Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এশিয়া কাপের যত ফাইনাল

আজ দুবাইতে অনুষ্ঠিত হবে ১৪তম এশিয়া কাপের ফাইনাল। সে হিসেবে এর আগে ১৩টি ফাইনাল হওয়ার কথা, কিন্তু ফাইনাল হয়েছে ১২টি। কারণ, প্রথম আসরে কোনো ফাইনাল ছিলো না। আজকের ফাইনাল শুরুর আগে আমরা দেখে নিই আগের ১২টি ফাইনালের গল্প। 

পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা, কলম্বো, ১৯৮৬

এটা এশিয়া কাপের দ্বিতীয় আসর হলেও বাস্তবিক অর্থে প্রথম ফাইনাল ছিলো। পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এই ফাইনাল জয়ের আনন্দ করেছিলো স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের খুব অল্প সময়ের সঙ্গী কৌশিক আমালিয়ান এই ম্যাচে পাকিস্তানের ব্যাটিংকে ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন। আগে ব্যাটিং করা পাকিস্তান মাত্র ১৯১ রান করতে পেরেছিলো ৯ উইকেট হারিয়ে। জাভেদ মিঁয়াদাদ বিপরীত স্রোতে দাঁড়িয়ে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন, আমালিয়ান নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।

জবাবে অরবিন্দ ডি সিলভা ও অর্জুনা রানাতুঙ্গার দুই ফিফটিতে ৭.৪ ওভার ও ৫ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। ব্রেন্ডন কুরুপ্পু ও রোশান মহানামা ভালো একটা শুরুও এনে দিয়েছিলেন তাদের।

মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, এশিয়া কাপ ফাইনালের নায়ক; Image Source: AFP

শ্রীলঙ্কা-ভারত, ঢাকা, ১৯৮৮

এবারও ফাইনালে উঠে আসে শ্রীলঙ্কা, তবে প্রতিপক্ষ বদলে যায়। এবার আরেক ফাইনালিস্ট ছিলো ভারত।

আগে ব্যাটিং করা শ্রীলঙ্কা এই ম্যাচে বিপদে পড়ে রান আউটের কারণে। তাদের মিডল অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান রান আউট হয়ে ফেরেন। ফলে ১৭৬ রানে অলআউট হয় রানাতুঙ্গার দল, দুলীপ মেন্ডিস সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন। জবাবে ৪৫ ওভারের ম্যাচে নভোজাত সিং সিধু ও দিলীপ বেঙ্গসরকারের ইনিংসে ভর করে ৭.৫ ওভার খেলা বাকি থাকতে লক্ষ্যে পৌঁছায় ভারতীয়রা। সিধু ৭৬ রান ও ভেংসরকার ৫০ রানের ইনিংস খেলেন।

শ্রীলঙ্কা-ভারত, কলকাতা, ১৯৯১

আবারও সেই শ্রীলঙ্কা-ভারত ফাইনাল। এবার খেলাটা হচ্ছিলো ভারতে। এবারও ভারতকে আটকাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।

আগে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কা ৯ উইকেটে ২০৪ রান তুলতে পারে। অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা সর্বোচ্চ ৪৯ রানের ইনিংস খেলেন, এছাড়া আশাঙ্কা গুরুসিংহা ৩৯ রান করেন। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে দাঁড়ানো কপিল দেব দারুণ বোলিং করেন, ৩১ রানে নেন ৪ উইকেট।

জবাবে ভারতও ৩০ রানেই হারিয়ে ফেলেছিলো দুই ওপেনারের উইকেট। কিন্তু সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, শচীন টেন্ডুলকার এবং অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের ইনিংসে ভর করে ৩ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছায় ভারত। মাঞ্জরেকার ৭৫ রান, টেন্ডুলকার ৫৩ রান এবং আজহারউদ্দীন ৫৪ রান করেন।

শ্রীলঙ্কা-ভারত, শারজাহ, ১৯৯৫

আরব আমিরাতে প্রথম এশিয়া কাপ। কিন্তু তাতেও টুর্নামেন্টের ভাগ্য বদলালো না। সেই শ্রীলঙ্কা ও ভারত খেললো ফাইনালে। আবারও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ভারত শিরোপা জিতলো।

আগে ব্যাটিং করা শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে ২৩০ রান তুলেছিলো। সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেছিলেন আশাঙ্কা গুরুসিংহা, ভারতের পক্ষে অনিল কুম্বলে ও ভেঙ্কটেশ প্রসাদ ২টি করে উইকেট নেন। জবাবে খেলতে নেমে আবারও ফাইনালে ভালো খেলেন টেন্ডুলকার ও আজহারউদ্দীন। মাত্র ৯ রান করেই ওপেনার প্রভাকর আউট হয়ে যাওয়ার পর টেন্ডুলকার ৪১ রান ও সিধু ৮৪ রান করেন। তবে জয়টা আসে আজহারের ৮৯ বলে ৯০ রানের ইনিংসে ভর করে।

