সালটা ১৮৭৭, ইতালীয় জ্যোতির্বিদ জিওভানি শিয়াপ্যারেলি দৃষ্টিভ্রমের দরুন ভুল করে ভেবে বসলেন, তিনি টেলিস্কোপের মাধ্যমে মঙ্গলপৃষ্ঠে কিছু রৈখিক কাঠামো সনাক্ত করেছেন। তিনি এর নাম দিলেন 'Canali (চ্যানেল)'। প্রাচীন মিশরীয় জ্যোতির্বিদদের সময় থেকে রাতের আকাশের আশ্চর্যের বস্তু হয়ে থাকা লাল গ্রহটি নিয়ে জল্পনা কল্পনা যেন বৃদ্ধি পেল। মানুষ ইতালিতে 'Canali'-কে ইংরেজিতে 'Canal' (খাল) ভেবে ধরে নিল যে, মঙ্গল গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীরা খাল তৈরি করেছে।
এরপর, প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সাথে সাথে গ্রহটি নিয়ে হয়েছে বিস্তর গবেষণা, ১৯৬০-এর পর থেকে গ্রহটিতে প্রেরণ করা হয়েছে একের পর এক রবোটিক মহাকাশযান। পৃথিবীর কেউ দেখেছেন প্রাণের সম্ভাবনা, কেউ দেখেছেন মানুষের সম্ভাব্য দ্বিতীয় বাসস্থান।
সম্প্রতি নাসার প্রেরিত মার্স রোভার 'কিউরিওসিটি' থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে— শুষ্ক এই গ্রহে বর্তমানে অণুজীব ব্যতীত অন্য কোনো প্রত্যক্ষ জীবন থাকার সম্ভাবনা নেই। তাই জিইয়ে থাকা কৌতূহল এখন পৃথিবী থেকে ১৪০ মিলিয়ন মাইল গড় দূরত্বে থাকা গ্রহকে বাসযোগ্য করা।
মঙ্গলপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর সমুদ্রতলের বায়ুমণ্ডলীয় চাপের এক ভাগেরও কম (০.৬%), বসবাসের জন্য নেই প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, নেই তরল পানিও। আছে বিষাক্ত মাটি, হারানো প্রায় বায়ুমণ্ডলে আছে প্রচুর কার্বন ডাইঅক্সাইড (৯৬%), নাইট্রোজেন (২.৬%) ও আর্গন (২%)। এছাড়াও লাল গ্রহটির পৃষ্ঠে বিচ্ছুরিত হওয়া আয়নিত সৌর ও মহাজাগতিক রশ্মি মানুষের সহনক্ষমতার চেয়ে বেশি। তাহলে প্রশ্ন জাগতেই পারে, আমরা 'মানুষ' কীভাবে মঙ্গলকে বাসযোগ্য করবো?
একটা সহজ সমাধান হতে পারে স্পেসশিপে করে পৃথিবী থেকে জীবনধারণের জন্য 'প্রতিনিয়ত' সকল উপকরণ নিয়ে যাওয়া, স্যুট পরে মঙ্গলে চলাফেরা করা। তবে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। যেখানে আমাদের পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী একশ বছর পরে বসবাসের যোগ্য থাকবে কিনা, তা-ই এ শতাব্দীর জাজ্বল্যমান প্রশ্ন, সেখানে আমাদের দরকার স্থায়ী সমাধান। পৃথিবী আমাদের জন্মস্থান, আমরা চাইলেই ত্যাগ করতে পারি না। তবে বিজ্ঞানের কলাকৌশল আমাদের বিকল্প খুঁজতেও উৎসাহিত করে, তাই তো একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম উদ্ভাবক— স্পেসএক্স, টেসলা, নিউরালিংকের প্রতিষ্ঠাতা, ধনকুবের প্রকৌশলী ইলন মাস্ক মঙ্গলকে 'টেরাফর্ম' অর্থাৎ, বদলে ফেলতে চান।
