Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দু’চাকায় ইঞ্জিন: যেমন ছিল গতি আর তারুণ্যের মিশেলের সূচনাটা

বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচলের জন্য সবচেয়ে সময় সাশ্রয়ী যানবাহন কোনটি? আমাদের প্রতিদিনের জীবনে যেকোনো দূরত্ব অতিক্রমের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের যেন একটিই উত্তর, সেটি হলো মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেল একদিকে যেমন দামে অনেক সাশ্রয়ী, তেমনই আকারে ছোট আর এক ট্র্যাকের হওয়ার কারণে রাস্তায় অনেক কম জায়গা দখল করে। ফলে বড় বড় যানবাহনের মতো এটি মোটেও যানজট সৃষ্টির জন্য দায়ী নয়, বরং খুব দ্রুত আর জরুরি মুহূর্তের চলাচলের জন্য এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাহন হলো মোটরসাইকেল।

খুব দ্রুত আর জরুরি মুহূর্তের চলাচলের জন্য এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাহন হলো মোটরসাইকেল; Image Source: xbhp.com

কিন্তু আজকের সময়ে দারুণ জনপ্রিয় এই যানটির শুরু কোথা থেকে? কীভাবে উদ্ভব ঘটেছিল দুই চাকার সাথে ইঞ্জিন লাগিয়ে চলার ধারণার? কারা, কবে, কোথায় কাজ শুরু করেছিলেন এ নিয়ে? আর কীভাবেই বা বিবর্তনের ক্রমধারায় আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে এটি? মোটরসাইকেলের সেই চমকপ্রদ ইতিহাস নিয়েই আমাদের এই সিরিজ। চলুন ঘুরে আসি ইতিহাসের সেই দারুণ সময়গুলো থেকে। 

আসলে কোনো নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির হাত ধরে মোটরসাইকেল আবিষ্কৃত হয়নি। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলেছে এর বিবর্তন, আর এর মধ্যে অগণিত মানুষ অবদান রেখেছে এর উন্নতিকল্পে। এই দীর্ঘ সময়ে বহু মানুষের ধারণা একীভূত হয়েই উন্নতি ঘটেছে মোটরসাইকেলের। 

১৯ শতকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের উদ্ভাবকেরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন কীভাবে মানুষের চলাচলকে আরও দ্রুতগতির ও কম ব্যয়সাধ্য করা সম্ভব। সেই চেষ্টা থেকেই তারা আবিষ্কার করতে থাকেন মোটরসাইকেলের বিভিন্ন প্রাথমিক সংস্করণ। এমন উদ্ভাবকদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ইউরোপীয়।

প্রথম বাষ্পচালিত বাইসাইকেল

ইউরোপীয় উদ্ভাবকদের দাপট সত্ত্বেও, প্রথম বাষ্পচালিত বাইসাইকেল যিনি আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি কিন্তু ছিলেন আমেরিকান। নাম সিলভাস্টার হাওয়ার্ড রোপার (১৮২৩-১৮৯৬)। তিনি ১৮৬৭ সালে দুই সিলিন্ডার বিশিষ্ট, বাষ্পচালিত একটি ভেলোসিপিডের কাঠামো দাঁড় করান। ভেলোসিপিড হলো বাইসাইকেলের একটি প্রাথমিক রূপ, যেখানে পেডাল সামনের চাকার সাথে সংযুক্ত থাকে।

১৮৯৬ সালে বোস্টন ডেইলিতে রোপারের খবর; Image Source: Wikipedia Commons

আপনি যদি আপনার কল্পনাশক্তিকে স্বাধীনতা দেন কয়লাকে জ্বালানী হিসেবে আর বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের বাইসাইকেলকে মোটরসাইকেল হিসেবে ভেবে নেওয়ার, তাহলে আপনি অনায়াসেই ধরে নিতে পারবেন রোপারের আবিষ্কৃত ভেলোসিপিডই হলো মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম মোটরসাইকেল। রোপার পরবর্তীতে বাষ্পচালিত গাড়িও আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু তার জীবনের সমাপ্তিটা ছিল একটা ট্র্যাজিকের মতোই। নিজের বাষ্পচালিত ভেলোসিপিড চালানো অবস্থাতেই খুন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি!

