Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আইনস্টাইনের পাঁচ বাড়ির ধাঁধা: মৎস্যাধারের মাছ চুরি করেছে কে?

শহরের বিখ্যাত মৎস্যাধারের দ্বারপ্রান্তে এক ডজন পুলিশের গাড়ি এসে জড়ো হয়েছে। গাড়ির অনবরত সাইরেনের শব্দে শহরের সবাই জেগে উঠেছে। সাইরেনের শব্দ মানেই অশুভ কিছু ঘটে যাওয়ার ইঙ্গিত। আর তা যদি মধ্যরাত্রে, তাহলে তো কথাই নেই। পুলিশ ভ্যানের পেছনের বড় গাড়ি থেকে কালো স্যুট পড়া এক অফিসার দরজা খুলে বেরিয়ে আসলেন। তার ঠোঁটে কামড়ে ধরা চুরুট থেকে সর্পিল আকারে ধোঁয়া বেরিয়ে দ্রুত বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। তার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ দেখে সার্জেন্টরা ভয়ে তটস্থ। তিনি শহরের পুলিশ বাহিনীর প্রধান বলে তার দুশ্চিন্তা হবারই কথা।

চুরির ঘটনায় তেমন নতুন কিছু নেই। এখানে সেখানে প্রায়ই চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু এবারের ঘটনা বেশ গুরুতর। শহরের মৎস্যাধার থেকে বেশ দুর্লভ প্রজাতির মাছ চুরি হয়ে গিয়েছে। সরকারের বিশেষ তত্ত্বাবধানে থাকা এই মাছকে গত বছর জাতীয় সম্পদ ঘোষণা করা হয়েছিলো। তাই উপর মহল থেকে সরাসরি পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে করেই হোক, দ্রুত সেই মূল্যবান মাছ খুঁজে বের করা চাই। পুলিশ প্রধান ঘটনাস্থল থেকে তার বাহিনী নিয়ে চোরের ফেলে যাওয়া সূত্র ধরে মহাসড়ক দিয়ে অগ্রসর হতে থাকলেন। তারপর বিশাল মহাসড়ক থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে সামান্য সরু পথ ধরে এগোতে থাকলেন। 

চোর কোথায় লুকিয়ে আছে? Source: The Kathmandu Post

খানিক দূর এগিয়ে যাওয়ার পর যেন সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেললেন তারা। পুলিশ প্রধান স্বয়ং থমকে দাঁড়ালেন। কারণ, সেই সরু পথ পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয়ে পাঁচটি বাড়ির দ্বারে গিয়ে শেষ হয়েছে। আর পাঁচটি বাড়ির নকশা দেখতে প্রায় একইরকম। এবার হিসাব জটিল হয়ে গেলো। কারণ, তারা একই সাথে পাঁচটি বাড়িতে তল্লাশি চালাতে পারবেন না। আর যদি তারা ভুল বাড়িতে তল্লাশি চালায়, সেক্ষেত্রে চোর আগেভাগে টের পেয়ে যাবে এবং পালিয়ে যেতে পারে। পুলিশ প্রধানের কপালের চামড়া ভাঁজ হয়ে গেলো। চিবুকে হাত দিয়ে তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলেন, “বদমাইশ চোর কোথায় লুকিয়ে আছে?”

আইনস্টাইনের ধাঁধা

আলবার্ট আইনস্টাইনকে কে না চেনেন? জগত কাঁপানো এই বিজ্ঞানী বাল্যকাল থেকেই প্রচণ্ড মেধাবী ছিলেন। লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, কিশোর আইনস্টাইন তার শৈশবে এক জটিল ধাঁধা তৈরি করেন। এই ধাঁধা পরবর্তীতে আইনস্টাইনের ধাঁধা হিসেবে পরিচিতি পায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ধাঁধার সাথে আইনস্টাইনের সম্পৃক্ততার কোনো শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাতে কী? ইতোমধ্যে তা আইনস্টাইনের ধাঁধা নামে ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ধাঁধার শুরুতে বেশ কিছু সূত্র প্রদান করা রয়েছে। সূত্রগুলো মাথায় রেখে সমাধানকারীকে ধাঁধা সমাধান করতে হয়। আপাতদৃষ্টিতে ধাঁধা বেশ জটিল মনে হলেও তা মোটেও জটিল নয়। ধাঁধার ভাষাতেও কোনো ফাঁকি নেই। তাই কেউ মাথা ঠাণ্ডা রেখে চিন্তা করলে খুব সহজেই এর উত্তর বেরিয়ে আসে।

ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলেই সমাধান পাওয়া যাবে; Source: imgflip.com

রহস্য সমাধানে সূত্র

ধাঁধার এই পর্যায়ে আমরা প্রতিবেশী পাঁচটি বাড়ি সম্পর্কে জানবো। পাঁচটি বাড়ি ছবির মতো পাশাপাশি অবস্থান করছে। মজার ব্যাপার হলো, বাড়িগুলোর পাঁচজন মালিকের প্রত্যেকেই জাতিগতভাবে ভিন্ন। এদের একেকজন জার্মান, সুইডিশ, ডেনিশ, ব্রিটিশ এবং নরওয়েজিয়ান নাগরিক। তবে ধাঁধার শুরুতে আমাদের ধরে নিতে হবে, প্রতিটি বাড়িতে মালিক ব্যতীত কেউ বাস করেন না। পাঁচটি বাড়ির দেয়ালের রঙও ভিন্ন। প্রত্যেক মালিক নিজের পছন্দের ব্র্যাণ্ডের সিগারেট এবং পানীয় পান করে থাকে। এদের প্রত্যেকের নিজস্ব পোষা প্রাণী রয়েছে। কিন্তু এদের মাঝে কোনো সাধারণ বৈশিষ্ট্য নেই। এরা প্রত্যেকেই একে অপরের থেকে আলাদা।

কোন বাড়ির মালিক চোর? Source: Popular Mechanics

পুলিশ প্রধানের হুকুমে অন্যান্য অফিসারগণ বিভিন্ন উৎস থেকে বাড়ির মালিকগণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে আনলেন। তথ্যগুলো বেশ বিচ্ছিন্ন ঠেকলেও আপাতত পুলিশ প্রধানের নিকট আর কোনো সূত্র নেই। তাই এই তথ্যগুলোর উপর নির্ভর করেই তাকে বের করতে হবে কোন মালিক আসল চোর। সূত্রগুলো হচ্ছে:

  1. লাল রঙের বাড়ির মালিক একজন ব্রিটিশ।
  2. সুইডিশ মালিকের পোষা প্রাণী কুকুর।
  3. ডেনিশ মালিক পানীয় হিসেবে চা পান করেন।
  4. সাদা বাড়ির বামদিকের প্রথম বাড়ির রঙ সবুজ। 
  5. সবুজ বাড়ির মালিক কফি পান করেন।
  6. যে মালিক পলমল সিগারেট সেবন করেন, তিনি পাখি পালন করেন।
  7. হলুদ বাড়ির মালিক ডানহিল সিগারেট সেবন করেন।
  8. মাঝখানের বাড়ির মালিক দুধ পান করেন।
  9. প্রথম বাড়ির মালিক একজন নরওয়েজিয়ান।
  10. যিনি ব্লেণ্ড সেবন করেন, তিনি বিড়াল পালনকারী মালিকের পরের বাসায় বাস করেন।
  11. ঘোড়া পালনকারী মালিকের পাশের বাসার মালিক ডানহিল সেবন করেন।
  12. যিনি ব্লুমাস্টারস সিগারেট সেবন করেন, তিনি বিয়ার পান করেন।
  13. জার্মান মালিক প্রিন্স সিগারেট সেবন করেন।
  14. নরওয়েজিয়ান মালিক নীল বাসার পাশের বাসায় বাস করেন।
  15. ব্লেণ্ড সেবনকারী মালিকের পাশের বাসার মালিক পানি পান করেন।

এই ১৫টি সূত্র ধরে এগুতে হবে পুলিশ প্রধানকে। এর মাঝেই লুকিয়ে আছে চোরের পরিচয় এবং অবস্থান। সমাধান পর্বে যাওয়ার পূর্বে পাঠকরা নিজে চেষ্টা করে দেখুন একবার। নিজে থেকে ধাঁধা সমাধান করার মজাই আলাদা কি না!