আমরা অনেকেই হয়তো 'টেরাফর্মিং' শব্দটির সাথে আগে থেকেই পরিচিত, অন্ততপক্ষে যারা সায়েন্স ফিকশন গল্প-সিনেমার ভক্ত তারা। টেরাফর্মিং-এর পুঁথিগত অর্থ হলো 'পৃথিবীকরণ'। মানে কোনো গ্রহ, উপগ্রহ, বা মহাজাগতিক বস্তুর বায়ুমণ্ডল, তাপমাত্রা, পৃষ্ঠতলের ভূসংস্থান ও বাস্তুসংস্থানের উন্নতিসাধন ঘটিয়ে পৃথিবীর সমতুল্য পরিবেশ নির্মাণের প্রক্রিয়াই 'টেরাফর্মিং'। টেরাফর্মিং নেহায়েতই কাল্পনিক একটা গ্রহসংক্রান্ত প্রকৌশল প্রক্রিয়া। তবে কি ইলন মাস্ক অতিশয় অস্বাভাবিক কিছু চিন্তা করছে? হয়তো! আবার, হয়তো না! আচ্ছা, বোঝার জন্য তাহলে একটু পিছন ফিরে, টেরাফর্মিং ও আমাদের সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ নিয়ে হাইপোথিসিসগুলোর ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাক।
আমাদের সৌরজগতের 'টেরেস্ট্রিয়াল' (পৃথিবী সম্পর্কীয় বা পৃথিবীর মতো) গ্রহগুলো টেরাফর্মিং-এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে ধারণা করা হয়। কারণ, এরা সূর্যের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় শক্তি শোষণ করতে পারবে। এছাড়া এদের কঠিন ভূপৃষ্ঠ— সিলিকেট এবং অন্যান্য খনিজ সমৃদ্ধ, যা ভবিষ্যতের কোনো উপনিবেশ গোষ্ঠীর খাদ্য তৈরি এবং বসতি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় হবে। অন্যদিকে জোভিয়ান গ্রহগুলো (বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন) মূলত গ্যাসীয় গ্রহ ও সূর্য থেকে অনেক বেশি দূরে, তাই টেরাফর্মিং করা সম্ভব নয়।
তো, কার্ল সাগান ১৯৬১-তে প্রথম শুক্র গ্রহকে পৃথিবীকরণ করা নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি শুক্রে উষ্ণ গ্রিনহাউজ গ্যাস আছে অনুমান করে বলেন, ঐ গ্রহের উপরস্তরের বায়ুমণ্ডল বর্ধিত করা যাবে যদি বিশেষ ধরনের জেনেটিক্যালি মডিফফাইড শৈবাল শুক্রে ছেড়ে দেয়া যায়। ফলে সেগুলো কার্বন ডাইঅক্সাইডকে বিশ্লেষণ করে অক্সিজেন ছেড়ে দেবে। আস্তে আস্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়বে, জৈব পদার্থের সৃষ্টি হবে, বৃষ্টিতে বিষাক্ততা কমবে এবং কয়েকশো বছরের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ও চাপ মাঝারি হয়ে যাবে, এবং ফলশ্রুতিতে শুক্রে মানব উপনিবেশের পথ সুগম হবে।
কিন্তু যুবক সাগানের ধারণা ছিল বহুলাংশে ভুল, কেননা শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ৯২ গুন, এছাড়াও সূর্যের অনেক কাছাকাছি হওয়ায় পৃষ্ঠদেশের তাপমাত্রা প্রায় ৪৬২° সেলসিয়াস, যা পৃথিবীর যেকোনো জীবের জন্য অকল্পনীয়। আর যদি কোনোভাবে শুক্রকে শীতল করে অনুকূল বায়ুমণ্ডল তৈরি করা সম্ভবও হয়, মানুষের জন্য সবচেয়ে বিরুপ প্রভাব ফেলবে পৃথিবীর থেকে অনেক ধীরগতিতে নিজ অক্ষে ঘূর্ণন (শুক্রে ১দিন = পৃথিবীতে ২৪৩ দিন)। তাই বোঝাই যাচ্ছে- শুক্রকে পৃথিবীকরণ করা মোটেও সহজ কিছু না।
