Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কোকো: মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারা প্রথম গরিলা

আপনার কি হারাম্বে নামের সেই গরিলাটির কথা মনে আছে? যদি আপনি গুহামানব না হয়ে থাকেন তাহলে ২০১৬ সালের ২৮ মে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওটির কথা আপনার অবশ্যই মনে আছে। ওহাইওয়ের সিনসিনাটি চিড়িয়াখনায় থাকা, সবে ১৭ বছরে পা দেয়া হারাম্বে নামের সেই গরিলাকে ২৮ মে, ২০১৬ সালে সিনসিনাটি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ গুলি করে হত্যা করে। কারণ ছিল ঐদিন দর্শকদের মধ্যে থাকা ৩ বছরের একটি বাচ্চা গরিলাটিকে আরও কাছে থেকে দেখার জন্য তার খাঁচার ভিতর নেমে পড়ে। খাঁচায় থাকা অন্য দুই গরিলা শিশুটি থেকে সরে গেলেও হারাম্বে বাচ্চাটির কাছে যায় এবং তাকে টেনে কম পানিযুক্ত স্থানে নিয়ে যায়। শিশুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ হারাম্বেকে গুলি করার সিদ্ধান্ত নেয়।

হারাম্বের হত্যা নিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অংশের পশুপ্রেমী সিনসিনাটি চিড়িয়াখানার চরম সমালোচনা করেন। তার সাথে উঠে আসে একটি বড় প্রশ্ন- এসব বন্য প্রাণীদেরকে মানুষের কাছে রাখা কতটা নিরাপদ? কোনো চিড়িয়াখানা কি আদৌ থাকা উচিত?

এসব প্রশ্নের উত্তর জানার আগে চলুন পরিচিত হই কোকোর সাথে। গরিলাদের সম্পর্কে আপনার ধারণা একেবারে পাল্টে যাবে যদি আপনি দেখা করেন কোকো দ্য টকিং গরিলার  সাথে।

কোকোর জন্ম

কোকো একটি পশ্চিমা নিম্মভূমির মেয়ে গরিলা। নিন্মভূমির গরিলারা সাধারণত আফ্রিকা, কঙ্গো, গেবন, গিনি এবং বৃহত্তর আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অংশের জঙ্গল, জলাশয়গুলোতে থাকে। কোকোর জন্ম হয় ১৯৭১ সালের ৪ জুলাই ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ফ্রান্সিসকো চিড়িয়াখানায়। প্রাথমিকভাবে কোকোর নাম রাখা হয় হানাবে কো। কিন্তু সবাই তাকে কোকো বলেই ডাকতো।

জন্মের পরপরই কোকো প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার চিকিৎসার জন্য তখন থেকেই তার মা থেকে কোকোকে আলাদা রাখা হয়। কোকোকে দেখাশোনা করতে থাকেন চিড়িয়াখানার কর্মচারীরা। কোকোর ভাগ্যও হারাম্বের মতোই হতে পারতো, কিন্তু সৌভাগ্য তার যে তার সাথে একজন আমেরিকান মনোবিশেষজ্ঞ ফ্র্যান্সাইন পেনি প্যাটারসনের দেখা হয়েছিল।

কোকোর নতুন বন্ধু

ফ্র্যান্সাইন প্যাটারসন কোকোকে দেখেন ১৯৭১ সালে, যখন কোকো ছিল মাত্র ৩ মাসের বাচ্চা। ড. পেনি তখন আমেরিকার স্টেনফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিশ্লেষণ নিয়ে তার পিএইচডি করছিলেন। তার থিসিসের জন্য তিনি একটি চমৎকার গবেষণা করতে চাইলেন। তিনি দেখতে চাইলেন প্রাইমেট বা উল্লুকশ্রেণীর প্রাণীরা কি মানুষের জন্য প্রদত্ত সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ (সাংকেতিক ভাষা) বুঝতে এবং ব্যবহার করতে পারে কিনা।

