Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অসম্ভবের সাথে মিশিও কাকুর পথচলা

মিশিও কাকু, একজন আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন পদার্থবিজ্ঞানের ব্যতিক্রমী একটি বিষয়ের উপর- অসম্ভবের পদার্থবিজ্ঞান। বিজ্ঞানের যে বিষয়গুলো সায়েন্স ফিকশনে শোনা যায় কিন্তু বাস্তবতা অনেক দূর, সেগুলো নিয়ে করেন কাজ। খুঁজে খুঁজে বের করেন কোন কোন উপায়ে সম্ভব হতে পারে সেসব বিষয়। মজার এই দিকটি নিয়ে তিনি লিখেছেন একাধিক বই, দিয়ে যাচ্ছেন পাবলিক লেকচার, করে যাচ্ছেন নানা টিভি প্রোগ্রাম। এসবের উপর লেখা তার বই দ্য ফিজিক্স অব দ্য ইম্পসিবল (The Physics of the Impossible) সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত। হয়েছে বেস্ট সেলার।

বিজ্ঞানের ব্যতিক্রমী এই দিকটি নিয়ে তিনি হুট করেই কাজে লেগে যাননি, এমনি এমনিতেই সফলতা পাননি, এমনি এমনিই বিখ্যাত হননি। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল এসব নিয়ে কাজ করবেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি এসব বিষয়ে পুলকিত হতেন। তার সেই আগ্রহের পেছনে লেগে থেকেই ধীরে ধীরে আজকের অবস্থায় এসেছেন।

অসম্ভবের বিজ্ঞানের সাথে তার পথচলার গল্প তিনি বলেছেন তার বই দ্য ফিজিক্স অব দ্য ইম্পসিবল বইতে। এই বইয়ের প্রারম্ভিকার একটি অংশ থেকে তার জীবনের কথা তুলে ধরছি পাঠকদের জন্য।

 মিশিও কাকুর বই দ্য ফিজিক্স অব দ্য ইম্পসিবল; © Sirajam Munir

কোনো বিষয় শুরুতে শুনতে অদ্ভুত মনে না হলে বিষয়টি নিয়ে কোনো আশা নেই। (অ্যালবার্ট আইনস্টাইন)

এমন কোনো একদিন কি আসবে যেখানে দেয়াল ভেদ করে হাটা যাবে অনায়াসে? এমন কোনো নভোযান কি বানানো যাবে যেটি চলবে আলোর গতির চেয়েও বেশি গতিতে? সম্ভব হবে কি অন্যের মনের কথা পড়ে ফেলা? হওয়া যাবে কি অদৃশ্য? না ধরে না ছুঁয়ে শুধু মনের শক্তি দিয়ে নাড়ানো যাবে কি কোনো বস্তু? পৃথিবীতে বসে দেহকে প্রতিলিপি করে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে কি মহাবিশ্বের দূরবর্তী কোনো গ্রহে?

ছোটবেলা থেকেই এ রকম প্রশ্নে বিমোহিত হতাম। বড় হবার সময়টায় পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী অনেকের মতো আমিও টাইম ট্রাভেল, রে-গান, ফোর্স ফিল্ড, প্যারালাল ইউনিভার্স ইত্যাদির সম্ভাব্যতা-অসম্ভাব্যতা নিয়ে ভেবে ভেবে বিমোহিত হতাম। সে সময়টায় আমার কল্পনার এক বিশাল ক্ষেত্র তৈরি করেছিল জাদু, ফ্যান্টাসি আর সায়েন্স ফিকশন। একসময় এই অবাস্তব বিষয়গুলো আমার সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে যায়।

সেই পুরনো ‘ফ্ল্যাশ গর্ডন’ টিভি সিরিজের কথা মনে পড়ে যায়। প্রত্যেক রবিবার টিভি সেটের সামনে যেন আঠার মতো লেগে থাকতাম। বিস্মিত হতাম ফ্ল্যাশ, ডক্টর যারকভ, আর ডেল অর্ডেনের চোখ ধাঁধানো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সমাহার দেখে। রকেট যান, অদৃশ্য রক্ষাবরণ, রে-গান, আকাশলোকে ভাসমান শহর- কী নেই সেখানে! কোনো সপ্তাহেই আমার বাদ যায়নি দেখা।

