Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লুসিড ড্রিম: যে স্বপ্নের মাঝেও জেগে থাকা যায়

শুরুতে ক্রিস্টোফার নোলানের ইনসেপশন (২০১০) সিনেমার একটি দৃশ্য নিয়ে আলোকপাত করা যাক। সিনেমার একটি দৃশ্যে ক্যাফেটেরিয়ায় বসে স্বপ্ন নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনায় মগ্ন ছিলেন ডমিনিক কব এবং আরিয়াডনে। নানান কথা শেষে ডমিনিক কব আরিয়াডনেকে একটি অদ্ভুত প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,   

“আচ্ছা তোমাকে একটি প্রশ্ন করি। আমরা সাধারণত স্বপ্নের শুরু কোথা থেকে হয়েছে সেটা মনে করতে পারি না। ব্যাপারটি এমন যে, হুট করে স্বপ্নের মাঝে চলে এসেছি, সবকিছু ঘটছে আপন খেয়ালে। তাই না?”

“হয়তো। হ্যাঁ অনেকটা সেরকমই।”

“আচ্ছা এবার বলতে পারো, আমরা এখানে (ক্যাফেটেরিয়া) কীভাবে এসেছি?”

“হ্যাঁ অবশ্যই মনে আছে। আমরা শুরুতে … নাহ! আমরা কি যেন করছিলাম?” 

আরিয়াডনে তার স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে প্রশ্নের উত্তরটি তার জানা। কিন্তু এখন ঠিক মনে করতে পারছে না সে। ডমিনিক কব সামনে ঝুঁকে ফের প্রশ্ন করলেন,

“খুব মন দিয়ে চিন্তা করো আরিয়াডনে। আমরা কীভাবে এই ক্যাফেটেরিয়ায় আসলাম? আসলেই তুমি কোথায় আছো?”

ইনসেপশন সিনেমায় লুসিড ড্রিমের অদ্ভুত জগত; Image Source: Warner Bros

আরিয়াডনের চিন্তামগ্ন চেহারায় দেখা দিল হতবাক হওয়ার স্পষ্ট ছাপ। সে আসলেই মনে করতে পারছে না যে সে এখানে, এই ক্যাফেটেরিয়ায় কখন, কেন এবং কীভাবে এসে পৌঁছালো। কীভাবে শুরু হয়েছিল এই আলোচনাপর্ব। এর মানে কি সে এখন স্বপ্ন দেখছে? এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। আরিয়াডনে তখন একটি ওয়ার্কশপে ঘুমোচ্ছিল। এমনকি ডমিনিক কবও ঘুমোচ্ছিলেন। তারা দুজনেই স্বপ্ন দেখছেন। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার মতো স্বাভাবিক ঘটনা বুঝি আর নেই। কিন্তু এই স্বপ্নের মাঝে একটি ভিন্ন ব্যাপার আছে। আমরা স্বপ্ন দেখলেও তার ঘটনার উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আমরা স্বপ্ন দেখছি, এমন কথাও সাধারণত আমরা টের পাই না। কিন্তু এই দুজন দিব্যি স্বপ্ন দেখছেন সেটি জানেন এবং স্বপ্নের ঘটনা নিয়ন্ত্রণও করতে পারছেন। কী অদ্ভুত ব্যাপার! এমন কি আদৌ সম্ভব? বিজ্ঞান বলছে সম্ভব। আর সেটি সম্ভব হয় এক বিশেষ ধরনের স্বপ্নের মাধ্যমে, যার নাম হচ্ছে লুসিড ড্রিম।

লুসিড ড্রিম কী?

কবি অ্যাডগার অ্যালান পো লিখেছেন,

All that we see or seem

Is but a dream within a dream.