অনেকে ভাবতে পারে— বুধ গ্রহের কী হাল, এটাও তো টেরেস্ট্রিয়াল গ্রহ! একে কি পৃথিবীকরণ করা যায় না? বায়ুহীন বুধ, সূর্যের আরো কাছাকাছি কক্ষে প্রদক্ষিণ করে, তাই একে পৃথিবীকরণ করা শুক্রের চেয়েও কঠিন হবে। কেবলমাত্র মঙ্গল গ্রহের কিছু বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর কাছাকাছি হওয়ায় একেই টেরাফর্মেশন করা সম্ভব বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
মঙ্গল গ্রহের একদিন সমান পৃথিবীতে ২৪ ঘণ্টা ৩৯ মিনিট (যা প্রায় পৃথিবীর ১ দিনের সমান)। এছাড়াও মঙ্গল গ্রহ নিজ অক্ষে ২৫.১৯° হেলে আছে যা পৃথিবীর (২৩.৪৪°) প্রায় সমান। তাই মঙ্গলে পৃথিবীর মতো ঋতু রয়েছে, যদিও মঙ্গলের ১ বছর পৃথিবীর ১.৮৮ বছরের সমান দীর্ঘ। এছাড়া মঙ্গলে রয়েছে পোলার আইস ক্যাপস, যা ইঙ্গিত দেয় সেখানে একসময় পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল ছিল যা কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে। আর এই সাদৃশ্যগুলো থাকার জন্যই মানব বসবাসের বিপক্ষে সকল প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও মানুষ স্বপ্ন দেখে মঙ্গল উপনিবেশ করা নিয়ে। আর তাই 'প্ল্যানেটারি ইঞ্জিনিয়ারিং অন মার্স' নিয়ে একের পর এক মতবাদ দিয়ে যাচ্ছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
প্রথমত, গ্রহণযোগ্য বায়ুমণ্ডল তৈরি করতে হবে, যেখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকবে, এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপ হতে হবে ৩০-১০০ kPa এর মধ্যে। মঙ্গল গ্রহে ম্যাগনেটোস্ফেয়ারের অভাবে আয়োনিত সৌর এবং মহাজাগতিক রশ্মি সহজেই এর পৃষ্ঠে পৌঁছতে পারে, যার ফলে মানুষের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি হবে। এছাড়াও আমরা জানি, ম্যাগনেটোস্ফেয়ারের অভাবেই সৌর ঝড়ে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল আস্তে আস্তে মহাশূন্যে হারিয়ে গেছে। তাই মঙ্গলে পৃথিবীর মতো প্রায় কৃত্রিম ম্যাগনেটোস্ফেয়ার তৈরি করতে হবে।
মঙ্গলে পৃথিবীর তুলনায় মাত্র ৫৯% আলো পৌঁছে, এই গ্রহের গড় তাপমাত্রা –৬৩° সেলসিয়াস, যেখানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৪° সেলসিয়াস। তাই, মঙ্গলকে কিছুটা উত্তপ্ত করতে হবে। মঙ্গলের মাটি থেকে বিষাক্ততা দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। মঙ্গলপৃষ্ঠের কম মাধ্যাকর্ষণ (পৃথিবীর ৩৮%) মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিনা এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। তবে মাইক্রোগ্র্যাভিটি মাংসপেশী হ্রাস এবং হাড়ের ক্ষয়ক্ষতির মতো স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হিসেবে পরিচিত। তাই সম্ভব হলে কৃত্রিম মহাকর্ষীয় ত্বরণ সৃষ্টি করতে হবে। সর্বোপরি, মানুষের বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ তরল পানির ব্যবস্থা করা লাগবে। এগুলো শুনে মনে হতে পারে, মানুষের বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে কি তাহলে মঙ্গলকে পৃথিবীকরণ করা আদৌ সম্ভব?
