Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাংলাদেশে বসে যারা পাল্টে দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা সেবার চেহারা

রাজধানী ঢাকার পান্থপথে স্কয়ার হসপিটাল সংলগ্ন একটি রঙিন ভবন। উঁচু উঁচু খিলান, বিশাল ও প্রশস্ত সিঁড়ি। ডাচ স্থাপত্যশৈলীর নজরকাড়া সেই ভবনটি পথচারীদের মনে খানিকটা রহস্যেরও জন্ম দেয়। কী হয় সেখানে? 

কী হয় সেখানে? Image Source: Imran Akbar Khan

সেই ভবনে এমন একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যারা কিনা সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের কাজের চাপ কমিয়ে দিয়েছে অর্ধেক! একই সাথে বর্তমান সময়ে সিলিকন ভ্যালি ভিত্তিক সফল স্টার্টআপগুলোর মধ্যেও অন্যতম এটি। বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থায় অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এই দেশের কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব দূরীকরণেও দারুণ ভূমিকা রেখে চলেছে তারা। এবং এর উদ্যোক্তা এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক, নাম ইয়ান শাকিল। বিশ্বের চিকিৎসা খাতে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করে দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির নাম অগমেডিক্স। 

ইয়ান শাকিল ও পেলু ট্র্যান; Image Source: Augmedix

যুক্তরাষ্ট্রের সব চিকিৎসককেই রোগীর বিবরণ ও চিকিৎসার যাবতীয় তথ্য ও প্রতিবেদন বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। এ কাজে তাদের দৈনন্দিন ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যায়। রোগী দেখায় চলে আসে একঘেয়েমি ও জটিলতা। রোগীর বর্ণনা লিপিবদ্ধ করাটা একজন ডাক্তারের জন্য যেমন বেশ সময়সাপেক্ষ, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে একাজে একজন সহকারি রাখাও অনেক ব্যয়বহুল। ডাক্তার নিজে এই লেখার কাজটি করতে গেলে মনযোগ দিয়ে রোগীর কথা শুনতে খানিকটা অসুবিধাও হয়।

এমন সমস্যার উত্তরণ হিসেবে বায়োটেকনোলজির গ্র্যাজুয়েট ইয়ান শাকিল ও তার বন্ধু পেলু ট্র্যান আইডিয়া বের করেন গুগল গ্লাসকে কাজে লাগানোর। আর এর মাধ্যমে তারা উদ্ভাবন করেন ডাক্তারদের রিমোট পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ধারণার।

গুগল গ্লাস হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা চশমার ফ্রেমের মতো চোখে পরে থাকা যায়। এর মাধ্যমে চোখের ইশারা বা ভয়েস কমান্ডেই ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্যবহার এবং অডিও ও ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মুহূর্তেই যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। 

গুগল গ্লাস হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা চশমার ফ্রেমের মতো চোখে পরে থাকা যায়; Image Source: Augmedix

এই চিন্তা থেকেই জন্ম এক বিলিয়ন ডলার আইডিয়ার, আর সেখান থেকে শুরু শাকিল ও তার বন্ধুর প্রতিষ্ঠান অগমেডিক্সের। ২০১২ সাল থেকে অগমেডিক্সের কাজ শুরু করেছিলেন তারা। ধারণাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ডেভলপমেন্ট, কর্মীদের প্রশিক্ষণ সবকিছু পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে। সব কাজ গুছিয়ে অগমেডিক্স পুরোদমে যাত্রা শুরু করে ২০১৪ সালে। 

অগমেডিক্সের সাথে যুক্ত চিকিৎসকেরা গুগল গ্লাস পরেই চিকিৎসার কাজটি করেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা ডাক্তারের কাজ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা সহকারি, যাকে বলা হয় স্ক্রাইব। একজন স্ক্রাইব চিকিৎসক ও রোগীর কথোপকথন শুনে সেগুলো রিপোর্ট আকারে লিপিবদ্ধ করেন। কোনো কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে রোগী দেখা শেষে ডাক্তারের সাথে সরাসরি কথা বলে পরামর্শও নিতে পারেন স্ক্রাইব। রিপোর্ট লেখা শেষ হলে স্ক্রাইব সেটি রিভিউয়ের জন্য পাঠিয়ে দেন ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড সিস্টেমে। কাজ শেষে চিকিৎসক রিপোর্টটিতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন যে কোনো ভুল আছে কিনা।

অগমেডিক্স প্রতিটি চিকিৎসককে একজন নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ও উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডকুমেন্টেশন স্পেশালিস্ট অর্থাৎ স্ক্রাইব সরবরাহ করে থাকে। একজন স্ক্রাইবকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হয়। তবে স্ক্রাইব হিসেবে কাজ করতে হলে চিকিৎসাশাস্ত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকার প্রয়োজন নেই। অগমেডিক্স থেকেই স্ক্রাইবদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। 

একজন স্ক্রাইব চিকিৎসক ও রোগীর কথোপকথন শুনে সেগুলো রিপোর্ট আকারে লিপিবদ্ধ করেন; Image Source: Augmedix

যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হলেও অগমেডিক্সের সকল খাতেই কাজ করছেন বাংলাদেশিরা। অগমেডিক্স তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাজের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সফটওয়্যার তৈরি করছে। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রায় নব্বই ভাগ কাজই করেছেন আমাদের দেশীয় প্রকৌশলীরা। প্রতিষ্ঠানটির ইঞ্জিনিয়ারিং, অপারেশনস, রিক্রুটমেন্ট এবং আইটি অ্যান্ড সাপোর্ট টিমেও কাজ করছেন অনেক বাংলাদেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বাইরে ভারত, শ্রীলংকা এবং ডোমিনিকান রিপাবলিকসহ বিশ্বের পাঁচটি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা। 