লুসিড ড্রিমে ব্যক্তি স্বপ্নেও সজাগ থাকেন; Image Source: Medium

আমাদের আশেপাশে আমরা যা কিছু দেখি বা অনুভব করি, এর সবকিছুই স্বপ্নের মাঝে আরেক স্বপ্ন। কবিতার ছন্দ ছাড়াও স্বপ্ন মানবজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। প্রাচীনকালে গুহায় নিদ্রারত আদিম মানুষের জীবনে যেমন স্বপ্ন হাজির হতো, তেমনই ভবিষ্যতের কোনো অত্যাধুনিক সভ্যতার ইমারতে নিদ্রালু ব্যক্তিও স্বপ্ন দেখবেন। দার্শনিকদের আড্ডা থেকে ধর্মীয় মজলিস- সকল ক্ষেত্রেই স্বপ্ন বহুল আলোচিত বিষয়। আগের দিনে স্বপ্নকে অনেকটা রহস্যময় ধাঁধার মতো দুর্বোধ্য ধরা হতো। অনেকে সম্প্রদায়ের কাছে এই ধাঁধা ছিল আধ্যাত্মিক জগতে অনুপ্রবেশের উন্মুক্ত দ্বার। বিশেষ করে, আমেরিকার স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে এ ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। স্বপ্নে পাওয়া তথ্য অনেক সম্প্রদায়ের নিকট ভবিষ্যদ্বাণী বা দৈব নির্দেশনা হিসেবে গণ্য হয়।

স্বপ্ন দেখা মানব সমাজের নিকট লুসিড ড্রিম বা স্বচ্ছ স্বপ্ন কোনো নতুন তত্ত্ব নয়। বরং সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এধরনের স্বপ্ন নিয়ে চিন্তাভাবনা করে এসেছে। লুসিড ড্রিম হচ্ছে এমন ধরনের স্বপ্ন যেখানে ব্যক্তি স্বপ্নের মধ্যেও সজাগ থাকেন এবং তিনি স্বপ্ন দেখছেন তা বুঝতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, অনেক ক্ষেত্রে স্বপ্ন দেখা ব্যক্তি স্বপ্নের ঘটনা, পরিবেশ, উপস্থিত ব্যক্তি- সবকিছু নিজের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করতে পারেন। দার্শনিক অ্যারিস্টটলের অনেক পাণ্ডুলিপিতে স্বচ্ছ স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা পাওয়া গেছে। যদিও তিনি লুসিড ড্রিম বা এ ধরনের কোনো সংজ্ঞা ব্যবহার করেননি। তিব্বতের বৌদ্ধ তপস্যীদের মাঝে লুসিড ড্রিমকে ব্যবহার করে যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে তপস্যা করার কথাও জানা গেছে।

তিব্বতের ধর্মীয় গুরুদের স্বপ্ন যোগব্যায়াম; Image Source: Wikimedia Commons

শুনতে অনেকটা বিরল লাগলেও লুসিড ড্রিম কোনো দুর্লভ অভিজ্ঞতা নয়। বরং আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা এ ধরনের স্বপ্ন দেখেছেন। ব্রাজিলে একবার লুসিড ড্রিম নিয়ে একটি জরিপ চালানো হয়েছিল। ৩,৪২৭ জনের উপর করা সেই জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭৭% ব্যক্তি জীবনে একবার হলেও লুসিড ড্রিম দেখেছেন। লুসিড ড্রিম কোনো অপবিজ্ঞান বা আধ্যাত্মিক কোনো তেলেসমাতি নয়। বরং এর পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যে কেউ চাইলে কিছু অনুশীলনের মাধ্যমে এর স্বাদ নিতে পারবে। বিশ্বের অনেক দেশে লুসিড ড্রিম দেখতে শেখানোর জন্য ওয়ার্কশপের ব্যবস্থাও রয়েছে।

কখন লুসিড ড্রিম হয়?

আমরা গড়ে প্রতিদিন ঘুমের মাঝে প্রায় ৪ থেকে ৬ বার স্বপ্ন দেখে থাকি। তবে বেশিরভাগ স্বপ্নই আমরা ভুলে যাই বলে আমাদের মনে থাকে না। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, দৈনিক দেখা স্বপ্নগুলোর মধ্যে ঠিক কোন স্বপ্নগুলো লুসিড ড্রিমিং এর অংশ হতে পারে ও আমরা কখন লুসিড ড্রিম দেখি? বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের ঘুমকে দুটো পর্যায়ে ভাগ করা যায়- রেম (REM) এবং নন-রেম (Non-REM)। রেম (REM) শব্দটি মূলত ইংরেজি Rapid Eye Movement এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ঘুমিয়ে পড়ার প্রায় ৯০ মিনিটের মাথায় রেম পর্যায় শুরু হয়। এই ধাপে আমাদের মস্তিষ্ক অত্যন্ত সক্রিয় থাকে, হৃদক্রিয়া বৃদ্ধি পায় এবং চোখের পাতার কাঁপন বেড়ে যায়। চোখের পাতার কাঁপন থেকেই এই পর্যায়ের নাম হয়েছে র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট বা রেম। অপরদিকে নন-রেম অবস্থায় আমাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়া, হৃদক্রিয়া এবং চোখের পাতার কাঁপন অনেকটাই কম থাকে

