Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণে ২০২২ সালের কিছু নৃতাত্ত্বিক আবিষ্কার

এই বছর প্রাচীন মানবের ডিএনএ বিশ্লেষণের বিভিন্ন খবর গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে বেশি। অক্টোবরে বিবর্তনবিদ্যায় সভান্তে প্যাবোর নোবেল পুরষ্কার জয় সেই কুণ্ডলীতে আরও ঘি ঢেলে দিয়েছে। প্রাচীন পৃথিবীর বুকে হেঁটে বেড়ানো বিভিন্ন মানবপ্রজাতির জিনোম গবেষণা জীববিজ্ঞানে নতুন এক সফলতার দ্বার উন্মুক্ত করেছে, যাকে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবেই ধরা হচ্ছে।

প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ এখন নৃতাত্ত্বিক গবেষণার অন্যতম সফল এক হাতিয়ার। বিজ্ঞানীদের রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণী সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। ২০২২ সালে প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের দ্বারা উল্লেখযোগ্য দশ আবিষ্কার নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

কোষের প্রাণকেন্দ্র নিউক্লিয়াসে ডিএনএর অবস্থান; Image Source: Labster.

রাশিয়ার নিয়ান্ডারথাল পরিবার

রাশিয়ার চাগিরাস্কায়া নামক গুহায় প্রাগৈতিহাসিক যুগে বসবাসকারী এক নিয়ান্ডারথাল পরিবারের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যদিও তারা গুহাতে খুব বেশি শারীরিক প্রমাণ রেখে যায়নি। প্রাপ্ত জিনিসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কয়েক ডজন দাঁত, এবং হাড়ের কিছু টুকরো। কার্বন ডেটিং থেকে জানা যায়, এগুলোর বয়স ৫৯,০০০ থেকে ৫১,০০০ বছরের কাছাকাছি। উল্লেখ্য, পৃথিবী থেকে নিয়ান্ডারথাল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৪০ হাজার বছর পূর্বে। অক্টোবর মাসে বিজ্ঞানীদের একটি দল হাড়ের ষোলটি টুকরা থেকে একটি জিনগত উপাত্ত প্রদান করেছিলেন।

চাগিরাস্কায়া গুহায় প্রাপ্ত হস্তনির্মিত বস্তু; Image Source: Science Direct.

হাড়ের টুকরাগুলো বিশ্লেষণ করে আত্মীয়তা কিংবা গোষ্ঠীগত সাদৃশ্যের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এদের মধ্যে কয়েকজনের দুই বা তিনটা দাঁত এবং হাড়ের গঠনে মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। কশেরুকার একটি অংশ এবং একটি পেষণ দাঁতের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে বাবা এবং মেয়েকে চিহ্নিত করা গেছে। বোঝার সুবিধার্থে বাবার নাম ‘ক’ দিয়ে বর্ণনা করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা আরও দেখেছে সেখানে ‘ক’ এর মায়ের দিক থেকে দুজন আত্মীয় বাস করত। কারণ, তাদের সকলেই একটি নির্দিষ্ট মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ থেকে বংশোদ্ভূত। জীববিজ্ঞানের ভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় মাইটোকন্ড্রিয়াল হেটেরোপ্লাজমি। শুক্রাণু আর ডিম্বাণু থেকে জাইগোট গঠিত হবার সময় মাইটোকন্ড্রিয়া শুধু মা থেকেই সন্তানে প্রবাহিত হয়, বাবা থেকে নয়। সুতরাং, ‘ক’ এর আত্মীয় দুজন তার মায়ের দিক থেকে এসেছে। আঙুলের একটি হাড় এবং একটি ক্যানাইন দাঁতেরও অস্তিত্ব পাওয়া গেছে সেখানে, যা সম্ভবত ‘ক’ এর চাচা অথবা ভ্রাতুষ্পুত্রীর হতে পারে।

চাগিরাস্কায়া গুহা; Image Source: Bence Viola.

