Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আঙুলের নখ যেভাবে বৃদ্ধি পায়

যারা হাতের আঙুলে নখের উপর মেহেদী দিয়েছেন কখনো, তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, মেহেদীর রঙ কীভাবে ধীরে ধীরে মুছে যায়। রঙ আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামতে থাকে। প্রথমে নখের গোঁড়ায় ফাঁকা হতে শুরু করে। কখনো কি ভেবেছেন কেন এমনটা হয়? আঙুলের নখ তিনদিকে আবদ্ধ, শুধুমাত্র সামনের দিক উন্মুক্ত, এই সামনের দিকটিই নখ বৃদ্ধি পাবার জন্য যথেষ্ট নয় কি?

এমনটা হতেও পারতো, তবে সেক্ষেত্রে অনেক সমস্যা দেখা যেতো। উদাহরণ হিসেবে মেহেদীর রঙের কথাই ধরা যাক। এই রঙ কখনো নখ থেকে মুছে যেতো না, সামনের মুক্ত অংশে নখ বৃদ্ধি পেতো, আর আমরা কেটে ফেলতাম বাড়তি অংশটুকু। হয়তো আঙুলের নখ নিয়ে কিংবা মাথার চুল নিয়ে কখনো ভাবনা জাগেনি মনে। জীবদেহে থাকা কোনোকিছুই ফেলনা নয়, সবকিছুরই প্রয়োজন রয়েছে। নখের প্রয়োজনীয়তা নখ কাঁটার পর উপলব্ধি করতে পারেন নিশ্চয়ই। সৌন্দর্যবর্ধন এবং সূক্ষ্ম কোনো বস্তু ধরা ছাড়াও আরো অনেক কাজ রয়েছে নখগুলোর। 

আঙুলের অগ্রভাগে উপস্থিত হলুদ অংশের কুটুরিগুলোই পাল্প স্পেস নামে পরিচিত; Image Source: Atlas of Dermatologic Ultrasound

আঙুলে পাল্প স্পেস নামে ছোট ছোট কুঠুরীর মতো রয়েছে, সবধরনের আঘাত থেকে আঙুলের অগ্রভাগে অবস্থিত এ পাল্প স্পেসটিকে রক্ষা করে থাকে নখ। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মাঝে কেবল প্রাইমেট বর্গের প্রাণীদেহে নখ পাওয়া যায়। এই নখ জন্মের পর নয়, বরং মাতৃগর্ভে থাকাকালেই তৈরি হয়ে যায়। কেরাটিন জাতীয় প্রোটিন নির্মিত এই নখ শক্ত এক আবরণের মতো আবৃত করে রাখে আঙুলের অগ্রভাগকে। 

মাতৃগর্ভে একটি শিশুর বয়স যখন ২০ সপ্তাহ পূর্ণ হয়, আঙুলগুলোর অগ্রভাগে শক্ত একটি আবরণের মতো তৈরি হতে শুরু করে। মাতৃগর্ভে ২৮০ দিন পূর্ণ করে একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হতে হতে সেই আবরণগুলো পরিপূর্ণ নখে পরিণত হয়। 

একটি নখের বিভিন্ন অংশ©Lineage

আঙুলের গোঁড়ায়, নখ যেখানে ত্বকের সাথে মিশে গেছে, এই অংশটুকুকে বলা হয় কিউটিকল, এর ভেতরের দিকে, আঙুলের আরো গভীরে থাকে নখের মূল; একে ম্যাট্রিক্স বলা হয়। এই ম্যাট্রিক্স থেকেই অনবরত নখের সৃষ্টি হতে থাকে। নখগুলো গোড়ার দিকে যেখানে গিয়ে ত্বকে মিশেছে, সেখানে সম্পূর্ণ সাদা অর্ধচন্দ্রাকৃতির একটি অংশ দেখা যায়। না দেখতে পেলেও সমস্যার কিছু নেই, সাধারণত দেখা যাবার কথা নয়। বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে তাকালে হয়তো স্পষ্ট দেখা যেতে পারে। এই অংশটুকুকে বলা হয় লুনুলা, এটি ত্বকের নিচে ম্যাট্রিক্সের বাড়তি অংশ। অর্ধচন্দ্রাকৃতির হওয়ায় এর নাম হয়েছে লুনুলা।