সায়েন্স ফিকশন টিভি সিরিজ ফ্ল্যাশ গর্ডন (১৯৫৪ – ১৯৫৫); Image: IMDB

এই অনুষ্ঠান আমার সামনে সম্পূর্ণ নতুন এক জগতের দুয়ার খুলে দেয়। ভবিষ্যতে কোনো একদিন রকেটে চেপে মানুষ যাবে দূরের কোনো এক এলিয়েন গ্রহে, আর হেঁটে বেড়াবে অদ্ভুত ভূখণ্ডে- এমনটা ভেবে রোমাঞ্চিত হতাম। মোহনীয় এসব কাল্পনিক উদ্ভাবনে মুগ্ধ হয়ে তখনই আমার ভবিষ্যৎ গন্তব্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানের এই রহস্যগুলোকে নিয়েই হবে আমার ভবিষ্যৎ পড়াশোনা ও গবেষণা।

পরে দেখা যায়, শুধু আমি একাই নই, নামী দামী অনেক বিজ্ঞানী সায়েন্স ফিকশন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিজ্ঞানে আগ্রহী হয়েছিলেন। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী এডউইন হাবল জুল ভার্নের সায়েন্স ফিকশন পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেসবের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন আইন শাস্ত্রের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার, গিয়েছিলেন বাবার ইচ্ছের বাইরে। এরপর শুরু করেন বিজ্ঞানের পথে চলা। আর একসময় তিনিই হন বিংশ শতাব্দীর সেরা জ্যোতির্বিজ্ঞানী। বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও বেস্ট সেলিং লেখক কার্ল সেগান পুলকিত হয়েছিলেন এডগার রাইজ বারোজের বই জন কার্টার অব মার্স (John Carter of Mars) পড়ে। গল্পের জন কার্টারের মতো তিনিও স্বপ্ন দেখতেন একদিন চষে বেড়াবেন মঙ্গল গ্রহের বালুকাবেলায়।

জন কার্টার অব মার্স বইয়ের প্রচ্ছদ; Image: Merlyn Perilous

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যখন মারা যান তখন আমি খুব ছোট। কিন্তু তারপরেও সে সময়টার কথা যেন স্পষ্ট মনে আছে। মৃত্যুর পরের দিন সংবাদপত্রে তার ডেস্কের ছবি ছাপা হয়েছিল। সেই এলোমেলো ডেস্কে ছিল তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অসমাপ্ত কাজের অসমাপ্ত খসরা।

ভেতরে ভেতরে নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এটা কেমন জটিল জিনিস হতে পারে যা আমাদের সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীও সমাধান করে যেতে পারেননি? সংবাদপত্রে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল আইনস্টাইনের ছিল এক অসম্ভব স্বপ্ন, তিনি এমন একটি সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলেন, সে সময় ধারণা করা হতো মরণশীল কোনো মানুষের পক্ষে এর সমাধান করা সম্ভব নয়।

আইনস্টাইনের রেখে যাওয়া এলোমেলো ডেস্ক; Image: powertraffick.com

সেই সমস্যাটি কী, আইনস্টাইনের খসড়াটি কোন বিষয়ের উপর ছিল সেটি বের করতে আমার কয়েক বছর লেগেছিল। সেটি ছিল ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’। তার এই স্বপ্নের পেছনে তিনি তার জীবনের শেষ তিনটি দশক ব্যয় করেছিলেন। এই স্বপ্নই আমাকে আমার নিজের কল্পনার গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছে। পদার্থবিজ্ঞানের সবগুলো সূত্রকে একটিমাত্র সূত্রের ভেতর নিয়ে আসার যে স্বপ্ন আইনস্টাইন দেখেছিলেন সে স্বপ্নের অংশ হতে চেয়েছিলাম আমিও। ক্ষুদ্র কিছু অবদান দিয়ে হলেও আইনস্টাইনের এই প্রয়াসের সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিলাম।