সর্বপ্রাচীন ডিএনএ

ডিসেম্বরে বিজ্ঞানী কার্ট জেয়ার এবং তার দল ম্যাস্টাটোডনের ডিএনএ আবিষ্কার করে বিজ্ঞানীমহলে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। গ্রিনল্যান্ডে পাওয়া এই ডিএনএ ছিল প্রায় ২০ লক্ষ বছরের পুরনো। এই পর্যন্ত এটিই খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন ডিএনএ। ম্যাস্টাটোডন হলো ম্যামথ এবং হাতির পূর্বপুরুষ, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, ২০ লক্ষ বছর পূর্বের গ্রিনল্যান্ড ছিল আজকের যুগের গ্রিনল্যান্ডের চেয়ে ব্যতিক্রম। তখন সেখানের তাপমাত্রা ছিল ২০-৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, আর চারপাশে ছিল সবুজের সমারোহ। আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনে পৃথিবী বরফযুগে প্রবেশের পরেই গ্রিনল্যান্ডের খোলনচেল পাল্টে যায়। তবে, তাপমাত্রা অত্যধিক কম হওয়ায় ডিএনএ লক্ষ বছর যাবৎ টিকে থাকতে পেরেছে।

শিল্পীর তুলিয়ে ২০ লক্ষ বছর পূর্বের গ্রিনল্যান্ড, যা ছিল আজকের তুলনায় বেশ উষ্ণ; Image Source: Beth Zaiken.

এ বছর আরেকটি সায়েন্টিফিক পেপার থেকে জানা যায়, প্রায় ৫,০০০ বছর পূর্বে তিনটি স্বতন্ত্র জাতি-গঠিত গ্রিনল্যান্ড ছিল প্রাচীন মৎসশিকারী এবং পশুশিকারীদের মিলনস্থল। এদের মধ্যে একটি জাতি হলো ‘সাক্কাক’, যারা সবার প্রথমে এখানে বসতি গেড়েছিল। আরেকটি ছিল জাতি ছিল ‘থুলে’, যারা গ্রিনল্যান্ডের বর্তমান আদিবাসীদের পূর্বপুরুষ, এবং তৃতীয়টি হলো ‘নর্স’ জাতি, যারা ১০০০ সালের দিকে গ্রিনল্যান্ডে পা রেখেছিল।

নর্সের এক লোকের হাড়, যারা বসতি গেড়েছিল গ্রিনল্যান্ডে; Image Source: Le musée Vert/Le Mans.

প্রতিরক্ষায় ডেনিসোভান জিন

ডেনিসোভান ছিল নিয়ান্ডারথালদের মতো প্রাচীন এক মানবশাখা। বিজ্ঞানের কল্যাণে জানা গেছে, বর্তমানে পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষ অর্থাৎ হোমো স্যাপিয়েন্সরা তাদের শরীরে নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভানদের কিছু জিন বহন করে আসছে। কিন্তু এসব জিনের কাজ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে এই বছর। গবেষকদের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনগণের মাঝেই সবচেয়ে বেশি ডেনিসোভান জিন বিদ্যমান। তাই, তাদের উপরেই গবেষণা চালানো হয়।

জিনবিজ্ঞানী ড্যাভাইড ভেস্পাসিয়ানি এবং তার সহকর্মীরা ইন্দোনেশিয়া আর পাপুয়ান জনগণের মাঝে এক সমীক্ষার আয়োজন করেন। সমীক্ষা থেকে উঠে আসে, নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভান থেকে বর্তমান মানুষে যে জিনগুলো বাহিত হয়ে এসেছে, সেগুলো নন-কোডিং সিকুয়েন্সের চেয়ে কোডিং সিকুয়েন্সের উপর কম প্রভাব ফেলে। ওখান থেকে বিভিন্ন কোষের প্রাচীন অ্যালিল থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর তারা জানতে পারেন, ডেনিসোভান জিনগুলো শারীরিক প্রতিরক্ষার কোষগুলোর সাথে জড়িত।

তারপর তারা ‘OAS2’ জিন এবং ‘OAS3’ জিনের উপর পরীক্ষা চালালেন। এই দুটো জিন ভাইরাসের বিপক্ষে শারীরিক প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ওই পরীক্ষায় তারা প্রথমবারের মতো দেখলেন, ডেনিসোভানদের থেকে যে অ্যালিল হোমো স্যাপিয়েন্সে বাহিত হয়েছে, সেগুলো সরাসরি ওই দুটো জিনের এক্সপ্রেশন ঘটানোর জন্য দায়ী।

ডিএনএ বিশ্লেষণ অনুরূপে শিল্পীর তুলিতে একজন ডেনোসোভান; Maayan Harel.

