Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জীবনে পরিপূর্ণতার জন্য কী প্রয়োজন?

বর্তমান পৃথিবীর যে অবস্থা, তাতে মনের মধ্যে এমন প্রশ্নের উদয় হওয়া খুবই স্বাভাবিক- ঘোর অমানিশার মাঝেও কীভাবে জীবনে আনন্দ ও উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যেতে পারে? কীভাবে একজন মানুষ যাপন করতে পারে খুব ভালো একটি জীবন, তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যতই অবনতির দিকে ধাবিত হোক না কেন?

এগুলো এমন সব প্রশ্ন যা গত ১৮ মাস ধরে পৃথিবীবাসী মানুষ নিজেদেরকে অবিরামভাবে করে চলেছে; চেতনে কিংবা অবচেতনে। এবং সুসংবাদ হলো, বিজ্ঞানীদের ছোট্ট একটি দল আপ্রাণ চেষ্টার মাধ্যমে এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।

তবে সরাসরি জীবনের পূর্ণাঙ্গতার প্রশ্নে ডুব দেয়ার আগে, ছোট্ট একটি উদাহরণ উত্থাপন করা যাক। ২০১৪ সালের ‘সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষকরা একবার একদল কলেজ শিক্ষার্থীকে দুটি কাজের মধ্য থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলেছিলেন। হয় তাদেরকে কোনো নির্জন ঘরে অলসভাবে বসে থাকতে হবে, নয়তো একটি বাটনে চাপ দিতে হবে যেন তাদের শরীরে ইলেকট্রিক শক লাগে।

বলুন তো, শিক্ষার্থীরা কোন অপশনটিকে বেছে নিয়েছিল? আপনারা হয়তো ভাবছেন, সব শিক্ষার্থীই প্রথম অপশনটিকে বেছে নিয়েছিল। কেননা, একদম বোকার হদ্দ না হলে কেই বা অলসভাবে বসে থেকে আয়েশ করার বদলে নিজ শরীরে ইলেকট্রিক শক গ্রহণকে বেছে নেবে!

কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, যথারীতি কিছু শিক্ষার্থী প্রথম অপশনটিকে বেছে নিলেও, বেশ বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী সত্যি সত্যিই ইলেকট্রিক শকের ব্যাপারটিকে বেছে নিয়েছিল। এর কারণ, ইউনিভার্সিটি অভ ফ্লোরিডার সামাজিক মনস্তত্ত্ববিদ এরিন ওয়েস্টগেটের মতে, “মানুষ ইন্যাকশনের চেয়ে অ্যাকশনকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।” অর্থাৎ, হাত গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকার বদলে তারা কোনো একটা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায়।

নির্জন ঘরে বসে থাকার চেয়ে ইলেকট্রিক শককেই বেছে নিয়েছিল অনেক শিক্ষার্থী; Image Source: SPL

এবার আপনারা গত ১৮ মাসের অভিজ্ঞতার সঙ্গে এই উদাহরণটিকে মিলিয়ে দেখতে পারেন। করোনা মহামারির কারণে আমাদের জীবন তো ইন্যাকশনে জেরবার হয়ে গেছে। বাইরে যাওয়ার জন্য মনটা হাঁসফাঁস করলেও, জীবন বাঁচানোর তাগিদে আমাদেরকে গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হয়েছে, সবসময় মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতে হয়েছে। অর্থাৎ, মানুষ হিসেবে আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি যা যা, সেগুলোর ঠিক বিপরীত জীবনাচারকে বেছে নিতে হয়েছে। আর ঠিক এ কারণেই, কোভিড-১৯ কিংবা অন্যান্য শারীরিক জটিলতা ও অসুস্থতা ছাড়াও, মানসিকভাবেও কাহিল হয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বিশ্বব্যাপী গত ১৮ মাস ধরে মানুষের মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণ এই যে, তাদের জীবনের পরিপূর্ণতা লাভের যাত্রায় ছেদ পড়েছে।

এবার তাহলে ফেরা যাক জীবনের পরিপূর্ণতা বলতে কী বোঝায়, সেই প্রসঙ্গে। মনস্তত্ত্ববিদ শিগেহিরো ঐশির মতে, এতকাল জীবনের ভালো থাকা বা পরিপূর্ণতাকে দুই ধরনের প্যারামিটারে ভাগ করা হতো। একটি হলো সুখী জীবন, অন্যটি হলো অর্থবহ জীবন।

