Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মহামারি কেন মন্থর করতে পারেনি জলবায়ু পরিবর্তনকে?

২০১৯ সালে চীনের উহানে প্রথমবার মতো ধরা পড়ে কোভিড-১৯ এর অস্তিত্ব। উচ্চ সংক্রমণক্ষমতা থাকায় এটি দ্রুতই ছড়িয়ে যায় পৃথিবীর সব প্রান্তে, প্রতিষেধক না থাকায় রাষ্ট্রগুলোকে নাগরিকদের রক্ষায় নিতে হয় রক্ষণশীল পদক্ষেপ। মানুষের মাধ্যমে এই ভাইরাস বাহিত হওয়ার কারণে উদ্যোগ নেওয়া হয় মানুষে মানুষে সংস্পর্শে আসার হার কমিয়ে দেওয়ার, আরোপ করা হয় লকডাউন।

অন্যদিকে, গত কয়েক দশক ধরেই আলোচিত হচ্ছে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির ইস্যু, আলোচিত হচ্ছে উষ্ণতা বাড়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য বিপর্যয়গুলোর ব্যাপারেও। মহামারির সময়কে লকডাউন আরোপ করে শিল্পকারখানাগুলোকে বন্ধ রাখা হয়, কমে আসে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিগুলো এড়াতে এই প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক মনে করা হচ্ছিল, মনে করা হচ্ছিল লকডাউন মন্থর করে দেবে জলবায়ু পরিবর্তনের গতিকে। বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব একটা দেখা যায়নি।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দ্রুত হচ্ছে মরুকরণ; Image Source: Forbes. 

এই বিষয়ে বিবিসি ফিউচারে এই বছরেরই মার্চ মাসে একটি আর্টিকেল লিখেছেন প্রফেসর পিয়ার্স ফ্রস্টার, যিনি ইউনিভার্সিটি অব লিডস এর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেটের ডিরেক্টর। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ভিক্টিম দেশ বাংলাদেশ। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য তাই তার আর্টিকেলটি তুলে ধরা হচ্ছে।

লকডাউন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সম্ভাব্য বিপর্যয়

১১ মার্চ, ২০২০; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় একে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। শিল্পবিপ্লবের পূর্ববর্তী সময় থেকে এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মহামারি ঘোষণার ফলে হঠাৎ করেই মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কমে যায়, শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়, গাড়ির চলাচল কমে যায়, কমে যায় বিমানের ফ্লাইটের সংখ্যা। 

এরপর ঘটনাপ্রবাহে বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু জলবায়ু বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে আমাদের সামনে কিছু অপ্রত্যাশিত নতুন এবং অপ্রত্যাশিত কিছু অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে এসেছে। তাদের মাধ্যমে আমরা তিনটি প্রধান জিনিস শিখেছি।

১. জলবায়ু বিজ্ঞান বাস্তবিকভাবেই কাজ করেছে

মহামারি আমাদেরকে প্রথমবারের মতো গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে, বিশেষ করে ভাবতে বাধ্য করেছে আমরা কী পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করছি বিভিন্ন শিল্প কারখানার মাধ্যমে। অধিকাংশ দেশেই ২০২০ সালের মার্চের মধ্যেই লকডাউন শুরু হয়। সেই সময়ে ২০২০ সালে কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরিত হতে পারে, তার বিস্তৃত ধারণা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ছিল না। ফলে জলবায়ু বিজ্ঞানীদের নতুন ডাটা তৈরি করতে হয় ২০২০ সালে কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরিত হবে তার পরিমাণ নির্ণয় করতে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট হছে; Image Source: PCI Magazine. 