আনাতোলিয়ার জিনোম

আদিম মানবপ্রজাতির জিনোম রহস্যন্মোচন বিজ্ঞানীদের কাছে বিশাল একটি চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। প্রস্তরযুগ এবং এর পরবর্তী লোকজনের পুরো জিনোম-ডেটার গবেষণাপত্র প্রকাশ করার পর এক দশক কেটে গিয়েছে। প্রাচীনকালের মানব জিনোম বিশ্লেষণের মাইলফলক ছিল ২০১৪ সাল।

এই বছর গ্রীষ্মে আয়োসিফ ল্যাজারিডিস এবং তার সহকর্মীরা তিনটা পেপার পাবলিশ করে দেখিয়েছেন, ডেটা জেনারেশনের বিশাল এই ক্ষেত্র কত সমৃদ্ধ হয়ে গেছে। এই তিনটি পেপারে সম্মিলিতভাবে আনাতোলিয়া এবং এর সংলগ্ন অঞ্চলের ৭০০টিরও বেশি প্রাচীন মানবকঙ্কালের অবশেষ থেকে পাওয়া জিনোম তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গত সাত বছরের প্রাপ্ত ডিএনএ বিশ্লেষণ অনুসারে দেখা যায়, আজকের যুগের পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষীদের উদ্ভব ঘটেছে তাম্র-যুগের ইয়ামনায়া সংস্কৃতি থেকে। কিন্তু বর্তমানে সেই গবেষণায় খানিকটা চিড় ধরিয়েছেন লসিফ ল্যাজারিডিস এবং তার সহকর্মীরা। কারণ, পূর্বের সেই ডিএনএ ডেটা পুরো আনাতোলিয়া নিয়ে চালানো গবেষণার ফলাফল নয়। তাই, সেই ডেটায় ওসব জায়গার ফলাফল অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যেখানে প্রাচীনতম কিছু ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষীর অস্তিত্ব ছিল।

নতুন তিন পেপার থেকে তাম্র-যুগের আনাতোলিয়ার বাসিন্দাদের মাঝে সমতল ভূমি থেকে আসা লোকজনের প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই পেপারে আনাতোলিয়া এবং গ্রিসের মাইসিনিয়ায় অঞ্চলে Y ক্রোমোজোমের বংশানুক্রমের বর্ণনাও করা হয়েছে। এছাড়াও এই গবেষণা, মেসোপটেমিয়া এবং আনাতোলিয়ার প্রাক-কৃষিকর্ম, এবং ওই অঞ্চলের নব্যপ্রস্তরযুগের বাসিন্দাদের প্রাক-মৃৎশিল্প ও মৃৎশিল্প সম্পর্কেও জটিল এক ধারণা দেওয়া হয়েছে।

আনাতোলিয়ায় প্রাপ্ত কঙ্কাল; Peter Jablonka.

গুহার প্রাচীন উদ্ভিদ

আদিমকালের মানুষজন খাদ্য, বস্ত্র, শিল্প, অলঙ্করণ, প্রসাধনী হিসেবে হরেক রকমের উদ্ভিদ ব্যবহার করত। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে উদ্ভিদের প্রমাণ পাওয়া গেছে খুবই কম। প্রাচীনকালে মানুষ ফুল এবং বায়ুবাহিত যে পরাগ-রেণু ব্যবহার করত, তার থেকে প্রাচীন উদ্ভিদ সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। কারণ, কালের আবহে বেশিরভাগ ডিএনএ প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়।

আর্মেনিয়ার ‘আঘিতু-৩‘ গুহার আস্তরণে আন্নেকে টার স্কিউর এবং তার সহকর্মীরা সৌভাগ্যক্রমে প্রাচীনকালের এক উদ্ভিদ ডিএনএ-র সন্ধান পেয়েছেন। ওগুলো ছিল মূলত পরাগ-রেণুর ক্লোরোপ্লাস্ট ডিএনএ। ওই গুহাতে তারা উদ্ভিদের ডিএনএ ছাড়াও পুরাতন প্রস্তরযুগের বিভিন্ন হস্তনির্মিত বস্তুর সন্ধান পান, যেগুলো ৪৩ হাজার থেকে ২৬ হাজার বছর পুরনো। পরবর্তীতে নভেম্বর মাসে তারা ‘জার্নাল অভ হিউম্যান ইভ্যুলুয়েশন’ এর একটি আর্টিকেলে সে খবর প্রকাশ করেন।

আঘিতু ৩ গুহা; Image Source: Science Direct.