আশাঙ্কা গুরুসিংহা; Image Source: dhakatribune.com 

ভারত-শ্রীলঙ্কা, কলম্বো, ১৯৯৭

দুই ফাইনালিস্টের নামে কোনো বদল নেই, তবে এই প্রথম ভারতকে ফাইনালে হারাতে পারলো শ্রীলঙ্কা। এটা ছিলো শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় এশিয়া কাপ জয়।

শচীন টেন্ডুলকারের নেতৃত্বে এবার এশিয়া কাপে এসেছিলো ভারত। আগে ব্যাটিং করা টেন্ডুলকারের দল ৭ উইকেটে ২৩৯ রান করতে পেরেছিলো। টানা তৃতীয় এশিয়া কাপ ফাইনালে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেন আজহারউদ্দীন। সৌরভ ৩৪ রানের এক ইনিংস খেলে শুরু করেছিলেন। এরপর মিডল অর্ডারে টেন্ডুলকারের ৫৩ রান ও আজহারের ৮১ রান পথ দেখায় ভারতকে। জবাবে সনাথ জয়াসুরিয়া ও মারাভান আতাপাত্তুর উদ্বোধনী জুটিই ভারতকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। জুটিতে তারা ১৩৭ রান যোগ করেন। জয়াসুরিয়া ৬৩ রান করে ফেরেন, আর আতাপাত্তু ৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন। সাথে অধিনায়ক রানাতুঙ্গার ৬২ রানে শ্রীলঙ্কার জয় নিশ্চিত হয়।

পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা, ঢাকা, ২০০০

অবশেষে ভারত ও শ্রীলঙ্কার চক্র থেকে বের হলো এশিয়া কাপের ফাইনাল, আবার ফাইনালে এলো সেই পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এবার শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রথম ট্রফি জিতলো পাকিস্তান।

সাঈদ আনোয়ারের অসাধারণ এক ইনিংসে ভর করে দারুণ শুরু করলো পাকিস্তান। সাঈদ আনোয়ার করলেন ৮৪ রান; এরপর ইনজামাম-উল-হক ৭২ রান ও মইন খান ৫৬ রান করে পাকিস্তানকে এনে দিলেন ৪ উইকেটে ২৭৭ রানের বিশাল পুঁজি।

জবাব দিতে নেমে শ্রীলঙ্কা দ্রুত টপ অর্ডার হারিয়ে ফেললো। কিন্তু মারাভান আতাপাত্তু ও রাসেল আর্নল্ড ভালো একটা চেষ্টা করেছিলেন। রাসেল ৪১ রান করে আউট হয়ে যান, তবে আতাপাত্তু ঠিক ১০০ রান করেন। এটাই ছিলো এশিয়া কাপ ফাইনালের প্রথম সেঞ্চুরি। তারপরও শ্রীলঙ্কা ২৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। পাকিস্তান পায় ৩৯ রানের জয়।

মারাভান আতাপাত্তু, এশিয়া কাপ ফাইনালের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান; Image Source: Associated Press

শ্রীলঙ্কা-ভারত, কলম্বো, ২০০৪

আবারও শ্রীলঙ্কা ও ভারতের ফাইনাল, এবং আবারও কলম্বোতে খেলা। শ্রীলঙ্কা আরও একবার শিরোপা জিতলো।

আতাপাত্তু আরও একটা ফাইনালে বড় ইনিংস খেললেন, যদিও শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ে খুব ভালো করতে পারেনি। তারপরও আতাপাত্তুর ৬৫ রান ও সাঙ্গাকারার ৫৩ রানে ভর করে আগে ব্যাটিং করা স্বাগতিকেরা ২২৮ রান তুলেছিলো। জবাব দিতে নেমে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ছাড়া আর কেউ প্রতিরোধই গড়তে পারেননি। টেন্ডুলকার ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন, কিন্তু ভারত অলআউট হয় ২০৩ রানে।

শ্রীলঙ্কা-ভারত, করাচি, ২০০৮

পাকিস্তানে প্রথম এশিয়া কাপের আসর। তারপরও পাকিস্তান ফাইনাল খেলতে পারলো না, আবারও সেই শ্রীলঙ্কা – ভারত খেললো ফাইনাল। এবারও শ্রীলঙ্কা ১০০ রানের বিশাল জয় পেলো।

আগে ব্যাটিং করা শ্রীলঙ্কাকে শক্ত ভিত গড়ে দেন সনাথ জয়াসুরিয়া, ১১৪ বলে তিনি করেন ১২৫ রান। সাথে তিলকরত্নে দিলশান ৫৬ রান করেন। শ্রীলঙ্কা ২৭৩ রানে অলআউট হয়। জবাবে গৌতম গম্ভীর ও মহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়া কেউ ভারতকে লড়াই করার সুযোগই দিতে পারেননি। গম্ভীর ৬০ ও ধোনি ৪৯ রান করেন, ভারত ১৭৩ রানে অলআউট হয়। শ্রীলঙ্কার সহজ জয় নিশ্চিত হয়। 