২০২০ সালের মে মাসের মধ্যেই জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সেই পরিমাণ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। বিভিন্ন দেশের সরকারের লকডাউন পলিসি আর মানুষের যাপিত জীবনের স্বাভাবিক কর্মকান্ড থেকে সরে যাওয়াকে হিসেব করে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা ধারণা দেন, ২০২০ সালে কার্বন নিঃসরণের হার ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। পরবর্তীতে গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টও এই গবেষণাকে সমর্থন দেয়। এই ইস্যুতে পরবর্তীতে আরেকটি গবেষণা হয় আমার নেতৃত্বে (পিয়ার্স ফ্রস্টারের নেতৃত্বে), যাতে ব্যবহার করা হয় গুগল আর অ্যাপল থেকে সংগৃহীত মানুষের চলাচলের তথ্য। এই গবেষণায় বারোটি জনবহুল অঞ্চলে মহামারির সময়ে কীভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে পরিবর্তন এসেছে, সিমেন্ট উৎপাদনে পরিবর্তনগুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পার্থক্য করতে চেয়েছে, অন্যান্য বছরের সাথে তুলনা করে।

গুগলের ব্যবহারকারীদের সর্বশেষ চলাচলের ডাটা দেখাচ্ছে, যদিও মানুষের চলাফেরা মহামারির পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়নি, তবুও মানুষের চলাচল প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে এসেছে। এটি আমাদের কার্বন নির্গমনের ব্যাপারে যে অনুমান ছিল, সেটির বাস্তবায়ন হচ্ছে। লকডাউন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কার্বন নির্গমনের হার বাড়তে থাকে, ২০২০ সালেই দ্বিতীয় ভাগেই কার্বন নির্গমনের হার পূর্বের অবস্থায় ফেরার ইঙ্গিত দেয়। একই ধারা অনুসৃত হয়েছে ২০২১ সালে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালেও।

এর বাইরে, মহামারির মধ্যেই কার্বন মনিটর প্রজেক্ট কার্বন-ডাইঅক্সাইড নির্গমনের হার বাস্তবের কাছাকাছি অনুমান করার পদ্ধতি তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে আবহাওয়া বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা গবেষকদের হাতে তুলে দেওয়া যাচ্ছে মূল্যবান ডাটা।

২. জলবায়ু পরিবর্তনের উপর তেমন প্রভাব পড়েনি

মহামারিতে শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ ছিল, কমে গিয়েছিল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, কমেছিল মানুষের চলাচলও। ফলে একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল যে, মহামারির কারণে তৈরি হওয়া নতুন বাস্তবতায় হয়তো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি মন্থর হয়ে যাবে, ধীর হবে পৃথিবীর উষ্ণায়ন। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, মহামারির কারণে তৈরি হওয়া নতুন বাস্তবতায় স্বল্পমেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের তড়িৎ গতির উপর কোনো প্রভাব পড়েনি, দীর্ঘমেয়াদেও কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

মহামারিতে সীমিত ছিলো মানুষের চলাচল, সীমিত ছিল বিমান চলাচল; Image Source: University of Waterloo.

২০২০ সালের বসন্তে আকাশ ছিল তুলনামূলক পরিষ্কার, ছিল তুলনামূলক শান্ত। কিন্তু আমার দলের গবেষণা বলছে, ২০২০ সালের লকডাউনের মধ্যে বসন্ত তুলনামূলক উষ্ণ ছিল। লকডাউনের মধ্যে শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ থাকায় বায়ু দূষণের পরিমাণ কমে যায়, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র চলাচলের পরিমাণ কমে যায় এবং পৃথিবীতে আসা অতিরিক্ত তাপ পৃথিবীর বাইরে চলে যাওয়ার সুযোগ হয়। কিন্তু এই মহামারির কারণে তৈরি হওয়া বাস্তবতার মধ্যেও গত বছরে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ০.০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস একটি ক্ষুদ্র পরিমাণ হতে পারে, কিন্তু এটি আপাততভাবে মহামারির বাস্তবতায় আমাদের জন্য চিন্তার খবর।

