Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মনীষা বেহাল: একাই যিনি বদলে দিয়েছেন নাগাল্যান্ডের অনেক নারীর ভাগ্য

ইউএন উইমেন-এর সহযোগিতায় এম জি মোটর ইন্ডিয়া এবং দ্য বেটার ইন্ডিয়া-র যৌথ প্রয়াস ‘চেঞ্জমেকার্স’ আপনাদের সামনে তুলে ধরছে সেই সমস্ত কৃতী নারীদের কাহিনী যারা তাদের অদম্য মনের জোরে ও ইচ্ছায় অসংখ্য মানুষের জীবনেও এনেছেন এক ইতিবাচক পরিবর্তন।

আমাদের এই পর্বের নায়কের নাম মনীষা বেহাল- খ্যাতিমান নারী অধিকার কর্মী।  যিনি ভারতের উত্তরপূর্ব অঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়নের জন্যে জীবনের একটি বড় অংশ উৎসর্গ করেছেন।

উত্তরপূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের ফেক জেলায় অবস্থিত চিজামির গ্রামের নাম এমনিতে খুব একটা শোনা যায় না। কিন্তু আর্থসামাজিক এবং পরিবেশগত সংরক্ষণের দিক থেকে চিজামির গত এক দশক ধরে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে এবং উন্নয়নের মডেল হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আশেপাশের অন্যান্য গ্রাম, এমনকী, রাজ্যের রাজধানী কোহিমা থেকেও কমবয়সী ছেলেমেয়েরা সেখানে ইন্টার্নশিপ করার জন্যে ভিড় জমাচ্ছে।

চিজামির উন্নয়ন মডেল আজ এক বড় ইতিবাচক পদক্ষেপ

চিজামির এই উন্নয়নের মডেলের তাৎপর্য হচ্ছে যে এর মাধ্যমে সমাজের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলারা একজোট হয়ে ঝাঁপিয়েছেন গ্রামটির উত্থানের জন্যে। স্বাস্থ্য, নারীর অধিকার, সাম্প্রদায়ভিত্তিক কর্মসূচিপালন, খাদ্য সুরক্ষা, পরিবেশরক্ষা ইত্যাদি নানা বিষয়ের উপরে জোর দিয়ে দিন দিন আরও দৃঢ় হয়েছে চিজামির উন্নয়ন মডেল।

কিন্তু চিজামির মতো একটি অখ্যাত গ্রাম, যেখানে মাত্র হাজার তিনেক মানুষের বাস, সেখানে এই অভিনব পরিবর্তনটি সম্ভব হল কীভাবে?

সেটা জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যখন নারী অধিকার কর্মী এবং নর্থ ইস্ট নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা মনীষা বেহাল নাগাল্যান্ডের মহিলাদের স্বাস্থ্যোন্নয়নের জন্যে পা রেখেছিলেন সেই রাজ্যে।

মনীষা বেহাল; Image Source: picssr

মনীষাদেবী লক্ষ্য করেছিলেন নাগা সমাজে নারীদের ঐক্যের জোর এবং নাগাল্যান্ডের সেই সময়কার শোচনীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি সেই জোরটিকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন।

সেনো সুহার সঙ্গে জোট বেঁধে আরও বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন মনীষা

নিজের লক্ষ্যের দিকে যখন মনীষা এগোতে শুরু করেছেন, তখন তার পরিচয় ঘটে চিজামি উইমেনস সোসাইটির প্রতিনিধি সেনো সুহার সঙ্গে- ফেক জেলারই ফুটসেরো শহরে অনুষ্ঠিত একটি ওয়ার্কশপে। ওয়ার্কশপটি অনুষ্ঠিত হয় সংগঠন তৈরী, জন্মহার এবং স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ের উপরে জোর দেওয়ার জন্যে।

পেশায় একজন সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা সেনোর সঙ্গে মনীষার সম্পর্ক এরপর আরও ঘনিষ্ঠ হয় এবং পরবর্তীকালে তারা নর্থ ইস্ট নেটওয়ার্ক-এর নাগাল্যান্ড শাখা শুরু করার পাশাপাশি চিজামির অবস্থার রাতারাতি পরিবর্তন করার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা পালন করেন। এই একই সময়ে নাগাল্যান্ডের ছয় দশক দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামও শেষ হয়ে আসছিল। মনীষা এবং সেনো বুঝেছিলেন যে এই সময়ে তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল যুবশক্তির ক্ষমতায়ন, যার মাধ্যমে একটি বড়সড় আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।

মনীষা এবং সেনো প্রথমে জোর দেন স্বাস্থ্য এবং খাদ্যের উপরে এবং পরে মহিলাদের বিভিন্ন স্কিলের প্রশিক্ষণের কাজে মনোনিবেশ করেন। বাঁশের কারুকার্য, ফুড প্রসেসিং, জৈব কৃষিকার্য, কম খরচে স্বাস্থ্যের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি নানা বিষয় তো বটেই, পাশাপাশি প্রশাসন, নারী ক্ষমতায়ন এবং মানবাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে সচেতনতাবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও তারা যত্নবান হন।

নাগাল্যান্ডের নারীরা হতেন বৈষম্যের শিকার; Image Source: lostwith..

