Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আনন্দের সময়গুলো দ্রুত কেটে যায় কেন?

আপনি বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার ঘুরতে গেলেন। গিয়ে তিন দিন ধরে ঘুরলেন, ছবি তুললেন, সমুদ্রে গোসল করলেন। তারপর আপনার বাড়ি ফেরার পালা। বাড়ি এসে মনে হলো কোনদিক দিয়ে তিন দিন চলে গেল আপনি টেরই পাননি।

আরেকটি উদাহরণ দেয়া যাক। আপনি ফেসবুকে লগ ইন করলেন। মেসেঞ্জারে গিয়ে বন্ধুদের সাথে দুই ঘন্টা ধরে চ্যাট করলেন। কিন্তু আপনার কাছে মনে হলো আপনি বড়জোর ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট ফেসবুকে ছিলেন। কোনদিকে এত সময় চলে গেল বুঝতে পারছেন না।

চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত থাকলে সময় কোন দিকে চলে যায় টেরই পাওয়া যায় না;  Image Source: Video Blocks

এবার উল্টোদিকটাও দেখে ফেলা যাক। এক ঘন্টার একটি লেকচার ক্লাসে বসে আছেন। খুব বোরিং ক্লাস। সময় যাচ্ছে না। স্যারের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘুমিয়েও দেখলেন মাত্র পাঁচ মিনিট সময় পার হয়েছে! আবার ধরুন, কোনো বন্ধুর জন্য আপনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। সে দশ মিনিট পর এসে পৌঁছে যাবে আপনার কাছে। কিন্তু আপনার কাছে মনে হচ্ছে সময় কাটছেই না। সবচেয়ে বেশি এমন হয় পরীক্ষার সময়। পরীক্ষাগুলো যেন শেষ হতেই চায় না।

বোরিং ক্লাস শেষই হতে চায় না; Image Source: theteflacademy.com

উপরের ঘটনাগুলো আমাদের সবারই বাস্তব জীবনের সাথে মিলে যায়। ‘যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ’- কথাটি আমরা সবাইই শুনেছি। আমাদের ভালো সময়টা আমাদের কাছ থেকে দ্রুত চলে যায়, আর খারাপ সময় যেতেই চায় না। এমন কেন হয়? এটি শুধু আমাদের কাছেই বিরাট একটি প্রশ্ন নয়, বিজ্ঞানীদের কাছেও একটি ধাঁধা বটে। আনন্দের সময়গুলো কেন দ্রুত কেটে যায়- এটি নিয়েই আমাদের আজকের লেখাটি।

আমাদের ঘড়ির কাঁটা চলে হিসাব করে। ষাট সেকেন্ডে এক মিনিট, ষাট মিনিটে এক ঘন্টা। তবে ঘড়ির কাঁটা আর আমাদের মস্তিষ্ক নিশ্চয়ই এক জিনিস নয়। দুটির মধ্যে রয়েছে বিরাট পার্থক্য। একারণেই সময় নিয়ে আমাদের এত গড়মিল। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রকৃত অতিক্রান্ত সময় আর মস্তিষ্কের অনুধাবন করা সময়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।

আনন্দের সময়গুলো দ্রুত কেটে যায় ©ROMAN SAMBORSKYI/SHUTTERSTOCK

আমাদের মস্তিষ্ক সময়কে কীভাবে হিসাব করবে তা নির্ভর করে আমাদের সাথে কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতার ওপর। সহজ করে বললে বিভিন্ন ঘটনা  নিয়ে আমাদের প্রত্যাশার ওপর এটি নির্ভর করে। আমাদের সাথে কোনো ঘটনা ঘটার পূর্বে মস্তিষ্ক এর একটি পূর্বানুমান করে। যেমন, বন্ধুদের সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে যখন পরিকল্পনা করেন, তখন আপনার মনে সেখানকার একটি ছবি ভেসে ওঠে। আপনি মনে মনে আগেই চিন্তা করছেন- সেখানে গিয়ে আপনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন, মজা করছেন। ফলে আপনার মস্তিষ্ক তখন সেগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আর সেদিকে ব্যস্ত থাকলে সময় নিয়ে আর হিসাব থাকে না।

