Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অন্তত ক্রিকেটে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে চায় আফগানিস্তান

প্রতিপক্ষ বলতে বরাবরই আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে আর স্কটল্যান্ড। ভাগ্য খুব ভালো থাকলে বছরে দুয়েকবার বাংলাদেশ সফর। আর আইসিসিরর টুর্নামেন্ট থাকলে বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলে ‘তাক লাগিয়ে’ দেওয়া। এই হলো আফগানিস্তানের অবস্থা। অথচ সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দলটি বাংলাদেশকে টেস্টে হারিয়ে সাদা পোশাকে নিজেদের প্রথম উদযাপনের পর থেকেই টের পাচ্ছে, আরও উপরে উঠতে হলে বড় দলের বিপক্ষে খেলা ছাড়া গতি নেই।

যুদ্ধবিধস্ত একটি দেশ কেবল শরণার্থী শিবির থেকে উঠে এসে যেভাবে ক্রিকেট বিশ্বকে বারবার অবাক করছে, তাতে বুঝতেই হবে, এশিয়ার নতুন ক্রিকেট পরাশক্তি তৈরি হতে খুব একটা দেরি নেই। তবে এই পরাশক্তি হতে হলে নিয়মিত আইসিসির পূর্ণ সদস্যদের বিপক্ষে খেলা ছাড়াও উপায় নেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের পর জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনালে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টস না হওয়ায় যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটির অধিনায়ক রশিদ খান মনে করেন, নিয়মিত ও লম্বা বাংলাদেশ সফর, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোর বিপক্ষে আরও বেশি ম্যাচ খেলতে পারা; এগুলোই তাদেরকে তিন ফরম্যাটে এগিয়ে নেবে। নিজেদের ক্রিকেট ‘উইশলিস্টে’ এগুলোই রাখতে চায় আফগানিস্তান ক্রিকেট দল।

ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি ভাগাভাগি করে নিচ্ছে বাংলাদেশ ও  আফগানিস্তান; Image Source: Getty Image

মাত্র শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি ও বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ জেতে আফগানিস্তান। বৃষ্টি না হলে ফাইনালে কী হতো, সেটা টি-টোয়েন্টি বলেই মন্তব্য করা কঠিন। বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও ম্যাচ খেলতে পারলে নিজেদের অবস্থান আরও ভালো হবে বলে মনে করে আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা। কিন্তু বর্তমান ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম (এফটিপি) বলছে, বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে ২০২২ সালে। সেখানে রয়েছে মাত্র তিনটি ওয়ানডে আর দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। আগামী তিন বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের কোনো ম্যাচ নেই। কেবল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডের একটি সিরিজ রয়েছে। ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে আফগানিস্তানের একমাত্র ওয়ানডে সিরিজটি অনুষ্ঠিত হবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা; সুবার বিপক্ষেই কেবল সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটেই খেলবে আফগানিস্তান।

রশিদ খান; Image Source: Rashid khan

সবকিছু মিলিয়ে আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান বলেছেন,

‘আমাদের উচিত বাংলাদেশের সাথে আরও বেশি সিরিজ খেলার। যেহেতু আমরা ৫০ ওভার ও টেস্টের দিকে বেশি নজর দিচ্ছি।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এই লেগ স্পিনার আরও বলেন,

‘আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের এই ব্যাপার নিয়ে আরও ভাবা উচিত। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হতে পারে। যেহেতু এই ফরম্যাটটা (টেস্ট) আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা, তাই আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। ৫০ ওভার ও টেস্ট; দুটোই দুই জাতির (আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ) ভালো হবে।’

তিনি জানান, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের বেশি ম্যাচ খেলতে হয়। সেখানে ভালো ফাস্ট বোলারের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ খুব কমই থাকে বলা যায়। যে কারণে বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েও অভিজ্ঞতার কারণে খুব ভালো করা যায় না। তিনি সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ডগুলোকে; বিশেষ করে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেন টি-টোয়েন্টির চেয়ে সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের বিপক্ষে আরও বেশি ওয়ানডে সিরিজের আয়োজন করার।

চট্টগ্রাম টেস্টে রশিদের উদযাপন; Image Source: BCB

রশিদ বলেন,

‘আমরা গেল পাঁচ বছরে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র দুইবার খেলেছি (সবগুলোই বিশ্বকাপের মাঠে)। আমরা যদি তাদের বিপক্ষে আরও বেশি খেলতে পারতাম, তাদের শক্তি ও দুর্বলতাগুলো জানতে পারতাম; মাঠে কাজে লাগাতে পারতাম। এটা নিয়ে চিন্তা করা উচিত।

