Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পেঙ্গুইনের দলবেঁধে একসাথে চলা: অভ্যাস নয়, প্রয়োজন

প্রাণীকুলে প্রায়ই দেখা যায় যে এরা একসাথে দলগতভাবে চলাচল করে। ছোট পিঁপড়া থেকে শুরু করে হাতি পর্যন্ত প্রায় সব প্রাণীকে কোনো না কোনো সময় দলগতভাবে দেখতে পাওয়া যায়। এটা প্রাণীকুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে উষ্ণরক্ত বিশিষ্ট প্রাণীগুলোকে এভাবে চলাচল করতে বেশী দেখা যায়। শীতপ্রধান দেশে আর্মাডিলো থেকে শুরু করে পেঙ্গুইন প্রায় সব ধরনের প্রাণী, যাদের শরীরের রক্ত গরম, তাদেরকে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় এরকম দলবেঁধে পায়চারী করতে লক্ষ্য করা যায়।

সাধারণত মনে করা হয় যে হয়তো নিজেদের শরীর গরম রাখতে এমনটি করা হয়। কথাটি সত্যি, কিন্তু এর ভিতর আরও কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ আছে যেটা সম্পর্কে আজকের লেখায় আলোচনা করা হবে। কেন পেঙ্গুইনরা এন্টার্কটিকায় দলবেঁধে চলাচল করে সেটাও আজকের আরেকটি আলোচ্য বিষয়।

কেন পেঙ্গুইনরা এন্টার্কটিকায় দলবেঁধে চলাচল করে? Source: Popular Science

পদার্থবিজ্ঞানের খুব সহজ কিছু ধারণার মাধ্যমে এটা ব্যাখ্যা করা যায়। ধরা যাক, একটি এম্পেরর পেঙ্গুইন (পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা এবং ভারী পেঙ্গুইন) একলা দাঁড়িয়ে আছে। এই দাঁড়িয়ে থাকার ফলে তিনভাবে তার শরীর থেকে তাপশক্তির ক্ষয় হবে। প্রথমটি হবে তাপ পরিবহণের মাধ্যমে। এই তাপ পরিবহণ হবে পেঙ্গুইন এবং তার দাঁড়িয়ে থেকে মাটির মধ্যে। আরেকটি হবে পরিচলনের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়া ঘটবে পেঙ্গুইন এবং তার আশেপাশের বাতাসের মধ্যে, আরও ভালভাবে তাপীয় সঞ্চালন ঘটবে যদি বাতাসের গতিবেগ বেশী থাকে। সর্বশেষ যেভাবে তাপশক্তির ক্ষয় হবে তা হচ্ছে তাপীয় বিকিরণের মাধ্যমে। এই বিকিরণ ঘটবে আশেপাশের ঠাণ্ডা পরিবেশের সাথে যেখানে আকাশেরও প্রভাব আছে [১]।

পেঙ্গুইনরা দলবেঁধে একসাথে চলে প্রয়োজনের কারণে; Source: hnmnews.com

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, একটি পেঙ্গুইন যখন একা অবস্থায় থাকে এবং আশেপাশের পরিবেশ যদি ঠাণ্ডা হয় তাহলে তার শরীরের নিজস্ব তাপমাত্রা আশেপাশে ছড়িয়ে গিয়ে ক্ষয় হয়ে যায় এবং সেই পেঙ্গুইনটির অবশ্যই তখন ঠাণ্ডা লাগবে। তাপীয় সঞ্চালনের তিন প্রক্রিয়াতে যদি ক্ষয় হতে থাকে তাহলে সেই পেঙ্গুইনটির এই ঠাণ্ডার মধ্যে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে যাবে। বিশেষ করে যখন এটির নিজের শরীরই নিজেকেই উষ্ণ রাখতে পারছে না। এন্টার্কটিকার মতো ঠাণ্ডা জায়গা, যেখানে তাপমাত্রা -৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায়, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় তিনশো কিলোমিটার, সেখানে একলা একটি ছোট্ট পেঙ্গুইন নিজের তাপশক্তি ক্ষয় করে দিয়ে কীভাবে টিকে থাকতে পারবে? এটা একটু ভেবে দেখার বিষয়। এজন্যই তাদের দলবেঁধে থাকা।

