Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নেপচুন ও ইউরিনাসে কি আসলেই হীরা বৃষ্টি হয়?

গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে মানুষের আগ্রহ চিরকালের। বিচিত্র ও বিস্ময়কর এ জগত। তেমনি এক বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে নেপচুন ও ইউরেনাসের হীরাবৃষ্টির ধারণাটি। জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিদরা প্রায় ৪০ বছর ধরে অনুমান করছেন যে, নেপচুন ও ইউরেনাসে হীরাবৃষ্টি হয়ে থাকে। সৌরজগতের বহিঃস্থ গ্রহগুলোকে নিয়ে অধ্যয়ন করা বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত জটিল বিষয় ছিল। এসব গ্রহের রহস্য উন্মোচনের জন্য ‘ভয়েজার-২’ নামক মহাকাশযান দিয়ে শুধুমাত্র একটি মহাকাশযাত্রা পরিচালিত হয়েছিল। তাহলে কীভাবে হীরাবৃষ্টির ধারণাটি এলো? 

লরেন্সের গবেষক মার্ভিন রস ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম ‘হীরাবৃষ্টি’র ধারণাটি প্রকাশ করেন একটি আর্টিকেলের মাধ্যমে। নেপচুন ও ইউরেনাসকে বলা হয় আমাদের সৌরজগতের ‘দৈত্যাকার বরফ’। কী এই অদ্ভুত নামের কারণ?

জ্যোতির্বিদ্যায় যেসকল হালকা বস্তু হাইড্রোজেন ধারণ করে, তাদের বরফ বলে। নেপচুন ও ইউরেনাসের বাইরের স্তর হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দিয়ে গঠিত। পানি, অ্যামোনিয়া এবং মিথেন এসব গ্রহের উপাদান। এই যৌগগুলোর প্রত্যেকটিই হাইড্রোজেনের ধারক, যা এই গ্রহগুলোকে বরফপূর্ণ করে তুলতে ভূমিকা রাখে। এই গ্রহগুলোর অপূর্ব নীলাভ রংয়ের কারণ বায়ুমন্ডলে মিথেনের উপস্থিতি। অন্যদিকে, এদের মধ্যস্তরে বরফের উপস্থিতি এদের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে। উদাহরণস্বরূপ, নেপচুুুনে ৩,০০০ কিলোমিটার পুুুরু হাইড্রোজেন-হিলিয়াম স্তরের তলদেশে একটি ১৭,৫০০ কিলোমিটার পুরু বরফের স্তর অবস্থিত। তবে কীভাবে এখানে হীরা উৎপাদিত হয়ে থাকে? ধারণা করা হয়, অভিকর্ষজ ত্বরণ এ বরফকে সংকুচিত করে ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রাও বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়া বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ১ মিলিয়ন গুণ বেশি উচ্চ চাপ বরফকে সংকুচিত করে উত্তপ্ত তরলে পরিণত করে। এভাবে এসব গ্রহে মিথেনের কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণুসমূহ উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায় পৃথক হয়ে থাকে। পরবর্তীতে কার্বন পরমাণুসমূহের গুচ্ছ হীরার গঠনে পরিণত হয়, যা কার্বনের সবচেয়ে সুস্থিত গঠন।

এ তো গেল হীরা উৎপাদনের কথা। তবে হীরা বৃষ্টি কীভাবে হয়ে থাকে? অনুমান করা হয়, ঘনত্ব বেশি হওয়ায় এসব হীরার খণ্ড গ্যাসের স্তরে নিমজ্জিত হয়ে হীরা বৃষ্টি হয়ে থাকে। 

diamond formation
নেপচুনও ইউরেনাসের  হীরার গঠন প্রক্রিয়া; Image source: americanscientist.org 

মার্ভিনের ধারণাটি অত্যন্ত চমকপ্রদ হলেও এটি ছিল অনুমান-নির্ভর এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার ছিল। কিন্তু কোনো প্রযুক্তি দ্বারা নেপচুন ও ইউরেনাসের এ দশা পর্যবেক্ষণ প্রায় অসম্ভব ছিল। তবে কেমন হয় যদি পৃথিবীতেই এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়?