রোপার যে সময়ে বাষ্পচালিত ভেলোসিপিড আবিষ্কার করেন, ঠিক একই সময়ে ফ্রান্সে বসে আর্নেস্ট মিশো তার বাবা পিয়েরে মিশোর উদ্ভাবিত আরেকটি ভেলোসিপিডে একটু ভিন্ন ধরনের বাষ্পীয় ইঞ্জিন সংযুক্ত করেন। মিশোর সংস্করণটিতে আগুনের উৎস ছিল অ্যালকোহল, এবং সামনের চাকাকে পরিচালিত করার জন্য ছিল টুইন বেল্ট ড্রাইভ।

নিউইয়র্কের একটি প্রদর্শনীতে মিশোর ভেলোসিপিড; Image Source: Wikipedia Commons

তিন চাকার মোটো-সাইকেল

এর প্রায় এক যুগ পর, ১৮৮১ সালে, অ্যারিজোনার লুসিয়াস কোপল্যান্ড গড়ে তোলেন আগের চেয়ে ছোট একটি স্টিম বয়লার, যেটি দিয়ে একটি বাইসাইকেলের পেছনের চাকা চালানো যেত ঘণ্টায় ১২ মাইল গতিতে। অবশ্য তখনকার দিনে এটিই ছিল অবিশ্বাস্য রকমের গতি। ১৮৮৭ সালে কোপল্যান্ড একটি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি তৈরি করেন, যেখান থেকে তিনি প্রস্তুত করেন তার প্রথম ‘মোটো-সাইকেল’। অবশ্য এই মোটো-সাইকেল দুই চাকার নয়, ছিল তিন চাকার।

কোপল্যান্ডের তার মোটো-সাইকেল নিয়ে, ১৯৮৮ সালে; Image Source: Wikipedia Commons

গোতলিব ডেইমলার ও রিটওয়্যাগন 

মোটো-সাইকেল বাজারে আসার পর থেকে আবিষ্কারকদের মধ্যে যেন সাড়া পড়ে যায় যে কে কার আগে আরো উন্নত সংস্করণের মোটরসাইকেল তৈরি করতে পারেন তা নিয়ে। কিন্তু প্রথম গ্যাসোলিন পরিচালিত আভ্যন্তরীণ কম্বাস্টন ইঞ্জিনের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত হলেন জার্মানির গোতলিব ডেইমলার আর তার সহযোগী উইলহেম মাইবাখ। তারা ১৮৮৫ সালে তৈরি করেন পেট্রোলিয়াম রিটওয়্যাগন। এটি ছিল মোটরসাইকেল ইতিহাসের এক যুগান্তকারী সময়, যখন একই সাথে টেকসই গ্যাস পরিচালিত ইঞ্জিন ও আধুনিক বাইসাইকেলের উদ্ভব ঘটে। 

গোতলিব ডেইমলার একটি নতুন ইঞ্জিন ব্যবহার করেছিলেন, যেটির আবিষ্কারক ছিলেন প্রকৌশলী নিকোলাস ওটো। ১৮৭৬ সালে ওটো আবিষ্কার করেন ‘ফোর স্ট্রোক ইন্টার্নাল কম্বাস্টন ইঞ্জিন’, যেটির নাম তিনি রাখেন ‘ওটো সাইকেল ইঞ্জিন’। সেসময়ে ডেইমলার কাজ করতেন ওটোর কোম্পানিতে। ওটো তার ইঞ্জিন নির্মাণ শেষ করা মাত্রই, ডেইমলার সেটি দিয়ে একটি মোটরসাইকেল বানিয়ে ফেলেন।

মার্সিডিজ-বেঞ্জের মিউজিয়ামে ডেইমলার-রিটওয়াগনের রেপ্লিকা; Image Source: Wikipedia Commons

তবে সমস্যা ছিল, ডেইমলারের রিটওয়্যাগনে ম্যানুভার করার মতো কোনো সামনের চাকা ছিল না। সেটাকে নির্ভর করতে হতো দুইদিকে ভারসাম্য রক্ষা করার এক জোড়া আউটরিগার চাকার উপর, ঠিক যেমনটা থাকে বাচ্চাদের বাইসাইকেলে, যাতে করে তারা ডানে-বামে যাওয়ার সময় ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে না যায়। 

ডেইমলার এই গ্যাসোলিন মোটর কেবল বাইসাইকেলে সংযুক্ত করেই থেমে থাকেননি, তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার খাতিরে সেটাকে কাজে লাগান নৌকা চালানোর কাজেও। এবং পরবর্তীতে তিনি পরিণত হন বাণিজ্যিক গাড়ি প্রস্তুতের ক্ষেত্রে একজন অন্যতম অগ্রদূতে। জেনে অবাক হবেন, এখন আমরা মার্সিডিজ-বেঞ্জ বলে অটোমোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে চিনি, সেটির নাম কিন্তু একসময় ছিল ডেইমলার-বেঞ্জ!!