তবে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় পেশা অবশ্যই স্ক্রাইবিং, কেননা এখানেই সবচেয়ে বেশি লোকবল প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশ থেকে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত স্ক্রাইব পাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি, যে কারণে তাদেরকে হাত বাড়াতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। অথচ প্রতিষ্ঠানটি চায়, একসময় যেন তাদের সকল স্ক্রাইবই হয় বাংলাদেশি।

কেন বাংলাদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সংখ্যক স্ক্রাইব মিলছে না? এর পেছনে একটি বড় কারণ হলো, বাংলাদেশিদের ইংরেজিতে ভালো দখলের অভাব। স্ক্রাইবদের কাজের পদ্ধতির কারণে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে ইংরেজি ভাষা শোনা ও লেখায় দক্ষতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের রোগী ও চিকিৎসকদের ইংরেজি উচ্চারণ শুনে সঠিকভাবে বুঝতে পারাটা বেশি জরুরি। এছাড়া কম্পিউটারে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে লিখতে ও জানতে হবে।

প্রতিষ্ঠানটি চায়, একসময় যেন তাদের সকল স্ক্রাইবই হয় বাংলাদেশি; Image Source: Augmedix

এই মুহূর্তে স্ক্রাইব পদে নিয়োগের জন্য অগমেডিক্স বাংলাদেশ খুঁজছে ইংরেজিতে দক্ষ গ্র্যাজুয়েটদের। এবং আরও আকর্ষণীয় দিক হলো, স্ক্রাইবরা যেহেতু চিকিৎসকদের সাথে কাজ করবেন, তাই তাদেরকে মেডিকেল ব্যাকগ্রাউন্ডের হতে হবে, এমন কোনো শর্তও নেই। যেকোনো বিষয়ের গ্র্যাজুয়েটরাই ইংরেজিতে দক্ষ হলে, এবং কম্পিউটারে দ্রুত ও নির্ভুল টাইপিংয়ে পারদর্শী হলে আবেদন করতে পারেন অগমেডিক্সে।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক সময়ের ব্যবধান থাকায়, সেখানকার বেশিরভাগ চিকিৎসক যখন রোগী দেখতে শুরু করেন, তখন বাংলাদেশে সন্ধ্যা নামে। আবার তাদের রোগী দেখা শেষ হতে হতে আমাদের দেশে রাত গড়িয়ে সকাল হতে শুরু করে। ফলে অধিকাংশ স্ক্রাইবেরও কাজের শুরুটা হয় সন্ধ্যায়, শেষ হয় মাঝরাত বা ভোরের দিকে।

রাতের শিফটে কাজ করতে হয় বলে অনেকেই হয়তো ভাবছেন, অগমেডিক্সে হয়তো কেবল পুরুষরাই কাজ করেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। নারীরা রাতের শিফটে কেবল স্ক্রাইব হিসেবেই কাজ করছেন না, এমনকি স্ক্রাইবের অন্যান্য বিভিন্ন বিভাগেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা। সবার জন্য কাজের সুন্দর পরিবেশ আছে বলেই তারা নির্দ্বিধায় অগমেডিক্সে স্ক্রাইবসহ অন্যান্য পদে কাজ করতে পারছেন।

কীভাবে গড়ে উঠল এমন পরিবেশ? এক্ষেত্রে প্রথমত গুরুত্ব দেয়া হয় নিরাপত্তাকে। অগমেডিক্সের পুরো অফিসই সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাছাড়া অফিসেই প্রত্যেকের জন্য সব বেলার খাবারের ব্যবস্থা থাকে। নিজস্ব গাড়ি রয়েছে অগমেডিক্সের, যেগুলো প্রত্যেক কর্মীকে একদম তাদের বাসার গেইটের সামনে নামিয়ে দিয়ে আসে। 

সবার জন্য আছে কাজের সুন্দর পরিবেশ; Image Source: Augmedix

সপ্তাহে নির্ধারিত পাঁচ দিন কাজ করতে হয় স্ক্রাইবদের। বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও অন্যান্য অধিকাংশ পেশার চেয়ে সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছেন স্ক্রাইবরা। এভাবে দিন দিন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে অতি আকাঙ্ক্ষিত ও আকর্ষণীয় কাজ হয়ে উঠছে স্ক্রাইবিং।

বর্তমানে অগমেডিক্স যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্যে প্রাইমারি কেয়ার ডক্টর, স্পেশালিস্ট ও সার্জনদের সেবা দিয়ে আসছে, যারা প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার রোগী দেখেন। বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগের সাথে চুক্তির মাধ্যমে অগমেডিক্সে বিনিয়োগ ও জনবল সরবরাহে সাহায্য করছে সরকার। যোগ্য কর্মী গড়ে তুলতে আইসিটি বিভাগের অধীনে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারি-বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। 

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসরকারি হাইটেক পার্ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে অগমেডিক্সের ঢাকা অফিস। অন্যান্য জেলাতেও এর কার্যক্রম বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে উদ্ভাবনী কোনো ধারণাকে একীভূত করার মাধ্যমে যে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়া সম্ভব, এই সময়ে তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত অগমেডিক্স। 

This article is written on the introduction of Augmedix and its scribes.

Featured Image Source: Augmedix

Related Articles