Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর যে ৫টি প্রযুক্তি এখন বাস্তব!

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি। এক সময় যা কাল্পনিক মনে হতো, কিংবা যা শুধুমাত্র রূপকথা বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই এবং চলচ্চিত্রেই পাওয়া যেত, সেগুলোই দিনে দিনে বাস্তবে রূপ নিয়ে আমাদের হাতের নাগালে চলে আসছে। আর আমাদের জীবনযাত্রাকে করে তুলছে আরো সহজ এবং আরামদায়ক। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন পাঁচটি প্রযুক্তির কথা, যেগুলোকে কিছুদিন আগেও কেবলমাত্র কল্পকাহিনীর প্রযুক্তি বলে মনে করা হতো, অথচ বিজ্ঞানীদের কল্যাণে সেগুলো এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে।

১) আলোর গতি সম্পন্ন লেজার অস্ত্র

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর অবিচ্ছেদ্য উপাদান এটি। স্টার ওয়ার্স সহ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ভিত্তিক বিভিন্ন চলচ্চিত্রে এর ব্যবহার দেখা যায়। এর মাধ্যমে দূরবর্তী কোনো বস্তু লক্ষ্য করে উত্তপ্ত আলোক রশ্মি বা লেজারের রূপে শক্তি নিক্ষেপ করে লক্ষ্যবস্তুর ক্ষতিসাধন করা হয়। প্রচলিত গুলি বা ক্ষেপনাস্ত্রের ক্ষেত্রে দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে এর গতিপথ প্রাস বা উপবৃত্তের আকারে পরিবর্তিত হতে থাকে। ফলে লক্ষ্যভেদ করা তুলনামূলকভাবে কঠিন হয়। কিন্তু লেজার ওয়েপনের ক্ষেত্রে অনেক দূরের বস্তুকেও নিখুঁতভাবে আঘাত করা সম্ভব।

মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজে স্থাপিত লেজার অস্ত্র; Source: Wikimedia Commons

লেজার ওয়েপন এখন আর শুধু কল্পজগতের বই বা চলচ্চিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। গবেষণাগারে পরীক্ষামূলক পর্যায় ছাড়িয়ে মার্কিন সেনাবাহিনী বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রেও এর ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। ২০১৪ সালে পারস্য উপসাগরে অবস্থিত মার্কিন নৌবহরের USS Ponce যুদ্ধজাহাজে সর্বপ্রথম Laser Weapon System (LaWS) স্থাপন করা হয়। সফলভাবে পরীক্ষা শেষে সেই বছরের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, লেজার যুদ্ধাস্ত্র সফলভাবে কাজ করেছে এবং যুদ্ধজাহাজটির কমান্ডারকে এটি প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এই অস্ত্রটি আলোর বেগে প্রতি সেকেন্ডে বিপুল পরিমাণ ফোটন কণা লক্ষ্যবস্তুর উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করতে পারবে। অর্থাৎ এর গতিবেগ হবে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রের চেয়েও ৫০,০০০ গুণ বেশি। এটি নিক্ষেপের সময় দূরত্ব, উচ্চতা, বাতাসের গতিবেগ- কিছুই বিবেচনা করতে হবে না। শুধু লক্ষ্যবস্তুতে তাক করে সুইচ টিপে দিলেই হবে। সাথে সাথে লক্ষ্যবস্তুর নির্দিষ্ট অংশের তাপমাত্রা কয়েক হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছে যাবে এবং তা বিকল হয়ে যাবে।

বর্তমানে এটি ড্রোন আক্রমণের হাত থেকে জাহাজকে রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবিষ্যতে ক্ষেপনাস্ত্র, যেকোনো ধরনের যুদ্ধ বিমান এবং সাবমেরিন ধ্বংস করার কাজেও এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।

২) তারবিহীন বিদ্যুৎ স্থানান্তর ব্যবস্থা

তারবিহীন বিদ্যুৎ স্থানান্তর প্রক্রিয়া; Source: powerbyproxi.com

বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা ১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম তারবিহীন বিদ্যুৎ প্রবাহের ধারণা দেন। কিন্তু সেটা বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে মাত্র গত এক দশক ধরে। এ পদ্ধতিতে ট্রান্সমিটার থেকে রিসিভারে কোনো প্রকারের তারের সংযোগ ছাড়াই চৌম্বকক্ষেত্র ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর করা সম্ভব। ট্রান্সমিটারে তামার তারের কুন্ডলিতে বিষম তড়িৎ প্রবাহের মাধ্যমে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করা হয়। সেই চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে দ্বিতীয় কোনো তারের কুন্ডলি আনা হলে তা আবিষ্ট হয়ে বিষম তড়িৎ প্রবাহকে সমপ্রবাহে পরিণত করে এরপর সেটিকে সংরক্ষণ করে ব্যবহারোপযগী করতে পারে।

সম্প্রতি তারবিহীন বিদ্যুৎ স্থানান্তরের প্রযুক্তি যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে তারবিহীন মোবাইল ফোন চার্জার বাজারজাত করার কাজ করে যাচ্ছে। ফলে মোবাইল ফোন চার্জ দেয়ার জন্য ব্যবহারকারীকে বৈদ্যুতিক সংযোগের কাছাকাছি বসে থাকার প্রয়োজন পড়বে না। চৌম্বকক্ষেত্রের ভেতর যেকোনো স্থানে থেকেই ফোন চার্জ করা সম্ভব হবে।