আফ্রিকায় প্রকরণের মিশ্রণ

আফ্রিকায় বসবাসকারী প্রাচীন মনুষ্য প্রজাতির জিনোমের ব্যাপারে আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ। শীতল স্থানে ডিএনএ তুলনামূলক ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে, এবং গত ২০ হাজার বছরে আফ্রিকায় এমন ভালোভাবে সংরক্ষিত ডিএনএ-র অভাব ভালোভাবেই ভোগাচ্ছিল বিজ্ঞানীদের। নৃতত্ত্ববিদ্যার ধারণা অনুযায়ী, আফ্রিকা থেকেই আধুনিক মানুষেরা পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।

নানান সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও, বিজ্ঞানীরা আফ্রিকা থেকে ডিএনএ অনুসন্ধানের মাধ্যমে মানবজাতির নৃতাত্ত্বিক তথ্য জানার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ফেব্রুয়ারিতে মার্ক লিপসন এবং তার সহকর্মীরা মালাউয়ি, তাঞ্জানিয়া, এবং জাম্বিয়ার প্রত্নতত্ত্বস্থল থেকে ছয়জন প্রাচীন মানুষের ডিএনএ উদ্ধার করেছেন। রেডিও কার্বন করে দেখা গেছে, এগুলো ১৬,০০০ থেকে ৫০০০ বছর পূর্বের। এরপর তারা এসব ডিএনএ নমুনার সাথে অন্যান্য স্থান থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ নমুনার সাথে তুলনা করেছেন।

আধুনিক মানুষ, নিয়ানডারথাল, এবং ডেনিসোভানদের খুলির পার্থক্য; Image Source: Troy Lawrence.

শুরুর দিকে লিপসন উল্লেখ করেছিলেন, আজকের দিনের আফ্রিকার লোকজনের উদ্ভব মূলত চারটি আলাদা গোষ্ঠী থেকে। নতুন গবেষণায় তারা যোগ করেছেন, এই চার গোষ্ঠীর মধ্যে তিন গোষ্ঠী ছিল পূর্ব আফ্রিকার আদি বাসিন্দাদের পূর্বপুরুষ। পরবর্তীতে চারটি গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যেই প্রজনন ঘটিয়ে সৃষ্টি করেছে ভিন্ন প্রকরণ। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পূর্ব আফ্রিকায় মানবের এই ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক প্রকরণ শুরু হয়েছিল প্রায় ৫০ হাজার বছর পূর্বেই। তখন জনসংখ্যার ঘনত্ব কম থাকায়, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে দূরত্ব ছিল তুলনামূলক বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সেই দূরত্ব মিটে গেছে।

২০ হাজার পূর্বের একজন আফ্রিকান মানুষ; Image Source: Shutterstock.

প্যালিয়োজিনোমিক্সের সূচনা

নিঃসন্দেহে এ বছর সবচেয়ে আলোচিত খবরগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল, সভান্তে প্যাবোর ‘শারীরবিদ্যা’ বা ‘চিকিৎসা’ বিভাগে নোবেল পুরষ্কার জয়। তিনি বিলুপ্ত হোমিনিনদের জিন এবং মানববিবর্তন বিষয়ে তার উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য নোবেলের পুরষ্কারের জন্য ভূষিত হয়েছেন। তিনি বর্তমান মানবপ্রজাতির নিকটবর্তী বিলুপ্ত প্রজাতি নিয়ান্ডারথালদের জিনোম সিকোয়েন্স বা জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন। সাথে তিনি আবিষ্কার করেছেন অপরিচিত ‘ডেনিসোভা’ হোমিনিনের। পেবো তার গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, প্রায় ৭০,০০০ বছর পূর্বে এই বিলুপ্ত হোমিনিনদের সাথে হোমো স্যাপিয়েন্সদের জিনের বিনিময় হয়েছিল।

শিল্পীর তুলিতে একজন নিয়ান্ডারথাল বাবা এবং মেয়ে, যা বানানো হয়েছে ডিএনএ বিশ্লেষণ অনুরূপে; Image Source: Tom Björklund.

