Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেন আমাদের শৈশবের কথা মনে থাকে না?

মাঝে মাঝে কি এমনটা ভেবে আফসোস হয় না যে, “ইশ, যদি আমার খুব ছোটবেলার দুষ্টু-মিষ্টি স্মৃতিগুলো মনে করতে পারতাম!” প্রথম হাঁটা, প্রথম বলা শব্দ কিছুই আমরা মনে করতে পারি না। অনেক সময় আশেপাশের মানুষের মুখে নিজের ছোটবেলার কথা শুনে ভুল করে সেগুলোকে আমাদের স্মৃতি ভেবে বসি।

শিশু-বয়সের খুব গুরুত্বপূর্ণ বা আনন্দের স্মৃতি মনে না থাকলেও কৈশোরে শোনা বা পড়া কোনো গল্পের লাইন ঠিকই মনে পড়ে। কেন এমন হয়?

শৈশবের এই স্মৃতিলোপ পাওয়ার কারণ নিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা এক শতকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করে আসছেন। প্রায় ১০০ বছর আগে, সাইকোঅ্যানালাইসিসের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড এই টার্মটির নাম দেন ‘Infantile amnesia’, বাংলায় যাকে বলা যায় ‘শিশুসুলভ স্মৃতিভ্রংশ’, যা ২-৪ বছর বয়সের অভিজ্ঞতা ভুলে যাওয়ার ও ৭ বছর বয়সের পূর্বের স্মৃতি পূর্ণরূপে মনে না থাকার একটি সহজাত প্রক্রিয়া।  

বয়সের সাথে স্মৃতি মনে রাখার হার

বয়সের সাথে স্মৃতি মনে রাখার হার; Source: This graph is taken from a research article titled “Infantile amnesia: A neurogenic hypothesis”

শৈশবে স্মৃতিশক্তি যেমন থাকে

শিশুরা স্থায়ী স্মৃতি তৈরি করতে পারে না, কিন্তু তাদের অন্তর্নিহিত ও সুব্যক্ত মেমোরি গঠন হয়

  • অন্তর্নিহিত বা Implicit Memory: চিন্তা না করেই কোন কাজ স্মরণে থাকে এবং করতে পারে, পদ্ধতিগত স্মরণশক্তি।
  • সুব্যক্ত বা Explicit Memory: নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যখন সজ্ঞানে মনে রাখতে পারে।   
দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি ধারণে সুব্যক্ত ও অন্তর্নিহিত মেমোরির কার্যাবলী

দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি ধারণে সুব্যক্ত ও অন্তর্নিহিত মেমোরির কার্যাবলী; Source: Medium

শিশুরা ঐ অবস্থায় তথ্য মনে রাখতে পারে, যেমন- ৬ মাস বয়সী শিশুরা মনে রাখতে পারে ২৪ ঘন্টায় তাদের করণীয় কী, ৯ মাস বয়সীরা মনে রাখতে পারে এক মাসের কার্যাবলী আর ২০ মাস বয়সীরা পুরো এক বছর পর্যন্ত মনে রাখতে পারে যা তাদেরকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল। আরো দেখা যায়, শিশুদের কাছে যে ঘটনাগুলো বেশি আবেগপূর্ণ, ঐ স্মৃতিগুলো তারা তিনগুণ বেশি মনে রাখতে পারে।

অনেক সময় স্মৃতি ধরে রাখার ব্যাপারটি আমাদের সংস্কৃতির উপরও নির্ভর করে। অনেকের ছোটবেলার অনেক অভিজ্ঞতাই মনে থাকে, আবার অনেকের ক্ষেত্রে ৭-৮ বছরের আগের কোনো ঘটনাই মনে থাকে না। আবার আমাদের সংস্কৃতি, পারিপার্শ্বিক এবং সামাজিক অবস্থান এই স্মৃতি গঠন ও ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করে।

সংস্কৃতির উপর শিশুদের স্মৃতি  গঠন ও ধারণ ক্ষমতা অনেকাংশেই নির্ভরশীল

সংস্কৃতির উপরও শিশুদের স্মৃতি গঠন ও ধারণ ক্ষমতা নির্ভরশীল; Source: Diario de Huelva

