Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সুধা ভার্গিস: যে নারী সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের কল্যাণে

মহাত্মা গান্ধীর ‘হরিজন’দের প্রতি একনিষ্ঠতার কথা আমরা সবাই জানি। জাতির জনকের মন্ত্রে অনুপ্রেরণা পেয়ে পরবর্তীকালে ভারতের আরও অনেক গান্ধীবাদীই সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের সেবায় ব্রতী হয়েছেন। আজকের বৈষয়িক দুনিয়ায় মানবসেবার ব্রতের নিদর্শন সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব বেশি শোনা না গেলেও এমন মানুষের অস্তিত্ব নেই বললে ভুল বলা হবে।

ইউএন উইমেন এর সহযোগিতায় এম জি মোটর ইন্ডিয়া এবং দ্য বেটার ইন্ডিয়ার যৌথ প্রয়াস ‘চেঞ্জমেকার্স’ আপনাদের সামনে তুলে ধরছে সেই সমস্ত কৃতী নারীদের কাহিনী, যারা তাদের অদম্য মনের জোরে ও ইচ্ছায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের তো বটেই, পাশাপাশি আরও অসংখ্য মানুষের জীবনেও এনেছেন এক ইতিবাচক পরিবর্তন। আজ আমরা বলব এমন একজনের কথা, যিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষের হিতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন আপোসহীনভাবে। যেখানে আমাদের দেশে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষকে বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় রাজনৈতিক খেলার বোড়ে হতে, সেখানে কাউকে সত্যি সত্যি তাদের উন্নয়নে সচেষ্ট হতে দেখলে তাকে কুর্নিশ না করে পারা যায় না।

আমাদের আজকের নায়কের নাম সুধা ভার্গিস। ভারতের অন্যতম বড় পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত সুধা দেশের বিভিন্ন অনগ্রসর সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্যে যে প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন, তার খুব কম নিদর্শনই পাওয়া যায়।

সুধার জন্ম দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের কোট্টায়ামে। গত তিন-তিনটি দশক সুধা বিহারের মুশাহার নামক মহাদলিত সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্যে কাজ করেছেন এবং নিজের এই অক্লান্ত প্রচেষ্টার দ্বারা সেই সম্প্রদায়ের মানুষের- বিশেষ করে মহিলাদের জীবনে কিছুটা হলেও বদল আনতে সফল হয়েছেন।

গত তিন-তিনটি দশক সুধা বিহারের মুশাহার নামক মহাদলিত সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্যে কাজ করেছেন; Image Source: The Globe and Mail

যৌবনে ভারতীয় সমাজের জাতপাতের অভিশাপের সম্পর্কে সুধার সেরকম ধারণা ছিল না। তার বয়স যখন উনিশ-বিশের কোঠায়, তখন সুধা প্রথম পা রাখেন বিহার রাজ্যের মাটিতে এবং তখন থেকেই শুরু জাতপাত সম্পর্কে তার যাবতীয় জ্ঞানপ্রাপ্তি।

জাতপাতের ভয়ঙ্কর রূপ সুধা প্রথম দেখলেন বিহারে

জাতপাত সম্পর্কে আমার কোনও ধারণাই ছিল না আগে। বৈষম্য বা অস্পৃশ্যতা কাকে বলে তা আমি প্রথম জানলাম মুশাহারদের দেখে। মূষিক আহার করে বেঁচে থাকা এই সম্প্রদায়কে দেখে আমার মনে হয়েছিল যে জীবনে ন্যূনতম সম্মানটুকু এদেরও প্রাপ্য। আমি ঠিক করলাম এদের জন্যে কিছু করতেই হবে। এদের সঙ্গে এদের বস্তিতে, এদের মাটির ঘরে থাকতে শুরু করলাম। এদের অধিকারের জন্যে, জীবনে ইতিবাচক বদল আনার জন্যে শুরু করলাম আমার সংগ্রাম।

সত্তর ছুঁই-ছুঁই সমাজকর্মী সুধা জানালেন সন্তোষপূর্ণ গলায়।

তবে সুধার এই লড়াই সহজ ছিল না। একে তো ছিল ভাষার মতো সামাজিক বাধা; তার উপরে আইনি প্যাঁচঘোঁচ। কিন্তু সুধা দমেননি। একে একে ভাষার বাধা ও পরে পড়াশোনা ও ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে তিনি আইনি দিকটি করায়ত্ত করেন মুশাহারদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে।

“মূষিক আহার করে বেঁচে থাকা এই সম্প্রদায়কে দেখে আমার মনে হয়েছিল যে জীবনে ন্যূনতম সম্মানটুকু এদেরও প্রাপ্য”; Image Source: The Straits Times

