Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেভাবে বুঝবেন পৃথিবী আসলেই গোলাকার

অবিশ্বাস্য মনে পারে, কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতেও এমন কিছু মানুষ আছে, যারা মনে করে পৃথিবী গোলাকার না, বরং সমতল। এই তত্ত্বে বিশ্বাসীদের একটি সংগঠনও আছে, যার নাম দ্য ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি। এদের ধারণা অনুযায়ী, গোলাকার পৃথিবী সম্পর্কিত যত গবেষণা এবং ছবি বা ভিডিও প্রমাণ আছে, সব নাসা এবং উন্নত বিশ্বের সরকারগুলোর ষড়যন্ত্র। বাস্তবে পৃথিবী একটি চাকতির মতো সমতল পৃষ্ঠ বিশিষ্ট, চন্দ্র এবং সূর্যের আকার খুব বেশি না, সেগুলো মাত্র কয়েকশ কিলোমিটার উপর দিয়ে পৃথিবীর উপর বিচরণ করে এবং পৃথিবী সহ সমগ্র মহাবিশ্ব প্রচন্ড বেগে উপরের দিকে ছুটে যায় বলেই মাধ্যাকর্ষণের সৃষ্টি হয়।

ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটির সদস্যদের মতে পৃথিবী যেরকম; Source: videoblocks.com

মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবী যে আসলেই গোলাকার, সেটি বোঝার জন্য নাসা বা কোনো দেশের সরকারের উপর নির্ভর করার কোনো দরকার নেই। নাসা বা আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই মানুষ জানত পৃথিবী গোলাকার। অনেকের ধারণা, আমেরিকা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ক্রিস্টোফার কলম্বাস পৃথিবীকে গোলাকার প্রমাণ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে পৃথিবী যে গোলাকার, তা আরো আগে থেকেই মানুষ জানত। কোনো প্রকার জটিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই অতি সাধারণ কিছু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আপনিও সহজেই বুঝতে পারবেন পৃথিবী আসলে সমতল নয়, বরং গোলাকার।

চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহের আকার

আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে, পিথাগোরাস সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন যে, চাঁদ বৃত্তাকার। সেখান থেকেই তিনি ধারণা করেন, পৃথিবী সহ অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুও বৃত্তাকার। এখনও যদি আমরা টেলিস্কোপের সাহায্যে অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে নিশ্চিতভাবেই দেখতে পারব, মহাবিশ্বের প্রায় সকল বস্তুই মোটামুটি বৃত্তাকার। চাকতির মতো সমতল কোনো গ্রহের অস্তিত্ব কোথাও নেই। স্বাভাবিকভাবেই আমরা ধরে নিতে পারি, পৃথিবীর আকারও অন্যান্য গ্রহের মতোই হবে।

চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ

চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের উপর পৃথিবীর ছায়া; Source: Popsci.com

পিথাগোরাসের মৃত্যুর প্রায় ১৫০ বছর পর, অ্যারিস্টটল সর্বপ্রথম বৃত্তাকার পৃথিবীর পক্ষে সবচেয়ে জোরালো যুক্তি দেখান। তিনি লক্ষ্য করেন, চন্দ্রগ্রহণের সময় যখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে, তখন ছায়ার আকার অর্ধবৃত্তাকার হয়ে থাকে। এ থেকেই তিনি সিদ্ধান্তে আসেন, পৃথিবী গোলাকার। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে চন্দ্রগহণের সময় মোটামুটি একই রকম অর্ধবৃত্তাকার ছায়া দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পৃথিবী শুধু গোলাকারই না, তা প্রায় নিরেট বৃত্তাকার।

দিগন্তে জাহাজের আবির্ভাব

সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে কেউ যদি দূর থেকে কোনো জাহাজের আগমন প্রত্যক্ষ করে, তাহলে তার কাছে মনে হবে জাহজটি যেন সমুদ্রের পানি থেকে উঠে আসছে। পৃথিবী যদি সমতল হতো, তাহলে এরকম মনে হতো না, বরং সেক্ষেত্রে জাহাজটি প্রথমে অস্পষ্ট থাকত এবং ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতো। কিন্তু পানি থেকে উঠে আসতে দেখা যাওয়ার ঘটনা থেকেই বোঝা যায় পৃথিবী বৃত্তাকার।

ব্যাপারটি বোঝার জন্য খুব সহজ একটি পরীক্ষা করা যায়। বৃত্তাকার একটি ফুটবলের উপর একটি পিঁপড়াকে বসিয়ে ফুটবলটিকে ঘুরিয়ে পিঁপড়াটিকে দৃষ্টির বাইরে থেকে ধীরে ধীরে দৃষ্টির আওতায় আনতে থাকলে জাহাজের মতোই সেটিকে দিগন্ত থেকে উদিত হচ্ছে বলে মনে হবে। কিন্তু একই পিঁপড়াকে যদি সোজা একটি লম্বা রাস্তায় দূর থেকে ধীরে ধীরে কাছে আসতে দেওয়া হয়, তাহলে সেটি অস্পষ্ট থেকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকবে।

জাহাজ হঠাৎ করে যেভাবে দৃশ্যমান হয়; Source: Popsci.com

পরিবর্তনশীল নক্ষত্র

আজ থেকে প্রায় ২,৩৫০ বছর পূর্বেই গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল লক্ষ্য করেন, বিষুবীয় রেখা থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে যেতে থাকলে আকাশের নক্ষত্রগুলোর অবস্থান পরিবর্তিত হতে থাকে। যেসব নক্ষত্রকে বিষুবীয় অঞ্চলে ঠিক মাথার উপরে দেখা যায়, উত্তরে বা দক্ষিণে গেলে সেগুলো একদিকে হেলে পড়ে এবং বিপরীত দিক থেকে নতুন নতুন নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটতে থাকে।