এখানে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ বাংলাদেশ। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনেক বেশি ম্যাচ খেলেছে। যে কারণে বিশ্বকাপে সেই ফলও তারা পেয়েছে। আমরা যদি ভালো দল হতে চাই, শক্তিশালী হতে চাই তাহলে উপরের সারির দলগুলোর বিপক্ষে আরও বেশি ম্যাচ খেলতে পারতে হবে। চার বছরে একটি নয়। এসব দলগুলো মাঠে চারজন করে ফাস্ট বোলার নামিয়ে থাকে যাদের গড় গতি ১৪০ কিলোমিটারের উপরে। আমরা কেবল স্কটল্যান্ড আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই খেলি। তাদের এমন বোলার খুব কমই আছে।’

আইসিসির নতুন উদ্যোগ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। সেই ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হতে পারেনি আফগানিস্তান। তা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতা কাজ করছে আফগানিস্তান দলের সবার মধ্যেই। সেখানে সুযোগ পেলে সাদা পোশাকে দলকে আরও ভালো অবস্থানে দলকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো বলে মনে করেন অধিনায়ক রশিদ খান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,

‘আমরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হতে পারবো না। এটা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু আমরা এখন যেটা করতে পারি তা হলো আরও ভালো টেস্ট খেলে আইসিসির সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণিত করা। আবার আমরা এটাও মনে করতে পারি না যে মাত্র তিন টেস্ট খেলা একটা দল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যাবে, খুব ভালো কিছু করবে।’

তিন টেস্ট খেলা আফগানিস্তান ১৯ বছর ধরে টেস্টের মাঠে থাকা বাংলাদেশকে দাঁড়াতেই দেয়নি; Image  Source: BCB

চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে জয় পাওয়া এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করছেন রশিদ। তিন ফরম্যাটেই দলটির অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়া এই ক্রিকেটার সাকিবদের বিপক্ষে একাই নিয়েছেন ১১ উইকেট। ব্যাট হাতে ছিল একটি হাফ সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টিতেও দারুণ অবস্থানে ছিলেন এই লেগি। ফাইনাল ম্যাচের আগে বাকি ম্যাচগুলো মিলিয়ে নিয়েছেন ৬ উইকেট। নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় উইন্ডিজের বিপক্ষে ‘হোম সিরিজ’ এ এখন মনোযোগ দক্ষিণ এশিয়ার এই দলটির। সেখানে তিন ফরম্যাটেই দারুণ কিছু করে দেখানোর অভিপ্রায় তার। চেষ্টা করবেন, ক্যারিবিয়ানদের প্রতিটি ক্ষেত্রেই চাপে রাখতে।

তিনি বলেন,

‘আমি কখনোই কোনো ফরম্যাটে আমার বোলিংয়ে পার্থক্য আনি না। আমি চেষ্টা করি সেটা করতে, যেটা আমি আসলেই করতে পারি। আমি আমার বোলিংয়ে কোনো পরিবর্তন আনতে চাই না, আমি মনে করি এটা আমার বোলিংকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমি সবসময় ভাবতাম, টেস্টে এমন একটা সময় আসবে যখন আমি টানা ২৫ ওভার বল করে কোনো উইকেট পাবো না। আবার এক ওভারে তিন উইকেট তুলে নেবো। নিজের উপর বাড়তি চাপ নিয়ে আসার চেয়ে আমি মনে করি মানসিকভাবে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকাটাই উত্তম।’

মাত্র ৩ টেস্টে ২০ উইকেট তুলে নেওয়া রশিদ খান জানিয়েছেন, দুই স্পিন গ্রেট মুত্তিয়া মুরালিধরন ও শেন ওয়ার্নের পরামর্শেই তিনি আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছেন। তারা তাকে পরামর্শ দিয়েছেন, কখনোই স্লোয়ার বল করবে না এবং বোলিংয়ে পরিবর্তন আনবে না।

একাই ১১ উইকেট নেওয়ার পর রশিদ খান; Image Source: BCB

রশিদের ভাষায়,

‘আমি মুত্তিয়া মুরালিধরন ও শেন ওয়ার্নকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কীভাবে তারা টেস্ট ম্যাচের জন্য নিজেদেরকে মানসিকভাবে তৈরি করতেন। এই দুই সুপারস্টার আমাকে বলেছিলেন আমার ইজেকে পরিবর্তন না করতে। যতটা পারা যায় সব পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে বলেছেন। সবসময় বোলিংয়ের লেন্থ এবং গতির দিকে নজর দিতে বলেছেন। তাদের পরামর্শ, স্পিন বল যত দ্রুতগতির হবে, ততই ব্যাটসম্যান ভুল করবে।

ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে আফগানিস্তান দল। ক্রিকেটে বহু আগেই নজর কেড়েছে টি-টোয়েন্টি দিয়ে। ওয়ানডের পর এখন টেস্টে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে দারুণভাবে। আইসিসি যতই ব্যাপারটা বুঝতে পারবে, আফগানিস্তানের ক্রিকেটের জন্য ততই তা সুদিন ডেকে আনবে।

ক্রিকেট সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন এই বইগুলো:

১) বিশ্বকাপ ক্রিকেট
২) ক্রিকেট অভিধান

This is an article based on Afganistan cricket team. This is about how they are improving in their test arena. All necessay link has been hyperlinkd. 
Feature Photo: BCB 

Related Articles