Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আর্সেনাল বনাম টটেনহ্যাম: নর্থ লন্ডনের মহাকাব্যিক দ্বৈরথ

১৯০১ সালে ফুটবল লীগের বাইরের একটি দল ‘শেফিল্ড ইউনাইটেড’কে হারিয়ে এফএ কাপ জয় করে, দলটির নাম টটেনহ্যাম হটস্পার। সেটি ছিল নন-লিগার দল হিসেবে এফএ কাপ জয়ের একমাত্র নিদর্শন। ফুটবলের জগতে টটেনহ্যামের যাত্রা শুরু হয় ১৮৮২ সালে ‘অল হ্যালোস চার্চ’-এর ব্যাকরণ বিদ্যালয়ের কিছু ছেলের হাত ধরে। ১৮৯৫ সাল নাগাদ ‘সাউদার্ন লিগ’-এ যোগদানের ফলস্বরূপ টটেনহ্যাম দর্শকদের আকর্ষিত করতে শুরু করে তাদের ফুটবলের দ্বারা। ১৮৯৯ সালে তারা তাদের এক শতকেরও বেশি সময়ের হোমগ্রাউন্ড ‘হোয়াইট হার্ট লেনে’ (১৮৯৯-২০১৭) খেলা শুরু করে।

১৮৮৫ সালের টটেনহাম দল
১৮৮৫ সালের টটেনহাম দল; Image Credit: Spurs History

ওদিকে কেন্টের উলউইচে রয়্যাল আর্সেনালের কতিপয় কর্মী ‘ডায়াল স্কয়ার’ নামে আরেকটি ফুটবল দলের যাত্রা শুরু করে ১৮৮৬ সালে। ১৮৮৭ সালে প্রথম মুখোমুখি সমরে রয়্যাল আর্সেনালের (তৎকালীন নাম) বিপক্ষে টটেনহ্যাম ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল, কিন্তু বাগড়া বাঁধায় আলোর অভাব। সেই সময়ে ‘ফ্লাডলাইট’ নামক কিছুর প্রচলন শুরু হয়নি, এবং তখন ইলেক্ট্রিসিটিও সহজলভ্য বস্তু ছিল না। ফলে, সে খেলা বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৮৯৩ সালে ‘উলউইচ আর্সেনাল’ নামে পরিবর্তিত ক্লাবটি টটেনহ্যামকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইতিহাসের প্রথম ‘নর্থ লন্ডন ডার্বি’ জিতে নেয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফুটবলের এই ম্যাচটিকে আমরা কোনভাবেই ‘নর্থ লন্ডন ডার্বি’ বলতে পারি না, কেননা তখনও আর্সেনালের হোম গ্রাউন্ড ‘ম্যানর গ্রাউন্ড’ দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের একটি অঞ্চল প্লামস্টেডে ছিল।

কতিপয় স্কটিশদের গ্রুপ, যারা গড়ে তোলে ‘রয়্যাল আর্সেনাল’; Image Credit: Arsenal

লিগে আর্সেনালের পথচলার শুরু

১৯০০ সাল থেকে লন্ডনের একমাত্র লিগ দল হিসেবে যাত্রা আরম্ভ হয় ‘উলউইচ আর্সেনাল’-এর, যা তাদের এনে দেয় সম্মান এবং পরিচিতি। কিন্তু তাদের তৎকালীন হোমগ্রাউন্ড (ম্যানর গ্রাউন্ড) খুব একটা ফুটবল খেলার উপযোগী ছিল না। উপরন্তু, মাঠের দর্শক ধারণক্ষমতাও ঢের কম ছিল। এরই মধ্যে ১৯০৮ সালে টটেনহ্যাম ফুটবল লিগের সদস্য হয়, এবং প্রথম মৌসুমেই তারা দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হতে সক্ষম হয়। যার ফলে আর্সেনাল এবং টটেনহ্যামের প্রথম লিগ ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়ে যায়। ১৯০৯ সালে লিগে তাদের প্রথম দেখাতেই ম্যানর গ্রাউন্ডে আর্সেনাল ওয়াল্টার লরেন্সের একমাত্র গোলে তাদের ভবিষ্যৎ প্রতিবেশীকে হারাতে সক্ষম হয়।

নর্থ লন্ডনের নতুন বাসিন্দা

১৯১০ সালে খারাপ সময় আসে আর্সেনালের, দেউলিয়া হয়ে যায় ক্লাবটি। হাল ধরেন তৎকালীন লন্ডনের এমপি স্যার হেনরি নরিস এবং উইলিয়াম হল। তবে রেলিগেটেড হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে চলে যায় ক্লাবটি। নরিসের প্রভাবে ১৯১৩ সালে দক্ষিণ থেকে একেবারে উত্তরে স্থানান্তরিত হয়ে হাইবুরিতে বসতি গড়ে আর্সেনাল। হাইবুরি থেকে মাত্র ৪ মাইল দূরে থাকা হোয়াইট হার্ট লেনের বাসিন্দারা ব্যাপারটাকে খুব একটা ভালভাবে নেন না। তাদের কাছে আর্সেনাল বরাবরই একটা উড়ে এসে জুড়ে বসা ক্লাব, যারা আসলে নর্থ লন্ডনের নয়।

