Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসও হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ

সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী মানুষের খাদ্য নিয়ে গবেষণা করে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তাদের হিসেবে, পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে মানুষের খাদ্যাভ্যাস অনেকটা পাল্টানো প্রয়োজন। সেই হিসেবে একটি খাদ্যতালিকাও প্রকাশ করেছেন তারা। এই তালিকা অনুসরণ করে খাওয়াদাওয়া করলে তা মানুষের জন্যে যেমন স্বাস্থ্যকর হবে, তেমনি মানুষের বর্তমান খাদ্যাভ্যাস পৃথিবীকে যে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে, সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

যদিও তাদের এই গবেষণা এখনো এইডস, ম্যালেরিয়া, এমনকি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সমপরিমাণ গুরুত্বও পায়নি। স্বাভাবিক। খাদ্যাভ্যাসের জন্য পৃথিবীতে দুর্যোগ ঘটে যেতে পারে, এটা শুনলে বরং হাসি পাওয়ার কথা। কিন্তু মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যান্সেটে প্রকাশিত নিবন্ধটির হিসেবে,

শুধু অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে প্রতিবছর ১১.৬ মিলিয়ন মানুষের অকালমৃত্যু বন্ধ করা সম্ভব।

কাজটি নিঃসন্দেহে যথেষ্ট কঠিন, তবে সেটা করাটা যে জরুরি, সেটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই।

তাদের গবেষণা বলছে, লাল মাংস বা চর্বিযুক্ত মাংস, অর্থাৎ গরু বা খাসির মাংস এবং হোয়াইট ডেথ বা চিনি খাওয়ার পরিমাণ অর্ধেকের মতো কমাতে হবে এবং ফলমূল, তরকারি, সবজি, বাদাম ইত্যাদি খাওয়ার পরিমাণ অনেক বাড়াতে হবে।

দ্য ল্যান্সেট পত্রিকার সম্পাদক ড. রিচার্ড হরটনের মতে, এই রিপোর্টটির পেছনের জরিপ আমাদেরকে ভয়াবহ একটি তথ্যের দিকে চোখ খুলে তাকাতে বলছে। তুলনামূলকভাবে ১ বিলিয়ন মানুষ যখন খাবারের অভাবে ভোগে, তখন ২ বিলিয়ন মানুষ অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়া করে। আর, এরা যে খাবারগুলো খায়, সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ফলে, চারপাশের অনেককেই ডায়াবেটিস, এলোমেলো ব্লাড প্রেশার, হৃদরোগ ইত্যাদি রোগে ভুগতে দেখা যাচ্ছে। সহজ কথায়, একদল মানুষ যেমন না খেয়ে মারা যাচ্ছে, তেমনি আরেকদল মানুষ মারা যাচ্ছে ভুল খাবার খেয়ে। তারপরও, খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে মানুষ যথেষ্ট সচেতন হয়ে ওঠার কথা ভাবার চেষ্টাও করছে না।

হিসেব বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা বেড়ে ১০ বিলিয়নে গিয়ে পৌঁছাবে। জনসংখ্যা যেহেতু ক্রমেই বাড়ছে, কমছে না— তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা হলো, পুরো পৃথিবীই এর ফলে ঝুঁকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।

২০১৫ সালে প্যারিসে একটি পরিবেশ বিষয়ক চুক্তি হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, কলকারখানা বা বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপাদিত যেসব গ্যাস বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী, এদের উৎপাদন যথাসম্ভব কমানো। মোটামুটি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে এই পরিমাণ প্রাথমিকভাবে কমিয়ে আনা গেলে ভবিষ্যতে সেটাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব- এরকমটাই ছিল পরিকল্পনা। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো এবং কার্বন উৎপন্ন হয়, এমন শক্তির উৎস ব্যবহার করা যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে পারলে সেটা সম্ভব।

দিনে ১৪ গ্রামের বেশি গরুর মাংস খাওয়া যাবে না কোনোভাবেই; Image Source: pinterest.com

এর মাঝে ‘কিন্তু’ হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ এবং বিভিন্ন পশুর খাদ্যাভ্যাস। এসব পশুর খাদ্যাভ্যাসের পেছনেও আসলে মানুষই দায়ী। যেমন- নিয়মিতহারে মাংস খাওয়ার জন্য গরু লালনপালন করলে গরুর পরিমাণ ভয়াবহরকম বেড়ে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। আর, এসব পশুর আবর্জনা থেকে তৈরি হয় মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড। তার উপর মানুষের নিজেদের আবর্জনাও তো আছে। এছাড়াও, প্রাকৃতিক খাবার না খাইয়ে কৃত্রিম যেসব খাবার পশুদেরকে খামারে খাওয়ানো হয়, সেসবও পরিবেশের জন্য নিতান্ত কম ক্ষতিকর না।

হ্যাঁ, এটা তো বোঝাই যায় যে, মানব-আবর্জনা নিয়ে আপাতত সেভাবে কিছু করার নেই। কিন্তু পশুচাষের এই সমস্যাগুলো চাইলে আসলে অনেকটুকুই কমিয়ে আনা সম্ভব।

পরিবেশবান্ধব এই খাদ্য তালিকাটি কেমন হতে পারে, এ ব্যাপারেও বিস্তারিত একটি ধারণা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সে হিসেবে,

জনপ্রতি দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ দেয়া হয়েছে ২৫০০ কিলোক্যালরি