২০১৮-তে নাসার একদল গবেষক মত দেন, বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে মঙ্গলকে সম্পূর্ণরূপে টেরাফর্ম করা সম্ভব না। কেননা, মঙ্গলপৃষ্ঠে অবরুদ্ধ সকল গ্রিনহাউস গ্যাস মুক্ত করা গেলেও তা পৃথিবীর মাত্র ৬.৯% হবে, যা মানব-বাসযোগ্য বায়ুমণ্ডল তৈরিতে সক্ষম না। এরপরও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কসহ অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই মনে করেন, অনেকাংশেই সম্ভব।
১৯৯১ সালে গ্রহবিজ্ঞানী ক্রিস ম্যাকেই এবং তার নাসার কিছু সহকর্মী মিলে মঙ্গলের মাটি ও পোলার আইস ক্যাপসে যেসব গ্রিসহাউজ গ্যাস আটকা পড়ে আছে তাদের মুক্ত করা নিয়ে একটি পরিকল্পনার কথা জানান। ম্যাকেই এবং তার সহকর্মীরা পরামর্শ দেন— এই আটকে থাকা গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলো যদি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হয় তবে তা দু'রকমের প্রভাব ফেলবে। গ্যাসগুলো (যেমন, জলীয় বাষ্প ও কার্বন ডাইঅক্সাইড) মঙ্গলের পৃষ্ঠদেশের বায়ুমণ্ডলীয় চাপকে বাড়িয়ে তুলবে, সাথে সাথে এটি গ্রহের তাপমাত্রাও বাড়িয়ে তুলবে এবং আইসক্যাপসের দরুন তরল পানি পরবর্তীতে মঙ্গলের পৃষ্ঠে পাওয়া যাবে। মঙ্গল টেরাফর্মেশনের পেছনে অনেকের অনেক অনুমান প্রস্তাবনা থাকলেও, গত তিন দশকে ম্যাকেইয়ের মঙ্গল গ্রহকে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনাই সমাধানের ভিত্তি হিসেবে পরিণত হয়েছে।
এমনকি, এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই ইলন মাস্ক ২০১৫-তে মঙ্গলের আইস ক্যাপসে থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ফেলে মঙ্গলকে টেরাফর্মিং করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, পারমাণবিক বোমা আবার কীভাবে 'পৃথিবীকরণ' করবে, যেখানে তার রেডিয়েশন শত শত বছর ধরে চলে? হ্যাঁ, প্রশ্নটা যৌক্তিক। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন— এটা নিউক্লিয়ার শৈত্য সৃষ্টি করবে, পরিণতিতে আরো বিরূপ পরিবেশের সৃষ্টি হবে। তবে ইলন মাস্ক ২০১৯ সালে এক টুইট বার্তায় বলেন, তার 'নিউক মার্স' কৌশল হলো মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের উপরে ধারাবাহিকভাবে হালকা নিউক্লিয়ার ফিউশন বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে কৃত্রিম সূর্য তৈরি করা, এটা মঙ্গলকে তেজস্ক্রিয় করে তুলবে না।
২০২০ সালে রাশিয়ান স্পেস এজেন্সি রসকসমসের নির্বাহী পরিচালক আলেকজান্ডার ব্লোশেঙ্কো, ইলনের হাইপোথিসিসে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বর্তমান প্রযুক্তিতে ১০,০০০ পারমাণবিক বোমা লাগবে। সেই চ্যালেঞ্জ অবশ্য ইলন গ্রহণও করেছেন। উল্লেখ্য, কৃত্রিম সূর্য তৈরি না করে রিফ্লেক্টর স্যাটেলাইট ব্যবহার করে আইসক্যাপস বাষ্পীকরণের পরিকল্পনাও তার চিন্তায় আছে।
তবে শুধু গ্রিনহাউজ গ্যাস উন্মুক্ত করলেই তো হবে না, ম্যাগনেটোস্ফেয়ারের অভাবে 'বায়ুমণ্ডল' আবারও হারিয়ে যাবে সৌর ঝড়ে। তাই এর সমাধান নিয়ে দুই জাপানী বিজ্ঞানী ওসামু মোটোজিমা, এবং নাগাতো ইয়ানাগি এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, অনেকগুলো 'রেফ্রিজারেটেড ল্যাটিচুডিনাল সুপারকন্ডাক্টিং রিং' দ্বারা বর্তমান প্রযুক্তির মাধ্যমেই আর্টিফিশিয়াল ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করা সম্ভব, যেখানে প্রতিটি রিংয়ে প্রতিনিয়ত পর্যাপ্ত অপরিবর্তনশীল বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে।