হাইবুরি থেকে হোয়াইট হার্ট লেনের দূরত্ব; Image Credit: Google Maps

ঝামেলার সূত্রপাত

১৯১৫ সাথে ক্লাবের নাম থেকে ‘উলউইচ’ বাদ দিয়ে দেয়া হয়, জন্ম হয় ‘দ্য আর্সেনাল’-এর। পরবর্তীতে শুধু ‘আর্সেনাল’ নামে পরিচিতি লাভ করে ক্লাবটি। নর্থ লন্ডনের এই দুই ক্লাবের মধ্যে লড়াইটা জমে ওঠে ১৯১৪-১৫ মৌসুম পরবর্তী এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

এই মৌসুমে দ্বিতীয় বিভাগে খেলা আর্সেনাল হয় ৬ষ্ঠ, ফলে তাদের উত্তীর্ণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। অপরদিকে, প্রথম বিভাগে খেলা টটেনহ্যাম হয় ২০তম, এবং চেলসি হয় ১৯তম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ লিগে বাদ সাধে। বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে লিগের পরিসর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, আগে প্রথম বিভাগ থেকে দুইটি দলের অবনমন হতো, আর দ্বিতীয় বিভাগের দু’টি দল উত্তীর্ণ হতো।

লিগ টেবিল, ১৯১৪-১৫ মৌসুম; Image Credit: Woolwich Arsenal Blog

লিগের পরিসর বাড়ানোয় প্রথমে সিদ্ধান্ত হয় যে, চেলসি এবং টটেনহ্যাম প্রথম বিভাগেই খেলবে। কিন্তু বাঁধ সাধেন স্যার নরিস। তিনি ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন। ভোটের ফলে দেখা যায়, চেলসি যেন প্রথম বিভাগেই থাকে, তার পক্ষে সবাই। এর কারণ হিসেবে পাওয়া যায় যে, চূড়ান্ত ম্যাচ ডে’তে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং লিভারপুল তাদের মধ্যকার খেলাটি পাতিয়েছিল, যাতে করে চেলসির অবনয়ন হয়, এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রথম বিভাগেই থেকে যায়। অপরদিকে, প্রথম বিভাগের থেকে যাওয়া শেষ স্থানটি ভোটের মাধ্যমে আর্সেনাল লাভ করে। ফলশ্রুতিতে, টটেনহ্যাম দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যায়।

টটেনহ্যাম ভক্তদের মতে, এটা ছিল স্যার নরিসের চালাকি। অপরদিকে, তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকা এবং আর্সেনাল ফ্যানদের মতে, লিগের প্রতি অনেককাল ধরে অনুগত থাকার কারণেই আর্সেনাল ভোট লাভ করেছিল। এই ঘটনার ফলে আর্সেনাল এবং টটেনহ্যামের মধ্যে দ্বন্দ্ব তুঙ্গে ওঠে। শুরু হয় এক নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার, শুরু হয় নর্থ-লন্ডন ডার্বির টানটান উত্তেজনা।

অবনয়ন হওয়ার পরের মৌসুমেই দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে আসে টটেনহ্যাম। ১৯২১ সালের ১৫ জানুয়ারি মুখোমুখি হয় এক নতুন ইতিহাসের, যা ভবিষ্যতের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূচনা করে দেয়, প্রথম ‘আসল’ নর্থ-লন্ডন ডার্বি। ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে নেয় টটেনহ্যাম।

কতিপয় সফলতার মাপকাঠি

কাপের বিচারে আর্সেনালকে টটেনহ্যামের কিছুটা উপরেই রাখতে হবে। ১৯৭১ সালের ৩ মে হোয়াইট হার্ট লেনে আর্সেনাল লিগের চূড়ান্ত ম্যাচে টটেনহ্যামকে ১-০ গোলে হারিয়ে তাদের লিগ শিরোপা নিশ্চিত করে প্রতিপক্ষের মাটিতে। সেই ম্যাচে আর্সেনালের পক্ষে গোল করেন রে কেনেডি। এর প্রায় ৩৩ বছর পর, ২০০৪ এর ২৫ এপ্রিল ২-২ গোলে ড্র করার মাধ্যমে আর্সেনাল আরেকবার হোয়াইট হার্ট লেনে শিরোপা লাভ করে। আর্সেনালের ইতিহাসের সফল কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারের অধীনে ঐ মৌসুমে আর্সেনাল কোনো ম্যাচ না হেরেই শিরোপা অর্জন করে।

