Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আবিষ্কৃত হলো ৮ নিউক্লিওটাইডের নতুন কৃত্রিম ডিএনএ!

ডিএনএ: জীবনের নীল নকশা

অসম্ভব বৈচিত্র্যপূর্ণ আমাদের জীবজগৎ। খালি চোখে এদের বেশিরভাগের মধ্যেই সহসা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ বিশাল এই পৃথিবীর সমস্ত প্রাণের মূল নকশা লুকিয়ে আছে মাত্র চার অক্ষরে গড়ে ওঠা একটি জৈব অণুর মধ্যে। এর নাম ডিএনএ (DNA)। জীবনের ব্লু-প্রিন্ট বা নীল নকশা বলা হয় একে।

ডিএনএ এর পূর্ণরূপ হলো ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড। এটি দ্বিসূত্রক আকৃতির জৈব অণু। প্যাঁচানো মইয়ের মতো এর গঠন। যার মধ্যে রয়েছে একটি ফসফেট গ্রুপ, একটি নাইট্রোজেন বেজ এবং ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার। নাইট্রোজেন বেস এবং ডিঅক্সিরাইবোজ সুগারকে একসঙ্গে বলে নিউক্লিওসাইড। আর, এর সঙ্গে ফসফেট গ্রুপ যুক্ত হয়ে নিউক্লিওটাইড তৈরি করে। এদিকে নাইট্রোজেন বেস আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে। পিউরিন আর পাইরিমিডিন। অ্যাডেনিন (A) আর গুয়ানিন (G) হলো পিউরিন। থায়ামিন (T) আর সাইটোসিন (C) হলো পাইরিমিডিন।

ডিএনএন; Image Source: medicalnewstoday.com

সহজ কথায় বললে, পৃথিবীর এই বিপুল বৈচিত্র্যময় প্রাণের পেছনের চাবিকাঠি বলতে মাত্র চারটি অক্ষর। A, T, G এবং C। এখানে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বলে রাখা প্রয়োজন। A সবসময় হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে T এর সঙ্গে যুক্ত হয়, আর C যুক্ত হয় G এর সঙ্গে। এই চার অক্ষরের বিভিন্ন ধরনের বিন্যাসের ফলেই তৈরি হয় বিভিন্ন প্রাণ। মানুষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পৃথিবীর সকল মানুষের ডিএনএর ৯৯.৯৯ শতাংশ একইরকম। কেবল ০.০০১ শতাংশ ভিন্ন। এজন্যই পৃথিবীর সব মানুষ ভিন্ন। তাদের কাজকর্ম, আচরণসহ সবকিছুতে এত এত বৈচিত্র্য!

যা-ই হোক। কথা হলো, একসময় মানুষ মনে করতো, জৈব অণু মানেই রহস্যজনক কিছু। ফ্রেডরিখ ভোলারের হাত ধরে আমরা জানলাম, এটা সত্য নয়। তিনি অ্যামোনিয়াম সায়ানেট থেকে ইউরিয়া তৈরি করেছিলেন। অর্থাৎ, নিতান্ত জড় পরমাণুর ঝাঁক একসঙ্গে হয়ে বানাতে পারে জৈব অণু। তার মানে, প্রাণ জিনিসটা এমন কিছু রহস্যময় নয়। অজৈব অণুর সঙ্গে এদের মূল পার্থক্য বলতে, পৃথিবীর সকল প্রাণ কার্বন-ভিত্তিক অণু দিয়ে তৈরি। আর, এদের গঠন অজৈব অণুর তুলনায় বেশ জটিল। আর পৃথিবীর প্রাণ ছাড়া আর কোনো ধরনের প্রাণের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।

শিল্পীর তুলিতে বিজ্ঞানী ফ্রেডরিখ ভোলার; Image Source:  Lithography by Rudolf Hoffmann, 1856

হ্যাছিমোজি ডিএনএ

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা নতুন এক আবিষ্কার করেছেন। এর হাত ধরে প্রাণের মূল গঠন নিয়ে আমাদের চেনাজানা চিন্তা-ভাবনার গতিপথ চিরদিনের জন্য বদলে গেছে।

