Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আমরা ভয় পেতে ভালোবাসি কেন?

কোনো হরর মুভি দেখার সময় আপনি কী আশা করেন? মুভিটা আপনাকে ভয় দেখাতে পারবে, তাই তো? কিন্তু ভয় পাওয়া তো খুব ভাল কোনো ব্যাপার নয়। তাও জেনে-শুনে আমরা সেই মুভিটা দেখতে চাই কেন? কিংবা ধরুন, কোনো থিম পার্কে আপনি রোলার কোস্টারে চড়ছেন। তো সেই রাইডটি যতটা বন্ধুর ও সর্পিল হবে, ততই আপনার ভয় লাগবে বেশি, কিন্তু একইসাথে আপনি একটি ভাল রোলার কোস্টার রাইড থেকে সেটাই আশা করেন। কেন আপনি জেনে-শুনে, পয়সা দিয়ে ভয় পেতে চান?

Image Source: elliottautogroup.com

ভয়ের অনুভূতি বয়সে মানব সভ্যতার চেয়েও পুরনো। প্রাণীজগতে প্রায় সকল প্রাণীই ভয় পাওয়ার অনুভূতি পেয়েছে বিবর্তনের মাধ্যমে; বিপদ থেকে বাঁচার জন্য, প্রবৃত্তিগতভাবেই। কিন্তু মানুষের মতো উন্নত মস্তিষ্কের প্রাণীর জন্য ভয় পাওয়াটা শুধু একটা সার্ভাইভাল ইনস্টিঙ্কটই নয়, আমরা ভয় পেতে পারি অনেকভাবেই। এবং অনেক ধরনের ভয়ের অনুভূতি আমরা নেশার মতো বার বার নিজে থেকে পেতেও চাই। এর পেছনে বেশ কিছু মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে, যা আমরা আলোচনা করবো।   

ভয়ের শরীরতত্ত্ব

ভয় পাওয়া শুধুই মানসিক কোনো ব্যাপার নয়, ভয় পেলে আমাদের শারীরিকভাবেও অনেক পরিবর্তন ঘটে। এবং আমরা কেন ভয় পেতে ভালবাসি তা বুঝতে হলে ভয় আমাদের মস্তিষ্কে ও শরীরে কী করে, তা-ও বুঝতে হবে।

সাধারণত ভয় পেলে আমরা বাহ্যিকভাবে দেখি হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘেমে যাওয়া, হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এসবের উৎস আমাদের মস্তিষ্ক। আমরা যখন ভয় পাই, আমাদের অ্যামিগডালা (মস্তিষ্কের মধ্যখানে একটি ছোট প্রত্যঙ্গ) আমাদের অটোমেটিক নার্ভাস সিস্টেমে (এএনএস) সংকেত পাঠায়, যার ফলে মস্তিষ্কে বেশ কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন ঘটে। অ্যাড্রেনালিন ও কোর্টিসলসহ বেশ কিছু স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ ঘটে মস্তিষ্কে। এর ফলেই আমাদের হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হয়।

Image Source: insidetime.org

হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার ফলে হাত-পা সহ বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। এর ফলেই ভয় পেলে আমাদের হাত-পা শক্ত হয়ে আসে, আমরা দৌড়ে পালাতে চাই। পশুপাখি ও আদিম যুগের মানুষের জন্য এই পালাতে চাওয়ার তাড়নাটা ছিল একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রবৃত্তি, কারণ তা না হলে আমরা বিভিন্ন বিপদ থেকে বাঁচতে পারতাম না। কিন্তু আরও একটি পরিবর্তন ঘটে মস্তিষ্কে, যা নেতিবাচক আমাদের জন্য। যখন অ্যামিগডালাতে ভয় অনুভূত হয়, তখন আমাদের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স, যা আমাদের যুক্তি এবং বুদ্ধির কেন্দ্র, তা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আমাদের পরিস্থিতি বিচার করার ক্ষমতা কমে যায়। এজন্যই ভয় পেলে আমরা অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নেই এবং জটিল কাজ করতে পারি না।

তবে মানুষ হিসেবে আমাদের ভয়ের উৎস ও ধরন দুটোই ভিন্ন। তাই সবরকম ভয়ে আমাদের শারীরিক পরিবর্তন একরকম হয় না। কিছু কিছু ভয়ের ক্ষেত্রে আমাদের শরীরে এমন কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে পারে, যা আমাদেরকে আনন্দ দিতে পারে।

সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম: সবার ভয় পাওয়ার প্রবণতা এক নয়