বাণিজ্যিকভাবে মোটরসাইকেল নির্মাণের সূচনা

১৮৮০’র দশকের পর থেকে, বিশ্বব্যাপী আরো ডজনখানেক স্বয়ংক্রিয় বাইসাইকেল তৈরির কোম্পানি গড়ে ওঠে। এ ধারার সূচনা হয়েছিল জার্মানি ও ব্রিটেনে, তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রও শামিল হয় সেখানে। 

১৮৯৪ সালে, জার্মান কোম্পানি হিল্ডেব্র্যান্ড ও ওলফমুলার একটি কারখানা গড়ে তোলে, যেখানে প্রথমবারের মতো ‘মোটরসাইকেল’ নাম দিয়ে যানটির নির্মাণ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মোটরসাইকেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি ছিল ওয়াল্টহ্যাম, ম্যাসাচুসেটসের চার্লস মেটজের।

হিল্ডেব্র্যান্ড ও ওলফমুলারের মোটরসাইকেলের ডায়াগ্রাম; Image Source: Wikipedia Commons

হার্লি-ডেভিডসন মোটর কোম্পানি

মোটরসাইকেলের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নামটি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান হার্লি- ডেভিডসন। ১৯ শতকে যেসব উদ্ভাবক মোটরসাইকেল নিয়ে কাজ করেছেন, যেমন ডেইমলার ও রোপার, তারা পরবর্তীতে অটোমোবাইলের মতো অন্যান্য যানবাহন নিয়ে কাজ শুরু করেন। কিন্তু ক’জন উদ্ভাবক ছিলেন যারা কেবল মোটরসাইকেল নিয়েই পড়ে ছিলেন, এবং চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন যে কীভাবে মোটরসাইকেলের আরও উন্নতি করা যায়। এদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন উইলিয়াম হার্লি ও ডেভিডসন ভাইয়েরা। তাদের ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয় সেসময়ের আরও কিছু নতুন স্টার্ট-আপ কোম্পানি, যেমন: এক্সেলসিওর, ইন্ডিয়ান, পিয়ার্স, মার্কেল, শিকেল এবং থর।

১৯০৩ সালে উইলিয়াম হার্লি ও তার দুই বন্ধু আর্থার ও ওয়াল্টার ডেভিডসন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন হার্লি-ডেভিডসন মোটর কোম্পানি। তাদের প্রস্তুতকৃত বাইকের ইঞ্জিন ছিল সেসময়ের তুলনায় খুবই উন্নতমানের, যে কারণে সেগুলো ব্যবহৃত হতে শুরু করে রেসট্র্যাকে। অবশ্য তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল কেবলই যাতায়াতের নিমিত্তে মোটরসাইকেল তৈরি করা। হার্লি-ডেভিডসনের প্রস্তুতকৃত মোটরসাইকেল প্রথম বিক্রি হয় শিকাগোতে, বিক্রি করেছিলেন মার্চেন্ট সি এইচ লেঞ্জ।

হার্লি-ডেভিডসনের ১৯০৩ সালের মোটরসাইকেলের মডেল; Image Source: Cell Code

একদম সূচনালগ্ন থেকে ২০ শতকের শুরু পর্যন্ত মোটরসাইকেল আবিষ্কার ও নির্মাণের বিবর্তনের মূল গল্পগুলো ছিল এসবই। আজকের সময়ে আমরা যেসব মোটরসাইকেল দেখি, সেগুলোর উদ্ভব কিন্তু ঘটেছে আরও অনেক পরে। কীভাবে উদ্ভব ঘটল সেগুলোর, কীভাবে মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা উন্নত বিশ্বের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ল গোটা পৃথিবীব্যাপী, এবং ঠিক এই মুহূর্তে কী চলছে মোটরসাইকেল দুনিয়ায়, সেসব নিয়েই আমরা কথা বলব আমরা পরের পর্বে।

This article is written in Bangla, on history of motorcycle.

Featured Image Source: xbhp.com

Related Articles