ভারত-শ্রীলঙ্কা, ডাম্বুলা, ২০১০

আবারও ভারত-শ্রীলঙ্কা ফাইনাল। এবার শ্রীলঙ্কা থেকে ট্রফি নিয়ে আসে ভারত।

আগে ব্যাট করা ভারত ২৬৮ রান করেছিলো ৫ উইকেটে, দিনেশ কার্তিক ৬৬ ও রোহিত শর্মা ৪১ রানের ইনিংস খেলেন। জবাবে শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৮৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। একমাত্র চামারা কাপুগেদেরা ৫৫ রানের ইনিংস খেলতে পেরেছিলেন। আশীষ নেহরা ৪ উইকেট তুলে নেন।

সাকিব আল হাসান; নায়ক হতে গিয়েও পারেননি; Image Source: Cricinfo

বাংলাদেশ-পাকিস্তান, ২০১২, ঢাকা

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সম্ভবত সবচেয়ে বিষাদময় ম্যাচ ছিলো সেটা। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ ফাইনালে উঠেছিলো বাংলাদেশ, নিশ্চিত জয়ও দেখতে পাচ্ছিলো তারা। কিন্তু মাত্র ২টি রানের ব্যবধানে এশিয়া কাপের ট্রফিটি খোয়াতে হয়েছিলো।

আগে ব্যাট করা পাকিস্তান ৯ উইকেটে ২৩৬ রান তুলেছিলো। ৮ নম্বরে নেমে এখনকার অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানের স্কোরটা বড় করেছিলেন। মাশরাফি, রাজ্জাক, সাকিব ২টি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে তামিমের ৬০ ও সাকিবের ৬৮ রানে দিব্যি পথে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ ব্যাটিং-ধ্বস বাংলাদেশকে রান-বলের হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেয়।

শেষ ওভারে ৯ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ২ বলে ২ রান তুলে নেন রিয়াদ ও রাজ্জাক। তৃতীয় বল ছিল ডট। চতুর্থ বলে রিয়াদ ৩ রান নেন। বাকি ২ বলে দরকার ছিল ৪ রান। এই সময় ৩ রান নিতে গিয়ে রাজ্জাক আবার স্ট্রাইকে চলে যান। পঞ্চম বলে রাজ্জাক বোল্ড হয়ে যান। ষষ্ঠ বলে শাহাদাত হোসেন রাজীব একটিমাত্র রান নিতে পেরেছিলেন।

পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা, ২০১৪, ঢাকা

এশিয়া কাপে এবারের আগে সর্বশেষ ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট ছিলো এটা। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অনেকদিন পর আবার ফাইনাল খেললো।

আগে ব্যাট করা পাকিস্তান ৫ উইকেটে ২৬০ রান করেছিলো। ১৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর মিসবাহ-উল হক ও ফাওয়াদ আলম জুটি করে দলকে ভিত গড়ে দেন। মিসবাহ ৬৫ রান করেন, ফাওয়াদ ১১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। আর শেষ দিকে উমর আকমল ৫৯ রান করেন।

জবাবে শ্রীলঙ্কা দারুণ শুরু করে। কুশল পেরেরা ও থিরিমান্নে ভালো শুরু এনে দেন, পেরেরা ৪২ রান করেন এবং থিরিমান্নে ১০১ রান করেন। এরপর মাহেলা জয়াবর্ধনের ৭৫ রান অনেকটাই জয় নিশ্চিত করে দেয়। ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।

সাব্বির রহমান, বড় স্কোর করেছিলেন শেষ ফাইনালে; Image Source: Daily Star

বাংলাদেশ-ভারত, ২০১৬, ঢাকা

সর্বশেষ এশিয়া কাপের ফাইনাল ছিলো সেটা। এবার এশিয়া কাপটা হয়েছিলো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। এই ফাইনালে বাংলাদেশ অবশ্য তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি।

আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ ১৫ ওভারে ছোট হয়ে আসা ম্যাচে ১২০ রান তুলতে পেরেছিল। সাব্বির রহমান রুম্মন ২৯ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলেন, তবে আসল কাজটা করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি মাত্র ১৩ বলে ৩৩ রানের এক ইনিংস খেলেন। ১৫ ওভারের তুলনায় রানটা যথেষ্ট হলেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। যদিও বাংলাদেশ ৫ রানে তুলে নিয়েছিল রোহিত শর্মার উইকেট, কিন্তু শিখর ধাওয়ান ৬০ রান ও বিরাট কোহলি ৪১ রান করে ম্যাচ বের করে নিয়ে যান।

ফিচার ইমেজ: thedailystar.net

Related Articles