Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রথম মানুষবাহী সফল মহাকাশ অভিযানের গল্প

শুরুর আগে

মানুষের মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে ইউরি গ্যাগারিন এক অবিস্মরণীয় নাম। প্রথমবারের মতো মহাকাশে তিনিই পাড়ি জমিয়েছিলেন। রাশিয়ান এই নভোচারীর মহাকাশযাত্রা আমেরিকা আর রাশিয়ার মধ্যে যে ভয়াবহ প্রতিযোগীতার সূচনা করেছিল, তারই সূত্র ধরে পরবর্তীতে একের পর এক মহাকাশ অভিযান চালানোর চেষ্টা করতে থাকে দেশ দুটি, যার ফলে মানুষ চাঁদে পা রেখেছে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে বানিয়েছে মহাকাশ স্টেশন।

ইউরি গ্যাগারিন ভস্টক-১ নামের একটি মহাকাশযানে করে ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। রাশিয়ান সময় সকাল ৬:০৭ এ মহাকাশযানটি যাত্রা করে। প্রথমবারের মতো পৃথিবীর আকর্ষণের বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়। তারপর পৃথিবীকে ঘিরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে একবার ঘুরে নিয়ে আবারো প্রবেশ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। রাশিয়ানদের সৌভাগ্য, মহাকাশযানটি সেদিন পৃথিবীর বুকে সফলভাবেই নেমে এসেছিল।

ইউরি গ্যাগারিন; Image Source: space.com

মোটা দাগে গ্যাগারিনের মহাকাশযাত্রার গল্প এটুকুই। তবে, এর মাঝেও লুকিয়ে আছে মজার এবং দারুণ সব তথ্য। যেগুলো নিয়ে কথা না বললে এই মহাকাশযাত্রার গল্পটি অপূর্ণই থেকে যাবে। বিশেষ করে, ইউরি গ্যাগারিন মানুষটি কে ছিলেন, কিংবা ভস্টক-১১ এর আগে কেন কোনো মহাকাশযান মানুষকে মহাকাশে নিয়ে যেতে পারেনি- তা নিয়ে কথা না বললে তো এই গল্পের কিছুই আসলে বলা হয় না।

তাহলে চলুন, এরকম কিছু তথ্য সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।

ইউরি গ্যাগারিনের পুরো মিশনটির মোট সময় ছিল মাত্র ১০৮ মিনিট। এখনকার হিসেবে খুবই অল্প। কিন্তু ১৯৬১ সালের প্রযুক্তির কথা বললে অনেক বেশি। আসলে অন্যান্য দেশ, এমনকি খোদ আমেরিকাও তখন অভিকর্ষের বাধা উপেক্ষা করে পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারেনি।

১২ এপ্রিলের পত্রিকায় প্রথম মানুষবাহী সফল মহাকাশ অভিযানের খবর; Image Source: orbiterchspacenews.blogspot.com

এই ১০৮ মিনিটের মধ্যে মূল মিশন, পৃথিবীর চারপাশ ঘিরে একবার ঘুরে আসতে সময় লেগেছিল দেড় ঘন্টারও কম সময়। কারণ, মহাকাশযানটির বেগ ছিল প্রচণ্ড। পৃথিবীকে ঘিরে ঘোরার বেশিরভাগ সময় জুড়ে ভস্টক-১ এর গতিবেগ ছিল প্রতি ঘন্টায় ১৭,৫০০ মাইল। এ সময় যানটি ‘প্রায় বৃত্তাকার’ একটি পথ ধরে ঘুরেছে এবং সর্বোচ্চ ২০৩ মাইল উচ্চতায় উঠেছে। তারপর, গতিবেগ কমে আসলে এটি আবার পৃথিবীর সীমানায় প্রবেশ করে।