সবাই সমান সাহসী বা ভীতু হয় না, সবাই একই ব্যাপারে ভয়ও পায় না- এ কথা সবাই জানে। আমরা ব্যক্তিগত জীবনে অনেককেই হয়তো চিনে থাকব, যারা বেশ রোমাঞ্চপ্রেমী, বিপদজনক বা ভয় উদ্রেককারী কাজ করতে তাদের ভীষণ আগ্রহ। গবেষকরা বর্তমানে বলছেন, তাদের সাথে অন্যদের মস্তিষ্কের কিছুটা তফাত রয়েছে।

তাদের নিয়ে একটা ভুল তথ্য প্রচলিত আছে যে, তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসৃত হওয়ার হার বেশি, কিন্তু মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার এমনভাবে সাজানো যে, ডোপামিন নিঃসরণ ও পুনর্গ্রহণ দুটোই ঘটে। এবং এই দুটোর হারই বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম হতে পারে।

গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম কতটা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় তার উপর নির্ভর করে আমরা ভয়ের অনুভূতি কীভাবে নেই। সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের কাজ বিপদে পড়লে আমাদের শরীরের যুদ্ধ নতুবা পলায়ন (ফাইট অর ফ্লাইট রেস্পন্স) প্রক্রিয়া চালু করা। ফাইট অর ফ্লাইট রেস্পন্স চালু হলে আমাদের শরীরে এমন কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের আত্মরক্ষা করতে সহায়তা করে, আমাদের পেশীশক্তি ও দ্রুততা বৃদ্ধি করে। এর সাথে আমাদের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সের ফ্রন্টাল লোবের অর্থাৎ মস্তিষ্কের যুক্তি, চিন্তা ও বুদ্ধির অংশের বোঝাপড়াই নির্ধারণ করে আমরা ভয় পেলে কী আচরণ করব। যাদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম অত্যন্ত সক্রিয়, তারা হয়তো অন্ধকার ঘরে ঘাড়ে হাত রাখলেই চিৎকার করে উঠবে, বা দৌড়াবে। আবার যার ফ্রন্টাল লোব বেশি সক্রিয়, তার হয়তো প্রচন্ড ভয়ের ব্যাপারেও কোনো পরিবর্তন হবে না। পরের অংশে আমরা ক্ষণিক ভয়ের পরিস্থিতিতে ফ্রন্টাল লোব কীভাবে আমাদের শরীরের নির্দেশের বিরুদ্ধে যায় আমাদের ভয় দূর করতে, তা নিয়ে কথা বলব।

শরীর বনাম মস্তিষ্ক: ফ্রন্টাল লোব

আমাদের বিবর্তনের ফলে মস্তিষ্কের যে অংশটি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তা হচ্ছে এই ফ্রন্টাল লোব। আমাদের বিভিন্ন আদিম প্রবৃত্তিকে দমিয়ে রাখা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা করার কাজটা হয় এ অংশেই। তাই আমরা ভয় পেলে আমাদের আদিম প্রবৃত্তি আমাদের শরীরকে যখন নির্দেশ দেয় পালাতে কিংবা রুখে দাঁড়াতে, তখন ফ্রন্টাল লোব আমাদের স্থির হয়ে ফাইট অর ফ্লাইট ছাড়া অন্য সম্ভাব্য উপায় নিয়ে ভাবতে সাহায্য করে। তাই অত্যন্ত যুক্তিবাদী মানুষদের সচরাচর অমূলক ভয় পেতে দেখা যায় অনেক কম। এক্ষেত্রে একটি অতিপ্রাচীন কথা স্মরণ করা যায়। আমরা যা জানি না বা বুঝি না, তাকেই আমরা ভয় পাই। এই বক্তব্যের উল্টোটাও সত্য। আমরা যা জানি, তাকে আমরা ভয় পাই না।

শরীর ও মস্তিষ্কের এই বোঝাপড়া সবার জন্য সমান হয় না। সবরকম ভয়ের ক্ষেত্রেও তা একরকম হয় না। অত্যন্ত হালকা এবং তাৎক্ষণিক ভয় থেকে আমরা খানিকটা আনন্দ নিতে পারি, যেমন- হরর মুভি দেখার সময় জাম্পস্কেয়ার (তীব্র শব্দ বা আচমকা ভৌতিক কিছু দেখে ‘লাফিয়ে ওঠা’ ভয় পেয়েছেন কি কখনো? ওটাই জাম্পস্কেয়ার) বা রোলার কোস্টার চড়ার সময় উত্তেজক ভয়, অথবা বাঞ্জি জাম্পিংয়ের রাশ- এসবের ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই আনন্দ পেয়ে থাকি, এবং বার বার ঐ ভয়ের স্বাদ পেতে চাই। কিন্তু সেটাই বা কেন? 