দীর্ঘ সময় ধরে পরিশ্রমের পরে অবশেষে আসে সুফল

মনীষা এবং সেনোর এই উদ্যোগ বৃথা যায়নি। আট বছর ক্রমাগত পরিশ্রম করার সুফল তাদের মেলে হাতেনাতে। ২০১৪ সালে গ্রামীণ অদক্ষ কৃষি ক্ষেত্রে মহিলা শ্রমিকদের পুরুষের সমান বেতন পাওয়ার অধিকার দেওয়া হয় গ্রামের পরিষদের পক্ষ থেকে এবং ২০১৬ সালে নাগাল্যান্ডের ফেক জেলারই অন্তর্গত এনহুলুমি গ্রামীণ পরিষদের সদস্য হিসেবে দুই মহিলার অন্তর্ভুক্তি হয়।

মনীষাদেবী অবশ্য এখানেই থেমে থাকেননি। ‘চিজামি উইভস’ নামক একটি বিকেন্দ্রীকৃত জীবিকা নির্বাহের প্রকল্পও চালু করেন তিনি যার দ্বারা নাগাল্যান্ড রাজ্যের সুখ্যাত বস্ত্রশিল্পের সংরক্ষণের পাশাপাশি জেলার প্রান্তিক মহিলাদের জন্য রোজগারের একটি দীর্ঘমেয়াদি উৎসকেও চিহ্নিত করা যায়।

পরিবর্তিত হয়েছে নারীদের ভাগ্য; Image Source: facebook

মাত্র সাতজন বয়নশিল্পীকে নিয়ে শুরু হওয়া ‘চিজামি উইভস’-এর সঙ্গে বর্তমানে ফেক জেলার দশটি গ্রামের তিনশোরও বেশি মহিলা জড়িত। তাদের বিভিন্ন হস্তশিল্পের চাহিদা আজ দেশের বড় বড় শহর যেমন নয়াদিল্লি, কলকাতা, বেঙ্গালুরু এবং মুম্বইতেও তৈরী হয়েছে।

মনীষাদেবীর উদ্যোগে তৈরী হওয়া এই প্রকল্পটি আজ ওই অঞ্চলের লিঙ্গ সাম্যের ধারণাটাই যে বদলে দিয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ‘চিজামি উইভস’-এর বয়নশিল্পীরা আজ তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য তো করছেনই, পাশাপাশি স্বাস্থ্য, রোজগার এবং পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা নিজেদের উপস্থিতিরও জানান দিচ্ছেন যথেষ্ট জোরের সঙ্গে। সার্বিক ক্ষমতায়ন না হলে এই ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব হতো না। 

মনীষা বেহাল হয়ে উঠেছেন প্রান্তিক নারীদের কণ্ঠস্বর; Image Source: twitter

মনীষাদেবী এবং তার মতো উদ্যোগী আরও অনেকের জন্যে আজ চিজামির নারী ক্ষমতায়নের কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। একদিকে যেমন দীর্ঘমেয়াদি জীবিকা নির্বাহের পথ দেখিয়েছে এই গ্রামের উন্নয়নের মডেল, তেমন অন্যদিকে সাবেকি খাদ্য ব্যবস্থা এবং কৃষিকর্মের গুরুত্বও পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নাগাল্যান্ডে। নর্থ ইস্ট নেটওয়ার্ক আজ সমস্ত নাগাল্যান্ডে উন্নয়ন এবং পরিবর্তনের প্রতীক এবং এর জন্য যাবতীয় কৃতিত্ব প্রাপ্য মনীষা বেহালের যিনি তার অধ্যাবসায় এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে সত্যিই বদলে ফেলেছেন বহু অখ্যাত মানুষের ভাগ্য।

ইউএন উইমেন-এর পূর্ণ সহযোগিতায় এম জি মোটর ইন্ডিয়া এবং দ্য বেটার এবং দ্য বেটার ইন্ডিয়া ভারতের সেই সমস্ত কৃতী নারীদের সম্মান জানাচ্ছে যারা ভারতের সেই সমস্ত কৃতী নারীদের সম্মান জানাচ্ছে যারা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে বিশ্বের সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে দেশকে এক সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

এই মহৎপ্রয়াসে আপনিও সামিল হতে আগ্রহী? পেটিএম বা ব্যাঙ্ক মারফত করতে চান আর্থিক অনুদান? বিশদে জানতে ক্লিক করুন এখানে

এম জি মোটর ইন্ডিয়া সম্পর্কে আরও জানতে তাদের ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম পেজগুলি দেখুন।

Related Articles