যখন কিছুটা বড় হলাম তখন উপলব্ধি করতে শুরু করলাম, ফ্ল্যাশ গর্ডন সিরিজে যদিও ফ্ল্যাশ গর্ডনই হিরো এবং নায়িকাও সবসময় পেতেন তিনিই কিন্তু মূল নায়ক আসলে বিজ্ঞানী যারকভ। তার কারণেই এই সায়েন্স ফিকশন সিরিজের অস্তিত্ব আছে। এই বিজ্ঞানী যদি না থাকতো তাহলে থাকতো না কোনো রকেট যান, হতো না মঙ্গো (Mongo)-তে ভ্রমণ, হতো না পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। তার চেয়েও বড় কথা, বিজ্ঞান ছাড়া সম্ভব নয় কোনো সায়েন্স ফিকশন।

এরপর অনুধাবন করলাম বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে টিভি সিরিজের ঘটনাগুলো একদমই অসম্ভব। এগুলো কল্পলোকের ভাবনা মাত্র। বড় হওয়া মানে ভাবনা থেকে এরকম ফ্যান্টাসি ছেড়ে ছুড়ে দেওয়া। আমাকে বলা হয়েছিল বাস্তব জীবনে অসম্ভবকে পরিহার করতে হবে এবং বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে।

যাহোক আমি সিদ্ধান্তে আসলাম, আমি যদি আমার অসম্ভবের ভাবনা-কল্পনাগুলো চালিয়ে নিতে চাই তাহলে আমাকে পদার্থবিজ্ঞানের ভুবনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পদার্থবিজ্ঞানে ভালো দখল না থাকলে এই বিষয়গুলো ভালোভাবে বোঝা যাবে না, জল্পনা কল্পনাতেই আটকে থাকতে হবে সবসময়। তারা সম্ভব নাকি আসলেই অসম্ভব তার কূল-কিনারা পাওয়া যাবে না কখনোই। আমাকে গণিতের উচ্চতর বিষয়গুলোতে মগ্ন হয়ে যেতে হবে এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে ভালো দখল নিতে হবে। আর আমি করলামও তা।

তরুণ বয়সে মিশিও কাকু; Image: Pinterest

মাধ্যমিকে পড়ার সময় বিজ্ঞান মেলার প্রজেক্টের জন্য একটি অ্যাটম স্ম্যাশার (Atom Smasher) তৈরি করেছিলাম মায়ের ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র থেকে। ক্রিসমাসের সময় স্কুল মাঠে প্যাচিয়েছিলাম ২২ মাইল দৈর্ঘ্যের তামার তার (বড় কোনো ইলেকট্রিক কয়েলের জন্য সম্ভবত)। এসবের ধারাবাহিকতায় জীবনের এক পর্যায়ে ২.৩ মিলিয়ন ইলেকট্রন-ভোল্ট বিটাট্রন পার্টিক্যাল একসিলারেটর নির্মাণ করেছিলাম।

এটি চালাতে ৬ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ লাগতো এবং এটি এমন শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করতো যা পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রের চেয়ে ২০ হাজার গুণ বেশি। এটি তৈরি করার উদ্দেশ্য ছিল একটি শক্তিশালী গামা রশ্মির বিম তৈরি করা, এতটাই শক্তিশালী বিম যা দিয়ে তৈরি করা যাবে অ্যান্টিম্যাটার।

স্কুলের বিজ্ঞান মেলা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল জাতীয় বিজ্ঞান মেলায়। এটিই পরবর্তীতে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে সাহায্য করেছিল। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বৃত্তি পেয়েছিলাম এবং সেখান থেকে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী হবার লক্ষ্য অর্জন করেছিলাম। আর পেয়ে গিয়েছিলাম আমার রোল মডেল আলবার্ট আইনস্টাইনের পদাঙ্ক অনুসরণের সুযোগ।

কালের প্রবাহে আজকে আমি সায়েন্স ফিকশন লেখক ও সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র পরিচালকদের ইমেইল পাই, সেখানে তারা তাদের গল্পকে বিজ্ঞানের শানে শানিয়ে নিতে আমার সাহায্য চান। জনতে চান তাদের গল্পে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মনীতির বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে।

আরো দেখুন

অসম্ভব কথাটা আসলে আপেক্ষিক

Reference: The Physics of the Impossible, Michio Kaku, Doubleday, New York, 2008

Featured Image: grupobcc.com

Related Articles