করোনাকালে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে অনেকেই; Image Source: CNN

ঐশির ব্যাখ্যা অনুসারে, সুখী জীবন হলো সেই ধরনের জীবন, যে জীবনে রয়েছে আনন্দ, স্বস্তি ও নিরাপত্তা। অন্যদিকে, অর্থবহ জীবন হলো যে জীবনে রয়েছে তাৎপর্য, উদ্দেশ্য, সঙ্গতি, বা শৃঙ্খলতা। সুখী ও অর্থবহ জীবন পরস্পরের সমান্তরালে চলতে পারে, আবার অনেকসময় এ দুটো একত্রে মিশে যেতেও পারে। এবং এই দুই বিষয়েরই শেকড় প্রোথিত রয়েছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্থিতিশীলতার মাঝে।

কিন্তু করোনাভাইরাস এসে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক, দুই ধরনের স্থিতিশীলতারই বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আর যাই হোক, জীবনে সুখ বা অর্থবহতা খুঁজে বের করা, এবং সেগুলোর কল্যাণে জীবনে পরিপূর্ণতা লাভ করা, কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তাহলে জীবনে পরিপূর্ণতা লাভে সুখ ও অর্থবহতার বিকল্প তৃতীয় কোনো বিষয় কী হতে পারে? সেটিই বিগত ছয় বছর ধরে উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শার্লটসভিলের ইউনিভার্সিটি অভ ভার্জিনিয়ার গবেষক ঐশি ও তার দল। এবং গবেষণার মাধ্যমে তারা যে জিনিসটির সন্ধান পেয়েছেন, সেটি হলো ‘সাইকোলজিক্যাল রিচনেস’ বা মানসিক সমৃদ্ধি।

শিগেহিরো ঐশি; Image Source: uvamagazine.org

ঐশি ও তার দল গবেষণার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, একটি সমৃদ্ধ জীবনের উপাদানগুলো জীবনপ্রবাহের স্থিতিশীলতা বা মেজাজ থেকে আসে না। বরং সমৃদ্ধ, পরিপূর্ণ জীবনের অভ্যুত্থান ঘটে নতুন কিছুর অন্বেষণ, কৌতূহল এবং নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে পালটে দেয়ার মতো মুহূর্ত বা অভিজ্ঞতা থেকে।

অর্থাৎ, মানুষ হিসেবে আমাদের জীবনে প্রয়োজন সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা। এবং সেসব অভিজ্ঞতা যে পুরোদস্তুর ইতিবাচক বা পুরোদস্তুর নেতিবাচক হতে হবে, তার কোনোই বাধ্যবাধকতা নেই। সেগুলো হতে পারে ভালো বা খারাপ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা আকস্মিক, আনন্দময় বা বিভীষিকাময়।

এবার চলুন দেখা যাক, ঐশি ও তার দল মানসিকভাবে সমৃদ্ধ জীবনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে কোন নয়টি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে আপনারা নিজেদের জীবনকেও মিলিয়ে দেখতে পারেন। সেক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে পুরোপুরি একমত হলে আপনারা পাবেন ৭ নম্বর, আর পুরোপুরি ভিন্নমত পোষণ করলে পাবেন ১ নম্বর। মাঝের অন্যান্য নম্বরগুলোও থাকবে ঐক্যমত বা দ্বিমতের ক্রমানুসারে।

  •  আমি জীবনে অনেক ধরনের নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
  •  আমার জীবনজুড়ে অসংখ্য স্বতন্ত্র ও অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা ছিল।
  •  আমার জীবনে প্রচুর ঐশ্বর্যমণ্ডিত, তীব্র মুহূর্ত এসেছে।
  •  আমার জীবন ছিল খুবই নাটকীয়।
  •  ভ্রমণ, কনসার্ট প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ফার্স্ট-হ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্সের মাধ্যমে আমার মনে হরেক রকমের অনুভূতির জাগরণ ঘটেছে।
  •  অন্যদেরকে বলার মতো আমার প্রচুর ব্যক্তিগত কাহিনি রয়েছে।
  •  মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আমি হয়তো বলতে পারব, ‘আমার জীবনটা ছিল বেশ ইন্টারেস্টিং।’
  •  মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আমি হয়তো বলতে পারব, ‘আমি অনেক কিছু দেখেছি ও শিখেছি।’
  •  আমার জীবনকাহিনি অবলম্বনে বেশ ভালো একটি উপন্যাস বা চলচ্চিত্র হতে পারে।