নখ এবং চুল মৃত কোষ দিয়ে তৈরি। কোনো ধরনের স্নায়ু সংযোগ থাকে না বলে নখ কিংবা চুল কাঁটলে আমরা ব্যথা পাই না। কিন্তু এই যে নখের ম্যাট্রিক্স অংশটুকু, এটি মৃত নয়, জীবিত কোষ দ্বারা তৈরি হয়েছে, ত্বকের নিচে এর সাথে রক্তবাহিকা এবং স্নায়ু সংযুক্ত থাকে। রক্তবাহিকার মাধ্যমে পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়ে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন নতুন কোষ তৈরি করে এই ম্যাট্রিক্স, নতুন তৈরি হওয়া কোষগুলোকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়, যা কিউটিকল পার করে বাইরের দিকে উন্মোচিত হয়।

নখ হিসেবে আমরা যে অংশটুকুকে চিনি, এই শক্ত আবরণটুকুকে বলা হয় ‘নেইল প্লেট’। ম্যাট্রিক্স কোষ থেকে অনবরত কেরাটিন কোষ তৈরি হয়ে বাইরে এসে নেইল প্লেট তৈরি করে। এই কোষগুলো কেরাটিন জাতীয় প্রোটিন তৈরি করে বলেই এরা শক্ত হয়ে যায় মারা যাবার পর। এখন প্রশ্ন হলো, নতুন কোষগুলো তৈরি হয়ে সামনের দিকে সমভাবে বণ্টিত হয় কীভাবে?

সমতা রেখে রেলগাড়ি চলার জন্য যেমন একটি রেল ট্র্যাক বা রেল লাইন রয়েছে, তেমনিভাবে নখেও একটি ট্র্যাক থাকে, একে বলা হয় নেইল বেড। নখের ঠিক নিচে একস্তর জীবিত কোষের আবরণ থাকে; এটি নেইল বেড নামে পরিচিত। এতে রক্তবাহিকা এবং স্নায়ু রয়েছে। এজন্যই নেইল বেডে কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা ব্যথা পাই।

ক্লাবিং উপস্থিত থাকলে হাতের নখগুলো এমন দৈত্যাকার ধারণ করে থাকে; Image Source: Drug Development Technology

নখ হিসেবে আমরা যেটুকু দেখছি পুরোটাই মৃত কোষে তৈরি। কিন্তু আমরা নখ কাঁটার সময় অগ্রভাগে নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত কাঁটতে পারি, ভেতরের দিকে কাটতে গেলেই ব্যথা লাগবে। মৃত কোষে নির্মিত নখ প্লেটে ব্যথা হয় না, যদি নখ উপড়ে ফেলা হয় কিংবা কাঁটা হয়, নেইল বেডে থাকা স্নায়ুর জন্যই আমরা ব্যথা পেয়ে থাকি। যদি কোনো দুর্ঘটনায় আঙুলে ক্ষতি হয়, নখ উপড়ে ফেলে দিতে হয়, একজন চিকিৎসক সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন নেইল বেড এবং ম্যাট্রিক্স অংশটুকুকে ঠিকমতো বসিয়ে দিতে। কারণ তাহলেই নতুন করে নখ গজিয়ে উঠবে। মোটকথা, নেইল বেড যদি অক্ষত থাকে, নেইল প্লেট ঠিকমতো পুনরায় তৈরি হয়ে যাবে।

বারংবার কোষ বিভাজনের মাধ্যমে নখের বেড়ে উঠাটাকে স্রষ্টার একটি উপহার হিসেবেই ভাবা যেতে পারে। নখগুলো যদি দাঁতের মতো স্থায়ী হতো, হয়তোবা আমাদের কষ্ট করে নখ কাটা লাগতো না। আর নখ কাটা নিয়ে এত ভাবতেও হতো না। কোনো দুর্ঘটনায় নখ পড়ে গেলেও সেখানে পুনরায় গজানোর সুযোগ থাকে। দাঁতের মতো স্থায়ী কিছু হলে এই সুযোগ আর থাকতো না। একবার নষ্ট হলে কিংবা উপড়ে গেলে বাকি জীবন নখ ছাড়াই থাকতে হতো। 