অ্যারিস্টটল যখন মিসর এবং সাইপ্রাস ভ্রমণ করেন, তখনই প্রথম তিনি ব্যাপারটি লক্ষ্য করেন। ভ্রমণ থেকে ফিরে এসে তিনি লিখেন, মিসর এবং সাইপ্রাসের আকাশে এমন কিছু তারা দেখা যায়, যেগুলো গ্রীসের আকাশে দেখা যায় না। তিনি সিদ্ধান্তে আসেন, পৃথিবীর পৃষ্ঠ গোলাকার হলেই কেবল এরকম ঘটনা ঘটতে পারে।

পরিবর্তনশীল ছায়া

পৃথিবী গোলাকার হওয়ার কারণে ছায়ার পার্থক্য; Source: futurism.com

মাটির উপর একটি খুঁটি পুঁতে রাখলে তার ছায়া পড়বে। যেহেতু সূর্যের অবস্থান পৃথিবী থেকে অনেক দূরে এবং সূর্য থেকে আগত আলোক রশ্মিগুলো প্রায় সমান্তরাল, তাই পৃথিবী সমতল হলে পাশাপাশি দুটো এলাকায় একই সময়ে একই দৈর্ঘ্যের খুঁটির ছায়ার দৈর্ঘ্য একই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।

আজ থেকে প্রায় ২,২০০ বছর পূর্বে মিসরের আলেক্সান্দ্রিয়া লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান এরাতোস্থেনেস সর্বপ্রথম বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তিনি একটি নির্দিষ্ট দিনে ঠিক দুপুর বেলা আলেক্সান্দ্রিয়া এবং কয়েকশ কিলোমিটার দূরবর্তী শহর সিয়েনে একই দৈর্ঘ্যের দুইটি খুঁটির ছায়া পরিমাপ করেন। সিয়েনে সূর্য ঠিক মাথার উপরে থাকার কারণে কোনো ছায়া পড়েনি, কিন্তু আলেক্সান্দ্রিয়ায় সামান্য একটু ছাড়া পড়ে। এ থেকে তিনি নিশ্চিত হন যে, পৃথিবী বৃত্তাকার।

এরাতোস্থেনেস ছায়ার দৈর্ঘ্য থেকে সূর্যরশ্মির কোণ পরিমাপ করেন। শহর দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব এবং তাদের ছায়ার কৌণিক পার্থক্য থেকে তিনি প্রায় নিখুঁতভাবে পৃথিবীর পরিধিও নির্ণয় করতে সক্ষম হন। এরাতোস্থেনেস পৃথিবীকে সম্পূর্ণ বৃত্তাকার মনে করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে পৃথিবী উত্তর-দক্ষিণ দিক একটু চাপা হওয়ায় তার হিসেবে সামান্য পরিমাণ ভুল ছিল।

উঁচু স্থান থেকে দূরের দৃশ্য

উঁচু স্থান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়; Source: Popsci.com

কোনো গাছ বা উঁচু ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে খালি চোখে অথবা দূরবীণের সাহায্য সর্বোচ্চ যতদূর পর্যন্ত দেখা যায়, সেই গাছের উপরে অথবা ভবনের ছাদে উঠে তাকালে তার চেয়েও দূর পর্যন্ত দেখা যায়। পৃথিবী সমতল হলে এটি সম্ভব হতো না। সমুদ্রের তীরে সূর্যাস্তের সময় খুব সহজেই এই পরীক্ষাটি করা সম্ভব। সূর্যাস্তের সময় মাটিতে শুয়ে থাকলে ঠিক যে মুহূর্তে সূর্য ডুবে গেছে বলে মনে হবে, তখন উঠে দাঁড়ালেই দেখা যাবে, সূর্য পুরোপুরি ডোবেনি, তার কিছু অংশ তখনও দৃশ্যমান। একই স্থানে যদি আরও উঁচুতে ওঠা যায়, তাহলে সম্পূর্ণ সূর্যাস্তটিই পুনরায় উপভোগ করা সম্ভব হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠ গোলাকার বলেই এটি সম্ভব।

দিবা-রাত্রির দৈর্ঘ্য এবং বিভিন্ন অঞ্চলে সময়ের পার্থক্য

বাংলাদেশে যখন দুপুর ১২টা, অর্থাৎ সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে, বিশ্বের কিছু কিছু এলাকায়, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তখন রাত ১২টা। সূর্যের কোনো অস্তিত্বই সেখানে খুঁজে পাওয়া যায় না। পৃথিবী যদি সমতল হতো, তাহলে সময়ের খুবই সামান্য ব্যবধান হতো। এক দেশে রাত, অন্য দেশে দিন হতো না। পৃথিবী প্রায় বৃত্তাকার বলেই কোনো স্থানে সূর্য যখন মাথার উপরে থাকে, বিপরীত পৃষ্ঠ তখন সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে, অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পর্যায়ক্রমে দিন এবং রাতের আগমন ঘটে। এছাড়াও পৃথিবী গোলাকার বলেই বিষুবীয় অঞ্চলের সাথে উত্তর বা দক্ষিণ গোলার্ধে দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য পার্থক্য দেখা যায়।

ফিচার ইমেজ- Mic.com

Related Articles