জন্মদিনে জুস পান করছে কোকো; Image Source: pinterest.com

সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ, অর্থাৎ অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে শব্দহীন কথা বলা হলো একধরনের অবচনীয় ভাষা যা মূক এবং বধিরদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। জাতিভেদে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কোকোকে নিয়ে গবেষণা করার সময় প্যাটারসন আমেরিকান সাইন ল্যাংগুয়েজ (এএসএল) এর নীতি অনুসরণ করেছেন

পেনির আগে শিম্পাঞ্জীদের নিয়ে এ ধরনের গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু পেনির আগে কেউ কখনো গরিলাদের সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শিখাতে চেষ্টা করেননি।

কোকো ছিল স্যান ফ্রান্সিসকো চিড়িয়াখানার সম্পত্তি। পেনি কোনোভাবে তার গবেষণা পরিচালনার জন্য কোকোকে চিড়িয়াখানা থেকে ধার নিতে চাইলেন। প্রথমদিকে চিড়িয়াখানার উত্তর নেতিবাচক ছিল। হতাশ পেনি যখন হাল ছেড়ে দিতে শুরু করেন তখন তিনি একদিন দেখলেন কোকোকে। সে তখন কেবলই তার মায়ের কাছে ফিরে গেছে। প্রথম দেখায়ই পেনির কোকোকে পছন্দ হয়ে গেল।

কিন্তু কোকোর বিশ্বাস অর্জন করা সহজ ছিল না। পেনি প্রতিদিন কোকোকে দেখতে চিড়িয়াখানায় আসতে থাকলেন। এভাবে এক মাস চলল। একমাস পর কোকো পেনিকে বিশ্বাস করতে শুরু করলো। পেনি প্রায়ই কোকোকে কাঁধে নিয়ে অন্যান্য পশুপাখিদের দেখতে যেতেন।

শুরু হলো প্রজেক্ট কোকো

অবশেষে ১৯৭২ সালে চিড়িয়াখানাও কোকোকে গবেষণা কাজে লাগানোর অনুমতি দিল। পেনি কোকোকে নিয়ে গেলেন স্টেনফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে পাশেই একটি বন্য জীবজন্তুদের জন্য পার্ক ছিল। সেখানে একটি ট্রেলারে তাকে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। ট্রেলার হলো চাকাযুক্ত বড় ধরনের কামরাসদৃশ বাক্স। প্রথম কয়েকদিন কোকোর বেশ অসুবিধা হতে লাগলো। সে প্রায়ই তার পুরনো বাসায় ফিরে যেতে চাইতো। এই পুরোটা সময় পেনি কোকোর সাথেই ছিলেন।

১৯৭২ এ প্রজেক্ট কোকো শুরু হওয়ার পরপরই কোকোর প্রতিটি কাজকে পর্যবেক্ষণ করা হলো। ট্রেলারে ছিল বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা এবং পেনি তাকে যতগুলো সাইন শেখাতেন তা সবই লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। এসব ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করতেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু রন কন।

গুরুগম্ভীর মাইকেল; Image Source: pinterest.com

৫ বছর বয়সের ভিতর কোকো ৫০০টিরও বেশি সংকেত শিখে গেল। পেনি বলেন, “যতই সে সংকেত বা সাইন শিখতে শুরু করলো ততই যেন কোকোর ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পেতে শুরু করলো”। 

এসময় স্যান ফ্রান্সিসকো চিড়িয়াখানা থেকে পেনিকে নির্দেশ দেয়া হয় যাতে কোকোকে নতুন প্রজন্ম জন্ম দেয়ার মতো অবস্থা তৈরি করে দেয়া হয়। কোকোর মতো নিন্মভূমির এসব গরিলারা প্রতিনিয়ত আফ্রিকায় মানুষের হিংস্রতার শিকার হয়। বুশমিট ক্রাইসিস  হলো এর অন্যতম কারণ।

বুশমিট বা বন্যপ্রাণী, যেমন গরিলা, বানর ইত্যাদির মাংসের জন্য বিশ্ববাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ফলে পশ্চিম আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এসব বন্য প্রাণীকে হত্যা করা হচ্ছে। এতে বন্যপ্রাণীদের সংখ্যা কমে গিয়ে এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে আমাদের বনজঙ্গলগুলোতে।

কোকোর নতুন সঙ্গী?

