Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফার্স্ট ফ্লাশ চা: মৌসুমের প্রথম কুঁড়ির অভিজাত স্বাদ

অনেকের কাছে চা যেন খুবই মামুলি একটি বিষয়। গরম পানিতে চা পাতার সাথে দুধ, চিনি, আদা কিংবা লেবু ইত্যাদি মিশিয়ে দিলেই যেন হয়ে গেল চা। ওই চায়ের জন্মবৃত্তান্ত দিয়ে আবার কার কী কাজ! কিন্তু প্রকৃত চা-প্রেমীদের কাছে যেন ভুলেও উচ্চারণ করবেন না এসব কথা! চা তাদের কাছে নিছকই কোনো পানীয় নয়, এটি তাদের কাছে একটি শৈল্পিক আয়োজন, এক অপার্থিব অনুভূতি!

এক অপার্থিব অনুভূতি! Image Source: Creative Market

সব অঞ্চলের, সব ধরনের চা-ই তো আর এক নয়। গুণে-মানে চায়ের রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা। কবে, কোথায়, কত ভালো মানের চা পাওয়া যায়, এ নিয়ে চা-প্রেমীদের যেন চিন্তারও শেষ নেই। সেই চিন্তা থেকেই তারা চা-কে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। প্রথমত, বর্ণের ভিত্তিতে, অর্থাৎ সাদা, সবুজ নাকি কালো। এরপর চায়ের শ্রেণীবিভাগ রয়েছে অঞ্চলভেদেও, যেমন চীনা, বাংলাদেশী নাকি ভারতীয় কিংবা শ্রীলঙ্কান। বাদ যায়নি প্রক্রিয়াজাতকরণের পদ্ধতিও। এর ভিত্তিতে আলাদা করা হয়েছে আর্ল গ্রে বা হোয়াইট টি কিংবা জেসমিনের মতো চা-কে।

গুণে-মানে চায়ের রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা; Image Source: Wikimedia Commons

কিন্তু এই সকল শ্রেণীবিভাগকে যদি আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, খোঁজার চেষ্টা করা হয় একদম সর্বোচ্চ স্তরের আকর্ষণীয় চা কোনটি, তাহলে চায়ের শ্রেণীবিভাগ করা হয় ফ্লাশের ভিত্তিতে। দেখা হয়, বছরের কোন সময়টিতে গাছ থেকে তোলা হয়েছে চায়ের পাতা। চায়ের জগতে বিভিন্ন ধরনের ফ্লাশ চা রয়েছে, যাদের প্রত্যেককে স্বতন্ত্রভাবে নির্ধারণ করা হয় চায়ের জন্মস্থান ও সেখানকার পরিবেশ, প্রকৃতি ও ভৌগলিক অবস্থানের মাধ্যমে।

আর চায়ের মধ্যে চা-প্রেমীদের কাছে সম্মানের সোপানে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে যেটি, তার নাম হলো ফার্স্ট ফ্লাশ চা।

ফার্স্ট ফ্লাশ গ্রিন টি; Image Source: theendivechronicles.com

ফার্স্ট ফ্লাশ বলতে বোঝায় চায়ের উৎপাদন মৌসুমের একদম শুরুর সময়টাকে। আর এসময়ে গাছ থেকে যেসব সদ্য জন্মানো চা পাতা তোলা হয়, তাদেরকে বলা হয় ফার্স্ট ফ্লাশ চা। বসন্তের শুরুতে পৃথিবী থেকে শীত যখন সবে বিদায় নিতে শুরু করে, সূর্য যখন তার চিরাচরিত তেজে প্রকৃতিকে উষ্ণতার চাদরে মুড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে, তখন পাহাড়ি এলাকার চা বাগানের গাছগুলোতে একটি-দুটি করে নতুন পাতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে। বসন্তের শুরুর ফলমূল আর শাকসবজির মতোই, এসব চা পাতাও হয়ে থাকে সবচেয়ে কম বয়সী এবং গাছের সবচেয়ে কোমল অংশ। এ সময়ে উত্তোলিত ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের পাতা শুধু কোমল ও পলকাই হয় না; পাশাপাশি এগুলোতে সুগন্ধের ঝাঁজ থাকে অনেক বেশি, পাতাগুলো হয় খুবই ঝরঝরে ও তরতাজা, দেখতেও থাকে অসাধারণ উজ্জ্বল। তাই বিশ্বাস করা হয় যে, এসব চা পাতা থেকেই সম্ভাব্য সবচেয়ে পবিত্র ও তাজা এক কাপ চা বানানো সম্ভব। 

