আগুনের আবিষ্কার ও ব্যবহার গোটা মানবসভ্যতার ইতিহাসকেই প্রভাবিত করেছে। আগুনকে প্রাচীনকাল থেকেই ক্ষমতা ও পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। আর এটি কোনো ভুল নয়। আগুনের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক কিছু করা যায়। কিন্তু এই আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তার ক্ষমতার আসল রূপটি দেখা যায়। সেটি পরিণত হয় এক ভয়াবহ দানবে।
সম্প্রতি আমাদের দেশে কিছু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গেছে। যেকোনো অগ্নিকাণ্ডেই কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও যথোপযুক্ত প্রস্তুতি ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে একে নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব। কিন্তু দাবানল এমন এক ঘটনা, যেটি একবার ছড়িয়ে পড়লে একে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার, এবং এর ব্যপ্তি ও স্থায়িত্বকাল অনেক বেশি। ফলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও হয় অনেক বেশি।
উৎপত্তি
দাবানলের শুরুটা সাধারণত শুষ্ক বনভূমি বা ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ এলাকা থেকেই হয়। কোনোভাবে এরকম একটি জায়গায় আগুন লাগলে আর কিছু বিষয় মিলে গেলে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়া শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।
প্রাকৃতিকভাবে সাধারণত দুটি উপায়ে দাবানল শুরু হতে পারে; (১) যদি কোনো শুষ্ক বনভূমির উপর বজ্রপাত হয়, (২) কোনো আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা অথবা বিভিন্ন পদার্থের জ্বলন্ত টুকরা থেকে। এরপর সেটি পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুসারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তবে সাম্প্রতিককালে মানবসৃষ্ট কারণেই দাবানল বেশি ঘটে থাকে। ধারণা করা হয়, বর্তমানে ৮৪% ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মানবসৃষ্ট কারণে দাবানল সংঘটিত হয়ে থাকে। মানবসৃষ্ট কতশত কারণ যে আছে, তার ইয়ত্তা নেই। তবে কিছু কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায়। যেমন:
(১) আতশ-বাজি ফাটানোর সময় যদি এর জ্বলন্ত অংশ কোনো শুকনো ঘাস-পাতা কিংবা গাছের উপর পড়ে, সেটি থেকে শুরু হতে পারে দাবানল।
(২) লাইটার বা দিয়াশলাই এর অসতর্ক ব্যবহার। অনেকসময় বাচ্চারা হাতে লাইটার বা দিয়াশলাই পেলে সেটি নিয়ে খেলা করতে গিয়ে দাবানলের সূচনা করতে পারে। আবার বড়দের দ্বারাও অসতর্কতার কারণে ঘটতে পারে এমন দুর্ঘটনা।
(৩) সিগারেটের জ্বলন্ত বাট। ধূমপান করে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশটুকু ভালো করে না নিভিয়েই অনেকে সেটি ছুঁড়ে ফেলে দেন। এর কারণে ইতিহাসে অনেক বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটি দাবানলেরও কারণ হতে পারে।
(৪) ক্যাম্পফায়ার। অনেকেই বনে-বাঁদাড়ে অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে তাবুতে থাকেন এবং তাবুর সামনে শুকনো কাঠ বা লাকড়ি ব্যবহার করে আগুন জ্বালান (ক্যাম্পফায়ার)। এসব আগুন ঠিকমতো নেভানো না হলে তা থেকেই দাবানল শুরু হতে পারে।
(৫) রেললাইন এর আশেপাশে বা লাইন ঘেঁষেই থাকতে পারে ঘাসজাতীয় কিছু উদ্ভিদ। প্রচণ্ড গরমে সেগুলো শুকিয়ে গেলে সহজেই সেগুলোতে আগুন লেগে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আগুনের সূচনা হতে পারে ট্রেন চলার সময় চাকার সাথে লাইনের ঘর্ষণের ফলে সৃষ্ট স্ফূলিঙ্গ থেকে।
(৬) কেউ যদি রাস্তার পাশে শুষ্ক ঘাসে পরিপূর্ণ এলাকায় একটি কাঁচের গ্লাস, বোতল বা এধরনের কোনোকিছু ছুঁড়ে ফেলে, তাহলে সেটিও হতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ। কাঁচের মধ্য দিয়ে সূর্যালোক বিশেষভাবে প্রতিসরিত হয়ে আগুন লেগে যেতে পারে এবং আপাতদৃষ্টিতে অতি ক্ষুদ্র এ ঘটনা ডেকে আনতে পারে মহাবিপদ।
(৭) জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে কৃষিজমির পরিমাণ বাড়ছে না। তাই কৃষিজমি বাড়ানোর উপায় হলো বন-ভূমি নিধন করা। পৃথিবীর বহু অঞ্চলেই এ কাজটি সহজে করার জন্য একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বনভূমিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। সে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে দাবানল শুরু হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