ধাঁধার সমাধান

ধাঁধার সমাধান করতে হলে অনেকেই বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। কিন্তু সবচেয়ে সুবিধাজনক পন্থা হচ্ছে Logic Grid তৈরি করা। এর মাধ্যমে পাঁচটি বাড়ির বিপরীতে বাড়ির মালিকদের বিভিন্ন অভ্যাস এবং বৈশিষ্ট্যসমূহ লিপিবদ্ধ করে ছক তৈরি করা হয়।

এভাবে লজিক গ্রিড তৈরি করলে সমাধান করা সহজ হয়ে যায়; Source: Wait but Why

সমাধানের শুরুতে আমরা ১৫টি সূত্র ভালোভাবে একবার দেখে নেবো। তারপর একে একে জানা তথ্য দিয়ে সঠিক স্থানে তথ্য দ্বারা ভরাট করবো। যেমন ৮ নং সূত্র অনুযায়ী, মাঝখানের বাড়ির মালিক দুধ পান করে। তাই ৩ নং ঘরে Drink এর শূন্যস্থানে দুধ লেখবো। আর প্রথম ঘরে বাস করা মালিক একজন নরওয়েজিয়ান (সূত্র ৯)। এভাবে দুটো ঘর পূরণ করার পর আমরা পরবর্তী সঠিক সূত্রের খোঁজ করবো। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ১৪ নং সূত্রে লেখা নরওয়েজিয়ান মালিকের পরের বাসার রঙ নীল। এর মানে ২ নং বাড়ির রঙ নীল। এবার সবুজ বাড়ির মালিকের Drink-এর ঘরে কফি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু তার আগে আমাদের সবুজ ঘরের অবস্থান চিহ্নিত করতে হবে। সূত্র ৪ অনুযায়ী, সাদা বাড়ির বামদিকের বাড়িটি সবুজ। কিন্তু এর ডানদিকে কোনো বাড়ির কথা উল্লেখ করা নেই। তাই আমরা সাদা বাড়িকে ৫ নং বাড়ি এবং সবুজ বাড়িকে ৪ নং বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করবো। ৩ নং বাড়ির রঙ সবুজ হতে পারে না কারণ সেখানে মালিক দুধ পান করেন। আর ২ নং এর রঙ আমরা পূর্বে নীল হিসেবে বের করেছি। আর ১ নং বাড়ির রঙ সবুজ হতে পারবে না কারণ এর ডানদিকের ঘরের রঙ সাদা নয়। এবার আমাদের গ্রিডের অবস্থা নিম্নের ছবির মতো দেখাবে।

সূত্র ধরে গ্রিড পূরণ করা হচ্ছে; Source: Youtube

১ নং সূত্র অনুযায়ী, লাল বাড়ির মালিক একজন ব্রিটিশ। এবার মাথা খাটালে বোঝা যাবে, ৩ নং বাড়িটির রঙ লাল এবং সেখানে ব্রিটিশ মালিক বাস করেন। কারণ, ১ নং বাড়ির মালিক একজন নরওয়েজিয়ান। রঙের ঘরে বাকি থাকে হলুদ। অতএব, ১ নং বাড়ির রঙ হলুদ এবং সূত্র ৪ অনুযায়ী নরওয়েজিয়ান মালিক ডানহিল সিগারেট সেবন করেন। সূত্র ১১ অনুযায়ী, ২ নং বাড়ির মালিক ঘোড়া পালন করেন। সমাধানের এই পর্যায়ে ধাঁধা সামান্য জটিল হয়ে উঠবে। তাই আমাদের এখন থেকে সতর্কতার সাথে সূত্র ধরে এগোতে হবে। এবার আমরা সূত্র পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য উত্তর দ্বারা গ্রিডের ঘরগুলো পূরণ করবো। এই কাজটি বেশ সময়সাধ্য তাই বেশ সাবধানতা অবলম্বন করে ভেবেচিন্তে পূরণ করতে হবে। প্রতিটি সম্ভাব্য উত্তরের প্রথম অক্ষর বসিয়ে সবগুলো ঘর পূরণ করার পর আমাদের গ্রিডের অবস্থা দাঁড়াবে নিচের ছবির মতো।