ঘুমের REM এবং Non-REM পর্যায়; Image Source: The Dream Merchant’s Shop

ঘুমের যেকোনো পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখলেও রেম পর্যায়ের স্বপ্ন অনেকটাই প্রাণবন্ত হয়। মূলত, এই ধাপে লুসিড ড্রিম দেখা হয়। লুসিড ড্রিমের উপর একজন ব্যক্তি ঠিক কতটুকু কর্তৃত্ব খাটাতে পারবেন, তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। অনেকে লুসিড ড্রিমে নিজের অস্তিত্ব টের পাওয়ার সাথে সাথেই জেগে উঠেন। আবার অনেকে দিব্যি স্বপ্নের ঘটনা নিজের ইচ্ছেমতো বদলাতে থাকেন। মেডিকেল নিউজ টুডে নামক এক ম্যাগাজিনে এক ব্যক্তি নিজের লুসিড ড্রিম সম্পর্কে বলেছেন,

“আমি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বপ্নের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। ধরুন, আমার ঘটনা, স্থান বা কোনো ব্যক্তিকে পছন্দ হচ্ছে না। আমি ইচ্ছে হলে সেগুলো বদলে দিয়ে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে থাকি”।

লাল রঙ করা অংশ মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স; Image Source: BodyParts 3D

ঠিক কোন কারণে একটি স্বপ্ন লুসিড ড্রিম হিসেবে দেখা হয় তা পরিষ্কার জানা যায়নি। তবে স্বপ্ন বিশারদ ড. ম্যাথিউ ওয়াকারের মতে, আমাদের মস্তিষ্কের ল্যাটারাল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (যা সাধারণত আমাদের যুক্তিতর্ক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে) এর পেছনে দায়ী। রেম ঘুমের সময় মস্তিষ্কের এই অংশ নিষ্ক্রিয় থাকার কথা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই অংশ সক্রিয় হয়ে উঠলে আমরা একইসাথে স্বপ্ন দেখি এবং যুক্তি বিচার করতে পারি। এ ধরনের ঘটনা ব্যক্তিকে স্বপ্নের মাঝেও সজাগ থাকার সক্ষমতা প্রদান করে। সম্ভবত এই কারণে আমরা লুসিড ড্রিম দেখে থাকি। তবে এই তত্ত্ব এখনও শক্তভাবে প্রমাণিত হয়নি।

লুসিড ড্রিমের তাৎপর্য্য

লুসিড ড্রিম নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পরই নতুন চিন্তা শুরু হলো। এবার বিজ্ঞানীরা চিন্তা করলেন লুসিড ড্রিমকে মানব কল্যাণে ব্যবহার করার কথা। প্রাথমিকভাবে লুসিড ড্রিমকে ব্যবহার করে মানুষের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সমাধান করার কথা ভাবা হলো। অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন বিশারদ ড. ডেনহোম এস্পি লুসিড ড্রিমকে মানসিক চিকিৎসায় ব্যবহার করার কথা বলেন। বিশেষ করে, যারা ক্রমাগত দুঃস্বপ্ন দেখার সমস্যা ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার বেশ ফলপ্রসূ। তিনি রোগীদের থেরাপির মাধ্যমে দুঃস্বপ্নকে লুসিড ড্রিমে পরিণত করার প্রশিক্ষণ দেন। এরপর তাদের স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমস্যা দূর করার চেষ্টা করা হয়।

লুসিড ড্রিম থেরাপির মাধ্যমে কারো ভীতি দূর করার চিকিৎসা করার পরিকল্পনা চলছে; Image Source: Vice

এছাড়া বিভিন্ন বস্তু এবং অবস্থার প্রতি ভয় বা ফোবিয়া যাদের কাজ করে, তাদের জন্য লুসিড ড্রিম থেরাপি ব্যবহারের কথা উঠেছে। স্বপ্নে কাউকে বারবার তার ফোবিয়ার মুখোমুখি করে ভীতি কাটিয়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন ড. এস্পি। তবে এসবের বাইরে কেউ স্রেফ আগ্রহ বা বিনোদনের উদ্দেশ্যেও লুসিড ড্রিম উপভোগ করতে পারে। লুসিড ড্রিম অনেকটা ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির স্বাদ দেবে আপনাকে। যারা লুসিড ড্রিমে দক্ষ, তারা ইচ্ছে করলেই স্বপ্নকে অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। অনেকের কাছে লুসিড ড্রিম সিনেমা বা গল্পের মতো উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আপনি নিজে থাকবেন চালকের আসনে। গল্পের কাহিনী আবর্তন করবে আপনার খেয়াল খুশিমতো।