পৃথিবীকে ঘিরে একপাক ঘুরে আসার জন্য ভস্টক-১ মহাকাশযানকে যে উচ্চতায় উঠে যেতে হয়েছে, সেজন্য ন্যূনতম গতিবেগ ঘন্টায় ১৭,৫০০ মাইল হওয়াটা ছিল বাধ্যতামূলত। এর মানে দাঁড়ায়, মহাকাশযানটিকে প্রতি সেকেন্ডে ৫ মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। মহাকর্ষের বাধা ছিঁড়ে পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে গিয়ে পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরে আসতে হলে এরকম প্রচণ্ড বেগ থাকাটা আবশ্যক। কিন্তু সে সময় এত শক্তিশালী আর কোনো রকেট ছিলই না।

এই মিশনের প্রস্তুতি হিসেবে এ মহাকাশযানে ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে দেখা দেরকার ছিল। সেজন্য এর একটি প্রটোটাইপ, ভস্টক ৩কেএ-২ নামে একটি মহাকাশযানে করে আইভান ইভানোভিচ নামের মনুষ্য আকৃতির একটি ডামি এবং জিজদোষ্কা (Zvezdochka) নামের একটি কুকুরকে লো-আর্থ অরবিট ধরে ঘুরে আসতে পাঠানো হয়েছিল। মিশনটি সফল হওয়ার পরই রাশিয়ানরা ভস্টক-১ মিশনের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে।

আইভান ইভানোভিজ; Image Source: airandspace.si.edu

১৯৯৩ সালে সথেবিসে’স-এ অনুষ্ঠিত এক নিলামে আইভান ইভানোবিচ নামের ডামিটি ১,৮৯,৫০০ ডলারে বিক্রি হয়!

ইউরি গ্যাগারিন যখন মহাকাশে যাত্রা করেন, তখন তার বয়স ছিল ২৭ বছর।

১৯৩৪ সালের ৯ মার্চ রাশিয়ার জাটস্কের কাছে, ক্লুসিনো নামের এক গ্রামে তার জন্ম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অন্যান্যদের মতোই তার পরিবারকেও অসম্ভব কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। জার্মান এক অফিসার তাদের ঘর দখল করে নিয়েছিল। ফলে প্রায় ১ বছর ৯ মাসের মতো মাটির ঘরে বসবাস করতে হয়েছিল তাদের। তার উপর ১৯৪৩ সালে নাৎসিরা তার দুই ভাইকে দাস হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধ শেষে তারা মুক্তি পেয়েছিলেন। পরে, ১৯৪৬ সালে আবারো জাটস্কে ফিরে আসে গ্যাগারিন পরিবার।

জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই ইউরি মহাকাশযাত্রার স্বপ্ন দেখেছিলেন।[১] তবে, তার ছোটবেলায় মানুষ মহাকাশযাত্রার কথা সেভাবে ভেবেছে বলে মনে হয় না। সফলদেরকে নিয়ে এরকম কল্পকথা ছড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক। সে সময়ের অবস্থা বিবেচনা করলে মনে হয়, মহাকাশযাত্রা না হলেও বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন তার ছিল। সেই ধারাবাহিকতায়, লুবার্টসিতে বছরখানেকের জন্য একটি ভোকেশনাল স্কুলে পড়াশোনা করে হাতে-কলমে কাজ শিখেছেন। তারপর সারাতোভের একটি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান। সেখানে পড়ার সময়ই শখের বশে বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

১৯৫৫ সালে, কারিগরি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে ওরেনবার্গের পাইলট’স স্কুলে ভর্তি হন ইউরি। সেখানে তিনি যুদ্ধবিমান চালনার উপর প্রশিক্ষণ নেন। সেখানেই ভ্যালেন্টিনা গোরেচেভার সাথে তার পরিচয়।

১৯৫৭ সালে তার জীবনে বেশ কিছু বড় ঘটনা ঘটে। প্রথমত, মিগ-১৫ বিমান চালনায় ইউরি উইং লাভ করেন। এবং ভ্যালেন্টিনার সাথে সেই বছরই তার বিয়ে হয়।

এরপর তাকে নরওয়েজীয় সীমান্তের কাছে মুরমানস্ক অবলাস্টে অবস্থিত লুওস্তারি এয়ারবেইজে নিয়োগ দেওয়া হয়। বৈরি আবহাওয়ার জন্য এই এলাকায় বিমান চালানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। নিজের কাজে দারুণ মুন্সিয়ানার পরিচয় দেন ইউরি। ফলে, ১৯৫৭ সালের ৫ নভেম্বর ইউরি গ্যাগারিন সোভিয়েত বিমান বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট পদ লাভ করেন।