(৮) ইচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগ। শুনতে অস্বাভাবিক লাগলেও এটিকে দাবানলের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মাঝেমধ্যে কিছু মানুষ উদ্দেশ্যমূলকভাবেই দাবানলের সূচনা করেন বলে ধারণা করা হয়। এর অনেকগুলো কারণের মাঝে একটি হতে পারে, ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের সম্পদ নষ্ট করে বীমা কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ আদায় করা।
এগুলো ছাড়াও আরো অসংখ্য মানবসৃষ্ট কারণ থাকতে পারে, যেগুলোর কথা হয়তো আমরা স্বাভাবিকভাবে ভাবতেও পারি না।
অপ্রতিরোধ্য দুর্যোগ
দাবানলকে বন্যা বা ঘুরনিঝড়ের চেয়েও ভয়াবহ দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কেননা এগুলোর পূর্বাভাস দেওয়া যায়, এবং সচেতন থাকলে এসব দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। কিন্তু এগুলো দাবানলের ক্ষেত্রে খাটে না। দাবানলকে অল্পকথায় ‘অপ্রতিরোধ্য’ ও ‘সর্বগ্রাসী’ শব্দ দিয়ে বর্ণনা করার চেষ্টা করা যেতে পারে। একে থামানোর কোনো উপায় নেই এবং এটি যে অঞ্চলকে অতিক্রম করে যায়, আক্ষরিক অর্থেই সেখানে কোনোকিছু অবশিষ্ট থাকে না।
দাবানলের প্রভাব কমানোর জন্য কিছু প্রচেষ্টা চালানো হয়। যেমন- আগুন যেদিকে অগ্রসর হচ্ছে, সে অঞ্চলের কিছু গাছপালা ও ঝোপঝাড় ইচ্ছাকৃত ও নিয়ন্ত্রিতভাবে পুড়িয়ে ফেলা হয় যেন দাবানল ততটুকু পর্যন্ত গিয়ে আর এগোতে না পারে। আবার, দাবানল শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকলে তার গতিপথে অগ্নিনির্বাপক বা অগ্নিপ্রতিরোধক রাসায়নিক পদার্থ নিক্ষেপ করে আগুনের তীব্রতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এ রাসায়নিক পদার্থগুলো গাছপালা বা অন্যান্য জ্বালানীর সাথে মিশে বিক্রিয়া করে সেগুলোর দাহ্যতা কমিয়ে দেয়।
তবে দাবানলের বিশাল আকৃতি ও শক্তির কাছে এ প্রচেষ্টাগুলো বড়ই ক্ষীণ ও অক্ষম। এ প্রচেষ্টা বড়োজোর দাবানল ছড়িয়ে পড়ার গতিকে কমিয়ে দিতে পারে, থামাতে পারে না। মানুষকে অসহায়ের মতো অপেক্ষা করতে হয় কখন প্রাকৃতিকভাবেই এ দুর্যোগটি থেমে যাবে। অনেকেই ভাবতে পারেন, দাবানল হয়তোবা কোনো নদী বা জলাশয়ের পাড়ে এসে থেমে যেতে পারে। এ ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়, আগুনের এক অদ্ভূত ক্ষমতা আছে নদীর মতো বিশাল বাধা পাড়ি দেওয়ার!
যখন নদীর একপাশে তীব্রভাবে আগুন জ্বলতে থাকে, তখন সেখানকার বাতাস হালকা হয়ে তীব্রবেগে উপরের দিকে উঠে যায়। উঠে যাওয়ার সময় ছাইসহ সেখানকার বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ, যেমন- পাতা, ডালের টুকরা, কাগজ বা অন্য কোনোকিছুর অসংখ্য জ্বলন্ত টুকরা সাথে নিয়ে যায়। সেগুলো যখন নদীর অপর পাড়ে গিয়ে পড়ে, তখন সেখানে শুরু হতে পারে নতুন দাবানল।
দাবানলকে আমরা কতটা বুঝি
যেকোনো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানোর জন্য সেটির প্রকৃতি ভালোমতো বোঝা প্রয়োজন। বিগত এক দশকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বড় পরিসরে অনেকগুলো দাবানলের ঘটনা ঘটে গেছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের মধ্যভাগ থেকে শুরু হয়ে শেষভাগ পর্যন্ত চলা ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের ঘটনাটি স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ দুর্যোগ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাবানল। সে বছর ক্যালিফোর্নিয়ায় বিছিন্নভাবে প্রায় সাড়ে আট হাজারটিরও বেশি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে এবং শেষপর্যন্ত সেগুলো বিভিন্ন স্থানে মিলিত হয়ে বড় আকার ধারণ করেছ। ফলে প্রায় পুরো বছরই মার্কিন সরকারকে এই দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে।
এ দাবানলগুলো প্রায় ৮০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রায় ৮৫ জন মানুষ নিহত হয়েছিলেন এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসাবটা প্রাথমিকভাবেই ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও মানুষ দুর্যোগের কাছে কতটা অসহায়; বিশেষ করে দুর্যোগটা যখন দাবানল।
