Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অগ্রযাত্রা: কেস স্টাডিতে উপায়

আগে যেমন মানুষের ঘরে ঘরে মাটির ব্যাংক থাকত, এখন আমাদের হাতে হাতে থাকে মোবাইল ব্যাংক। গত দুই দশকে বাংলাদেশ নিয়ে সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত শব্দগুলোর তালিকা করলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দদ্বয় নিশ্চিতভাবেই প্রথম সারিতে থাকবে। আর দেশের ডিজিটাল পরিবর্তনে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা রাখছে যে সেক্টরগুলো, তার মধ্যে প্রধানতম হলো, মোবাইল ব্যাংকিং খাত। 

এখন আমাদের হাতে হাতে থাকে মোবাইল ব্যাংক; Image Source: Bloomberg/business-standard.com

একনজরে দেশের মোবাইল ব্যাংকিং

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ১৫টিই ব্যাংক, আর ব্যাংক বহির্ভুত একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ।

এদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু ২০১০ সালে। প্রথম উদ্যোগ ছিলো ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের, এখন যেটি পরিচিত রকেট নামে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই খাতের প্রতিযোগিতায় নাম লেখায় ব্র্যাক ব্যাংক। চালু করে বিকাশ নামক সেবা। আরও কয়েকটি ব্যাংক নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং ব্র্যান্ড চালু করলেও খুব একটা সাড়া পায়নি। উল্লেখযোগ্য কাজ নিয়ে এখন বাজারে বেশ ভালো অবস্থান করছে এরকম সেবার মধ্যে আছে- নগদ ও উপায়। যার মধ্যে নগদ এসেছে ২০১৯ সালে, আর উপায়ের আগমন ২০২১ সালে। 

গেল ১০ বছরে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় এসেছে প্রায় ১০ কোটি গ্রাহক। যার ফলাফল- এই খাতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। সর্বোচ্চ পরিমাণ গ্রাহকসেবার দেওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের শীর্ষ মোবাইল ব্যাংকিং ব্র্যান্ড বিকাশ। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে নগদ। আর অনেকটা সমপরিমাণ গ্রাহক নিয়ে বাজার দখলের প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে রকেট এবং উপায়।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ কেমন করছে, তা বোঝার জন্য একটা ভালো উপায় হতে পারে ‘উপায়’ নিয়ে পর্যালোচনা। এই সেক্টরের নতুনতম ব্র্যান্ড হিসেবে ‘উপায়’ কীভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাচ্ছে এবং কী কী সেবা ও সুবিধা দিচ্ছে- এই বিষয়গুলো আলাপ করা যেতে পারে এই উদ্দেশ্যে।

উপায়-এ কী কী আছে?

উপায়-এর প্রধান আকর্ষণ হলো, তুলনামূলক কম খরচে ক্যাশ আউট এবং চার্জবিহীন ক্যাশ ইন ও সেন্ড মানি সুবিধা। রাজধানীসহ দেশের সব জেলাতে এই প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট কিংবা আউটলেট আছে। স্মার্টফোন দিয়ে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাশ আউট করতে চার্জ দিতে হয় প্রতি হাজারে মাত্র ১৪ টাকা। একইভাবে যেকোনো সাধারণ ফোন থেকে USSD পদ্ধতি ক্যাশ আউট করলেও একই পরিমাণ চার্জ পরিশোধ করতে হয়। দেশের অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবার তুলনায় এই চার্জ সাশ্রয়ী, একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। 

ক্যাশ আউটের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা হিসেবে উপায় দিচ্ছে যেকোনো ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে উপায় অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা উত্তোলনের সুবিধা। প্রতি হাজারে মাত্র ৮ টাকা চার্জ দিয়ে এভাবে ক্যাশ আউট করা যায়। 

এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস, ইন্টারনেট, টিভি ক্যাবল সংযোগের বিল পরিশোধের সুবিধা রয়েছে উপায়ে। এসবের জন্য বাড়তি কোনো চার্জ দিতে হয় না। এছাড়া রেমিট্যান্সের অর্থ আনতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে উপায়। বিদেশ থেকে আসা অর্থ উত্তোলনে চার্জ দিতে হয় প্রতি হাজারে মাত্র ১০ টাকা। সঙ্গে সরকারের দেয়া ২ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধাও পাচ্ছেন গ্রাহক। 