দুই বছর পর, ১৯৫৯ সালের ৬ নভেম্বর তিনি সিনিয়র লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন।

পরের বছর, ১৯৬০ সালে, আরো ১৯ জন বৈমানিকের সাথে মহাকাশযাত্রার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর মধ্য থেকে ইউরি গ্যাগারিন এবং ঘেরমান টিটোভকে দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত করা হয়। এর পেছনের কারণ, তাদের উচ্চতা। না, লম্বা নয়, বরং তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে খাটো হওয়ার ফলেই নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা। ইউরির উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। ছোট্ট ভস্টকের ককপিটে বেশ ভালোভাবে এঁটে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি, শারীরিক ক্ষমতা ইত্যাদি মিলে শেষপর্যন্ত তিনিই প্রথম মহাকাশযাত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। তাছাড়া, প্রথমধাপে নির্বাচিত ২০ জনের মধ্যও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ইউরি। একটি ভোটাভুটি করা হয়েছিল যে, এই ২০ জন কাকে মহাকাশযাত্রার জন্য সবচেয়ে যোগ্য মনে করেন। এর মাঝে ১৭টি ভোটই পড়েছিল ইউরি গ্যাগারিনের পক্ষে।[২]

ভস্টক-১ ছিল মূলত একটি গোলকাকৃতির ক্যাপসুল। বর্তমানে সাধারণত যে আকৃতির মহাকাশযান বানানো হয়, সেসব মহাকাশযানের নির্দিষ্ট চোখা মাথা থাকে। মহাকর্ষের বাঁধন ছিঁড়ে বেরোনোর জন্য এই মাথাকে অনেক বেশি চাপ সহ্য করতে হয়। গোলকাকৃতির মহাকাশযানের ক্ষেত্রে সুবিধা হলো, এর নির্দিষ্ট কোনো সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি নেই। যখন যেদিকে ফিরে থাকবে, সেভাবেই সবটুকু পৃষ্ঠতল জুড়ে মহাকর্ষের চাপটুকু ছড়িয়ে যাবে। ফলে, কোনো একটি বিন্দুতে মহাকাশযানকে অনেক বেশি চাপ সহ্য করতে হবে না। সেজন্যই আসলে ভস্টক-১ প্রয়োজনীয় গতিবেগে ছুটতে পেরেছিল। এবং ভেতরের একমাত্র যাত্রীটি যাত্রার পুরো সময় বেশ আরামেই ছিলেন।

মাটিতে নামার পরে ভস্টক-১। পাশে ইউরি গ্যাগারিনের প্যারাসুট; Image Source: space.com

অনেকেই হয়তো ভাবছেন, এখন তাহলে মহাকাশযান এভাবে ডিজাইন করা বা বানানো হয় না কেন? আসলে সব কিছুতেই একটা ‘কিন্তু’ থাকে। গোলকাকৃতির সমস্যা হলো, ফিরে এসে নামার ক্ষেত্রে এটি খুবই অনুপোযোগী।

তাছাড়া, বর্তমান মহাকাশযানগুলোতে ফিরে এসে নামার জন্য থ্রাস্টার থাকে। যানটি ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে এলে থ্রাস্টার চালু হয়ে যায়, এবং উপরের দিকে বল প্রয়োগ করে। ফলে, মহাকাশযানের গতি ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে এবং যানটি নিরাপদে নামতে পারে। কিন্তু ভস্টক-১ এ সেরকম কোনো থ্রাস্টারও ছিল না। ফলে, বাঁচতে চাইলে গ্যাগারিনের একমাত্র উপায় ছিল ভূপৃষ্ঠের ৪ মাইল উপরে থাকতেই প্যারাসুট নিয়ে ভস্টক-১ থেকে বেরিয়ে যাওয়া। গ্যাগারিন তা-ই করেছিলেন।