তাপীয় সঞ্চালনের তিন প্রক্রিয়াতে যদি ক্ষয় হতে থাকে তাহলে সেই পেঙ্গুইনটির এই ঠাণ্ডার মধ্যে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে যাবে; Source: penguinsworld.com

এছাড়া শীতকালে যখন পেঙ্গুইনের বংশবৃদ্ধির সময়কাল, তখন এই দলবেঁধে থাকাটা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। পেঙ্গুইনদের ডিমে তাপ দেয়ার কাজটি পুরোপুরি বাবা পেঙ্গুইন করে থাকে। বাবা পেঙ্গুইন এই ডিমকে ঠাণ্ডা থেকে আলাদা রেখে দেয়। এই কাজটি সে করে ডিমকে নিজের পায়ের মাঝে রেখে। ঠাণ্ডা থেকে দূরে রেখে এভাবে সে প্রায় এক মাস পর্যন্ত রেখে দেয়।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ডিমে তাপ দিয়ে বাচ্চা ফোটানোর এই পুরোটা সময়ই বাবা পেঙ্গুইনকে না খেয়ে থাকতে হয়। কারণ তার নিজের খাবার আছে পানিতে। কিন্তু সে ডিমে তাপ দেয়া অবস্থায় ডিমকে রেখে নিজের খাবার সংগ্রহে যেতে পারে না। যেহেতু সে নিজে খাবার আনতে যেতে পারে না তাই এই সময়টা তাকে অন্যান্য পেঙ্গুইনের সাথে গাদাগদি করে দলবেঁধে থাকতে হয়। এবং এর ফলে তার নিজের শরীরের উষ্ণতা বজায় থাকে, তাপ বাইরে ক্ষয় হয়ে যেতে পারে না এবং ডিমেও তা দেয়া হয় [২]।

যেহেতু নিজে খাবার আনতে যেতে পারে না তাই এই সময়টা অন্যান্য পেঙ্গুইনের সাথে গাদাগদি করে দলবেঁধে থাকতে হয়; Source: Caters news agency

পেঙ্গুইন যে গাদাগাদি করে অবস্থান করে এই অবস্থানের একটি প্যাটার্ন আছে। সেটা হচ্ছে প্রতি ১ বর্গ মিটারে ১০টি করে পেঙ্গুইন অবস্থান করে। এভাবে একসাথে গায়ে গায়ে লেগে অবস্থান করলে পরিচলন এবং বিকিরণের মাধ্যমে তাপের যে ক্ষয় হয় তা অনেকাংশে কমে যায়। শুধুমাত্র যেসব পেঙ্গুইন দলবেঁধে থাকা অবস্থায় একদম সীমানায় অবস্থান করে তাদের ক্ষেত্রে তাপীয় ক্ষয়টা বেশী হয়। কিন্তু সীমানার কাছে থাকা পেঙ্গুইনগুলো তাদের একপাশে অবস্থান করা অন্যান্য পেঙ্গুইনের কাছ থেকে প্রাকৃতিক সাহায্য পেয়ে থাকে, যাতে করে তাদের নিজেদেরও তাপীয় ক্ষয় যেন কম হয়। এরকম দলবেঁধে থাকলে পেঙ্গুইনের গড় তাপীয় ক্ষয় অনেকখানি কমে যায়।

