Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যান্ডি বিকেলের স্বপ্নের বিশ্বকাপ

১.

অ্যান্ডি বিকেল; অস্ট্রেলিয়ান পেস বোলার। তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যাপ্তিকাল ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত। ২০০৪ সালে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়ার পর আর তাকে জাতীয় দলে দেখা যায়নি। তিনি যেসময় ক্রিকেট খেলেছিলেন, সেসময় ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার স্বর্ণযুগ চলছিল। দলে প্রতিভাবান ক্রিকেটারের কমতি ছিলো না। সেসময়ে গড়পড়তা ক্রিকেটাররা নিজেদের প্রমাণ করার খুব একটা সুযোগ পেতেন না। অ্যান্ডি বিকেল যখন তার ক্যারিয়ার শুরু করেছেন, তখন অস্ট্রেলিয়া দলে গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি এবং জেসন গিলেস্পিদের মতো বিধ্বংসী পেসাররা খেলতেন।

বিকেল ব্যাটিংটাও ভালো পারতেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৩টি অর্ধশতক এবং ৯টি শতক সেই কথাই বলে। লিস্ট-এ ক্রিকেটেও তার শতক ছিলো। তবে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের জানান দেওয়ার সুযোগ পাননি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। ব্যাটিং করতেন লোয়ার অর্ডারে। সেসময় অস্ট্রেলিয়া ছাড়া অন্য কোনো দলের পক্ষে খেললে অনায়াসে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে একাদশে নিয়মিত সুযোগ পেতেন।

ব্যাটসম্যান হিসেবেও বেশ পারদর্শী ছিলেন বিকেল; Image Source: Getty Images

অস্ট্রেলিয়ার অপরাজেয় দলে তিনি তৃতীয় পেসার হিসেবে খেলতেন, যার ভূমিকা প্রতিপক্ষের ইনিংসের মাঝপথে রানের চাকা ধরে রাখা। মাঝেমধ্যে দুই-একটা উইকেট এনে দিতে পারলে তো সোনায় সোহাগা। দলে কখনও তার জায়গা স্থিতিশীল ছিলো না। গিলেস্পি, লি এবং ম্যাকগ্রাদের মধ্যে কোনো ক্রিকেটার যখন ইনজুরিতে ভুগতেন, তখন তার শরণাপন্ন হতো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থেকে তিনি ১৯টি টেস্ট এবং ৬৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। ১৯ টেস্টের মধ্যে ২২ ইনিংস ব্যাট করে ৩৫৫ রান করেছেন। বল হাতে শিকার করেছেন ৫৮টি উইকেট। ওয়ানডেতে ৬৭ ম্যাচের মধ্যে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৩৬ ইনিংসে, যার মধ্যে একটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে মোট ৪৭১ রান তুলেছেন। বল হাতে উইকেট সংখ্যা ৭৮টি।

২.

২০০৩ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে ছিলেন অ্যান্ডি বিকেল। কিন্তু একাদশে তার জায়গা ছিলো না। গিলেস্পি, ব্রেট লি, ইয়ান হার্ভি এবং গ্লেন ম্যাকগ্রা তখন অস্ট্রেলিয়া দলের নিয়মিত সদস্য। তাই বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে দলে জায়গা পাননি বিকেল।

কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ কথাটি বিকেলের ক্ষেত্রে যথার্থ বলা যায়। জেসন গিলেস্পি ইনজুরিতে পড়লে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একাদশে জায়গা করে নেন তিনি। সুযোগ পেয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৫ ওভারে মাত্র ১৩ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। এরপরের ম্যাচ খেলেন নামিবিয়ার বিপক্ষে। ঐ ম্যাচে তিনি বোলিং আক্রমণে আসার আগেই গ্লেন ম্যাকগ্রা নামিবিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ গুড়িয়ে দেন। বিকেল মাত্র ১ ওভার বোলিং করে কোনো রান না দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেছিলেন। ম্যাকগ্রা ঐ ম্যাচে মাত্র ১৫ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট শিকার করেছিলেন, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে সেরা বোলিং ফিগার।

ইংল্যান্ডের আরও একটি উইকেট শিকারের পর উদযাপন করছেন অ্যান্ডি বিকেল; Image Source: Getty Images

বিকেল আসল চমক দেখান পোর্ট এলিজাবেথে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০০৩ সালের ২রা মার্চ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার দুর্দান্ত নৈপুণ্যে অস্ট্রেলিয়া নাটকীয় জয় পেয়েছিল। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইংল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার মার্কাস ট্রেসকোথিক এবং নিক নাইট ইংল্যান্ডকে শুভসূচনা এনে দিয়েছিলেন। ব্রেট লি এবং গ্লেন ম্যাকগ্রাকে ভালোভাবে সামাল দিয়ে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে মাত্র ৫৯ বলে ৬৬ রান যোগ করেছিলেন তারা। এরপর বিকেল বোলিং আক্রমণে এসে নিজের প্রথম ওভারেই ফেরান ৩০ রান করা নাইটকে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে গতির পাশাপাশি দুর্দান্ত আউট সুইং ডেলিভারিতে মাইকেল ভন এবং নাসের হুসাইনের উইকেট তুলে নেন তিনি।

