Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জম্বি ফাঙ্গাস: বাস্তব জীবনের হরর

ধরুন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একটা অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরে থাইল্যান্ডে এসেছেন। ভাবলেন, থাইল্যান্ড এসে রেইনফরেস্ট না দেখে চলে গেলে হচ্ছে না। কাজেই দলবল নিয়ে কোনো এক রেইনফরেস্টে এসে ক্যাম্প করলেন। সমস্যা তো হতেই পারে। তবে সমস্যায় পড়লে ম্যাকগাইভারের মতো অদ্ভুত সব সমাধানও নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে।

ছোট্ট করে আগুন জ্বেলে মাটিতে বসে খাওয়া সেরে নিলেন। তারপর সকাল সকাল ঘুরতে বেরনো যাবে ভেবে একটু আগে আগে ঘুমিয়ে পড়লেন। মাঝরাতে বিচিত্র কোনো কারণে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে যা দেখলেন, তাতে আপনার মেরুদণ্ড দিয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেল। জম্বি! এতদিন দেখে আসা সব জম্বি মুভি কিংবা জম্বি সিরিজের কথা একে একে মনে পড়ে যাচ্ছে। ওয়াকিং ডেড! কেমন লাগবে তখন?

তবে এখনই নিঃশ্বাস আটকে ফেলার কিছু নেই। নতুন করে এমন কিছুর সন্ধান পাওয়া যায়নি, যেটা মানুষকে জম্বি বানিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু পিঁপড়াদের জন্য ব্যাপারটা এত সুখকর নয়। থাইল্যান্ডের রেইনফরেস্টে আসলেই এমন একধরনের ছত্রাক আছে, যারা জীবন ধারণের জন্য অন্য প্রাণীকে আক্রমণ করে খুন করে এবং সেই মৃতদেহে নিজের ইচ্ছেমতো জীবন যাপন করে! আর খুন করার আগে এরা পোষককে দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করিয়ে নেয়। এই কাজটা করে তাদের মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।

না, ভুল শুনছেন না। এটা কোনো সায়েন্স ফিকশন নয়, নিখাদ বাস্তব। Ophiocordyceps unilateralis নামের এই ফাঙ্গাস ‘জম্বি ফাঙ্গাস’ নামে পরিচিত। থাইল্যান্ড ও ব্রাজিলের রেইন ফরেস্টে এরা আজও দিব্যি জাঁকিয়ে আছে। ইউরোপ ছাড়া প্রায় সব মহাদেশেই এদের কমবেশি দেখা পাওয়া যায়।

জীববিদ আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস এদের পর্যবেক্ষণ করেছিলেন সেই ১৮৫৯ সালে। তবে এক গবেষণায় জার্মানির মেসেল পিট নামের ৪৭ মিলিয়ন বছর পুরনো এক ফসিলে এদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসলে, জম্বি ফাঙ্গাসের বসবাসের জন্য বনজ পরিবেশ প্রয়োজন হয়। আর আবিষ্কৃত ফসিলটি যে সময়কালের, সে সময় জার্মানিসহ পুরো ইউরোপ মহাদেশের সবটুকু জুড়েই ছিল সবুজের ছড়াছড়ি।

জম্বি ভাইরাসে আক্রান্ত পিঁপড়া
ডেথ গ্রিপ, Image Source: theatlantic.com

আমাদের সৌভাগ্য, ছত্রাকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, এরা ঢালাওভাবে সকলকে আক্রমণ করে না। শুধু নির্দিষ্ট কোনো প্রজাতিকে আক্রমণ করে। তেমনই, এই জম্বি ছত্রাক আক্রমণ করে কার্পেন্টার পিঁপড়াকে। জম্বি ফাঙ্গাস জানে, এই পিঁপড়াকে আক্রমণ করলেই তারা সবচেয়ে ভালোভাবে নিজেদের জীবন পার করতে পারবে— সেজন্য এরা পরিকল্পিতভাবেই এদেরকেই আক্রমণ করে।

সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, সিনেমায় যেমন দেখা যায়, একটি এলাকায় একটি জম্বি ঢুকে পড়লে পুরো এলাকাটিই জম্বিদের দখলে চলে যেতে পারে, বাস্তবে জম্বি ফাঙ্গাসও ঠিক এই কাজটি করে। পিঁপড়ারা সাধারণত মিলেমিশে কলোনিতে বসবাস করে। জম্বি ফাঙ্গাস যদি কোনো কলোনির একটি পিঁপড়াকে জম্বি বানিয়ে নিতে পারে, বাধা না পেলে ঐ একটি পিঁপড়ার মাধ্যমে এরা পুরো কলোনি দখল করে নিতে পারে।

জীবনচক্র (কিংবা মৃত্যচক্র!)

শুরুটা হয় স্পোর থেকে। স্পোরকে সরলভাবে বলা যায় ছত্রাকের ডিম। পুরোপুরি ডিমের মতো না হলেও ছত্রাকের বংশবৃদ্ধি মূলত এর মাধ্যমেই হয়। পূর্ণবয়স্ক কোনো জম্বি ছত্রাক মাটিতে স্পোর ফেলে রেখে যায়।
পিঁপড়ারা বনের মধ্যে দিয়ে চলাচলের সময় অজান্তেই ছত্রাকের স্পোর তুলে নেয়। তুলে নেওয়ার সাথে সাথে পিঁপড়াটির ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়— মৃত্যু!

ছড়িয়ে দিচ্ছে স্পোর; Image Source: theconversation.com

আগে ধারণা করা হতো পরজীবীটি পোষক দেহের মস্তিষ্ক দখল করে নেয় এবং তাকে দিয়ে ইচ্ছেমতো কাজ করিয়ে নেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, জম্বি ফাঙ্গাসে আক্রান্ত পিঁপড়ার মস্তিষ্ক কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। বরং জম্বি ফাঙ্গাস পিঁপড়ার দেহের যতগুলো সম্ভব কোষ এবং পেশী দখল করে নেয়। এ সময় এরা পিঁপড়ার দেহে একধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছেড়ে দেয়। এই রাসায়নিক পদার্থ পিঁপড়ার রক্ত বহনকারী অঙ্গ হিমোসিলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে পিঁপড়ার নিজের দেহের উপর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মানুষের দেহে যেমন শিরা এবং ধমনী দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়, পিঁপড়ার দেহে হয় হিমোসিলের মাধ্যমে। এ অবস্থায় এরা পোষক দেহের পেশীতন্তুর সাথে যুক্ত হয়ে যায়। গবেষক ডেভিড হিউ এই ব্যাপারটা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

এরা একেবারে পরিকল্পিতভাবে প্রথমে পিঁপড়াটাকে অকেজো করে নেয়, তারপর পেশী-তন্তুগুলো দখল করে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। এবং পাপেট শো-তে ঠিক যেমনটা হয়, তেমন করেই এরা এ সময় সুতো ধরে পিঁপড়াগুলোকে ইচ্ছেমত নাচাতে পারে। 

জম্বি ফাঙ্গাস পিঁপড়াকে চালিয়ে অনুকুল পরিবেশে নিয়ে আসার পর কোনো গাছের পাতার তলার পৃষ্ঠে ম্যান্ডিবল (দাঁত) দিয়ে কামড়ে ধরতে বাধ্য করে। কামড়ে ধরার পরে এরা পিঁপড়ার সকল পেশী অকেজো করে দেয়। একে বলা হয় ডেথ গ্রিপ।

ছত্রাকের বেড়ে ওঠা

ডেথ গ্রিপের পর পিঁপড়া মারা যায়। এ পর্যায়ে এসে জম্বি ফাঙ্গাস পিঁপড়ার পুরো দেহ দখল করে নেয় এবং পরিবেশের প্রতিকুলতা থেকে নিজে বাঁচার জন্য দেহের বাইরের কাঠামোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। এর ফলে ছত্রাকটি পোষক দেহে প্রয়োজনমতো বেড়ে উঠতে পারে। বেশ কিছুটা সময় এভাবে অতিবাহিত হয়ে গেছে এমন কোনো নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, পিঁপড়ার খোলসের ভেতরে পিঁপড়ার নিজস্ব কিছু আর অবশিষ্ট নেই। ছত্রাক আক্ষরিক অর্থেই এর ভেতরের প্রায় সবটা দখল করে নিয়েছে।