লুসিড ড্রিমের যত পন্থা

লুসিড ড্রিম সম্পর্কে একগাদা আলোচনার পর অনেকেই হয়তো জানতে আগ্রহী, কীভাবে লুসিড ড্রিম উপভোগ করা যেতে পারে। তাদের জন্য সুখবর, ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীরা লুসিড ড্রিম আয়ত্তের জন্য বেশ কিছু অনুশীলন প্রস্তুত করেছেন। তবে একগাদা কৌশলের ভিড়ে তিনটি পদ্ধতি বহুল প্রচলিত। প্রথমেই যে পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো, তা হচ্ছে ‘বাস্তবতা পরীক্ষা’। এখানে বাস্তবতা বলতে জেগে থাকার অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে। এই পদ্ধতিতে আপনাকে বারবার পরীক্ষা করতে হবে আপনি জেগে আছেন নাকি স্বপ্ন দেখছেন। এই পদ্ধতিতে আপনাকে হয়তো সারাদিনে বেশ কয়েকবার প্রশ্ন করতে হবে, “আপনি জেগে আছেন নাকি স্বপ্ন দেখছেন?” একসময় এটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে আপনি স্বপ্নের মাঝেও এই প্রশ্ন করতে সক্ষম হবেন। একসময় এই পদ্ধতি আয়ত্ত হয়ে গেলে আপনি স্বপ্নের মাঝেও নিজেকে সজাগ রাখতে পারবেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে? বাস্তবতা পরীক্ষার সবচেয়ে মজার এবং বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে এক হাতের আঙ্গুলকে অপর হাতের তালুতে চেপে ধরা। যদি আপনার আঙ্গুল তালুর ভেতরে ঢুকে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি স্বপ্ন দেখছেন। অন্যথায় জেগে আছেন। এছাড়াও আশেপাশে আয়নায় নিজেকে পরীক্ষা করুন। যদি স্বপ্নের জগতে থাকেন, তাহলে আয়নায় আপনার প্রতিফলন অস্বাভাবিক হবে। কোনো লেখা দেখলে সেটি পড়ার চেষ্টা করুন। এরপর কিছু সময়ের জন্য অন্যদিকে তাকিয়ে পুনরায় লেখার দিকে তাকিয়ে পড়ুন। যদি স্বপ্ন দেখতে থাকেন, তাহলে লেখাটি দ্বিতীয়বার এক থাকবে না। এই কাজগুলো দিনে বেশ কয়েকবার অনুশীলন করলে একসময় অভ্যাসে পরিণত হবে। তখন স্বপ্নের মধ্যেও এই কাজগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটলে জেগে উঠবে আপনার মস্তিষ্ক। তখন আপনি লুসিড ড্রিম উপভোগ করতে পারবেন।

বাস্তবতা পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা; mage Source: Dribble

যেহেতু লুসিড ড্রিম কোনো প্যাটার্ন অনুসরণ না করে যেকনো সময় হতে পারে। কিন্তু বেশকিছু পদ্ধতি আছে, যেগুলো অনুশীলনের মাধ্যমে লুসিড ড্রিম ঘটানো যেতে পারে। আমাদের লুসিড ড্রিম হয় ঘুমের রেম পর্যায়ে। আর সেসময় আপনার মস্তিষ্ককে সজাগ রাখতে পারলেই লুসিড ড্রিম দেখা সম্ভব। এজন্য আপনাকে প্রতিদিন ঘুমানোর ৫ ঘণ্টার মাথায় জেগে উঠতে হবে। এরপর পুনরায় ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। এর ফলে আপনার সরাসরি ঘুমের রেম পর্যায়ে চলে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার রেম পর্যায়েও সজাগ থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে MILD (মাইল্ড)। MILD এর পূর্ণরূপ Mnemonic Induction of Lucid Dreams. এই পদ্ধতিতে আপনি ঘুমোতে যাওয়ার আগে নিজেকে বারবার বলবেন, “আজ আমি লুসিড ড্রিম দেখবো”। এই পদ্ধতি প্রয়োগের সবচেয়ে ভালো সময় হতে পারে আগের পদ্ধতিতে ৫ ঘণ্টা পর জেগে পুনরায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে। এ ধরনের পদ্ধতিগুলোকে আবেশ পদ্ধতি বলা হয়।