ফার্স্ট ফ্লাশের কথা এলে দার্জিলিং নিয়ে কিছু না বললেই নয়। হিমালয় পর্বতের কোলঘেঁষা দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি উপত্যকার চা বাগানগুলোতে উৎপাদিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ফার্স্ট ফ্লাশ চা। খুবই বিরূপ আবহাওয়া থাকার ফলে, দার্জিলিংয়ে চা উৎপাদন অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ। তাছাড়া ভারতের বার্ষিক মোট প্রয়োজনীয় চায়ের মাত্র এক শতাংশের জোগান দিতে পারে দার্জিলিং। এ কারণেই এই চায়ের এত দাম। আর যেহেতু ফার্স্ট ফ্লাশ চাকে বিবেচনা করা হয় সকল চায়ের সেরা চা, তাই দার্জিলিংয়ের ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের দামও আকাশছোঁয়া।

দার্জিলিংয়ের ফার্স্ট ফ্লাশ চা; Image Source: Tea House Emporium

দার্জিলিংয়ের চা বাগানগুলিতে পাতা তোলার মৌসুম শুরু হয় ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে। আর প্রথম দু’মাসে যে চা পাতা তোলা হয়, সেটাই ফার্স্ট ফ্লাশ। এই চা প্রতিবছর গড়ে দুই মিলিয়ন কেজি তৈরি হয়– যা দার্জিলিং চায়ের মোট উৎপাদনের ২০%। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এই চায়ের খুব কম অংশই ভারতের মানুষের জন্য থাকে। কেননা অন্তত এই চায়ের অন্তত ৮০%-ই উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে রপ্তানী হয়ে যায়। দার্জিলিং ছাড়াও ভারতের আসাম, জাপানের সেনচা ও চীনের হাংজুর লংজিংয়ে বসন্তের শুরুতে উত্তোলিত ফার্স্ট ফ্লাশ চা-ও দারুণ জনপ্রিয়। সাধারণত চাহিদার তুলনায় জোগান অনেক কম থাকে বলে, ফার্স্ট ফ্লাশ চা নির্দিষ্ট কোনো দামে বিক্রি হয় না। বরং মৌসুমের একেবারে শুরুতে উত্তোলিত ফার্স্ট ফ্লাশ চা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয়,  যেখানে প্রতি কিলোগ্রাম চায়ের দাম এমনকি ৩০০ ডলার বা ২০,০০০ রুপি পর্যন্তও হতে পারে!

বাংলাদেশের চা-প্রেমীদের কথা মাথায় রেখেই সেই বিশ্বমানের ফার্স্ট ফ্লাশ চা নিয়ে এবার আসছে হালদা ভ্যালী। দেশের চায়ের বাজারে সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা হালদা ভ্যালী টি কোম্পানির উদ্যোগে বিশ্বখ্যাত হালদা নদীর কিনারার সেই অতুলনীয় চায়ের বাগান থেকে আসছে এই চা। মার্চের শেষভাগ থেকেই দেশের বিভিন্ন সুপার শপ ও ই–কমার্স সাইট ছাড়াও হালদা ভ্যালীর ফেসবুক এবং ওয়েবসাইট থেকেও কেনা যাবে ফার্স্ট ফ্লাশ ড্রাগন ওয়েল গ্রিন টি ও ফার্স্ট ফ্লাশ সিলভার নিডল হোয়াইট টি। গুণে আর মানে বিশ্বের সব জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের সাথে আত্মবিশ্বাসের সাথেই পাল্লা দিতে পারবে হালদা ভ্যালীর ফার্স্ট ফ্লাশ চা, কারণ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তারা মেনে চলছেন উৎকর্ষ রক্ষার সর্বোচ্চ মাত্রাটাই।

বিশ্বমানের ফার্স্ট ফ্লাশ চা আনছে হালদা ভ্যালী; Image Source: The Green Teahouse

প্রতিটি ফার্স্ট ফ্লাশ চা পাতাই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এক চা-বাগানের ফার্স্ট ফ্লাশ চা অন্য বাগানের থেকে তো ভিন্নই, এমনকি একই বাগান থেকেও একদিন উত্তোলিত ফার্স্ট ফ্লাশ চা পাতা আগের দিন বা পরের দিনের থেকে ভিন্ন হয়।