তার অবিচল লক্ষ্যে সফল হতে গড়লেন মঞ্চ, মেয়েদের স্কুল

১৯৮৭ সালে সুধা তৈরি করেন তার নিজস্ব অলাভজনক সংস্থা ‘নারী গুঞ্জন’, যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দলিত নারীদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে শেখানো। বিহারের রাজধানী পাটনার উপকণ্ঠে সুধা ‘প্রেরণা’ নামে একটি মেয়েদের একটি আবাসিক বিদ্যালয়েরও প্রতিষ্ঠা করেন, ২০০৫ সালে। এই বিদ্যালয় গঠনের প্রধান লক্ষ্য ছিল চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত মেয়েদের শিক্ষাদান। সুধার এই কাজে অত্যন্ত খুশি হয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার তাকে গয়াতে ‘প্রেরণা’র দ্বিতীয় শাখা খুলতে অনুরোধ করেন।

বর্তমানে ‘প্রেরণা’র দুই শাখার প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী হিসেবে ৩,০০০ মেয়ে পড়াশোনা করছে। পাশাপাশি, ‘নারী গুঞ্জন’-এর প্রচেষ্টায় গ্রামের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা, নাচ, গান, কলা নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, এমনকি বিদেশেও নিজেদের সুপ্ত প্রতিভার পরিচয় রেখেছে। বিহার রাজ্যের পাঁচটি জেলায় সাড়ে আটশো স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে কাজ করে ‘নারী গুঞ্জন’। তাদের বিভিন্ন কাজের মধ্যে পড়ে শিক্ষাদান, অঙ্গনওয়াড়ি পরিচালনা এবং স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের সমস্যার দেখভাল করা।

দলিত নারীদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে শেখাচ্ছেন সুধা; Image Source: Allison Joyce

শুধু পড়াশোনা নয়, মন দিলেন দলিত মহিলাদের স্বনির্ভরতার দিকেও

তবে সুধা শুধুমাত্র মেয়েদের শিক্ষাদানেই ক্ষান্ত থাকেননি। তারা যাতে রোজগার করে নিজেরদের পায়ে দাঁড়াতে পারে, তার প্রতিও যত্নবান হয়েছেন তিনি। সুধা বলেন,

বিকল্প রোজগারের পথ হিসেবে আমরা পশুপালন শুরু করেছি। তাছাড়া, আজ আমাদের এখানে সাড়ে সাতশো পরিবার তাদের নিজেদের বাগানে সবজি-আনাজ ফলিয়ে উদ্বৃত্ত উৎপাদন বিক্রি করেও স্বনির্ভর হচ্ছেন।

পশুপালন এবং চাষের কাজ ছাড়াও ‘নারী গুঞ্জন’-এর পক্ষ থেকে একটি সস্তা স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রস্তুতকারক সংস্থাও চালানো হয়।

মানবকল্যাণে সুধার এই প্রচেষ্টা সমাদর পেয়েছে সব স্তরেই। তিনি ভারতের চতুর্থ শ্রেষ্ঠ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হন ২০০৬ সালে। গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে তিনি পান ভনিতা উইম্যান অফ ইয়ার এওয়ার্ড।

সুধা ভারতের চতুর্থ শ্রেষ্ঠ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হন ২০০৬ সালে; Image Source: PatnaBeats

আজ এতদিন পরেও সুধা নিজেও রয়ে গিয়েছেন মাটির কাছাকাছিই। রোজ সকালে নিজের সাইকেলটিতে চড়ে যান তার সমাজসেবার লক্ষ্যে; ভাবেন মুশাহারদের ভালোর জন্যে আর কী করতে পারেন। আশাবাদী সুধার ভাষায়,

যতদিন কাজ করে যেতে পারব, ততদিন পর্যন্ত বদলের স্বপ্ন দেখে যাব।

ইউএন উইমেন এর পূর্ণ সহযোগিতায় এম জি মোটর ইন্ডিয়া এবং দ্য বেটার ইন্ডিয়া ভারতের সেই সমস্ত কৃতী নারীদের সম্মান জানাচ্ছে, যারা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে বিশ্বের সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে দেশকে এক সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। 

এই মহৎ প্রয়াসে আপনিও কি শামিল হতে আগ্রহী? পেটিএম বা ব্যাঙ্ক মারফত করতে চান আর্থিক অনুদান? বিশদে জানতে ক্লিক করুন এখানে

এম জি মোটর ইন্ডিয়া সম্পর্কে আরও জানতে দেখুন তাদের ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম পেজগুলি।

Related Articles