বর্তমান হোমো স্যাপিয়েন্সদের শরীরে এই প্রাচীন মানবদের থেকে পাওয়া জিনের প্রভাব বিদ্যমান। প্যাবোর এই বৈশিষ্ট্যগত গবেষণা জন্ম দিয়েছে সম্পূর্ণ নতুন জীববিজ্ঞানের এক শাখার, যার নাম হলো প্যালেয়োজিনোমিক্স। প্যাবো জানিয়েছেন, বিলুপ্ত হোমিনিনদের কিছু জিন এখনো আমরা নিজেদের মাঝে বয়ে বেড়াচ্ছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় তিব্বতীয় বাসিন্দাদের কথা। তাদের মাঝে EPSA1 জিনের ডেনিসোভান সংস্করণ পাওয়া যায়, যার ফলে তারা পাহাড়ের উপর অধিক উচ্চতায় কম অক্সিজেনের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে।

নোবেলজয়ী সভান্তে প্যাবো; Image Source: Alamy.

প্লেগ রোগের পদচিহ্ন

দ্রুত বিবর্তিত বহু মানব জিনোম শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত। যেহেতু মহামারিগুলো অল্প সময় ধরে বিস্তৃত থাকে, তাই জিন ফ্রিকোয়েন্সি থেকে তাদের প্রভাব খুঁজে বের করা মোটামুটি কষ্টসাধ্য কাজ। প্রাচীন মানুষের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে জিন বিজ্ঞানীরা প্রাচীনকালের মহামারি বা অতিমারিতে মৃত্যুহার এবং টিকে থাকার হার খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।

১৩৪৬-১৪৫২ সাল পর্যন্ত চলমান ইউরোপীয় প্লেগ রোগ ‘ব্ল্যাক ডেথ’ মহামারিতে ইউরোপের প্রায় অর্ধেক মানুষ মারা গিয়েছিল। জেনিফার ক্লাংক এবং তার সহকর্মীরা ব্ল্যাক ডেথে মারা যাওয়া কিছু লাশের জিনোটাইপ নিয়ে কাজ করেছেন, যাদের সমাহিত করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় লন্ডনের স্মিথফিল্ড গণকবরে। তারপর তাদের জিন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে ব্ল্যাক ডেথের আগে বা পরে মারা যাওয়া কিছু লাশের ডিএনএ-র তুলনা করেছেন তারা। যারা মহামারিতে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং যারা মহামারির ধাক্কা সহ্য করে পরবর্তীতে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করেছেন, সেই দুই ধরনের মানুষের থেকে দুই ধরনের জিনগত ফলাফল পেয়েছেন জেনিফার ক্লাংক।

শিল্পীর তুলিতে ইউরোপের ব্ল্যাক ডেথ মহামারি; Image Source: Getty Images

তারা এমন অনেক জিনের সন্ধান পেয়েছেন যেগুলোর কাঠামোতে ব্ল্যাক ডেথ এবং ব্ল্যাক ডেথের পর বেশ বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে। ওই জিনগুলো হয় মানুষকে মহামারির প্রকোপেও টিকে থাকতে সাহায্য করেছে বা মৃত্যুর দোরগোড়ায় ঠেলে দিয়েছে। তারা ওই ইমিউনো সেল লাইন নিয়ে পরীক্ষা করেছেন যেগুলো মহামারির জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার (Yersinia pestis) বিপক্ষে শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ওই নিরীক্ষায় দেখা গেছে, ব্ল্যাক ডেথের সময় গুরুত্বপূর্ণ এই জিনগুলো যখন এই রোগজীবাণুর সংস্পর্শে এসেছিল, তখন প্রতিরক্ষা কোষগুলোতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। অর্থাৎ এই জিন পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হলে তা, তা ওই প্লেগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারত।

This is a Bengali about some anthropological discoveries of 2022 by analyzing ancient DNA.
References: Hyperlinked inside.
Feature Image: Getty Images.

Related Articles