Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিগ ব্যাং ও মানবজাতির মহাজাগতিক সীমানা

রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় অনেকে হয়তো একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন। একটা গাড়ি হর্ন দিতে দিতে এগিয়ে আসার সময়ে হর্নের শব্দটা বেশ তীক্ষ্ণ শোনা যায়, আবার গাড়িটা যখন চলে যেতে থাকে তখন হর্নের শব্দটা বেশ ভোঁতা শোনায়। এই ব্যাপারটি ট্রেনের হুইসেল শোনার সময় সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যাবে। শব্দ একধরনের তরঙ্গ, গাড়ি যখন সেই তরঙ্গ ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে আসে তখন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যটা একটু কমে আসে। অপেক্ষাকৃত কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের শব্দ তীক্ষ্ণতর হয়। গাড়ি যখন এই শব্দ তরঙ্গ ছাড়তে ছাড়তে দূরে সরে যেতে থাকে তখন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যটা বেড়ে যায়, তাই শব্দটাও একটু ভোঁতা হয়ে আসে। তরঙ্গের উৎসের গতির সাথে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বেড়ে যাওয়া ও কমে যাওয়ার এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ডপলার ইফেক্ট

ডপলার ইফেক্ট শুধু শব্দ তরঙ্গের জন্যেই সত্য নয়, সব ধরনের তরঙ্গেই ডপলার ইফেক্ট প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় তরঙ্গ উৎসের গতিবেগ বের করাও খুব সহজ। আলোর তরঙ্গের ডপলার ইফেক্ট প্রক্রিয়া বের করার পর বিজ্ঞানীরা প্রথম যে বস্তুগুলোর গতি মাপার চেষ্টা করেছেন সেগুলো হচ্ছে নক্ষত্ররাজি। মেঘমুক্ত রাতে আকাশের দিকে তাকালে যে মিটমিট করে জ্বলা নক্ষত্রের বিশাল সম্ভার দেখা যায় তারা ঠিক কত বেগে কোনদিকে ছুটে যাচ্ছে এটা বিজ্ঞানীদের বেশ বড় কৌতূহলের বিষয় ছিল। এখানেও ঠিক গাড়ির হর্নের মতোই ব্যাপার ঘটে। যে নক্ষত্রের গতি মাপা হচ্ছে সেখান থেকে যে আলো বের হয়ে আসছে তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তার মানে নক্ষত্রটা দূরে সরে যাচ্ছে। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার এই ঘটনাকে বলা হয় রেড শিফট। এর কারণ হচ্ছে দৃশ্যমান আলোর লাল রঙের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। আর নক্ষত্র থেকে বিকিরিত আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয় তাকে ব্লু শিফট বলে।

Image Source: Youtube

হাবল তত্ত্ব ও লিম্যাটারের বিগ ব্যাং ধারণা

১৯২০ এর শেষের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট উইলসনের অবজারভেটরিতে জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবল ও তার সহকারি মিল্টন হিউম্যাসন ডপলার ইফেক্ট ব্যবহার করে বিংশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার করেন। অনেকগুলো নক্ষত্র ও গ্যালাক্সির গতিবেগ মেপে হাবল আবিষ্কার করলেন সবগুলো মহাজাগতিক পদার্থেরই রেডশিফট হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, যে নক্ষত্র বা গ্যালাক্সির দূরত্ব আমাদের থেকে যত বেশি তা ততটাই দ্রুত আরো দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটছে। এর আগে ভেস্টো স্লাইফার নামে আরেক জ্যোতির্বিদ অনেকগুলো সর্পিল নেবুলার মধ্যে এই রেড শিফটের ব্যাপারটি লক্ষ্য করেন। তিনি তখনো জানতেন না এই নেবুলাগুলো আসলে আমাদের অনেক দূরের ছায়াপথ। স্লাইফারের আবিষ্কারের গুরুত্বটি হাবল বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি পরিকল্পনা মাফিক আরো নিখুঁতভাবে এই মাপজোকের কাজটি করেছিলেন এবং সর্বপ্রথম আবিষ্কারটিকে একটি তত্ত্বে রুপদান করেন।

