Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সেই সেঞ্চুরি আমার পরিচয়: বুলবুল

বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান- এটা তার একটা প্রতীক। আমিনুল ইসলাম বুলবুল এই প্রতীক নিয়েই ক্রিকেট বিশ্ব ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা সাবেক এই বাংলাদেশি ক্রিকেটার সারাটা সময় খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাটান। আইসিসির উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে তাকে চীন, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে কাজ করতে হয়। মেলবোর্ন থেকে দুবাই চলে ছোটাছুটি।

এর মধ্যে ক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের বর্তমান সময় ও বাংলাদেশ দল নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। বাংলায় সেই সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য। 

প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির পর; Image Source: Herald Sun

বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে পরিচিত হওয়াটা কতটা বিশেষ ব্যাপার?

কখনো কখনো এটা বিব্রতকর। কখনো কখনো আমি গর্ব বোধ করি। কখনো মনে হয়, এত মানুষ সেঞ্চুরি করেছে, আমাকেই কেন প্রথম বলে মনে করা হবে? আমার এক সহকর্মী লর্ডসে নেপাল ও এমসিসির ম্যাচ আয়োজন নিয়ে কাজ করছিলেন। ওখানে তিনি যখন জাদুঘরটায় গেছেন, সাথে সাথে আমাকে কল করেছেন, “শোনো, আমরা তোমার সেই ব্যাটটা দেখেছি, যেটা দিয়ে তুমি সেঞ্চুরি করেছিলে।” এটা আমার জীবনের একটা প্রতীকে পরিণত হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়াতেও আমি যখন রেডিও বা টেলিভিশন অনুষ্ঠানে যাই, ওরা আমাকে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।

সীমিত ওভারের খেলায় বাংলাদেশ এখন বেশ বড় এক শক্তি। এটা নিশ্চয় আপনাকে খুশি করে?

অবশ্যই। তাদের জিততে দেখলে খুশি লাগে। প্রতিপক্ষ তাদের সহজ দল হিসেবে না নিয়ে গুরুত্বের সাথে নিতে দেখলে খুশি লাগে। কিন্তু একইসাথে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। আমরা টেস্টে সেরকম শক্তিধর নই। এটা বাদ দিলে অনেক প্রতিভা এখন উঠে আসছে। আর এটা স্থায়ী হচ্ছে বলেই আমি গর্ববোধ করি। কোনো সন্দেহ নেই যে, বিসিবির বিনিয়োগ কাজে দিচ্ছে। তবে তাদেরকে আরো সামনে তাকানো উচিত। ২০১৫ সাল থেকে যে সাফল্য আসছে, সেটা অসাধারণ কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতার ফসল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিকের ইনিংসটা দেখুন। পাঁচ বছর আগে হলে সে কয়েকটা শট করে আউট হয়ে যেত। কিন্তু এখন সে জানে, তাকে শেষ অবধি থাকতে হবে। সে অভিজ্ঞতাটা দুবাই মল থেকে কিনে আনেনি।

আপনি কখন পুরোপুরি কোচিংয়ে জড়িত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?

২০০৪ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শেষ করার পর। আমি জানতাম কোচিংয়ে আসবো। কিন্তু ভেবে দেখলাম, স্রেফ খেলেছি বলে কোচিং করাবো, এটা ঠিক হবে না। ফলে আমি অস্ট্রেলিয়ায় লেভেল ওয়ান, টু ও থ্রি কোর্স করেছি ২০০৬ অবধি। এরপর দেশে ফিরে আবাহনীকে কোচিং করিয়েছি। ২০০৭ সালে আমি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলে যোগ দিই। পাশাপাশি ক্রিকেট ভিক্টোরিয়ার স্বল্প মেয়াদে কাজ করায় আমি উপকৃত হই।

আমি মনে করি, কোচিং কোনো সাধারণ খেলোয়াড়ি বিষয় নয়। এর সাথে অনেক সূক্ষ্ম ব্যাপার জড়িত আছে। যেমন বায়োমেকানিক্স এবং দর্শনটা বোঝা। এছাড়া স্বল্প মেয়াদ ও দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনা, মানব-ব্যবস্থাপনা এবং খেলোয়াড়দের মনস্তত্ত্ব বোঝা। আপনি যখন খেলবেন, এসব বিষয় সেভাবে শিখতে পারবেন না। ব্যবস্থাপনার ব্যাপারটা একেবারেই নতুন একটা জগত। আমি এসব কোচিং কোর্স বাংলাদেশেও করতে পারতাম। কিন্তু দেশের মানুষের সাথে কীভাবে মিশছেন আর ভিন্ন সংষ্কৃতির লোকেদের সাথে কীভাবে মিশছেন, এগুলো আলাদা ব্যাপার। ভিন্ন সংষ্কৃতির লোকেদের সাথে মিশলে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার সুযোগ থাকে।

খেলোয়াড়ি জীবনে আশরাফুলের সাথে; Image Source: ESPN Cricinfo

আপনি নিজে যখন খেলতেন তখন এরকম কোচিং কতটা মিস করেছেন?