যেহেতু কোকোর স্বজাতি অন্য গোরিলারা খুব দ্রুতই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে, তাই কোকোর সন্তান জন্মদান ছিল পেনির জন্য অত্যন্ত দরকারি বিষয়। এর পেছনে অবশ্য পেনি তার আরেকটি উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। তিনি দেখতে চাচ্ছিলেন কোকো তার সন্তানকেও সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শিখায় কি না।

সন্তানের জন্য তখন কোকো নিজেও মরিয়া হয়ে উঠেছে। একবার কোকোর যত্নকারী একজন মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে আসে কোকোর সাথে দেখা করাতে। বাচ্চা দেখে কোকো সংকেত দেয়, ‘বাচ্চাদেখা করতে আসাআমিভালোবাসা’। পেনি বুঝতে পারেন, কোকো বলতে চাচ্ছে তারও এমন একটি বাচ্চা দরকার। সে তার অন্য গরিলার মতো দেখতে পুতুলগুলো বুকে জড়িয়ে রাখে, ওদেরকে স্তন্যপান করানোর ভঙ্গিও করে। অন্য খেলনাদের সাথে নয়, শুধু তার গরিলা পুতুলকে দিয়ে। এসবই নিজের সন্তানের জন্য তার তীব্র আকুতি প্রকাশ করে।

গল্প শোনাচ্ছেন পেনি; Image Source: gorillas344blogspot.com

কিন্তু কোকো এখানে সম্পূর্ণ একা। তার সঙ্গী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত পেনি নিতে দিলেন কোকোকে। কোকোকে কয়েকটি ছেলে গরিলার ভিডিও দেখানো হলো। জিজ্ঞাসা করা হলো তার কাকে ভালো লাগে। একটি গরিলাকে দেখে কোকোর ভালো লাগে। সে তা বোঝানোর জন্য টেলিভিশনের পর্দায় চুমু খায়।

ভিয়েনা থেকে যে গরিলাটি আনা হল তা কোকোর থেকে ৬ বছরের ছোট ছিল। ওর নাম দেয়া হয় মাইকেল। পেনি আশা করেছিলেন এতে কোকোর একাকীত্ব যাবে এবং মাইকেল হবে তার ভবিষ্যৎ সঙ্গী।

শুরুতে মাইকেল এবং কোকো একে অপরকে একেবারেই পছন্দ করতো না। তারা সবসময় ঝগড়া করতো। কোকো তার আদরে ভাগ বসাবে বলে মাইকেলকে অনেক হিংসা করতে শুরু করলো। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ওদের বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কিন্তু ঠিক সেভাবে নয় যেভাবে পেনি চেয়েছিলেন। কোকোর কাছে মাইকেল শুধুই ছিল তার ছোট ভাইয়ের মতো!

দ্য গরিলা ফাউন্ডেশন

যখন মাইকেল ও কোকো বড় হতে শুরু করে তখন তাদেরকে স্টেনফোর্ডের সেই ছোট জায়গায় রাখা আর সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পেনি তাদেরকে নিয়ে গেলেন উডসাইড ক্যালিফোর্নিয়ার ৭০ একরের একটি জায়গায়, যা তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। সেখানেই ১৯৭৬ সালে ফ্র্যান্সাইন প্যাটারসন প্রতিষ্ঠা করেন দ্য গোরিলা ফাউন্ডেশন, যার লক্ষ্যই হলো গরিলাদের সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদেরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা।