অপরদিকে, টটেনহ্যামের গর্ব করার মতো ঘটনা লিগ কাপগুলোতেই হয়েছে। ১৯৯৯ সালের পর ২০০৮ সালের লিগ কাপের সেমি’তে আর্সেনালকে ৫-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারায় টটেনহ্যাম। এছাড়া ১৯৬১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো লিগ শিরোপা জেতে টটেনহ্যাম।

আর্সেনাল এবং টটেনহ্যাম: উভয় দলে খেলা কিছু খেলোয়াড়

তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার কারণে আর্সেনাল এবং টটেনহ্যাম উভয় দলের খেলোয়াড়দেরকেই ‘নর্থ লন্ডন ডার্বি’ নিয়ে অনেক সচেতন থাকতে দেখা যেত জেতার ব্যাপারে। তবুও এমন বেশ কিছু খেলোয়াড় আছেন, যারা আর্সেনাল এবং টটেনহ্যাম দুই দলেই খেলেছেন। তাদের মধ্যে উইলিয়াম গালাস, এম্যানুয়েল আদেবায়োর অন্যতম।

এম্যানুয়েল আদেবায়োর; Image Source: FourFourTwo

তবে সবচেয়ে অবাক করা এবং সবচেয়ে বড় ‘স্ক্যান্ডাল’ ছিল, সল ক্যাম্পবেলের টটেনহ্যাম থেকে আর্সেনালে যোগ দেওয়া। হোয়াইট হার্ট লেনে বড় হয়ে ওঠা ছেলেটি ২০০১ সালে টটেনহ্যামের কনট্র্যাক্ট, উচ্চ বেতন, সব ত্যাগ করে আর্সেন ওয়েঙ্গারের আর্সেনালে যোগ দেন। তার যোগ দেওয়াটা যে ভুল ছিল না, তার প্রমাণ হলো, একসময় তিনি আর্সেনালের অধিনায়ক হয়ে ওঠেন, এবং ২টি লিগ শিরোপাসহ আরো বেশ কিছু ট্রফি জিতে নেন। আর্সেনালে যোগ দেয়ার ব্যাপারে ক্যাম্পবেলের বক্তব্য ছিল এমন,

‘ডেভিড ডীন আমাকে সুরক্ষিত অনুভব করিয়েছিলেন। তিনি আমাকে সাহায্য করতেন, এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি আমার পাশে থাকবেন। তিনি বলেছিলেন তাদের ক্লাবে যেতে, এবং এতে করে আমি তাদের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হবো, যারা আমাকে সুরক্ষিত রাখবে।’

সল ক্যাম্পবেল; Image Source: Metro

আর্সেনালে যোগদানের পর হোয়াইট হার্ট লেনে হওয়া প্রথম নর্থ-লন্ডন ডার্বিতে অন্যান্য স্পার্স ফ্যানদের সাথে ক্যাম্পবেলের ভাই টনি নিজেও তাকে দুয়ো দিতে থাকে। কারণ, তার ভাই আর্সেনালে যোগ দিয়েছে, এটা সে মানতেই পারেনি।

সেইন্ট টটেরিংহাম বনাম হটস্পার ডে

২০০২ বা তার কিছু আগের একটা আইডিয়া থেকে উদ্ভব হয় ‘সেইন্ট টটেরিংহাম ডে’। গাণিতিকভাবে, আর্সেনালের পিছনে থেকে টটেনহ্যাম লিগ শেষ করলেই এই দিবস উদযাপিত হয়, যার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই। অপরদিকে, ১৯৯১ সালে এফএ কাপ সেমিতে আর্সেনালকে ৩-১ গোলে হারানোর কারণে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল উদযাপিত হয় ‘হটস্পার ডে’। নিচের ভিডিও’তে দেখতে পাবেন হটস্পার ডে উদযাপণের সূচনা। 

নর্থ-লন্ডন ডার্বি এখন বিশ্বে সমাদৃত। সফল টিভি কভারেজের কারণে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যেমন অনেক খ্যাতি লাভ করেছে, তেমনি বিশ্বজুড়ে আছে প্রচুর আর্সেনাল এবং টটেনহ্যাম ফ্যান। নর্থ-লন্ডন ডার্বির উষ্ণতা কেবল ফ্যানদের মধ্যেই সীমিত না, এটা ছড়িয়ে আছে ক্লাব দু’টির রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কতটা? বর্তমান টটেনহ্যামের কোরিয়ান খেলোয়াড় সন তার পছন্দের গাড়ি কেনা থেকে বিরত থাকেন, কেননা লাল হলো ‘গানার্স’ তথা আর্সেনালের রঙ!

This article is in Bangla language. It is about the great rivalry of Arsenal and Tottenham Hotspur.

Featured Image: © 2012 - 2019 Lagvilava

Related Articles