আরেকটু উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক। আপনি ছোটবেলায় যখন বিকেলে খেলতে যেতেন, তখন পুরো সময়টা আপনি খেলার দিকে মনোযোগ দিতেন। আপনি তখন বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতেন না। অর্থাৎ, আপনার মনোযোগটা থাকত খেলায়, সময়ের দিকে নয়। এরকম যেকোনো ঘটনার ক্ষেত্রে, সময়ের চেয়ে আপনার কাজের দিকেই যদি মনোযোগ বেশি থাকে, তবে আপনার কাছে মনে হবে সময় দ্রত চলে যায়। বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে আপনার ফোকাস যেদিকে থাকবে, আপনার মস্তিষ্ক সে অনুযায়ী আপনাকে সময়ের হিসাব দেবে। একারণেই আপনি যখন ফেসবুকে ঢুকেন, আপনার মনোযোগ পুরোটা ফেসবুকে থাকে। সময়ের দিকে খেয়াল না থাকায় মস্তিষ্ক আপনাকে সময় সম্পর্কে সঠিক ধারনা দিতে পারে না। 

ছোটবেলায় খেলার সময় আপনার মনোযোগ থাকত শুধু খেলার দিকে; Image Source: playmeo.com

বিজ্ঞানীরা একে আরো ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা যখন কোনো কাজ করি, তখন মস্তিষ্কের কোষগুলো একটি আরেকটিকে সক্রিয় করে। এতে তারা একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে মস্তিষ্কে। এরা যত দ্রুত সক্রিয় হয়, মস্তিষ্ক সময়ের হিসাবও ততো দ্রুত অনুধাবন করে। এছাড়া মস্তিষ্কের বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের কারণেও এমন হয়। মস্তিষ্কের অন্যতম প্রধান একটি নিউরোট্রান্সমিটার হচ্ছে ডোপামিন। ডোপামিনের কারণে আমাদের সময় বোধে প্রভাব পড়ে।

মস্তিষ্কের কিছু নিউরন থেকে ডোপামিন ক্ষরিত হয়। যখন আমরা আনন্দে থাকি, এই নিউরনগুলো বেশি সক্রিয় থাকে। তখন সেখান থেকে বেশি ডোপামিন ক্ষরণ হয়। যখন আনন্দে থাকি না, তখন নিউরন থেকে ডোপামিন ক্ষরণের মাত্রাও কমে যায়। তখন সময়কেও অনেক ধীর গতির মনে হয়। সুতরাং আমাদের সময় দ্রুত কাটবে না ধীরে কাটবে, তা নির্ভর করবে আমাদের মনোযোগ কোনদিকে থাকবে তার ওপর।

অন্যদিকে আমরা আনন্দে না থাকলে সময় ধীরে কাটে কেন সেটাও জেনে নেয়া যাক। আমরা যখন কোনোকিছুর জন্য অপেক্ষা করি, তখন সময় অনেক ধীর মনে হয়। আপনি ক্লাসে বসে আছেন এক ঘন্টার জন্য, কিন্তু আপনার সময় কাটছে না। স্যার যা পড়াচ্ছেন তা আপনার আগ্রহের বিষয় নয়। তাই আপনি মনোযোগ দিতে পারছেন না। আর মনোযোগ না দেয়ার কারণে আপনার মস্তিষ্কও ব্যস্ত হতে পারছে না। আপনার মস্তিষ্ক ব্যস্ত না হওয়ার কারণে তখন আপনার মন সময় সম্পর্কে সচেতেন হয়ে উঠছে। আর তাই সময়কে আপনার দীর্ঘ মনে হচ্ছে।