অভিনেতা রবিন উইলিয়ামস ও কোকো; Image Source: dailymail.com

গরিলা ফাউন্ডেশনের সাহায্যে পেনি কোকোকে স্যান ফ্রান্সিসকো চিড়িয়াখানা থেকে কিনে নেন। শুরু হয় পেনি, কোকো আর মাইকেলের পথচলা।

বন্যপ্রাণীদের কোনো বৈশিষ্ট্যই ছিল না কোকোর। তার জীবন ছিল ছকে বাঁধা। প্রতিদিন সে সকাল সাড়ে আটটায় ঘুম থেকে ওঠে। নাস্তা করে সিরিয়াল, দুধ ও কিছু সবজি দিয়ে। এরপর সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সে সাইন ল্যাংগুয়েজ শিখে। ১০-১১টা পর্যন্ত মাইকেলের সাথে খেলা করে এবং আবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত সে মানুষের ভাষা রপ্ত করে। সাড়ে চারটায় তাকে রাতের খাবার দেয়া হয় এবং ঘুমানোর কিছু আগে সে তার খেলনা নিয়ে একা একা খেলে।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মাইকেল ও কোকো তাদের আলাদা আলাদা রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। পেনির বাসা ওদের থেকে মাত্র ৫০ ফুট দূরে। একটি স্পিকার পেনির সাথে সবসময় থাকে যাতে তিনি কোকো ও মাইকেলের বাসায় হওয়া সব শব্দ শুনতে পান।

মাইকেলকেও আনার পর থেকেই সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখানো হচ্ছে। মাত্র কয়েকদিনেই মাইকেল ৩০০টির মতো সংকেত শিখে ফেলেছে। শেখার সাথে সাথে সে পেনিকে বলেছে যে কি করে তার চোখের সামনে তার মাকে গুলি করে হত্যা করে তার মাংস কেটে নেয়া হয়েছিল।

কোকো ও মাইকেলের অন্যান্য শখ

কোকো ও মাইকেলের স্বভাবে কিছু আচরণ ছিল যা আমাদের গরিলাদের ব্যাপারে থাকা ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তারা দুজনই ছিল কোমল স্বভাবের। তারা হাসতো, কাঁদত, অন্যের দুঃখে দুঃখবোধ করতো। নিজের চেয়ে আকারে বেশ ছোট প্রাণীদের প্রতি তাদের ছিল ভালোবাসা।

কোকো ততদিনে ১,০০০ এর মতো সংকেত শিখে ফেলেছে এবং ২,০০০ এর মতো মৌখিক ইংরেজি শব্দ সে চেনে। যখন তাকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হয় তখন সে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে তার উত্তর দেয়। একবার একটি গল্পের বইয়ে বিড়ালের ছবি দেখে কোকোর বিড়াল পোষার ইচ্ছা হয়। পেনি তাকে একটি বিড়ালছানা এনে দেন যার নাম কোকো রাখে All Ball। কারণ সে দেখতে ছিল বলের মতো। কিন্তু ৬ মাস পড়েই এক সড়ক দুর্ঘটনায় All Ball মারা যায়।

কোকোর আঁকা একটি ফুলের তোড়া; Image Source: koko.org

কোকো এ ঘটনায় অত্যন্ত কষ্ট পায়। পেনি তার জন্য আরেকটি বিড়াল ছানা এনে দেন। এবারে ওর নাম হয় স্মোকি। কারণ এই বিড়াল ছিল ধূসরবর্ণের। বিড়াল পোষা ছাড়াও কোকো ও মাইকেলের শখ ছিল ছবি আঁকা। এমনকি তাদের চিত্রকর্ম নিয়ে নিউ ইয়র্কে একটি প্রদর্শনীও হয়েছে। কোকোর আরেকটি বড় শখ ছবি তোলা। ৭ বছর বয়সে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে কোকোর তোলা তার নিজের ছবি ছাপা হয়। অনেকটা আমাদের যুগের সেলফির মতো।

২০০০ সালে কোকোর সঙ্গী মাইকেল মারা গেলে কোকো মর্মাহত হয়ে পড়ে। তার সাথে দেখা করার জন্য তখন রবিন উইলিয়ামস, লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিওর মতো হলিউড অভিনেতারা আসতে থাকেন।