একটা সহজ উদাহরণ দেওয়া যাক। আমরা যখন দেখি, একজন খেলোয়াড় অন-সাইডে ভালো নয়, আমরা ধরে নিই তার স্কিলে ঘাটতি আছে। কিন্তু এমনও হতে পারে যে তার বাম চোখ ঠিকভাবে কার্যকরী নয়। এটা হতে পারে যে, তার দুই চোখের সমন্বয়টা কোনো কারণে বাধাগ্রস্থ। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমরা এ ধরনের সূক্ষ্ম ব্যাপারে সহায়তা পাইনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুরুর দিকে আমরা দুজন চমৎকার কোচ পেয়েছিলাম- গর্ডন গ্রিনিজ ও এডি বারলো। তাদের স্কিল, টেকনিক ও ট্যাকটিকস নিয়ে কাজ করাটা খুব ভালো ছিল। কিন্তু খেলোয়াড়দের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কখনো সেভাবে কাজ হয়নি। এটা আমাদের দরকার ছিল।

আপনি এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। ১৯৮৮ সালে যখন প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরে গেলেন, সেটা কি একটা সাংষ্কৃতিক ধাক্কা ছিল?

প্রথমবার আমি মেলবোর্নে নেমেই ফিরে আসতে চেয়েছিলাম। শেষ অবধি আমি ওখানেই স্থায়ী হয়েছি। অস্ট্রেলিয়ানরা খেলা ভালোবাসে- ক্রিকেট, রাগবি, ফুটবল। ওই সময় আমি ফুটবলও খেলতাম। যেটা পরে ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমি ১৯৮৯ সালে রিংউড ক্রিকেট ক্লাব থেকে একটা প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা বাংলাদেশের ক্রিকেট মৌসুমের সাথে সংঘাত করতো। ১৯৯০ সালে আমার স্ত্রী ওখানে পড়তে গেল। আর ২০০৩ সালে আমরা পারিবারিকভাবে ওখানে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেই থেকে অস্ট্রেলিয়া আমার দ্বিতীয় বাড়ি।

এটা কি বলা যায় যে, আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে একজন বাংলাদেশির অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে কোচিং করানোর স্বপ্ন দেখাটা অসম্ভব ছিল?

আমি সেভাবে দেখতে চাই না। আমি যখন এখানে এলাম, আমার মনে ছিল আমি শিখবো। হ্যাঁ, এখন এটা ভালো লাগে যে, তারা আমার এখানে কিছু দেওয়াটাকে মূল্য দিচ্ছে। ক্রিকেট ভিক্টোরিয়া যখন আমাকে বললো যে, “তুমি কি দয়া করে আমাদের ব্যাটসম্যানদের সাথে কীভাবে টার্নিং ট্রাকে স্পিন সামলাতে হয়, সেটা নিয়ে কাজ করবে?” কিংবা যখন তারা বলে যে, “তুমি কি আমাদের এক দল কমিউনিটি কোচের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবে?” এটা খুব ভালো লাগে। সম্প্রতি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আমাকে একটা কোচিং সেমিনারে ব্যাটিং নিয়ে কথা বলতে ডেকেছিল। সেখানে আমার সাথে ছিল মাইকেল বেভান, থিলান সামারাবীরা ও ড্যামিয়েন ফ্লেমিং। খুব ভালো লেগেছিল ব্যাপারটা।

চীনে কোচিং করাচ্ছেন; Image Source: Getty Images

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম খেলার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?

আমি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম খেলি শারজাহতে, ১৯৯০ সালের অস্ট্রাল-এশিয়া কাপে। গ্রেগ ক্যাম্পবেল ও মার্ভ হিউজ আমাকে রীতিমতো গালিগালাজ করছিল। কারণ আমি বল ছেড়ে দিচ্ছিলাম। আমি এটা নিতে পারছিলাম না। আমি স্টিভ ওয়াহর কাছে গিয়ে অভিযোগ করলাম। বললাম, ‘স্টিভ ওরা বাজে কথা বলছে।’ স্টিভও আমাকে একইরকম কথা বললো। তখন সাইমন ও’ডোনিল একটু দয়া দেখালো। সে এসে বললো, ‘চুপ থাকো এবং কিছু করো না। ওরা এমনিতেই থেমে যাবে।’ সেসব মহাতারকার বিপক্ষে খেলাটা দারুণ একটা অনুভূতি ছিল।

আপনার দিনের সূচীটা এখন কেমন?

আমি খুব সকালে উঠি। ৮টা থেকে ৩টা অবধি আইসিসি অফিসে আইসিসির উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করি। এটা শেষ করে দ্রুত বাসায় ফিরে মিটিংগুলো ধরি। কারণ মেলবোর্নে বিকেল ৩টা মানে দুবাইতে সকাল ৯টা। এরপর ছেলেকে কিছু অনুশীলন করাই। এরপর কোনো কোনো ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কিছু শেখাই। কখনো কখনো মেলবোর্নের মাঝ রাতে দুবাইয়ের মিটিং করতে হয়। খুব ব্যস্ত সময়। তবে উপভোগ করি।

আপনি এখন কোন কোন দেশের সাথে কাজ করছেন?

একজন উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে চীন, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের দেখভাল করতে হয়। আমি তাদের হাই পারফরম্যান্স পরিকল্পনা দিই এবং কোচদের সাথে কী হলো, সেটা নিয়ে ফলোআপ করি। বিকেলে আইসিসিকে আবার সেটা জানাই। আলোচনা করি যে, এই ছোট দলগুলোর জন্য আর কী কী প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ফিচার ছবি- ESPN Cricinfo

Related Articles