আবার অন্য এক গবেষণায় নাসার বিজ্ঞানী জিম গ্রীন, মঙ্গল এল-১ ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে চৌম্বকীয় দ্বিমেরু স্থাপনের প্রস্তাবনা দিয়েছেন, যেটি মঙ্গল এবং সূর্যের মধ্যে একটি আংশিক ও দূরবর্তী কৃত্রিম ম্যাগনেটোস্ফেয়ার তৈরি করবে। ফলশ্রুতিতে তা পুরো মঙ্গল গ্রহকে সৌর ঝড় ও আয়োনিত সৌর বিকিরণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে। তো, বোঝাই যাচ্ছে, টেরাফর্মিং এখন আর কোনো সায়েন্স ফিকশন, বরং সম্ভাবনা রয়েছে একে বিজ্ঞানভিত্তিক বাস্তবে রূপ দেয়ার।
ইলন মাস্ক ২০২৪ নাগাদ মঙ্গলে প্রথম মানুষ প্রেরণ এবং ২০৫০ নাগাদ মঙ্গলে ১ মিলিয়ন মানুষের ঘাঁটি তৈরি করার সুদূর পরিকল্পনা করেছেন। তার নির্দেশে ইতিমধ্যে স্পেসএক্স 'স্টারশিপ' নামক রকেট তৈরি করার কাজ শুরু করছে যা কিনা একবারে ১০০ মেট্রিক টন কার্গো ও ক্রু ৬ মাসের ব্যবধানে পৃথিবী থেকে মঙ্গলে বহন করতে পারবে এবং মঙ্গলে অবতরণ করে আবার উড্ডয়ন করতে সক্ষম হবে, সংক্ষেপে তাদের তৈরি ফ্যালকন-৯ রকেটের মতো বারবার বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে।
একসময় কেবল সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোই মহাকাশ গবেষণা বা বিভিন্ন ইন্টারপ্লানেটারি অভিযান চালাতে পারত। সেখানে এখন একজন মানুষের স্বপ্ন, পরিশ্রম এবং চিন্তাশীলতা বিগত এক যুগে ব্যক্তিগত স্পেস প্রযুক্তিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। আমরা মানুষ কখনো হার মানতে শিখিনি। তাই মানবসভ্যতা ধ্বংসের ঝুঁকির বিপরীতে সমাধানের সাহসও মানুষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। আর তাই তো, আমরা যেমন জিও-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার চেষ্টা করছি, সেইসঙ্গে বিকল্প হিসেবে মঙ্গলকে টেরাফর্মিং করার উপায়ও খুঁজে চলেছি। হ্যাঁ, আমরা মানুষ, আমরা স্বপ্ন দেখি। আর স্বপ্ন দেখি বলেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে জানি।
Language: Bangla
Topic: This article is about terraforming mars to a habitable planet like earth.
References:
1. Sagan, Carl (1973). "Planetary engineering on Mars". Icarus. 20 (4): 513–514.
2. Fogg, Martyn J. (1998). "Terraforming Mars: A Review of Current Research". Advances in Space Research. COSPAR. 2 (3): 415–420.
3. Motojima, Osamu & Yanagi, Nagato (May 2008). "Feasibility of Artificial Geomagnetic Field Generation by a Superconducting Ring Network". NIFS-886.
4. Results | Science – NASA's Mars Exploration Program | NASA
6. In Depth | Mars – NASA Solar System Exploration | NASA
7. NASA proposes a magnetic shield to protect Mars' atmosphere | Phys.org
8. Mars Terraforming Not Possible Using Present-Day Technology | NASA
9. Mars Fact Sheet | Internet Archive Machine
Featured Image Source: imgur.com