পাতাগুলোতে যেন বসন্তকালীন সৌরভ বিদ্যমান থাকে, এজন্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে সেগুলোকে কম জারিত করা হয়। শুকানোর পরই তাদেরকে বাজারজাতকরণের জন্য প্রস্তুত করা হয়। সাধারণ চা পাতার চেয়ে এই পাতাগুলোকে একটু বেশি সবুজ দেখায়।

কীভাবে বানাবেন এই চা? প্রতিটি ফার্স্ট ফ্লাশই ভিন্ন প্রকৃতির, এবং এক্ষেত্রে নির্ভর করে সেটি পৃথিবীর কোন অঞ্চল থেকে এসেছে আর কীভাবে চাষ, উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাত হয়েছে। সেরা স্বাদ ও গন্ধের এক কাপ চা পেতে হলে, চা বিক্রেতার কাছ থেকে ওই চা বানানোর নিয়মাবলি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। অবশ্য প্রায় সব ফার্স্ট ফ্লাশ চা বানানোর ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। চলুন জেনে নিই সেগুলো সম্পর্কে।

প্রতিটি ফার্স্ট ফ্লাশ চা পাতাই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী; Image Source: Cup of Tea Ltd

চায়ের জন্য একদম পরিষ্কার, ফিল্টার করা পানি ব্যবহার করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় বসন্তকালীন পানি ব্যবহার করা হলে। সাধারণ কালো চায়ের চেয়ে ফার্স্ট ফ্লাশ চা কম জারণের মধ্য দিয়ে যায় বলে, এই চাকে অপেক্ষাকৃত অল্প তাপমাত্রায় ফোটাতে হবে, যাতে করে চায়ের স্বাদ তেতো বা কষাটে হয়ে না যায়। সবচেয়ে ভালো হয় এই চা পাতা ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানিতে দুই থেকে তিন মিনিট রাখলে।  

সব ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের তীব্রতা এক হবে না, তবে সাধারণত ২৫০ মিলিলিটার চা বানানোর জন্য দুই গ্রাম চা পাতা নেওয়াই যথেষ্ট। যদি টি-ব্যাগ দিয়ে চা বানাতে হয়, সেক্ষেত্রে এক মিনিট করে এক বা একাধিকবার টি-ব্যাগটিকে গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে, এবং সেই সময় চায়ের কাপটিকে যথাসম্ভব বাইরের আলো-বাতাসের থেকে দূরে রাখতে হবে। এতে করে চা পাতার তিতকুটে ভাব দ্রুত অবমুক্ত হবে।

ফার্স্ট ফ্লাশ চা বানানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়; Image Source: Suki Tea

বেশিরভাগ ফার্স্ট ফ্লাশ চা-ই যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে থাকে, ফলে সেগুলো দুধ ও চিনি সহযোগে পান করা যায়। তবে ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের আদি ও অকৃত্রিম স্বাদ পেতে হলে অন্য কোনো কিছু না মিশিয়েই এ চা পান করা উচিৎ হবে।

কেমন লাগে এই চা পান করতে? ফার্স্ট ফ্লাশ দিয়ে বানানো চায়ে অক্ষুণ্ণ থাকে চা পাতার মনমাতানো প্রাকৃতিক সুগন্ধ। চায়ের কাপের প্রতি চুমুকেই যেন হারিয়ে যাওয়া যায় অন্য কোনো এক জগতে। কিন্তু তাই বলে এই চায়ের তীব্রতা খুব বেশি কড়া বা ঝাঁঝালোও নয়। হালকা কড়া স্বাদের মধ্যেই চায়ের সর্বোচ্চ স্বাদ আস্বাদন করতে চান, এমন চা-প্রেমীদের জন্য ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের তুলনায় শ্রেয়তর বিকল্প আজ অবধি পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি। একারণেই এই চা বিশ্বব্যাপী পরিচিত ‘চা জগতের শ্যাম্পেইন’ হিসেবে। আর মার্চের শেষ ভাগ থেকে কিন্তু দেশেই পাওয়া যাচ্ছে ফার্স্ট ফ্লাশ ড্রাগন ওয়েল গ্রিন টি ও ফার্স্ট ফ্লাশ সিলভার নিডল হোয়াইট টি। চা-রসিকেরা নিশ্চয়ই আস্বাদন করতে ভুলবেন না এর অতুলনীয় স্বাদ! বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুনwww.haldavalley.com

This article is written in Bangla, on First Flush tea by Halda Valley Tea Estate.

Featured Image Source: Dabur

Related Articles