১৯২৭ সালে বেলজিয়ামের ক্যাথলিক প্রিস্ট জর্জেস লিম্যাটার সর্পিল নেবুলাগুলোর রেড শিফট থেকে সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের একটি মডেল প্রস্তাব করেন। তিনি এই মডেলের জন্যে আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটির সমীকরণগুলোর একটি সমাধান বের করেন। এই সমাধানটি অবশ্য ১৯২২ সালেই রাশিয়ান গণিতবিদ আলেক্সান্ডার ফ্রিডম্যান বের করেছিলেন। কিন্তু ফ্রিডম্যান মহাবিশ্বের প্রকৃতি ব্যাখ্যার পেছনে না ছুটে সমীকরণের গাণিতিকভাবে কতগুলো সমাধান বের করা সম্ভব সে ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। জর্জেস লিম্যাটারের মডেলে রেড শিফটের পরিমাণ কোনো ধ্রুব সংখ্যা ছিল না বরং পর্যবেক্ষকের দূরত্বের উপর এই সংখ্যাটি নির্ভর করতো। ১৯২৯ সালে এডউইন হাবলের কাজ এই মডেলের জন্যে একটি পর্যবেক্ষণমূলক ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

জর্জেস লিম্যাটার; Image Source: physicstoday.scitation.org

১৯৩১ সালে লিম্যাটার নতুন একটি হাইপোথিসিসের প্রস্তাবনা দেন। মহাবিশ্ব যদি ক্রমবর্ধমানই হয় তাহলে সুদূর অতীতে নিশ্চয়ই এটি ক্ষুদ্রতর ছিল এবং একেবারে শুরুতে মহাজগতের সকল বস্তু একটি প্রচন্ড ঘন আবদ্ধে একত্রিত ছিল। এর আগে আর্থার এডিংটন, উইলেম ডি সিটার ও আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানীরা যে স্থির ও অবিকশিত মহাবিশ্বের মডেল নিয়ে কাজ করছিলেন তা অসন্তোষজনক হিসেবে পর্যবসিত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে লিম্যাটার প্রস্তাব করেন- সম্পূর্ণ মহাবিশ্বটি প্রাথমিকভাবে একটিমাত্র কণা হিসেবে বিদ্যমান ছিল, তিনি যার নাম দেন ‘প্রিমিভাল এটম’ বা ‘আদি পরমাণু’। এই পরমাণুটি একটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভেঙে যায় যার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় স্থান ও সময় এবং এই বিস্ফোরণের ফলে তৈরি হওয়া সম্প্রসারণ আজ পর্যন্ত চলমান রয়েছে। এই ধারণাটিই বিগ ব্যাং তত্ত্বের সূচনা করে।

মহাবিশ্বের একটি টাইমলাইন; Image Source: NASA/WMAP

১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশকের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সকল জ্যোতির্বিদই একটি অনন্ত স্থিরাবস্থার মহাবিশ্বের মডেল চিন্তা করেছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই বিগ ব্যাংয়ের ‘সময়ের শুরু’ ব্যাপারটি ধর্মীয় ধারণা থেকে এসেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। ধর্মের প্রতি লিম্যাটারের গভীর বিশ্বাসই হয়তো তাকে মহাজগতের শুরুর ব্যাপারে চিন্তা করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল, যদিও তিনি বেশ পরিষ্কারভাবেই বলেছিলেন তার ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের চিন্তাভাবনার কোনো সংযোগ এবং কোনো সংঘর্ষ নেই। তিনি দুটোকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে দেখেন যা মহাবিশ্বের রহস্যের সমান্তরাল দুটো ব্যাখ্যা হিসেবে বিশ্বাস করেন।

As far as I can see, such a theory remains entirely outside any metaphysical or religious question. It leaves the materialist free to deny any transcendental Being… For the believer, it removes any attempt at familiarity with God… It is consonant with Isaiah speaking of the hidden God, hidden even in the beginning of the universe.

বিগ ব্যাং বনাম স্টেডি স্টেট মডেল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ব্যাখ্যা হিসেবে দুটো মডেলের উত্থান ঘটে। এর মধ্যে একটি ছিল লিম্যাটারের বিগ ব্যাং থিওরি যা পরবর্তীতে জর্জ গ্যামো আরো উন্নত করেন। জর্জ গ্যামো ‘বিগ ব্যাং নিউক্লিওসিনথেসিস’ এর মাধ্যমে বিগ ব্যাংয়ের মহাবিস্ফোরণের পরের সময়ে মৌলের নিউক্লিয়াস সৃষ্টির ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেন। তার সহকারি রালফ আলফার ও রবার্ট হারম্যান ‘কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড’ এর ব্যাপারে সর্বপ্রথম ধারণা দেন। এটা একধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন যা মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন থেকে সম্পূর্ণ মহাশূন্যকে ছেয়ে আছে। ১৯৬৪ সালে এই রেডিয়েশনের আবিষ্কারই বিগ ব্যাংকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিবর্তনের শ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হিসেবে নির্বাচন করে দেয়।

সম্পূর্ণ আকাশের কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড তাপমাত্রার ছবি; Image Source: NASA

মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের অন্য ব্যাখ্যাটি ছিল ফ্রেড হয়েলের স্টেডি স্টেট মডেল। এই মডেল অনুযায়ী ক্রমবর্ধমান মহাজগতের যে কোনো সময়েই পদার্থের ঘনত্ব অপরিবর্তিত থাকে। তার কারণ সম্প্রসারণের সাথে সাথে মহাজগতে প্রতিনিয়ত পদার্থের উৎপত্তি হয়। ১৯৬৪ সালে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন আবিষ্কারের পরে এই তত্ত্বটি তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে এভাবে: সুপ্রাচীন নক্ষত্রগুলো থেকে নির্গত আলো ছায়াপথের বিভিন্ন ধূলিকণার সাথে সংঘর্ষের ফলে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে যা এই রেডিয়েশনের কারণ। কিন্তু এই রেডিয়েশনের পরিমাণ মহাশূন্যের প্রত্যেক জায়গাতে প্রায় একই পাওয়া যায়। এর ফলে বিভিন্ন নক্ষত্র থেকে নির্গত আলো বিক্ষিপ্ত হয়ে মহাশূন্যের প্রতিটি প্রান্তে এসে সমপরিমাণ রেডিয়েশন তৈরি করার ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া এই রেডিয়েশনটি কোনো প্রকার পোলারাইজেশনের বৈশিষ্ট্যও দেখায় না যা সাধারণত বিক্ষিপ্ত হওয়া আলোকরশ্মি থেকে পাওয়া যায়। এরকম বিভিন্ন সমস্যার কারণে অধিকাংশ পদার্থবিজ্ঞানী এই মডেলটিকে গ্রহণ করেননি।

ফ্রেড হয়েল; Image Source: Britannica

১৯৯০ এর দশকে টেলিস্কোপ প্রযুক্তির উন্নতির কারণে বিগ ব্যাং সৃষ্টিতত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। জ্যোতির্বিদরা তখন বিগ ব্যাং মডেলের অনেকগুলো প্যারামিটার সূক্ষ্ণ ও সঠিকভাবে পরিমাপের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে দুটি আলাদা প্রজেক্টে বিজ্ঞানীরা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আবিষ্কার করেন। তা হচ্ছে- মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের বেগ সময়ের সাথে নিরন্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পর্যবেক্ষণ একটি রহস্যময় শক্তি ‘ডার্ক এনার্জি’ ধারণার ভিত্তি স্থাপন করে দেয়। অনুমান করা হচ্ছে এই ডার্ক এনার্জিই মহাবিশ্বের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া বেগের জ্বালানি যোগাচ্ছে। ১৯৯৮ সালের এই মহাগুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্যে পরবর্তীতে ২০১১ সালে সল পার্লমাটার, ব্রায়ান স্মিডট ও অ্যাডাম রিজকে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়।

বিকর্ষণধর্মী মহাকর্ষ

আমরা পদার্থ বলতে যা বুঝি অর্থাৎ অণু-পরমাণু থেকে শুরু করে গ্রহ-নক্ষত্র এমনকি ছায়াপথসহ সবকিছু মিলিয়ে মহাবিশ্বের মাত্র পাঁচ শতাংশ জায়গা দখল করেছে। বাকি পঁচিশ এবং সত্তর শতাংশ যথাক্রমে দখল করে আছে ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি। এভাবে ভাবলে ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত: আমরা যা কিছু অনুভব করি তা বাস্তব অস্তিত্বের খুবই ক্ষুদ্র একটা অংশ। বাকি অংশ অর্থাৎ ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে বলতে গেলে আমরা কিছুই জানিনা।

১৯৯৮ সালের আগপর্যন্ত ধারণা করা হত যে একসময় মহাকর্ষের টানে মহাজগতের প্রসারণ থেমে যাবে। কিন্তু মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে জানার পরে বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ ব্যাপারটি ভিন্নভাবে চিন্তা করতে বাধ্য হন। সম্প্রসারণের সাথে সাথে প্রতিনিয়ত মহাজগতে নতুন করে শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে। এই শূন্যস্থানগুলো ডার্ক এনার্জি দখল করে নিচ্ছে। এর থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় যে ডার্ক এনার্জি শূন্যস্থানের সাথে বেশ সহজাত। এ থেকে আরেকটা ধারণা জন্ম নিয়েছে। তা হলো- ডার্ক এনার্জি মহাশূন্যের একটা ধর্ম। শূন্যস্থান কোনো ‘কিছুই না’ তা নয়, বরং এর নিজস্ব একটা শক্তি রয়েছে। মহাবিশ্বের প্রসারণের সাথে সাথে শূন্যস্থান ও তার শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে যা মহাবিশ্বের প্রসারণকে আরো দ্রুততর করে তুলছে। এই ধারণাটি ১৯১৭ সালে আইনস্টাইনের দেওয়া একটি ধারণার সাথে অনেকটাই মিলে যায়। আইনস্টাইন বলেছিলেন, স্থান যদি অভিন্ন ও অদৃশ্য কিছু দিয়ে পূর্ণ থাকে তাহলে তার মধ্যে যে মহাকর্ষ কাজ করবে তা বিকর্ষণধর্মী। এই বিকর্ষণই মহাজগতের প্রসারণকে ত্বরান্বিত করে চলেছে।