সম্ভাব্য উত্তর দ্বারা ঘরগুলো পূরণ করতে হবে; Source: Youtube

প্রথমেই ১ নং বাড়ির মালিকের পানীয়ের ঘরে পানি (W) দ্বারা পূরণ করতে হবে যেহেতু সেখানে আর কোনো সম্ভাব্য উত্তর নেই। সূত্র ১৫ অনুযায়ী, ২ নং বাড়ির মালিক ব্লেণ্ড সিগারেট সেবন করেন। এর ফলে একইসাথে সূত্র ১২ এর সমাধান পেয়ে যাব আমরা। যিনি ব্লুমাস্টার সেবন করেন, তিনি বিয়ার পান করেন। আমাদের একটি বাড়ি বাদ দিয়ে অন্যান্য সকল বাড়ির গ্রিডে সিগারেট এবং পানীয়ের ঘর একবার হলেও পূরণ করা হয়েছে। তাই এই দুই বৈশিষ্ট্যধারী বাড়ির মালিক ৫ নং বাড়িতে বাস করেন। তার মানে নীল বাড়ির মালিক চা পান করেন এবং তার জাতীয়তা ডেনিশ। 

সূত্র ১২ এর নিয়মে আমরা সূত্র ১৩ এর সমাধান বের করতে পারি যেখানে একমাত্র ৪ নং বাড়ির জাতীয়তা এবং সিগারেটের ঘর খালি রয়েছে। সুতরাং, ৪ নং বাড়ির মালিক জার্মান এবং তিনি প্রিন্স সিগারেট সেবন করেন। একই নিয়ম অনুসরণ করে সূত্র ২ এর সমাধান অনুযায়ী, ৫ নং বাড়ির মালিক সুইডিশ এবং কুকুর পালন করেন। আর সূত্র ৬ অনুযায়ী, পলমল সিগারেট সেবনকারী মালিক পাখি পালন করেন। এই দুটো উত্তর বসবে ৩ নং ঘরে। প্রায় শেষের দিকে এসে আমাদের গ্রিডের অবস্থা হবে নিম্নের ছবির মতো।

অধিকাংশ গ্রিড পূরণ করা হয়ে গেলো; Source: Youtube

এবার বাকি রইলো দুটি পোষা প্রাণীর ঘর। নরওয়েজিয়ান এবং জার্মানের মাঝে কোনো ব্যক্তি মাছ অথবা বিড়াল পালন করতে পারেন। সূত্র ১০ অনুযায়ী আমরা জানতে পারি, ব্লেণ্ড সেবনকারীর পরের বাড়ির মালিক বিড়াল পালন করেন। সেই অনুযায়ী, নরওয়েজিয়ান মালিক বিড়াল পালন করেন এবং জার্মান মালিক মাছ পালন করেন। এর মানে ৪ নং বাড়িতে তল্লাশি চালালেই পুলিশ প্রধান চোরকে খুঁজে পাবেন। কারণ, জার্মান মালিক মাছ পালন করেন।

অবশেষে বেরিয়ে আসলো চোরের পরিচয়; Source: Identity Theft Protection

এভাবে যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন কিছু সূত্র ধরে অগ্রসর হয়েও আমরা শেষপর্যন্ত চোরকে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছি। পুলিশ প্রধানের নিকট আমাদের সমাধানকৃত উত্তর প্রেরণ করা হলো। তিনি মুখের চুরুটখানা হাতে নিয়ে চশমা চোখে উত্তর দেখলেন। তার চেহারার দুশ্চিন্তার রেখা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো। তিনি বেশ হাসিখুশি মনে আমাদের ধন্যবাদ জানালেন। তারপর পুলিশ সদস্যগণকে তলব করে ৪ নং বাড়ি তল্লাশি করার নির্দেশ দিলেন। খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। হয়তো কিছুক্ষণ পরেই আমরা জার্মান মালিককে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় দেখতে পাবো। 

ফিচার ইমেজ: Anojh Gnanachandran

 

Related Articles