ঠিক এ কাজের মাধ্যমেই বিজ্ঞানীগণ তাদের গবেষণা শুরু করেন। ল্যাবরেটরিতে গ্রহের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের অনুরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। গবেষণাটি করা হয় ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যানলো পার্কের স্ল্যাক ন্যাশনাল অ্যাক্সেলেটর ল্যাবরেটরিতে। কিন্তু কীভাবে গ্রহের অভ্যন্তরীণ অনুরুপ পরিবেশ সৃষ্টি করা হলো?  লেজার ব্যবহার করে শক ওয়েভ দেয়ার মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে উচ্চ তাপ ও চাপ সৃষ্টি করা হয়। হাইড্রোকার্বন  হিসেবে ব্যবহার করা হয় পলিস্টিরিন। এবার ফলাফলের পালা। 

প্রায় ৪,৫৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এবং পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ১.৪৮ গুণ মিলিয়ন বেশি চাপে হীরার নিদর্শন পাওয়া যায়। এ ফলাফল ছিল একইসাথে আনন্দের ও বিস্ময়ের। এ সম্পর্কে পদার্থবিদ ডোমিনিক ক্রাউস বলেন, “এটি খুবই বিস্ময়কর ছিল যে আমরা এত দ্রুত হীরার নিদর্শন পেয়েছিলাম।” তিনি এ ফলাফলকে তার বৈজ্ঞানিক জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহুর্তগুলোর একটি বলে অভিহিত করেন।

Laser lab
লেজার ল্যাবে হীরা উৎপাদন; Image source: americanscientist.org

প্রকৃতপক্ষে রসায়নবিদ্যার কল্যাণেই এই গবেষণাটি করা সম্ভব হয়। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, গ্রহ- নক্ষত্রের ধারে-কাছে না গিয়েও রসায়নকে কাজে লাগিয়ে সেখানকার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম আমাদের বিচক্ষণ বিজ্ঞানীগণ।

এবার এ হীরার গুণাগুণ যাচাইয়ের পালা। এক্স-রে ব্যবহার করে এ  হীরার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গবেষকগণ উল্লেখ করেন, এ হীরা স্বচ্ছ ও সুগঠিত স্ফটিক ছিল না এবং তাদের ধারণা নেপচুন ও ইউরেনাসে উৎপাদিত হীরাও এরুপ খাদযুক্ত। তবে তারা এটাও উল্লেখ করেন যে, তাদের ধারণানুযায়ী  গ্রহে উৎপাদিত হীরা এর চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বড় হয়ে থাকে। কারো কারো মতে, গ্রহে এ হীরা খণ্ড বরফের স্তরের সাথে যুক্ত হয়ে আরও পুরু স্তরের সৃষ্টি করে। আবার কারো মতে, উচ্চ চাপ ও তাপে এ হীরা গলে যায়।

উপরন্তু হীরা বৃষ্টির ধারণার পক্ষে কিছু শক্তিশালী যুক্তি দাঁড় করানো যায়। যেমন- এ ধারণাটি নেপচুনে  অধিক মাত্রায় তাপ নির্গমন এবং নেপচুন ও ইউরেনাসের অস্বাভাবিক চৌম্বকক্ষেত্রের কারণকে ভাল ব্যাখ্যা করতে পারে। হয়তো বা হীরাবৃষ্টির কারণেই নেপচুনে অতি মাত্রায় অভিকর্ষজ বল সৃষ্টি হয়ে থাকে, যা উচ্চ তাপে পরিণত হয়। শক্তির এ উৎসের কারণেই সম্ভবত গ্রহটির পৃষ্ঠে শক্তিশালী ঝড় হতে দেখা যায়। অন্যদিকে, নেপচুন ও ইউরেনাসের চৌম্বকক্ষেত্র পৃথিবীর মতো প্রতিসম নয় এবং মেরু থেকে বিস্তৃত হয় না। এর ব্যাখ্যা এরূপ হতে পারে যে, এই চৌম্বকক্ষেত্র কোনো পরিবাহী পদার্থ থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে, যা হীরা উৎপাদনের সময় উচ্ছিষ্ট হিসেবে উৎপাদিত হয়। তাই হীরা বৃষ্টির এ ধারণাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। হয়তো সুদূর ভবিষ্যতে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। 

তবে এই গবেষণা কি শুধু গ্রহগুলোর অভ্যন্তরীণ অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য সহায়ক ছিল? না, এটি কয়েকটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এ থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে হীরা উৎপাদনের পথ উন্মোচন হয়েছে। গবেষকগণ উল্লেখ করেন, তাদের তৈরিকৃত ‘ন্যানোডায়মন্ড’ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, চিকিৎসাবিদ্যায়, ইলেকট্রনিক্স প্রভৃতিতে ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া এটি নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকে শক্তি উৎপাদন পদ্ধতির উন্নয়নের পথ উন্মোচন করে দেয়।

Related Articles