কোকোর বার্তা

পেনি প্যাটারসনের গবেষণা নিঃসন্দেহে প্রাণীদের সম্পর্কে আমাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করে। এতদিন মানুষ এবং বন্যপ্রাণীদের মধ্যে ব্যবধান ছিল ভাষার। কিন্তু পেনির গবেষণায় দেখা যায় কিছু বুদ্ধিমান প্রাণীর ক্ষেত্রে মানুষের সাথে যোগাযোগ করাও বেশ ভালোভাবেই সম্ভব। এতে আমরা তাদের জীবন ও চিন্তা সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারবো। ২০১৬ সালের শুরুতেই কোকোকে নিয়ে একটি সংবাদ খুব ছড়িয়ে পড়ে। একটি দেড় মিনিটের ভিডিওয়ের মাধ্যমে কোকো বিশ্বের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দেয়। মানুষের ভাষায় বার্তাটি ছিল এমন,

“কোকো পৃথিবী, মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসে। কিন্তু মানুষ বোকা। সে পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। প্রকৃতি তোমাকে দেখছে, প্রকৃতিকে বাঁচাও”।

এটি যেন শুধু কোকোর মিনতি নয়, বরং সমগ্র প্রাণীকুলের মিনতি।

কিছু সমালোচনা

পেনির এই গবেষণা যেমন তার জন্য এনেছে অনেক খ্যাতি, তেমনি কুড়িয়েছে অনেক সমালোচনাও। প্রাণী আচরণবিদ হার্বার্ট টেরেস, যিনি শিম্পাঞ্জী নিয়ে একই গবেষণা করেন, বলেন, “তারা আসলে যোগাযোগ করতে পারে না। তারা শুধু মানুষের শিখিয়ে দেয়া আচরণ নকল করতে পারে”। এছাড়া পেনির গবেষণা পদ্ধতি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কী করে আমরা বুঝবো যে কোকো সঠিক সংকেত ব্যবহার করছে? মনগড়া কিছু করছে না? এর জন্য কেন পেনি কোনো সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বিশেষজ্ঞের কাছে যাননি? কোকো কি এখনো নতুন শব্দ শিখছে নাকি তার বুদ্ধি আর বাড়ছে না?

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের কভারে ৭ বছরের কোকো; Image Source: pinterest.com

অনেকে পেনিকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করে বসেন। তাদের মতে পেনির নিজের সন্তান না থাকায় সে কোকোকে জোর করে তার মানুষ সন্তান বানানোর চেষ্টা করছেন। আর মায়েরা সন্তান সম্পর্কে অনেক কিছুই বাড়িয়ে বলেন।

যদি আমরা অন্যভাবে দেখি তাহলে কোকোকে আসলেই মনে হবে একটি গবেষণার ইঁদুরের মতো, যাকে আটকে রাখা হয়েছে একটি কৃত্রিম পরিবেশে। জন্মের পর থেকেই মানুষের সংস্পর্শ তাকে দিয়েছে মানুষের প্রতি সহানুভূতি। কিন্তু কোকো আজও কোনো যৌন আচরণ প্রকাশ করেনি। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের মতামত, কোকো পরিচয় সঙ্কটে ভুগছে। সে মানুষের মতো আচরণ করে কিন্তু সে মানুষ নয়। এই দুই বস্তুর মাঝখানে থাকা কোকো দ্বৈত জীবন কাটাচ্ছে আজ ৪৭ বছর ধরে।

বন্য প্রাণীদের হয়তো আসলেই মানুষের বন্দী রাখা উচিত নয়। কিন্তু আমরা মানুষরা কি তাদের আবাসস্থল প্রকৃতিকেও তাদের জন্য নিরাপদ রাখতে পারছি?

তথ্যসূত্র:

Koko’s Story (1987), Francine Patterson.

Featured Image: sciencenews.org

Related Articles