অপেক্ষার সময়গুলো কাটতেই চায় না;  Image Source: spellerinternational.com.au

আমরা যখন কোনো কাজে ব্যস্ত থাকি না, তখন আমাদের মস্তিষ্ক সময় সম্পর্কে এভাবে সচেতন হয়ে ওঠে। তখন আমরা কী অনুভব করছি আর কীভাবে সময় কাটাচ্ছি সেসব নিয়ে আমাদের নির্দেশ দিতে থাকে। তখন আমাদের যে বিরক্ত লাগছে এটা সে বারবার মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের পছন্দের কাজ করার সময় সে শুধু কাজের দিকেই ব্যস্ত থাকে। ফলে মস্তিষ্কের অবসর অবস্থায় সময়কে অনেক দীর্ঘ মনে হতে থাকে। আমরা যখন কারো জন্য অপেক্ষা করি, তখন অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কোনো কাজ থাকে না। তখন অলস মস্তিষ্ক থেকে আমাদের বিরক্তির নির্দেশ আসায় পাঁচ মিনিট সময়কেও এক ঘন্টার সমান মনে হয়।

সময়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, বয়সের সাথে এর সম্পর্কে। আমাদের বয়স যত বাড়তে থাকে, সময় দ্রুত কেটে যেতে থাকে। উনবিংশ শতকে ফরাসি দার্শনিক পল জ্যানেট বলেন, সময় সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধির পরিমাণ নির্ভর করে আমরা কত বছর জীবিত আছি তার ওপর। অর্থাৎ, পাঁচ বছর বয়সী এক বাচ্চার কাছে এক বছর সময়, আশি বছর বয়সী এক বৃদ্ধের কাটানো এক বছর সময়ের চেয়ে দীর্ঘ মনে হবে। এটি কেন হয়?

বয়সের সাথে সাথে সময় আরো দ্রুত কাটতে থাকে; Image Source: bobrtimes.com

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখানে মূল ভূমিকা পালন করে আমাদের স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা। আপনি যখন বয়সে তরুণ থাকবেন, তখন নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন। এসব অভিজ্ঞতা আমাদের মনে যত বেশি প্রভাব ফেলবে, আমাদের স্মৃতি ততো দৃঢ় হবে। কোনো ঘটনার সাথে আপনার প্রথম বারের অভিজ্ঞতায় যে সময় অনুভূত হয়, পরবর্তী অভিজ্ঞতায় তা আরো দ্রুত মনে হয়। এদিকে আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে নতুন কিছুর অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ কমতে থাকে। আর নতুন অভিজ্ঞতার অনুপস্থিতি মানে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলা। তাই সময় দ্রুত কাটে তখন। যেমন, আপনার বাসা মূল সড়ক থেকে কোনো গলির অনেক ভেতরে। প্রথমবার যখন আপনি মূল সড়ক থেকে আপনার বাসায় যাবেন, তখন তা খুব দূরের পথ মনে হবে। কিন্তু প্রতিদিন আসা-যাওয়া করলে তা আর দূরের মনে হবে না। আমাদের স্মৃতি ঠিক এভাবেই কাজ করে।  

আপনি তরুণ বয়সে থাকতে আপনার প্রথম প্রেমে পড়া, বিয়ে করা, প্রথম বারের মতো সন্তানের পিতা বা মাতা হওয়া এসব আপনার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে বয়স বেড়ে গেলে আপনি তখন একটি বাঁধাধরা জীবনে আটকে যান। নতুন কিছু দেখার সুযোগ তখন খুব কম হয়। তাই তখন সময় খুব দ্রুত কাটে, আর মনে হয় তরুণ বয়সের সুন্দর সময়গুলো কত দ্রুতই না কাটিয়ে এসেছেন! 

This is an article written in Bengali language. It is about the explanation of why time flies. Necessary references are hyperlinked in the article. 

Featured Image: pxleyes.com 

Related Articles