এ ধরনের ঘটনাগুলোর কারণে বিভিন্ন দেশের সরকার ও গবেষণা সংস্থার টনক নড়েছে। বিগত এক দশকে দাবানল নিয়ে গবেষণার পরিমাণ ও বিনিয়োগ বেড়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দাবানলের বৈজ্ঞানিক মডেল বা সফটওয়্যার তৈরি করার চেষ্টা করছে। সেইসাথে প্রচেষ্টা চলছে এসব মডেলের সাথে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটানোর। এই মডেলগুলোর উল্লেখযোগ্য দিক হলো এগুলোর সাহায্যে দাবানল সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে, দাবানল শুরু হলে সেটির ছড়িয়ে পড়ার হার ও দিক অনুমান করা যাবে এবং এর স্থায়িত্ব ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে পূর্বেই আভাস পাওয়া যাবে। তবে এ রকম একটি মডেল পুরোপুরি কার্যকর হবে না। কেননা, এই মডেলটিতে ইনপুট হিসেবে যেসব তথ্য জোগান দিতে হবে, সেগুলো খুবই পরিবর্তনশীল এবং যেকোনো একটি ছোটখাট ব্যাপারের পরিবর্তন পুরো ঘটনাকেই ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারে।
গবেষকরা দাবানল সৃষ্টি হওয়ার পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে কয়েকটি প্রভাবকের কথা জানতে পেরেছেন। যেমন, দীর্ঘদিন যাবত অধিক তাপমাত্রা, তুলনামূলক কম আর্দ্রতা, বজ্রপাতের আধিক্য, খরা এবং অধিক পরিমাণ পুরোনো ও শুষ্ক বনভূমির উপস্থিতি একটি অঞ্চলে দাবানলের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে।
আবার, দাবানল একবার তৈরি হয়ে গেলে সেটি কোনদিকে বিস্তৃত হবে, তা অনুমান করা খুবই কঠিন। সবসময় বাতাসের দিকেই যে তার বিস্তার ঘটবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, বিপরীতটাও ঘটতে দেখা যায়। আবার একদমই ঝড়ো বাতাসের উপস্থিতি ছাড়াই দ্রুত দাবানল ছড়িয়ে পড়ার মতো নজিরও আছে।
আগুনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি যখন বৃহৎ আকার ধারণ করে, তখন সে তার আশেপাশে এমন পরিবেশ তৈরি করে নেয়, যেন আগুন সহজেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন- দাবানলের ফলে যে তাপের সৃষ্টি হয়, তা আশেপাশের পরিবেশে থাকা পদার্থসমূহের দাহ্যতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, ফলে সহজেই সেগুলোতে আগুন ধরে যায়।
আবার, আগুন যেখানে জ্বলছে, সেখানকার বাতাসকে হালকা করে তুলছে, অর্থাৎ ঘনত্ব কমিয়ে দিয়ে উপরের দিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাই আশেপাশের অঞ্চল থেকে সেদিকে বাতাস ছুটে গিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ করছে এবং একইসাথে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে অক্সিজেন, যা আগুনকে আরো জ্বলতে সাহায্য করছে।। আবার এই বাতাসের প্রবাহ আগুনকে ছড়িয়ে পড়তেও সহায়তা করছে। এভাবে প্রক্রিয়াটি চক্রাকারে চলতেই থাকে আর আগুন বাড়তে থাকে।
বৃহৎ পরিসরে দাবানল কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, সেটা নিয়ে যেমন গবেষণা হচ্ছে, তেমনি ক্ষুদ্র পরিসরে দাবানলের আগুন কীভাবে একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেটি কীভাবে রোধ করা যায়, তা নিয়েও করা হচ্ছে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে, বয়স্ক ও শুষ্ক উদ্ভিদের তুলনায় সবুজ ও কঁচি ডালপালাযুক্ত উদ্ভিদ কম দাহ্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, পাইন জাতীয় ও চিরহরিৎ জাতের কিছু উদ্ভিদ শুষ্ক না হলেও ভালো জ্বালানী হিসেবে কাজ করে। কেননা, এদের কাণ্ডে বিশেষ প্রকার তেল সঞ্চিত থাকে, যা প্রকারান্তে এদেরকে আরো দাহ্য করে তোলে। তবে সবুজ উদ্ভিদগুলো শুধুমাত্র দাবানল ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখতে পারে, দাবানল শুরুর ক্ষেত্রে নয়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনও ঘন ঘন দাবানল সংঘটনের পেছনে ভূমিকা রাখছে। তাপমাত্রার সামান্যতম বৃদ্ধিও বিভিন্ন অঞ্চলের আর্দ্রতা ও বনভূমির শুষ্কতার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। সেইসাথে তাপমাত্রা নিজেই একটা প্রভাবক। এছাড়া, সমতলের তুলনায় পাহাড়ি অঞ্চলে দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন আরো অসংখ্য প্রভাবক নিয়ে অনুসন্ধান চলছে।