নখের বেড়ে উঠা খুবই ধীরগতির। পায়ের নখগুলো হাত থেকে আরো ধীর গতিতে বেড়ে উঠে। হাতের নখ প্রতি মাসে ৩ মিলিমিটারের মতো বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অর্থাৎ ছয় মাসের ভেতর একটি আঙুলের সম্পূর্ণ নেইল প্লেটটি প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবে নতুন নেইল প্লেট দ্বারা। কোনো দুর্ঘটনায় যদি নখের কোনো ক্ষতি হয়, চিন্তার কোনো কারণ নেই, নেইল বেড ঠিক থাকলে ৫-৬ মাসেই নতুন নখ তৈরি হয়ে যাবে। আর পায়ের নখগুলো প্রতিমাসে ১ মিলিমিটারের মতো বাড়ে, পুরো নেইল প্লেট প্রতিস্থাপিত হতে সময় প্রয়োজন প্রায় এক থেকে দেড় বছরের মতো।

পায়ের নখ থাকুক সুস্থ সবল; Image Source: Podiatry Belmont

নখ যে শুধু সৌন্দর্যের অংশ তা, আঙুলের অগ্রভাগকে সুরক্ষিত রাখার অস্ত্র তা নয়। মানুষের হাত পরীক্ষা করেই অনেক রোগ নির্ণয় সম্ভব। শরীরের অনেক রোগের লক্ষণই হাতে, আঙুলের ও নখে প্রকাশ পায়। উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলোর মধ্যে ক্লাবিং, লিউকোনাইকিয়া, কইলোনাইকিয়া বিশেষ। দেহের বিশেষ রোগে এই লক্ষণগুলো নখে দর্পণস্বরূপ প্রকাশিত হয়।

নখ কাটতে অসাবধানতায় এমন ইনফেকশন তৈরি হতে পারে; Image Source: Medical News Today

সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি সঠিক পদ্ধতিতে নখের যত্ন নিন। অনেকেই ম্যানিকিউর-প্যাডিকিউর করে থাকেন। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করলে নখে ইনফেকশন তৈরি হতে পারে। অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিন, যেসমস্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পার্লারগুলো, সেখানে প্রতিবার কাজ শেষে পরিষ্কার করা হয় কিনা। নখ কাটার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করুন। আঙুলের অগ্রভাগে নেইল বেডের সীমারেখার সামান্য সামনে পর্যন্ত কাটুন। একেবারে নেইল বেড পর্যন্ত কাঁটা হলে নেইল বেড উন্মোচিত হয়ে পড়ে, যেহেতু জীবিত কোষ রয়েছে, এর নিচেই অজস্য রক্তবাহিতা, দ্রুত ইনফেকশন তৈরি হবার সুযোগ থেকে যায়।

ছোট শিশুদের নখে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে। তাই বেশি গভীর করে নখ কাটবেন না; Image Source: The Irish Times

নিয়মিত নখ কাঁটুন, বাড়তি অংশে দেখা-অদেখা হাজারো ময়লা বা জীবাণু জমে থেকে মুখে চলে যায়, খাবারে মিশে যায়। খাবার গ্রহণের পূর্বে সঠিক ভাবে ভালোমতো হাত ধুয়ে নিন, নির্দিষ্ট সময় পর পর নখ কেটে ফেলুন। এতে অনেক রোগ থেকেই বেঁচে যাবেন আপনি। পায়ের নখের দিকেও নজর দিন, ওয়াশরুম থেকে জীবাণুগুলো পায়ের নখ হয়েই আপনার ঘরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। পা পরিষ্কার করা হলেও নখ কদাচিৎ পরিষ্কার করা হয়, তার চেয়ে বরং নিয়ম করে কেঁটে রাখুন। পরিবারে ছোটদের মাঝেও নখ কাঁটার এই সুন্দর অভ্যাসগুলো গড়ে তুলুন।

This is an article about the anatomy of fingernails & toenails, how they grow from a group of living cells into dead cells.

Reference: All the references are hyperlinked.

Featured Image: Getty Images

Related Articles