কিন্তু সে সময় ‘প্রথম মনুষ্যবাহী সফল মহাকাশ অভিযান’ হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য সফলভাবে যাত্রীসহ মহাকাশযানটির নেমে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফলে, রাশিয়ানরা তাদের অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্যটি গোপন করে গিয়েছিল। পরবর্তীতে যাত্রীসহ নেমে আসার এই নিয়ম শিথিল করা হলে পরে রাশিয়া আসল সত্যটি ফাঁস করে।

ভস্টক-১ মিশনের লঞ্চপ্যাডটি এখনো রয়ে গেছে। ইউরি গ্যাগারিনের সম্মানে বাইকোনুর কসমোড্রোমে অবস্থিত এই লঞ্চপ্যাডটির নাম রাখা হয়েছে গ্যাগারিন’স স্টার্ট। এর আগে একই লঞ্চপ্যাড থেকে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক ১ উৎক্ষেপণ করা হয়।

রাশিয়ার ফেডারেল স্পেস এজেন্সির (রসকসমস) দায়িত্বে থাকলেও এই কসমোড্রোম বা মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্রটি আসলে কাজাখস্তানে অবস্থিত। স্নায়ুযুদ্ধের সময় এই দেশটি রাশিয়ার অংশই ছিল। তবে, এখন কাজাখস্তান স্বাধীন রাস্ট্র। রাশিয়ান সরকার এখনো এখান থেকে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে। এমনকি, এ বছরের জুলাই এবং সেপ্টেম্বরেও দুটো মহাকাশযানের ‘গ্যাগারিন’স স্টার্ট’ লঞ্চপ্যাড থেকেই যাত্রা করার কথা ছিল। তবে, ফান্ডিং না পাওয়ার ফলে মহাকাশযান দুটির যাত্রা বাতিল হয়ে গেছে।

ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশযাত্রার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বানানো স্মারক ১০ রুবলের মুদ্রা; Source: Catalog number: 5514-0005, Bank of Russia

শেষের কথা

প্রকৃতি মাঝে মাঝে বড় নির্মম আচরণ করে। মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পরে ইউরির স্বপ্ন জুড়ে ছিল ফের মহাকাশযাত্রা। কিন্তু এটাই তার কাল হয়ে দাঁড়াল। অসম্ভব বিখ্যাত হয়ে যাওয়ায় রাশিয়ার জন্য তিনি এত বেশি মূল্যবান হয়ে গিয়েছিলেন যে, রাশিয়ানরা তাকে আরেকবার মহাকাশে পাঠানোর ঝুঁকি নিতে কোনোভাবেই রাজি ছিল না।

১৯৬১ সালের এপ্রিলের টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ইউরি গ্যগারিন; Image Source: time.com

এ সময় ইউরি গ্যাগারিন স্টার সিটি মহাকাশচারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহকারি পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। সেই সঙ্গে ফাইটার পাইলট হিসেবে আবারো কাজ শুরু করেন। বিমান বাহিনীতেও তার পদোন্নতি হয়। ১৯৬৩ সালের ৬ নভেম্বর বিমান বাহিনীর কর্নেল পদে ভূষিত হন ইউরি।

পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালের দিকে রাশিয়ান সরকার তাকে আরেকবার মহাকাশে পাঠাতে রাজি হয়। তখনও মিশনের কোনোকিছু সেভাবে নির্ধারিত হয়নি। নিয়তির নির্মম পরিহাস! একটি সাধারণ রুটিন প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের সময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান ইউরি গ্যাগারিন। দিনটি ছিল ২৭শে মার্চ, ১৯৬৮।

রেড স্কয়ারের ওয়ালস অফ দ্য ক্রেমলিনে তাকে সমাহিত করা হয়।

This article is in Bangla language. It is about the First Human Spaceflight. Necessary references have been hyperlinked and mentioned below.

[1] Into That Silent Sea: Trailblazers of the Space Era, 1961-1965

[2] Challenge to Apollo: The Soviet Union and the Space Race, 1945-1974

Featured Image: praguemorning.cz 

Related Articles