গবেষকরা কৃত্রিমভাবে অতিরিক্ত চারটি নিউক্লিওটাইড বেসযুক্ত একটি নতুন ডিএনএ তৈরি করেছেন। অর্থাৎ কৃত্রিম এই ডিএনএতে মোট ৮টি নিউক্লিওটাইড রয়েছে! এর নাম দেয়া হয়েছে হ্যাছিমোজি ডিএনএ (জাপানি ভাষায় হ্যাছিমোজি শব্দের অর্থ ‘আট অক্ষর’)। সবচেয়ে বড় কথা, এই ডিএনএটি পুরোপুরি স্থিতিশীল এবং এটি প্রাকৃতিক ডিএনএর মতোই আচরণ করে। আমেরিকার ফাউন্ডেশন ফর অ্যাপ্লায়েড মলিকিউলার ইভোলিউশনের বিজ্ঞানীরা গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। আর এর ফান্ডিং দিয়েছে নাসা (NASA)।

হ্যাছিমোজি ডিএনএ প্রাকৃতিক ডিএনএর মতোই কাজ করতে পারে; Image Source: Wikimedia Commons

গবেষণাপত্রটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। পেশায় রসায়নবিদ স্টিভেন ব্যানার এই গবেষক দলের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। তার মতে, তাত্ত্বিক হিসাব থেকে এখন হাতে-কলমেও বোঝা যাচ্ছে যে, প্রাণের মূল নকশা আমাদের জানার বাইরে ভিন্ন কিছুও হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ফ্লয়েড রোমসবার্গ বলেন,

এটা আসলেই আমাদের জন্য বিশাল এক মাইলফলক। সেই সঙ্গে এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রাণের নীল নকশার পেছনের সেই চার অক্ষরের মধ্যে বিশেষ কিছু বা কোনো ‘জাদু’ নেই। চিন্তা-ভাবনার দিক থেকে এটা দারুণ এক অর্জন।

প্রকৃতির নিজস্ব রেসিপি থেকে বেরিয়ে এসে এমন কাজ করার চেষ্টা অবশ্য এবারই প্রথম নয়। ব্যানারের নেতৃত্বে একই বিজ্ঞানী দল প্রথম এমন কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করেছিলেন ১৯৮০ সালে। আর ২০১৪ সালে ছয় অক্ষরের আরেক ধরনের ডিএনএ একটি জীবিত প্রাণীর ভেতরে প্রবেশ করানো হয়েছিল রোমসবার্গের ল্যাবে। সেটি কাজও করেছে, নষ্ট হয়ে যায়নি। তবে, সেই ডিএনএটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক ডিএনএর মতো ছিল না। এখন সেটারই আরেকটু উন্নতরূপ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এবং একে আরো দ্বিগুণ করা যায় কি না, সেই লক্ষ্যে তারা আবারও কাজ শুরু করেছেন।

রসায়নবিদ স্টিভেন ব্যানার বলেছেন,

হ্যাছিমোজি ডিএনএ’র আকার, আকৃতি এবং গঠন ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে প্রাণের মূল নকশার ব্যাপারে আমরা আরো ভালো ধারণা পাবো। আসলে, বহির্জাগতিক প্রাণ কেমন হতে পারে, তাদের জীবনের মূল নকশা কী ধরনের জৈব অণুর মধ্যে থাকতে পারে এবং এরকম কোনো অণু খুঁজে পেলে তা থেকে আমরা কী আশা করতে পারি- এসব ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানার কাজেও আমাদেরকে সাহায্য করবে এই হ্যাছিমোজি ডিএনএ।

নতুন যে অক্ষরগুলোকে এই ডিএনএতে যুক্ত করা হয়েছে, তারা হলো P, B, Z এবং S। এরাও আগের ৪টির মতোই একইরকম নাইট্রোজেন বেস। এদের মধ্যেও পিউরিন এবং পাইরিমিডিন শ্রেণী আছে। নতুন এই চারটি অক্ষর নিজেদের মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমেই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়। S যুক্ত হয় B এর সঙ্গে, আর P যুক্ত হয় Z এর সঙ্গে। তবে, মিলের এখানেই শেষ নয়। নতুন এই অক্ষরগুলো ডজনখানেক নতুন রাসায়নিক প্যারামিটার নিয়ে এসেছে কৃত্রিম এই ডিএনএতে। প্যাঁচানো দ্বিসূত্রক এই অণু কোথায়-কীভাবে প্যাঁচ খাবে, এর আকার-আকৃতি বা গঠন কেমন হবে- তা এসব প্যারামিটারের উপর নির্ভর করেই নির্ধারিত হয়।