প্রথম স্পেলে নাইট, ভন, নাসের এবং কলিংউডকে শিকার করে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ধসিয়ে দেন বিকেল। বিপর্যয় সামলে ফ্লিনটফ এবং অ্যালেক্স স্টুয়ার্ট ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৯০ রান যোগ করে ইংল্যান্ডকে লড়াকু সংগ্রহের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। কিন্তু দিনটি যে শুধুমাত্র বিকেলের ছিলো। তাই এই দিনের নায়ক হতে পারেননি স্টুয়ার্ট, ফ্লিনটফরা। নিজের শেষ স্পেলে এসে তিনি ফ্লিনটফ, স্টুয়ার্ট এবং অ্যাশলে জাইলসকে সাজঘরে ফেরত পাঠান। ফলে শেষপর্যন্ত ইংল্যান্ড নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২০৪ রান সংগ্রহ করেছিল। অ্যান্ডি বিকেল ১০ ওভার বল করে মাত্র ২০ রান খরচায় ৭ উইকেট শিকার করেছিলেন। কাগজে-কলমে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। কিন্তু সবদিক বিবেচনায় বিকেলই সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। কারণ ম্যাকগ্রা ৭ উইকেট শিকার করেছিলেন নামিবিয়ার মতো দুর্বল দলের বিপক্ষে।

ব্যাট হাতেও দলের হাল ধরেন বিকেল। বেভানকে সাথে নিয়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি ; Image Source: Getty Images

বিকেলের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে ইংল্যান্ড ২০৪ রানে থেমে গেলে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন পড়ে ২০৫ রানের। এই রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ১৩৫ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। বিকেলের দুর্দান্ত বোলিং যখন বৃথা হতে যাচ্ছিলো, তখন তিনি ব্যাট হাতেও ত্রাণকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হন। দশ নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে মাইকেল বেভানের সাথে ১০ম উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়াকে ২ উইকেটের জয় এনে দিয়েছিলেন বিকেল। বেভানের অপরাজিত ৭৪ রান এবং বিকেলের ৩৬ বলে অপরাজিত ৩৪ রানের ইনিংসের উপর ভর করে অস্ট্রেলিয়া দুই বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে গিয়েছিল।

৩.

অ্যান্ডি বিকেল সুপার সিক্সে প্রতিবেশী নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দলকে জয় পেতে সাহায্য করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট এলিজাবেথে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেট এবং অপরাজিত ৩৪ রান করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি। একই মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেও তার অসাধারণ ব্যাটিংয়ে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এই মাঠকে তিনি পয়া মাঠ ভাবতেই পারেন।

Image Source: Getty Images

নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে বিপর্যয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। শেন বন্ডের বোলিং তোপের মুখে মাত্র ৮৪ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসেছিল তারা। এরপর দলের হাল ধরেন ৯ নাম্বারে নামা অ্যান্ডি বিকেল। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান মাইকেল বেভানকে। তারা ৮ম উইকেট জুটিতে ৯৭ রান যোগ করলে নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২০৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় অস্ট্রেলিয়া। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন বিকেল। ৮৩ বলে ৭টি চার এবং ১টি ছয়ের মারে তার ইনিংসটি সাজানো ছিলো। বেভান করেছিলেন ৫৬ রান। দুর্দান্ত বোলিং করা শেন বন্ড ১০ ওভারে মাত্র ২৩ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট শিকার করেও অস্ট্রেলিয়াকে অল্পতে বেঁধে রাখতে পারেননি।

অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ২০৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১১২ রানেই গুটিয়ে যায় কিউইরা। দলের পক্ষে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের ৪৮ রান ছাড়া আর কেউই উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেননি। ব্রেট লি ৫ এবং গ্লেন ম্যাকগ্রা ৩ উইকেট শিকার করলে অস্ট্রেলিয়া ৯৬ রানের সহজ জয় পায়।

বিকেল সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ১৯* রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এরপর বল হাতে কোনো উইকেট শিকার না করলেও ১০ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়েছিলেন।  

বিশ্বকাপ জয়ের পর উদযাপন করছেন বেভান, গিলক্রিস্ট এবং বিকেল; Image Source: Cricket.com.au

অ্যান্ডি বিকেল অস্ট্রেলিয়ার হয়ে শুধুমাত্র ২০০৩ সালের বিশ্বকাপেই খেলেছিলেন। ঐ বিশ্বকাপেও দলে তার জায়গা পাকাপোক্ত ছিলো না। গিলেস্পির ইনজুরির কারণে সুযোগ পেয়ে সেটা ভালোভাবেই কাজে লাগান তিনি। টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচ খেলে তিনি ১১৭.০০ ব্যাটিং গড়ে ১১৭ রান করেছিলেন। বল হাতেও নিজের দায়িত্ব বেশ ভালোভাবে পালন করেছিলেন। ৮ ইনিংসে ৫৭.০ ওভার বল করে ১২.৩১ বোলিং গড়ে শিকার করেছিলেন ১৬ উইকেট।

২০০৩ সালে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বোলারদের তালিকায় তিনি ৭ম স্থানে অবস্থান করেছিলেন। টুর্নামেন্টে কমপক্ষে ১০ উইকেট শিকার করা বোলারদের মধ্যে তার বোলিং গড় এবং ইকোনমি রেট সবচেয়ে ভালো ছিলো। বোলিং স্ট্রাইক রেটের দিক থেকেও তিনি পিছিয়ে ছিলেন না। ২১.৩ স্ট্রাইক রেটে ১৬ উইকেট শিকার করে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তিনি।

২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত সময় কাটানোর পরের মৌসুমেই কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা হয়নি বিকেলের। ২০০৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। এরপর আরও কয়েক বছর কাউন্টি ক্রিকেট এবং ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার পর ২০০৭ সালের নভেম্বরে পাকাপাকিভাবে ক্রিকেটকে বিদায় জানান অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী দলের এই সদস্য।

This article is in Bangla language. It is about Andy Bichel Heroic In 2003 Worldcup. Please click on the hyperlinks to look for references.  

Featured Image: Getty Images

Related Articles