এবার আপনারা নিজেরা কত স্কোর করলেন, সেই হিসাব করে মিলিয়ে দেখতে পারেন আপনারা আপনাদের জীবনে কতখানি মানসিক সমৃদ্ধি লাভ করেছেন।

তবে ঐশি ও তার দল যতই জীবনের পূর্ণাঙ্গতার ক্ষেত্রে মানসিক সমৃদ্ধিকে এগিয়ে রাখুন না কেন, এখনো কিন্তু বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ সেই চিন্তাধারার সঙ্গে একমত নয়। অ্যাঙ্গোলা, জার্মানি, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের উপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি দেশের মানুষের কাছেই সর্বাগ্রে কাম্য সুখী জীবন, এরপর অর্থবহ জীবন, এবং সবশেষে মানসিকভাবে সমৃদ্ধ জীবন।

সুখী জীবনই কাম্য সিংহভাগ মানুষের; Image Source: S. Oishi et al./Affective Science

এর মানে দাঁড়াচ্ছে, বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই জীবন থেকে সবচেয়ে বেশি আকাঙ্ক্ষা করে থাকে আনন্দ, স্বস্তি ও নিরাপত্তা। এরপর তারা চায় তাৎপর্য, উদ্দেশ্য, সঙ্গতি, বা শৃঙ্খলতা। মানসিক সমৃদ্ধি বা নতুন কিছু জানার ইচ্ছা, কৌতূহল, জীবনে চলার পথে কুড়ানো মণিমুক্তার মতো অমূল্য অভিজ্ঞতা, এগুলো খুব কম মানুষেরই জীবন-স্বপ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয়।

এবার দেখা যাক, কোন ধরনের জীবন লাভ করতে কী কী সুবিধার প্রয়োজন পড়ে-

সুখী জীবন : অর্থ, সময়, সম্পর্ক, ইতিবাচক মানসিকতা
অর্থবহ জীবন : নৈতিক মূল্যবোধ, ধারাবাহিকতা, সম্পর্ক, ধার্মিকতা
মানসিকভাবে সমৃদ্ধ জীবন : কৌতূহল, সময়, শক্তি, স্বতঃস্ফূর্ততা

সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম সুখী ও অর্থবহ উভয় ধরনের জীবনে; Image Source: S. Oishi et al./Affective Science

সম্পর্কের বিষয়টি সুখী জীবন ও অর্থবহ জীবন উভয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার মানে, এই যে নাটক-সিনেমায় সম্পর্ককে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, তা অনর্থক নয়। আসলেই জীবনকে সুখী বা অর্থবহ করতে সুস্থ-স্বাভাবিক কতগুলো সম্পর্ক খুবই জরুরি।

তবে এই লেখার শেষে এসে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, কোন ব্যক্তিবিশেষ তার জীবনে কোন দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হয়ে পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারে, তা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার। এখানে অন্য কারোই জোর করে চাপিয়ে দেয়ার কিছু নেই।

কিন্তু তারপরও, সাধারণীকরণের মাধ্যমে আমরা বলতে পারি, কোনো ব্যক্তির জীবনে যদি অর্থ, সময়, সম্পর্ক, ইতিবাচক মানসিকতা, নৈতিক মূল্যবোধ, ধারাবাহিকতা, ধার্মিকতা, কৌতূহল, সময়, শক্তি ও স্বতঃস্ফূর্ততার অধিকাংশই বিদ্যমান থাকে, তবে তার পক্ষে জীবনের পরিপূর্ণতা লাভের যাত্রা অনেকটা সহজসাধ্য হয়ে আসে।

সুতরাং, আপনারা যদি মানসিক সমৃদ্ধিকেই জীবনের পরিপূর্ণতার শেষ কথা নাও ভাবেন, আপনাদের কাম্য যদি সুখী বা অর্থবহ জীবন হয়ে থাকে, তারপরও মানসিক সুস্থিতি, শান্তি ও নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার জন্য আপনারা উল্লিখিত সবগুলো বৈশিষ্ট্যই একটু-আধটু অর্জনের চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

This article is in Bengali language. It is about how can one live a good life when it feels as if things just keep getting worse. Necessary references have been hyperlinked inside. 

Featured Image © IMDB

Related Articles