তালিকায় সবজির পরিমাণ রাখা হয়েছে ৩০০ গ্রাম, যার বিপরীতে গরু-ভেড়া ইত্যাদির মাংস খাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৪ গ্রাম। চিনির হিসেব করা হয়েছে ৩১ গ্রামের মতো, যেটা থেকে ১২০ কিলোক্যালরি পাওয়া যাবে। সাথে ২০০ গ্রাম ফল এবং ২৫০ গ্রাম দুগ্ধজাত খাবার থেকে ২৭৯ কিলোক্যালরি এবং ২৩২ গ্রাম শস্যজাত খাদ্য থেকে ৮১১ কিলোক্যালোরি- স্বীকার করতেই হবে, দারুণ সুষম হয়েছে খাদ্যতালিকাটি।

এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিবেশের প্রভাব নিয়েও ভাবতে হবে। যেমন, উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর মানুষ দৈনিক ১৪ গ্রামের সাড়ে ছয় গুণ বেশি মাংস খায়। স্বাভাবিকভাবেই, এশিয়ার দেশগুলোর চেয়ে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য মাত্র ১৪ গ্রাম মাংস খেয়ে সন্তুষ্ট থাকাটা বেশি কষ্টকর হবে। তবে, প্রতি বছরের ১১ মিলিয়ন অকালমৃত্যুর তালিকায় নিজের নাম লেখাতে না চাইলে ব্যাপারটি ভেবে দেখাও জরুরি।

প্রতি বছর যে পরিমাণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মারা যায়, এর মধ্যে ১৯-২৩.৬% মানুষ মারা যায় কেবল এই অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়ার ফলে। ভাবলে অবাক লাগে না যে, সোডিয়াম ক্লোরাইড আর মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে একটুখানি শাকসবজি খাওয়া বাড়ালেই আমরা এত বিশাল একটা সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারি! ব্যাপারটির গুরুত্ব বোঝানোর জন্য একটি ব্যাপার বলা যেতে পারে।

২০১৮ সালে মরণব্যাধি ক্যানসারে ভুগে মারা গিয়েছে ৬,০৯,৬৪০ জন মানুষ। হ্যাঁ, সংখ্যাটা ১ মিলিয়নেরও কম।

বিজ্ঞানীদের তৈরি সুষম খাদ্যের তালিকা; Image Source: AFP

কথা হলো, এরকম একটা জিনিস কীভাবে করা সম্ভব? স্বাভাবিকভাবেই, কাউকে যতই বোঝানো হোক, ঠিক কতজন মানুষ আসলে ধরে ধরে নিয়ম মেনে খাওয়া দাওয়া করতে চাইবে? একেই বলে, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই।

সেজন্যেই বেশ কিছু জিনিস প্রস্তাব করা হয়েছে।

যেমন, সরকারিভাবে দেশগুলোতে উদ্যোগ নেয়া। সরকার যদি কৃষকদেরকে বলে, এই কয়েক ধরনের ফল-শাক-সবজি চাষ করতে হবে, এবং যেসব জিনিসে লাভ কম, সেসব জিনিস চাষের পেছনে যদি সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে সাহায্য করতে রাজি হয়- তাহলে অনেক কৃষকই হয়তো সেসব জিনিস চাষে উদ্যোগী হবে।

সেই সাথে সরকার চাইলে চাষের জন্য জমি নির্ধারিত করে দিতেও পারে। তাই বলে সরকার যে চাষের জমি দখল করে ফেলবে, তা নয়। বরং যেখানে কমলার চাষ করার কথা, সেখানে যেন কেউ মাছের চাষ করতে গিয়ে জায়গাটুকু নষ্ট না করে ফেলে- এটুকু খেয়াল রাখতে পারে সরকার। তাতে কৃষকের যদি আর্থিক লাভ কিছুটা কম আসে, সে হিসেবে সরকার কৃষককে সাহায্য করে সেটুকু পুষিয়ে দেবে। সেই সাথে শহরের বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যকর খাবার যেন সহজে পাওয়া যায়, সেজন্যও ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

কোন দেশের মানুষ কোন জিনিস কতটকু খায়; Image Source: thelancet.com

একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে, যেকোনো একটি দেশে ঠিক কীভাবে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব, সেটি সেই দেশের সাপেক্ষে গবেষণা বা জরিপ করে বের করতে হবে। বাংলাদেশের হিসেবে যেটা বেশি চোখে পড়ে, তা হলো, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা বিখ্যাত বা অনুসরণীয় মানুষ, তারা জনসচেতনতার জন্য প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন। সেই সাথে, পোস্টারিংও একটা ভালো উপায়। তাছাড়া, চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে ঔষধের সাথে রোগীকে সাধারণভাবেই খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে বলতে পারেন।

যে কারণে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ১১ মিলিয়ন মানুষ মারা যাচ্ছে, সেটা ঠিক হেলাফেলার বিষয় না। এবং জিনগতভাবে এসব কিছুই আমরা রেখে যাচ্ছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। তাছাড়া, পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে আমরা যদি সতর্ক না হই, কলকারখানায় মিথেন বা কার্বনের ব্যবহার কমালেও জৈবিক প্রক্রিয়া যদি সে জায়গা দখল করে নেয়- পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা হয়তো এমন এক পৃথিবী রেখে যাবো, যে পৃথিবীতে বুক ভরে শ্বাসও নেয়া যাবে না।

আমরা কি আসলেই তা-ই চাই?

This article is in Bangla language. It is about human diet which causing catastrophic damage to people and Earth. Necessary references have been hyperlinked.

Featured Image: https//phys.org

Related Articles