি মাদকদ্রব্য হিসেবে পরিচিত। তবে একসময় মানুষ ঠান্ডা দূর করার জন্য হেরোইন গ্রহণ করতো। ১৯০০-৫০ সালের মধ্যে হেরোইন ছিল ব্যথা দূরীকরণ, ঠান্ডা সারিয়ে তোলার জন্য চিকিৎসকদের পছন্দের ঔষধ। বায়ের নামক একটি কোম্পানি হেরোইনের ওষুধ বিক্রি করতো তখন শিশুদের জন্য। এটি মরফিনের চাইতে আটগুণ শক্তিশালী হওয়ায় কাজও হতো দ্রুত। তবে খুব দ্রুত হেরোইনের বাজে প্রভাব বেরিয়ে আসে। ১৯২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ করে দেয় হেরোইন।

মিসেস উইনলো’স সুদিং সিরাপ

১৮০০ শতকের শেষের দিক থেকে ১৯০০ শতকের শুরু- এই পুরোটা সময়ে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছিল মিসেস উইনলো’স সুদিং সিরাপ। ব্যথা সারিয়ে তুলতে, শারীরিক ছোটোখাটো সমস্যা দূর করতে এবং বাচ্চাদের কান্না থামাতে অসম্ভব ভালো কাজ করতো এই সিরাপ। কিন্তু কী এমন ছিল এই সিরাপে জানতে চান? অ্যালকোহলে মেশানো বিশুদ্ধ মরফিন! ডায়রিয়া কিংবা দাঁতের ব্যথা, সব সমস্যাকেই সহজে দূর করে দিত এই সিরাপ। তবে তার বদলে মানুষকে আসক্ত করে ফেলত।

একটা সময় এই ওষুধটিকে বাজার থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তবে তার আগেই ওষুধের কারণে অনেক শিশু মৃত্যুবরণ করে।

ধূমপান

ধূমপান করলে শরীর সুস্থ থাকে এমনটা ধারণা ছিল সবার; Source: Meebzly

ধূমপান শরীরের জন্য ক্ষতিকারক ব্যাপার, এটি এখন একটি ছোট্ট শিশুও খুব ভালো করেই জানে। অথচ একটা সময় এই ধূমপানকেই শরীর ভালো রাখার উপায় বলে মনে করা হতো। বিংশ শতকের শুরুর দিকেই ধূমপানকে আমাদের শরীরের জন্য ভালো ব্যাপার বলে মনে করা হতো। তামাকের পাতার ধোঁয়া হাঁপানি সারিয়ে তোলার জন্য উপকারী, এমনটাই ভাবতো সবাই। এমনকি ১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে সিগারেটের প্যাকেটে এবং বিজ্ঞাপনে চিকিৎসকদের কথা থাকতো। ধূমপান যে কতটা ভালো শরীরের জন্য সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করতেন তারা। “মিষ্টির চাইতে সিগারেট ভালো”- এমন বেশ কিছু প্রচারণা চলতো তখন। ঠোঁট এবং জিহ্বার জন্য যে ধূমপান ভালো সেটা বলা হতো বারবার।

১৯৫৩ সালে ওয়াইন্ডার, গ্রাহাম ও ক্রনিঙ্গার প্রথম আবিষ্কার করেন যে, ধূমপান আমাদের শরীরের জন্য খারাপ। এটি মানুষকে ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায়। এই ব্যাপারগুলোকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই তামাক কোম্পানিগুলোর ব্যবসা কমে যেতে শুরু করে। সবাই বুঝতে শুরু করে যে, সিগারেট কতটা খারাপ।

কান মোমবাতি

কান মোমবাতি! সেটা আবার কী? তাই তো ভাবছেন? আজ এ নাম অপরিচিত হলেও একসময় ইয়ার ক্যান্ডেল বা কান মোমবাতি ছিল খুব পরিচিত একটি জিনিস। কান মোমবাতি কোনো আলাদা মোমবাতির নাম নয়। মোমবাতির একধরনের ব্যবহার বলা চলে একে।

কানের যত্নে মোমবাতি; Source: yelp.co.uk

সে সময় মনে করা হতো, ঘরে বসে কানের ময়লা দূর করা ফেলার সবচাইতে সহজ উপায় হচ্ছে কান মোমবাতি ব্যবহার। এক্ষেত্রে, কানের ভেতরে মোমবাতির নিচের অংশটুকু রেখে উপরের অংশটুকু জ্বালিয়ে দেওয়া হতো। মনে করা হতো এতে করে কানের ভেতরের ময়লা মোমবাতির নিচের অংশটুকুর সাথে লেগে যাবে। বাস্তবে কী সেটাই হতো? একদম না। মোমবাতি কান তো পরিষ্কার করতোই না, উল্টো কানের ভেতরে মোমবাতির গলিত অংশগুলো গিয়ে জমে যেত, যা তৈরি করতো আরো বড় সমস্যার। সে সময় কানের চিকিৎসকেরাও এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। ফলে তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরাও পরবর্তীতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়তেন। তবে সবচাইতে অবাক করা ব্যাপার হলো, ১৯৯৬ সালের এক প্রতিবেদনে পাওয়া যায় যে, এখনও কিছু মানুষ কান মোমবাতির উপরে বিশ্বাস করে এবং এই বিপদজনক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

হাঙরের তরুণাস্থি

একটা সময় মানুষ বিশ্বাস করতো যে, হাঙরের তরুণাস্থি গ্রহণ করলে ক্যান্সার হয় না। কেন? কারণটা খুব সহজ। তাদের যুক্তি ছিল, হাঙরের ক্যান্সার হয় না। তাই সেটির তরুণাস্থি যে খাবে, তারও ক্যান্সার হবে না। মূলত, ১৯৭০-৮০ সালের মাঝে হাঙরের তরুণাস্থির উপরে হওয়া গবেষণাগুলোর কারণেই এমনটা মনে করতো সবাই। হাঙরের তরুণাস্থিতে থাকা উপাদান টিউমারকে বাধা প্রদান করে, ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সেই সময় বাজারে একের পর এক হাঙরের তরুণাস্থির ঔষধ এসে ছেয়ে যায়। তবে একটা সময় গবেষণা করে ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট জানিয়ে দেয় যে, হাঙরের তরুণাস্থি ক্যান্সার প্রতিরোধ একেবারেই করতে পারে না। ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা কমে যায় তখন।

ফিচার ইমেজ- YouTube

Related Articles