এছাড়াও এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো গ্যারেজে পার্ক করা অবস্থাতেই চার্জ করা সম্ভব হবে। টেলিভিশন সহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্যও তারের সংযোগের প্রয়োজন পড়বে না। ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তির আরো উন্নতি হলে বাসা-বাড়িতে, কিংবা অফিস-আদালতেও তারের ব্যবহার বহুলাংশে হ্রাস পাবে।

তা ছাড়াই চার্জ হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি; Source: Wikimedia Commons

৩) মুদ্রিত মানব অঙ্গ

থ্রিডি প্রিন্টার এখন বহুল পরিচিত একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে কাগজের উপর লেখা বা ছবি প্রিন্ট করার পরিবর্তে ত্রিমাত্রিক বস্তু প্রিন্ট করা যায়। এটি খুব শীঘ্রই বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুনঃপ্রস্তুত করার মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধন করতে যাচ্ছে। আপাতত বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম ধমনী, চামড়া, কান সহ বিভিন্ন অঙ্গ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন এবং আশা করছেন, আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই কৃত্রিম হৃৎপিন্ড, ফুসফুস সহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও তৈরি করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞানীরা প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ থেকে কোষ সংগ্রহ করেন, এরপর সেটা থেকে গবেষণাগারে বায়ো ইঙ্কের মাধ্যমে আরো কোষ এবং টিস্যু তৈরি করেন। তারপর সেগুলোকে গবেষণাগারেই বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার মুখোমুখি করেন তাদের কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য। অদূর ভবিষ্যতে দুর্ঘটনায় এবং রোগে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা ছাড়াও নতুন আবিষ্কৃত ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে কৃত্রিম অঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মুদ্রিত মানব কর্ণ; Source: BBC

৪) উড়ন্ত গাড়ি

গুগলের চালকবিহীন গাড়ি এখন আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত হলেও উড়ন্ত গাড়ি বিষয়ে কম সংবাদই আমাদের সামনে আসে। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গবেষণার পর ইসরায়েলের একদল বিজ্ঞানী উড়ন্ত গাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ১.৫ টন ওজনের এ গাড়িটি ৫০০ কেজি ওজনের ভার বহন করতে সক্ষম। এর গতিবেগ ঘন্টায় ১৮৫ কিলোমিটার। গত বছর নভেম্বর মাসে গাড়িটি প্রথম আকাশযাত্রা সফলভাবে সম্পন্ন করে।

তৈরি করা হচ্ছে উড়ন্ত গাড়ি; Source: REUTERS

উড়ন্ত গাড়িটি মূলত তৈরি করা হয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর জন্য, যা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈন্যদেরকে উদ্ধার করে আনা, তাদের কাছে রসদ সর্বরাহ করা, অথবা জরুরী প্রয়োজনে কোনো লোকালয় থেকে জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হতে পারবে। গাড়িটি হেলিকপ্টারের মতো বহিঃস্থ পাখার পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ পাখা ব্যবহার করে উড়তে পারে।

বর্তমানে এর মূল্য অনুমান করা হয়েছে ১.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গাড়িটির উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২০ সালের মধ্যেই তারা বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের গাড়ি বাজারজাত করতে পারবেন।

৫) স্বয়ংক্রিয় খুনী রোবট

দক্ষিণ কোরিয়ার স্বয়ংক্রিয় খুনি রোবট; Source: BBC

আইজ্যাক আজিমভের রোবটিক বিজ্ঞানের প্রথম সূত্রটিই ছিল, কোনো রোবট কখনও কোনো মানুষকে হত্যা করতে পারবে না। কিন্তু সেটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সূত্র। বাস্তবের রোবট এতটা দয়ালু না-ও হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া, তাদের উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে কিছু স্বয়ংক্রিয় রোবট স্থাপন করেছে, যেগুলো শত্রুবাহিনীর নড়াচড়া শনাক্ত করে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করতে পারবে। এগুলো মূলত কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত মেশিনগান, যা তাপ, শব্দ এবং দৃশ্য বিশ্লেষণ করে শত্রুর আগমন চিহ্নিত করতে পারে এবং চার কিলোমিটার দূর পর্যন্ত গুলি করে শত্রুসৈন্যের ট্রাক পর্যন্ত ধ্বংস করার সামর্থ্য রাখে।

এখন পর্যন্ত অবশ্য রোবটগুলোকে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে গুলি করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রথমে তারা হুমকি বিশ্লেষণ করে সেগুলো উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠায়। সেখান থেকে অনুমতি পেলেই কেবল শত্রুকে লক্ষ্য করে গুলি করে। কোরিয়া ছাড়া রাশিয়াও এ পথে হাঁটার উদ্যোগ নিচ্ছে। বিখ্যাত অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কালাশনিকভ জানিয়েছে, তারাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে শত্রুকে ধ্বংস করতে সক্ষম এরকম অস্ত্র প্রস্তুত করেছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে শত্রুকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করার ব্যাপারে ধীরে ধীরে আরও অভিজ্ঞ হয়ে উঠবে।

কালাশনিকভ কোম্পানীর স্বয়ংক্রিয় খুনি রোবট; Source: Kalashnikov

যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা করতে সক্ষম রোবটের ব্যবহার নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে, কিন্তু ভবিষ্যতে এর ব্যবহার হয়তো আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ এর ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের সৈন্যদের জীবনের কোনো ঝুঁকি ছাড়াই শত্রুপক্ষের উপর আক্রমণ করা সম্ভব, যেটা যেকোনো সেনাবাহিনীরই মূল লক্ষ্য।

ফিচার ইমেজ- sciencefocus.com

Related Articles