ব্যাপারটিকে আরেকটু পরিষ্কার করে বলি। ধরা যাক, কোনো একটি ঠাণ্ডা পরিবেশে অনেকগুলো গরম সিলিন্ডার রাখা হলো। সিলিন্ডারগুলো একেকটি একেক জায়গায় রাখা আছে। এর ফলে সিলিন্ডারগুলো থেকে যে তাপের ক্ষয় হবে সেটা কিন্তু বেশী হবে। আমরা যদি পুরো জায়গার তাপীয় ক্ষয় হিসেব করতে যাই তাহলে দেখা যাবে সার্বিক তাপীয় ক্ষয় অনেক বেশী পরিমাণে হয়েছে, কারণ প্রতিটি সিলিন্ডার একেক জায়গায় থাকার কারণে ওই জায়গার তাপ ক্ষয় হবার ক্ষেত্রফল বেড়ে গিয়েছে, যার কারণে তাপশক্তি ক্ষয়ের হারও বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন যদি সিলিন্ডারগুলোকে একসাথে একটি বান্ডেল বা গুচ্ছের মতো করা হয়, তাহলে কিন্তু তাপ ক্ষয় হবার ক্ষেত্রফল কমে যাচ্ছে এবং তাপশক্তি কম বেরিয়ে যাচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পেঙ্গুইনগুলো যখন দলগতভাবে থাকে তখন তাদের একাকী থাকার থেকে প্রায় ৩২% কম শক্তি ক্ষয় হয়। বিজ্ঞানীরা আরও বিপাকীয় ক্রিয়ার দিকও গণনা করেন এবং সেখান থেকে ফলাফল পান যে এরকম দলগতভাবে থাকলে পেঙ্গুইনদের শরীরের তাপমাত্রা ১% কমলে এর শরীরের তাপশক্তি ক্ষয় প্রায় সাত থেকে সতেরো শতাংশ পর্যন্ত বাঁচানো যায় [৩]।

বাবা পেঙ্গুইন এই ডিমকে ঠাণ্ডা থেকে আলাদা রেখে দেয়। এই কাজটি সে করে ডিমকে নিজের পায়ের মাঝে রেখে; Source: wordpress.com

প্রকৃতির ভিতর কী সুন্দর বিজ্ঞান লুকিয়ে আছে। প্রকৃতি তার সৃষ্ট প্রতিটি সৃষ্টিকে বিজ্ঞানের আওতায় নিয়ে এসে তাদেরকে রক্ষা করে যাচ্ছে। একটি ছোট্ট প্রাণীর জীবনধারা এবং বংশবৃদ্ধি শুধুমাত্র বিজ্ঞানের সাধারণ কিছু সূত্র দিয়ে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগে যে, এসব প্রাণী অন্যের কাছ থেকে কিছু শিখেনি, বরং প্রকৃতি থেকেই নিজে নিজে শিখে-পড়ে নিয়েছে, এরপর নিজে নিজে সেভাবে চলেছে। প্রকৃতি তাদেরকে এমনভাবে তৈরি করে দিয়েছে যে এসব প্রাণীদের পরবর্তী প্রজন্মও একইভাবে শিখে প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য লড়াই করবে।

পেগুইনগুলো নিজেদের অজান্তেই কিন্তু নিজেদের মধ্যে শক্তির ক্ষয় কমিয়ে দিচ্ছে। এর থেকে আমরা আমাদের পৃথিবীতে যে শক্তি ক্ষয়ের একটি সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে সেটার জন্য কাজ করতে পারি। পেঙ্গুইনের শক্তি ক্ষয় কমানোর উপায়গুলো আমরা আমাদের সভ্য জগতে প্রয়োগ করতে পারি।

তথ্যসূত্র:

[১] Walker, J. (2007). Flying Circus of Physics. John Wiley & Sons, Inc.

[২] Gilbert,  C.,  S.  Blanc,  Y.  Le  Maho,  and  A.  Ancel. (2008) Energy  saving  processes  in  huddling  emperor penguins: from experiments to theory,” Journal of Experimental Biology, 211, No. 1, 1-8.

[৩] Gilbert,  C.,  G.  Robertson,  Y.  Le  Maho,  Y.  Naito,  and  A.  Ancel (2006) Huddling  behavior  in  emperor penguins: Dynamics of huddling,  Physiology & Behavior, 88, 479-488

ফিচার ইমেজ সোর্সঃ Cool Antarctica

Related Articles