frontal lobe of the brain
ফ্রন্টাল লোব; image courtesy: richardsonthebrain.com

আমরা যখন হরর মুভি দেখি, কোনো দ্রুতগতির রাইডে চড়ি, তখন আমরা আগে থেকেই জানি যে আমরা ভয় পাব। এবং এ ধরনের ভয় খুবই ক্ষণস্থায়ী, সাধারণত ভয়ের অংশটা শেষ হয়ে গেলে আর কোনো ভয় থাকে না। খুব ভয় পেয়েছেন এরকম একটা হরর মুভি দেখে শেষ করার পর নিজেকে খানিকটা বোকা বোকা লাগে না এই সামান্য ব্যাপারে এত ভয় পেয়েছেন ভেবে? এবং এ ধরনের পরিস্থিতিতে ভয়টা যে লাগবে তা আপনার কাছে প্রত্যাশিত। তবে একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে এর মধ্যে, আপনি ভয়ও পাচ্ছেন, আবার এটাও জানেন যে এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাহলে এখানে ফাইট অর ফ্লাইট আর যুক্তিবুদ্ধির লড়াইয়ে জিতছে কে?

এক্ষেত্রেই আপনার ফ্রন্টাল লোব, আপনার সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের সাথে যুদ্ধে জিতে যায়। ঘটনাটি আপনার মধ্যে ভীতির উদ্রেক করছে, কিন্তু একইসাথে আপনার ফ্রন্টাল লোব আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছে- বিপদের কিছু নেই, ভয়টি ক্ষণস্থায়ী। আপনার মস্তিষ্ক প্রচন্ড তাড়ার মধ্যে আছে, বিপদের দ্বারপ্রান্তে আছে, কিন্তু সত্যিকার বিপদে নেই। সেজন্যই এ ধরনের ভয় পেলেও সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়, কিন্তু ফাইট অর ফ্লাইট রেস্পন্স সচল হয় না। আর এর পেছনেই লুকিয়ে আছে ভয় থেকে মজা পাওয়ার রহস্য।  

ভয় থেকে আনন্দ

এ ধরনের ক্ষণস্থায়ী ভয় প্রায়ই আমাদের জন্য বেশ মজাদার হয়। এর কারণ, যেহেতু আমাদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়, কিন্তু ফ্রন্টাল লোবের হস্তক্ষেপের কারণে ফাইট অর ফ্লাইট রেস্পন্স চালু হয় না এবং আত্মরক্ষায় সাহায্যকারী হরমোনগুলোও নিঃসৃত হয় না; তার বদলে নিঃসৃত হয় এমন কিছু হরমোন, যা আমাদের আনন্দ দেয়। এজন্যই দেখা যায়, হলে বড় পর্দায় কোনো বড় জাম্পস্কেয়ারের সময় চিৎকার করে উঠলেও পরে দর্শকেরা হাসাহাসি শুরু করে দেয়।

আমরা এ ধরনের ভয় ভালবাসি ও বার বার পেতে চাই। এর পেছনে কারণও সেই হরমোন নিঃসরণ। কারণ, আমরা যে ধরনের আনন্দ পাই ভয় থেকে, গবেষকরা একে তুলনা করেছেন যৌনতৃপ্তির সাথে, কারণ সেক্ষেত্রেও হরমোন নিঃসরণের প্রক্রিয়া প্রায় একই। এজন্যই অনেকের কাছে এভাবে ভয় পাওয়া নেশার মতো হয়ে যায়। আমরাও বার বার ফিরে যাই আমাদের হরর মুভি, হন্টেড হাউজ ও রোলার কোস্টারের কাছে।

তবে এ ভয় থেকে আনন্দ পাওয়ার ব্যাপারটা সবার মধ্যে থাকে না। আপনার ব্যক্তিত্ব ও পরিবেশের উপরও অনেকাংশে নির্ভর করে। আপনি যদি বেশ রোমাঞ্চপ্রেমী, বন্ধুবৎসল ও মজলিশী একজন মানুষ হন, তাহলে আপনার এরকম ভয় থেকে আনন্দ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি; অন্তর্মুখী, শান্ত ধরনের মানুষের থেকে। অনেকের জন্য এটা অন্য মনঃকষ্ট ভুলে থাকার ওষুধ হিসেবেও কাজ করে।  

তবে একটি কথা বোঝা দরকার। এ ধরনের ভয় থেকে আনন্দ পাওয়ার ব্যাপারটি এরকম স্থূল ও ক্ষণস্থায়ী ভয়ের ক্ষেত্রেই কাজ করে সাধারণত। ভবিষ্যতের ভয় বা মৃত্যুভয় ইত্যাদি সিরিয়াস ক্ষেত্রে সাধারণত কেউই ভয় পেতে ভালবাসে না।

Featured Image: shutterstock.com
References: The sources are hyperlinked inside the article.
Description: This is a Bangla article about why we love the feeling of getting scared.

Related Articles