কিন্তু কেউ প্রথম ২ বছরের আগের কোনো ঘটনাই মনে রাখতে পারে না। এর পেছনে ২টি উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে:

১) মস্তিষ্কের গঠন ও পরিবর্তন: ছোট বয়সে আমাদের মস্তিষ্ক পূর্ণ বিকশিত না থাকায় অনেক তথ্যই জটিল নিউরাল প্যাটার্নে জমা করে রাখতে পারে না, যাকে আমরা মেমোরি বা স্মৃতি বলি। জন্মের সময় মানবশিশুর মস্তিষ্ক থাকে পরিণত বয়সের মস্তিষ্কের এক-চতুর্থাংশ, দুই বছর বয়সে সেটা হয় পূর্ণ মস্তিষ্কের চার ভাগের তিনভাগ। মস্তিষ্কের এই আকার ও গঠনের উপরেই নির্ভর করে নিউরনের বৃদ্ধি ও সংযোগপ্রাপ্তি।   

বয়সের সাথে মস্তিষ্কের  বৃদ্ধি  ঘটে  ও স্মৃতি  ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়;

বয়সের সাথে মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ঘটে ও স্মৃতি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়; Source: celinealvarez.org

আমাদের মস্তিষ্কে হিপোক্যাম্পাস নামে একটা অংশ আছে, যেটা মূলত এপিসোডিক মেমোরি (নির্দিষ্ট ঘটনা ধারণকারী মেমোরি) গঠনে জরুরি। এপিসোডিক মেমোরিগুলো (দৃষ্টলব্ধ, স্বাদ এবং শব্দজাত মেমোরি) মস্তিষ্কের বহিরাবণের (Cortex) বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে। হিপোক্যাম্পাস এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অংশগুলোকে একত্রিত করে।

হিপোক্যাম্পাসের  3D  চিত্র

হিপোক্যাম্পাসের থ্রিডি চিত্র; Source: Deutsches Ärzteblatt

ইমোরি ইউনিভার্সিটি ইন আটলান্টার গবেষক প্যাট্রিসিয়া বাওয়ার বলেন,

আপনি যদি আপনার কর্টেক্সকে ফুলের বিছানা মনে করেন, সেখানে মাথার উপরিভাগ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফুল আপনার এপিসোডিক মেমোরি, আর ব্রেনের ঠিক মাঝখানে সুন্দরভাবে গোটানো হিপোক্যাম্পাস ঐ ফুলগুলোকে টেনে এনে একটা ফুলের তোড়া বেঁধে দেয়।

মস্তিষ্কের  উপরিভাগে এপিসোডিক মেমোরির অবস্থান এবং হিপোক্যাম্পাসের দ্বারা একত্রীকরণ

মস্তিষ্কের  উপরিভাগে এপিসোডিক মেমোরির অবস্থান এবং হিপোক্যাম্পাসের দ্বারা একত্রীকরণ; Source: semanticscholar.org

২-৪ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এপিসোডিক মেমোরি গঠন হয় কম, কারণ ঐ সময়ে হিপোক্যাম্পাস পরিপূর্ণভাবে গঠিত হয় না, আর কোনোকিছু মেমোরিতে  জমা হতে হলে তাকে অবশ্যই হিপোক্যাম্পাসের মধ্যে গঠিত হতে হয়। এ বয়সে হিপোক্যাম্পাস খন্ডগুলোকে জমা করার কাজ শুরু করে।   

হিপোক্যাম্পাস ব্রেনের একমাত্র অংশ যেটা মানুষের জন্মের পর থেকে নতুন নিউরন উৎপাদন চালিয়ে যেতে থাকে পূর্ণবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত, যেখানে ব্রেনের অন্যান্য অংশগুলোর শুধু পরিবর্তন আর বিকাশ ঘটতে থাকে।      

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শৈশবে দ্রুত নিউরন উৎপাদনের হার আমাদের বয়স বাড়ার সাথে আগের কথা ভুলিয়ে দিতে পারে। কারন যত নিউরন উৎপাদন ঘটে তত নতুন কানেকশন বাড়তে থাকে মেমোরি সার্কিটের সাথে এবং নতুন নিউরনগুলোর অধিক নেটওয়ার্কিং আগের গঠিত মেমোরি প্রকাশে বাঁধা দেয়।