মহাজাগতিক সীমানা

আমাদের মিল্কিওয়ে, অতিপরিচিত এন্ড্রোমিডা ও আরো পঞ্চাশটির বেশি বামন ছায়াপথ মিলে যে অঞ্চল তৈরি করেছে বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন ‘দ্য লোকাল গ্রুপ’। এই অঞ্চলটির ব্যাস প্রায় দশ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। পদার্থবিজ্ঞানে আমাদের বর্তমান জ্ঞান অনুযায়ী মানবজাতি যদি ‘টাইপ থ্রি’ সভ্যতা তৈরি করতে পারে তারপরেও আমরা এই লোকাল গ্রুপটির বাইরে যেতে পারব না। এর কারণ হিসেবে রয়েছে বেশ সরল একটি সত্য: আমাদের জন্যে একটি সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে যা ভেদ করে আমরা কখনো বের হতে পারব না। ব্যাপারটি বেশ ভীতিকর!

Image Source: Antonio Ciccolella

প্রায় চার বিলিয়ন বছর আগে মহাবিশ্ব ডার্ক এনার্জি যুগে প্রবেশ করেছিল। এরপর থেকেই মহাকর্ষের প্রভাবে যে মহাজাগতিক বস্তুগুলো একত্রিত হয়ে এক গ্রুপে আবদ্ধ ছিল তাদের থেকে অন্য গ্রুপগুলোর দূরত্ব ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে শুরু করে যার গতি আজ পর্যন্ত অবিরাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের লোকাল গ্রুপের বাইরে আরো অনেক ছায়াপথের গ্রুপ রয়েছে কিন্তু তারা কেউই লোকাল গ্রুপের সাথে মহাকর্ষের বাঁধনে আবদ্ধ নয়।

মহাবিশ্ব যতই প্রসারিত হচ্ছে আমাদের সাথে অন্যান্য গ্রুপের দূরত্ব বেড়ে চলেছে। সময়ের সাথে ডার্ক এনার্জি পুরো মহাবিশ্বকে আমাদের থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি গ্রুপটা এখনই প্রায় কয়েক মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। কিন্তু তারা যে বেগে দূরে সরে যাচ্ছে আমরা কখনো তার সাথে তাল মেলাতে পারব না। লোকাল গ্রুপ থেকে বের হতে পারলেও অনন্তকাল ধরে আমাদের স্পেসশিপ গাঢ় শূন্যতার মাঝেই শুধু ভেসে বেড়াবে, কখনো কোথাও পৌঁছাতে পারবে না।

কয়েক বিলিয়ন বছর পরে আকাশ জুড়ে এমনই শূন্যতা দেখা যাবে; Image Source: Karen L. Nyberg

কয়েক বিলিয়ন বছর পরে লোকাল গ্রুপে জন্ম নেওয়া কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী তার গ্রহের আকাশে তাকিয়ে শুধুমাত্র তার পরিচিত নক্ষত্রগুলোকেই দেখতে পাবে, এর বাইরে থাকবে শুধু শূন্যতা। মহাজাগতিক শূন্যতায় এই লোকাল গ্রুপটি একটি দ্বীপে পরিণত হবে। এই দ্বীপের বাইরের ছায়াপথগুলো এত দূরে চলে যাবে যে সেখান থেকে নির্গত আলো এতটাই ক্ষীণ হবে তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। সেখানে বসবাসকারী কেউ নক্ষত্ররাজি পর্যবেক্ষণ করে মহাবিশ্বের জন্ম কিংবা তার পরিণতি সম্পর্কে কোনো ধারণা পাবে না। আমরা আজ যা জানি তার কিছুই তাদের জানা সম্ভব হবে না। তারা হয়তো সিদ্ধান্ত নেবে: পুরো মহাবিশ্ব স্থির, অপরিবর্তনীয় এবং লোকাল গ্রুপটিই এই অনন্ত অন্ধকারের মাঝে একমাত্র মরুদ্যান।

প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘বিজ্ঞান’ বিভাগে এখন থেকে নিয়মিত লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This Bangla article is a brief discussion of the history of Big Bang theory and about the boundary line in space that human can never cross. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image: Creative Commons

Related Articles