২০৩০ সালের পরবর্তী সময়ের কথা চিন্তা করলে গবেষকদের তৈরি করা সাধারণ কিছু মডেল অনুমান করছে, মহামারির পূর্ববর্তী সময়ে যেভাবে শিল্পকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হয়েছে, কার্বন নির্গমনের ঘটনা ঘটেছে, সেই ধারা মহামারির পরবর্তী সময়েও চলতে থাকলে, এই মহামারির কারণে তৈরি হওয়া বাধ্যবাধকতাগুলো আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে মন্থর করতে সক্ষম হবে না। এটি তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ ০.০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি কমাতে পারবে। সাধারণ মডেলের মাধ্যমে গবেষকদের করা এই দাবিগুলো পরবর্তীতে জটিল কিছু মডেলের মাধ্যমেও প্রমাণিত হয়েছে।

বাড়ছে বন উজাড়করণ, বাড়ছে তাপমাত্রা; Image Source: Science In The Classroom.

গত কয়েক বছরে বৈশ্বিকভাবে প্রভাবশালী অনেকগুলো দেশ জলবায়ু পরিবর্তনকে মন্থর করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বিভিন্ন কনফারেন্সে তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ংকর প্রভাবগুলো মোকাবেলায় সেগুলো এখনও যথেষ্ট নয়। যতদিন পর্যন্ত এভাবে কার্বন নির্গমন করতে থাকবে অর্থনৈতকভাবে শক্তিশালী দেশগুলো, ততদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিগুলো নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। এবং যত দেরিতে দেশগুলো সম্মিলিত পদক্ষেপ নেবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের স্বাভাবিক জীবন থেকে চূড়ান্ত বিচ্যুতির ঝুঁকি তত বাড়বে।

৩. লকডাউন জলবায়ু পরিবর্তনের সংক্রান্ত কোনো পদক্ষেপ নয়

লকডাউনের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আর ব্যক্তিকেন্দ্রিক চলাফেরা কমিয়ে দেওয়ার পরেও জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণগুলোর প্রকাশকে মন্থর করতে পারেনি, বরং অস্থিতিশীল প্রমাণিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর মতো, জলবায়ু পরিবর্তনও সবার আগে আঘাত করে বিপদসংকুল অঞ্চলগুলোতেই, বিপদে ফেলবে সমাজের দুর্বল শ্রেণিকেই। এই বিপর্যয় আটকাতে আমাদের কার্বন নির্গমনের হার কমাতে হবে, লকডাউনের কারণে তৈরি হওয়া সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে। আমাদের এমন সমাধান বের করতে হবে, যেটি মানবজাতির কল্যাণ নিশ্চিত করে, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে, তৈরি করে সাম্য। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় উদ্যোগ নেওয়া এখনও গুরুত্বপূর্ণ, একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা নির্ভর করবে অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের উপর।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রয়োজন সমন্বিত বিনিয়োগ; Image Source: Vintage Tree Care.

আমার ও আমার দলের গবেষকদের ধারণা, বৈশ্বিক জিডিপির ১.২ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলো মোকাবেলার উপর বিনিয়োগ করা হলে এবং অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কারকে এই বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত করলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা যাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সম্ভাব্য ভয়াবহ বিপর্যয়গুলো এড়ানো যাবে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো এড়াতে যে পরিমাণ সবুজ বিনিয়োগের দরকার ছিল, আমরা তার কাছাকাছিও যেতে পারিনি। কিন্তু, আগামী দিনগুলোতে এই খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে। ভবিষ্যতের এই বিনিয়োগগুলোকে সঠিক দিকে প্রবাহিত করা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ থাকবে। এই খাতে তুলনামূলকভাবে বেশি বিনিয়োগ করতে হবে, কিন্তু সম্ভাব্য ফলাফল মূল্য তারচেয়েও বহুগুণ বেশি।

This article is written in Bangla, about the impact of pandemic on the rate of climate change. 

All the necessary links are hyperlinked inside. 

Feature Image: Vermont Public Ratio. 

Related Articles