বিভিন্ন গবেষণা বলে। এই নিউরন উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি চালিত হয় পূর্বের মেমোরি, যেগুলো এই উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যহত করতে পারে, তা ভুলে যাওয়ার মাধ্যমে। তাই কৈশোরে পৌঁছার আগপর্যন্ত শিশু অবস্থায় আমাদের ব্রেন পূর্বের স্মৃতি পুরোপুরি ধরে রাখতে পারে না এবং খুব ছোটবেলার ঘটনা ধারণে একেবারেই অক্ষম হয়।

২) ভাব প্রকাশের অক্ষমতা: আপনি এমন কোনো বিষয়ের স্মৃতিচারণ করতে পারবেন না যদি সেটা আপনার স্মৃতি বা মেমোরিতেই না থাকে। আর বাক্যে প্রকাশ ছাড়া আমরা কি কোনো ঘটনা দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারি?  

অনেক সাইকোলোজিস্ট মনে করেন, আত্মজীবনীমূলক স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা আসে ভাব প্রকাশের মাধ্যমেই।  

শিশুদের কোনো ঘটনা বর্ণনা করার মতো শব্দভান্ডার থাকে না, তাই তারা কার্যকরণসম্বন্ধীয় কোনো ব্যাখ্যা তৈরি করতে পারে না। এবং শিশুদের নিজেদের সম্বন্ধে সেরকম ধারণা থাকে না যা তাদেরকে ভাবতে অনুপ্রাণিত করতে পারত যে অভিজ্ঞতাগুলোও তাদের জীবনের গল্পের অংশ।

মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব নিউফাউন্ডল্যান্ডের সাইকোলজিস্ট ক্যারল পিটারসন এটাকেই সামাজিক স্মৃতি ধরে রাখতে না পারার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।  

নোরা নিউকম্ব, ফিলাডেলফিয়ার টেম্পল ইউনিভার্সিটির সাইকোলোজির প্রফেসর, এর ভাষ্যমতে, “এপিসোডিক মেমোরি হয়তো একটি শিশুর জন্য অপ্রয়োজনীয় এবং জটিল, যখন সে মাত্রই শিখতে শুরু করছে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্বন্ধে।” তিনি আরও বলেন,

আমি মনে করি, প্রথম দুই বছরের প্রাথমিক লক্ষ্যই হলো ভাষার অর্থসংক্রান্ত জ্ঞান (Semantic memory) আহরণ করা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, এপিসোডিক মেমরি আসলে হয়তো একটি চিত্তবিক্ষেপ (Distraction)।

শৈশবের স্মৃতি উদ্ধার সম্ভব কি না

আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা সেরকম মনে না থাকলেও, ছোটবেলার অনেক ঘটনা আমাদের আচরণে প্রভাব ফেলে। তাহলে সেই অভিজ্ঞতা কিংবা স্মৃতি কি পুনরুদ্ধার সম্ভব?    

সেইন্ট জন’স ইউনিভার্সিটিতে মেমরি এন্ড লার্নিং নিয়ে গবেষণারত জেফরি ফেগেন বলেন, “আর্লি চাইল্ডহুডের মেমরিগুলো হয়তো কোথাও সংরক্ষিত আছে যা এখন অপ্রাপ্য, কিন্তু এর প্রায়োগিক ব্যাখ্যা করাটাও কঠিন।”    এটাই হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারে কেন আগের কোনো মানসিক আঘাত প্রভাব ফেলতে পারে প্রাপ্তবস্কদের আচরণে এবং ভবিষ্যতে মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

শৈশবের বৈরী অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে

শৈশবের বৈরী অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে; Source: thriveglobal.com

কোন ঘটনার যত বেশি স্মৃতিচারণ হয় তত বেশি তা মনে থাকে। বড়দেরই সময়ের সাথে অনেক তথ্য, ঘটনা বা স্মৃতি হারিয়ে যায় যদি তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালানো না হয়। তাই ছোটবেলার এই স্মৃতিবিলোপকে আমাদের জীবনের এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই বলা চলে।

This is a Bengali article discussing why cannot we remember our early childhood memories. References have been hyperlinked inside the article. 

Feature Image Source: stirilekanald.ro

Related Articles