দাবানল ও বাস্তুসংস্থান
স্বাভাবিকভাবে দাবানল প্রাকৃতিক ভারসাম্যেরই একটা অংশ। কিন্তু কীভাবে? অনেকভাবেই তা হতে পারে। ধরুন, একটা অঞ্চলের পুরোটা বনভূমি জুড়ে বেশিরভাগই পুরোনো গাছপালা। আমরা জানি, বৃহৎ আকারের উদ্ভিদের আয়ু মোটামুটি অনেক বেশি হয়। অর্থাৎ এমন একটা বনভূমিতে বেশিরভাগ গাছপালাই হয়তো কয়েকশো বছরের পুরোনো। দাবানলের ফলে যখন সেসব গাছপালা পুড়ে যায়, তখন সেখানে নতুন গাছ গজানোর সুযোগ পায়।
সে নতুন গাছগুলো শত বছরের পুরোনো উদ্ভিদগুলোর তুলনায় পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে অধিক পরিমাণ অভিযোজিত হয়। তারা এই কয়েকশো বছরে বদলে যাওয়া পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হয় অনেক বেশি, তারা তুলনামূলক প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থেকে ফুল-ফল উৎপাদন ও বংশবিস্তার করতে পারে। অর্থাৎ বদলে যাওয়া ও দূষিত হয়ে উঠা পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য এরা অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন হয়।
এছাড়া বহু বছর ধরে যখন একটি ভূমিতে বনাঞ্চল গড়ে উঠে, তখন সে ভূমির উপরিতল বড় উদ্ভিদের ডালপালা ও পাতায় ছেয়ে যায়। ফলে সেখানকার মাটি ও মাটিতে থাকা ছোট উদ্ভিদগুলো পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় না বড় হবার জন্য। তার উপর দীর্ঘদিন এই প্রক্রিয়া চলার ফলে বিনষ্ট হতে পারে মাটির গুণাগুণ। তাই দাবানলের পর সেখানকার মাটি পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এবং সেখানে নতুন করে ছোটবড় বিচিত্র প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মে। ফলে মাটির উর্বরতা ফিরে আসে। এছাড়াও দাবানলে একটি বনভূমির জন্য ক্ষতিকর অথবা সংখ্যায় মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যাওয়া কীট-পতঙ্গের মৃত্যু ঘটে। ফলে বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং নতুন করে আরো শক্তিশালী বাস্তুসংস্থান গড়ে উঠে। এর ফলে যে নতুন বনাঞ্চল তৈরি হয়, তাতে দাবানল সংঘটিত হওয়ার আশংকা অনেক কম থাকে।
প্রকৃতপক্ষে দাবানল ঠেকানোর কোনো উপায় নেই; এর হাত থেকে বাঁচতে হলে উপদ্রুত এলাকার মানুষ ও মূল্যবান সামগ্রীগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তবে যেহেতু দাবানলের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষই দায়ী, তাই সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি রোধ করাই সবচেয়ে শ্রেয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ভবিষ্যতে দাবানলকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে সামনের দিনগুলোতে যদি দাবানল সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা এবং এর গতি-প্রকৃতি পূর্বানুমান করার জন্য উপযুক্ত কোনো মডেল তৈরি করা যায়, তাহলে হয়তো যথাসময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কমিয়ে আনা যাবে। এ কাজটি আপাতদৃষ্টিতে দুঃসাধ্য মনে হলেও মানুষের প্রচেষ্টা থেমে নেই।
This article is in bengali language. It focuses on various aspects of wildfires. Necessary sources of information have been hyperlinked inside the article.
More references:
1. Wildfires: Causes, Costs & Containment - LiveScience
2. Learn More About Wildfires - National Geographic
3. Southern Area Coordination Center
5. Wildfire Causes and Evaluations - National Park Service
6. What Causes A Wildfire? - WorldAtlas
7. California wildfire declared 'largest in state's history' - BBC
8. 'It eats everything'—the new breed of wildfire that's impossible to predict - Phys.org
9. Why It's So Hard to Predict Exactly Where Wildfires Will Strike - Time
10. Firefighters get new tool for predicting wildfire danger - WildfireToday
11. The quest to predict - and stop - the spread of wildfires - BBC Future
12. Wilder wildfires? Computing helps predict their path and fury - ScienceNews for Students
Featured Image © Mark Ralston/AFP/Getty Images