উপায় দিচ্ছে যেকোনো ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে উপায় অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা উত্তোলনের সুবিধা; Image Source: bankrate.com

সারাদেশের মানুষের জন্য উপায়-এর সবচেয়ে ভিন্নধর্মী ফিচার হলো, ইন্টারনেট ডেটা ছাড়াই অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ। উপায়-এর অ্যাপ দিয়ে অন্য ব্যাংকের একাউন্টে টাকা পাঠানোর জন্য ফান্ড ট্রান্সফার, অন্য ব্যাংক থেকে টাকা আনার জন্য ‘অ্যাড মানি’ সুবিধার পাশাপাশি আছে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের সুযোগ। ট্রাফিক ফাইনের অর্থ পরিশোধ সেবায়ও বেশ এগিয়ে এই মোবাইল ওয়ালেট। এছাড়া অনলাইন কেনাকাটা, হোটেল বিল পরিশোধ, এবং জমি সংক্রান্ত বিল পরিশোধেও সুবিধাও পাওয়া যায় উপায়-এর মাধ্যমে।

উপায়-এর গ্রাহক বাড়ছে কেন?

সেবায় নতুন হলেও উপায়-এর দ্রুত গ্রাহক বাড়ার কারণ কী? সম্ভবত এর অন্যতম প্রধান কারণ, উপায়-এ বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক- ইউসিবির বিনিয়োগ। ইউসিবির পরিচালনা পর্ষদের ওপর আস্থা; সুনাম এবং লেনদেনে নিরাপত্তা বিবেচনায় মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা উপায়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন দেশের মানুষ। প্রায় ৪ দশক ধরে দেশে ব্যাংকিংয়ের অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা আরও সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ব্যাংকটি।

কোনো সংকট আছে কি? 

এত সুবিধার পাশাপাশি কিছু সংকট যে নেই তা নয়। গ্রাহক শ্রেণীভিত্তিক সেবা নির্ধারণের কারণে দেশের সব শ্রেণীর মানুষের ব্যাংক হয়ে উঠতে পারেনি ইউসিবি। তাই তাদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অনেকেই হয়তো ঠিকমতো জানে না।

আরেকটি জরুরি বিষয় হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য ব্র‍্যান্ডের তুলনায় অফারের দিক থেকেও অনেকটাই পিছিয়ে উপায়। তুলনামূলক কম খরচে ক্যাশ আউটের সুযোগ থাকলেও অনলাইন বা অফলাইন কেনাকাটায় খুব একটা ছাড় দেয় না ইউসিবির এই সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে ছাড় বা ক্যাশব্যাকের মতো অফার বিভিন্ন খাতে গ্রাহক বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছাড় বা অফার কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য খরচ নয়; বরং দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগ।

সম্ভাবনার কেবল শুরু

তবে উপায়-এর এই কয়েকটি বিষয় থেকে একটি জিনিস বোঝা যায় খুব ভালোভাবে, তা হলো, যা কিছু সমস্যা আছে তার সমাধান করা খুবই সহজ, কারণ মূল যে সেবা, সেটা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট ভালোভাবে দিতে শুরু করেছে তারা। গ্রাহক পর্যায়ে প্রচারণা কিছুটা বাড়ালে এবং কিছু আকর্ষণীয় অফার নিয়ে এলে দ্রুতই আরও প্রসারিত হবে উপায়-এর নেটওয়ার্ক।

বাড়ছে উপায়-এর গ্রাহক; Image Source: UPAY 

উপায়-এর মতো সেবা যত বেশি মানুষের কাছে যাবে, ততই মানুষ আরও বেশি প্রযুক্তির সুবিধাগুলো পাবে, ডিজিটাল বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবে আরও নতুন সব ফিচার থেকে। এবং সেইসাথে, উপায়-এর মতো করেই আরও এগিয়ে যাবে দেশের মোবাইল ব্যাংকিং খাত। হাতে হাতে থাকা ব্যাংক নিয়ে নিশ্চয়ই জীবনের নানান মুহূর্তকে আরও সুন্দর করে উপভোগ করবে মানুষ।

Related Articles