আয়না ব্যবহার করে পরীক্ষা করুন আপনি জেগে আছেন তো? Image Source: The Darkest Blog

আরেকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে স্বপ্নলিপি লেখার অভ্যাস গড়া। আপনার এজন্য একটি ডায়েরি রাখতে হবে। এই ডায়েরিতে আপনি শুধু আপনার স্বপ্নগুলো লিপিবদ্ধ করবেন। যেহেতু ঘুম থেকে উঠার পর পরই স্বপ্নগুলো সবচেয়ে স্পষ্ট মনে থাকে, তাই এই ডায়েরি ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে মাথার কাছে রেখে দেওয়া ভালো। ঘুম থেকে উঠেই দ্রুত স্বপ্নের কথা লিখে ফেলবেন। এই ডায়েরি আপনি দিনে একবার হলেও পড়বেন। এর ফলে আপনি নিজের স্বপ্নের সাথে পরিচিত হয়ে যাবেন। এই পদ্ধতি স্বপ্ন দেখা অবস্থায় আপনাকে সজাগ থাকতে সাহায্য করবে। এভাবে এখন পর্যন্ত আলোচিত পদ্ধতিগুলো প্রতিদিন অনুশীলন করলে আপনি ধীরে ধীরে নিজেকে লুসিড ড্রিম দেখায় অভ্যস্ত করে তুলতে পারবেন।

লুসিড ড্রিমের সম্ভাব্য পার্শপ্রতিক্রিয়া

লুসিড ড্রিমের বিনোদন আর অ্যাডভেঞ্চারে মত্ত হওয়ার আগে এর কিছু অপকারিতা সম্পর্কে আপনার ধারণা রাখা প্রয়োজন। যদিও লুসিড ড্রিমকে নিরাপদ ধরা যায়, তবে যাদের মানসিক অসুস্থতা বা কোনো সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। লুসিড ড্রিমের মধ্যে আপনাকে জেগে থাকতে হচ্ছে। এজন্য হয়তো আপনার ঘুমের প্রধান উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুমের অভাবে আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে। বিষণ্ণতা এবং উৎকণ্ঠায় ভোগা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘুমের ব্যাঘাত মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

লুসিড ড্রিম আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে; Image Source: Medium

যেহেতু আপনি স্বপ্নের মাঝেও জেগে আছেন, তাই স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে তালগোল লেগে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ব্যক্তি কোনটা বাস্তব আর কোনটা স্বপ্ন তা নির্ধারণ করতে হিমশিম খেয়ে যায়। এ ধরনের যেকোনো সমস্যা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনে। তাই লুসিড ড্রিমের পূর্বে নিজের মানসিক স্থিরতা এবং বিশ্রাম নিয়ে কোনো কার্পণ্য করা যাবে না।

লুসিড ড্রিম হতে পারে আপনার অ্যাডভেঞ্চার; Image Source: Leyiyi

স্বপ্ন সেই প্রাচীনকাল থেকে আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। যুগে যুগে বহু গুণীজনের স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশনাকে কাজে লাগিয়ে বড় আবিষ্কার করার কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। বাস্তবতা আমাদের ক্ষমতার উপর যে লাগাম টেনে ধরেছে, সেই লাগাম আমরা স্বপ্নজগতে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারি। আর স্বপ্নের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি অধ্যায় হচ্ছে লুসিড ড্রিম। লুসিড ড্রিম একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা যা আমাদের নতুন কিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। লুসিড ড্রিমকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে মানুষের মঙ্গল করা যায়, এ নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গবেষণা চলছে। হয়তো লুসিড ড্রিম আমাদের ভবিষ্যতে নতুন কোন সম্ভাবনার জন্ম দেবে। তবে এসব বিচারের বাইরে লুসিড ড্রিম সবসময় অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে সমাদৃত হবে। ভালোমন্দ বিচারের পরে যদি আপনি স্বপ্নের মধ্যেও অ্যাডভেঞ্চার করতে চান, তাহলে লুসিড ড্রিমের জগতে আপনাকে স্বাগতম। 

This is a Bangla article about Lucid Dreaming. Lucid Dreaming is an interesting method of dreaming where you can control the incidents and places occuring in your dream world. 

Referecnes: All the references are hyperlinked.

Feature Image: Brigitte

Related Articles