মরে শুকিয়ে আছে পিঁপড়া; Image Source: Wired

চার থেকে দশ দিনের ভেতর যথেষ্ট বেড়ে উঠে ছত্রাক। এরপর পিঁপড়ার মাথা ছেদ করে ছত্রাকের দেহ (ফ্রুট বডি) বাইরে বেরিয়ে আসে। 

স্পোর ছড়িয়ে দেওয়া

পরিপূর্ণভাবে বেড়ে উঠা ছত্রাক অনেক স্পোর জন্ম দেয়। সেগুলো গাছের পাতা থেকে মাটিতে ছড়িয়ে দেয়। আবার কোনো পিঁপড়া তার অজান্তেই মাটি থেকে স্পোর তুলে নিলে আবারো শুরু হয় এই মৃত্যুচক্র।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, একধরনের ছত্রাক আছে যারা এই জম্বি ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং এদের বেড়ে উঠা দমন করে। এদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এন্টি-জম্বি-ফাঙ্গাস ফাঙ্গাস’। এই এন্টি-জম্বি যদি জম্বিকে আক্রমণ করে, দেখা গেছে মাত্র ৬.৫ শতাংশ জম্বি ছত্রাক এদের আক্রমণ থেকে বেঁচে নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে পারে। এ জন্যই আসলে কার্পেন্টার প্রজাতির পিঁপড়ারা এখনো পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়নি।

এ ছাড়াও আরেকটা ব্যাপার আছে। এতদিন ধরে আক্রমণের শিকার পিঁপড়ারা ধীরে ধীরে জেনে গেছে যে, কোনো আক্রান্ত পিঁপড়াকে ব্যবহার করে জম্বি ফাঙ্গাস পুরো কলোনি দখল করে নিতে পারে। কাজেই, কালের প্রবাহে পিঁপড়ারা এই ছত্রাকে আক্রান্ত যে কোনো সদস্যকে শনাক্ত করতে শিখে গেছে। এমনিতে পিঁপড়ারা বেশ সামাজিক প্রাণী হলেও আত্মরক্ষার জন্য কলোনির কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে অন্যা সুস্থ সদস্যরা তাকে কলোনি থেকে অনেক দূরে কোথাও রেখে আসে। তাতে রক্ষা পায় পুরো কলোনি।

পুরো ব্যাপারটির মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুতুড়ে জিনিসটি হল, জম্বি ফাঙ্গাস ঠিক কী ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করে পোষকদেহ পুরোপুরি দখল করে নেয় এবং মন তথা মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করে—  গবেষকরা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে সেটি বের করতে পারেননি। এ নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তবে গবেষক ডেভিড হিউ এ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। পৃথিবীতে বেশিরভাগ প্রাণিই খাদ্য গ্রহণের জন্য অন্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল, কিন্তু খুব বেশি প্রাণী মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে পোষককে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে না। এর পেছনের রহস্যটা আসলে কী? পোষকের মন নিয়ন্ত্রণের জন্য আসলে কী লাগে? যদি মানুষও এই বিদ্যা মানুষও অর্জন করতে পারে তাহলে কী কী করা সম্ভব হতে পারে? এর উত্তর জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। 

This article is in Bangla language. It's about zombie-ant fungus.

References:

[1] https://www.wired.com/2013/09/absurd-creature-of-the-week-zombie-ant-fungus

[2] https://www.theatlantic.com/science/archive/2018/06/how-to-tame-a-zombie-fungus/562544

[3] How It Works

Featured Image: Gizmodo

Related Articles