তথ্য সংরক্ষণাগার

ডিএনএ প্রাকৃতিকভাবেই ডাটা স্টোরেজ বা তথ্য সংরক্ষণাগার হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীতে বিকষিত প্রাণের মূল নকশা এর মাঝেই সংরক্ষিত রয়েছে। তবে, ডিএনএকে কৃত্রিম তথ্য সংরক্ষণাগার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সেজন্য তাকে অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী কাজ করতে হবে। নতুন কৃত্রিম ডিএনএ এই নিয়মগুলো মানে কি না, সেটা নিয়েই চিন্তায় ছিলেন বিজ্ঞানীরা।

ডিএনএ অণুর একাংশের এক্সরে ডিফ্র্যাকশন। হ্যাছিমোজি ডিএনএও একইরকম স্থিতিশীল; Image Source: nature.com

যেমন- জোড়ায় জোড়ায় যুক্ত হওয়া। হ্যাছিমোজি ডিএনএর শত শত কপি তৈরি করা হয়েছে। দেখা গেছে, প্রতি কপি জৈব অণুতেই S, B এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং P, Z এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এদেরকে বিভিন্ন বিন্যাসে যুক্ত করে, বেশ কিছু কপি তৈরি করে দেখতে হয় যে, এরা আদৌ স্থিতিশীল কি না। কারণ প্রাণের বিকাশ বা বিবর্তনের উপযোগী হতে হলে এর বিভিন্ন স্থিতিশীল বিন্যাস থাকা জরুরি। দেখা গেল, এরা স্থিতিশীল। বিভিন্ন বিন্যাসে এদেরকে যুক্ত করলেও কৃত্রিম ডিএনএটির অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়ে না।

এরপরে এলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। আট অক্ষরের এই ডিএনএ থেকে ঠিকভাবে আরএনএ (RNA) তৈরি করা সম্ভব কি না। কারণ, সহজ কথায়, ডিএনএ হলো প্রাণের পেছনের মূল নকশার সংরক্ষণাগার। কিন্তু এটা কাজে লাগানোর কোনো উপায় তার নেই। বিজ্ঞানী ব্যানারের ভাষায়, তথ্য সংরক্ষণ করে রাখাটা প্রাণের বিকাশের জন্য তেমন কোনো কাজের জিনিস না। কাজ করতে পারে, এমন যেকোনো অণুতে যেকোনো প্রয়োজনীয় তথ্য কত দ্রুত পাঠাতে পারে সেটাই মূল বিষয়।

জীবদেহের সকল কাজ করে আসলে প্রোটিন। আর, কাজটা কীভাবে করবে, সেটা প্রোটিনকে বলে দেয় ডিএনএ। আর প্রোটিন বানানোর জন্য প্রথমে ডিএনএ থেকে আরএনএ তৈরি হতে হয়। তার মানে, ডিএনএ থেকে আরএনএ বানানো গেলেই কেবল এ থেকে প্রোটিন বানানো সম্ভব। ব্যানারের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা সেটাও পরীক্ষা করে দেখেছেন। এবং এই পরীক্ষাতেও তারা সফল হয়েছেন।

এখনো আরো অনেক কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা বাকি। তবুও, আট সংখ্যার এই কৃত্রিম ডিএনএ প্রাণ গবেষণার ব্যাপারে আমাদেরকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। খুলে দিয়েছে অনেক নতুন সম্ভবনার দ্বার। বুঝিয়ে দিয়েছে, জীবনের মধ্যে রাসায়নিক কোনো জাদু না থাকতে পারে, কিন্তু তাতে এর গুরুত্ব বিন্দুমাত্রও কমে যায় না। এবং যতভাবেই চেষ্টা করা হোক, জীবনকে সহসা চেনাজানা কোনো সংজ্ঞার শেকলে আটকে ফেলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

This article is in Bangla language. It is about synthetic DNA with 4 additional letters . Necessary references are hyperlinked inside.

Feature Image: scientificamerican.com

Related Articles