Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাশ বার্টি: টেনিস-ক্রিকেট-টেনিস এবং চ্যাম্পিয়ন

সেরেনা উইলিয়ামস বনাম আম্পায়ার বিতর্কে এবার ইউএস ওপেনের সব গল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।

মেয়েদের সিঙ্গেলসের ফাইনাল হেরেও এখন টেনিস বিষয়ক সব আলোচনার শীর্ষে সেরেনা। কিন্তু এখানেই তো টেনিসের থেমে থাকার নয়। এই বিতর্কের মাঝেই মেয়েদের ডাবলস ফাইনাল জিতে নিলেন অ্যাশলেইগ বার্টি ও কোনো ভ্যান্ডওয়েগে। এটা এই জুটির প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জয়। সেজন্য দুজনই অভিনন্দন পেতে পারেন। কিন্তু অ্যাশলেইগ বার্টি বা অ্যাশ বার্টিকে শুধু অভিনন্দন জানালে চলছে না। তাকে জানাতে হবে টুপি খোলা এক স্যালুট। কারণ বার্টি কেবল একজন টেনিস তারকা নন। তিনি স্বল্প সময়ের জন্য হয়ে উঠেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এক ক্রিকেট তারকাও।

দুই বছর আগে হঠাৎ করেই টেনিস থেকে বিরতি নিয়েছিলেন বার্টি। বিরতির এই সময়টা কী করবেন খুঁজে না পেয়ে আগে থেকে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার পরও ক্রিকেট খেলতে নেমে গিয়েছিলেন। আর তার খেলাটা ব্রিসবেন হিট কোচের এতটাই ভালো লেগেছিলো যে, বার্টিকে পুরো মৌসুম বিগ ব্যাশ খেলিয়ে ফেলেছিলেন!

১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে জন্ম বার্টির। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবি এবং মা একজন রেডিওগ্রাফার। বার্টি ছোটবেলা থেকে নেটবল আর টেনিস খেলার মধ্যে বড় হয়ে উঠেছেন। নিজেকে সবসময় এক নম্বরে দেখার এক চেষ্টা তার ছোটবেলা থেকেই। বড় দুই বোন সারা আর আলী যেহেতু নেটবলটা তার চেয়ে ভালো খেলেন, তাই বার্টি ওই খেলাটা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

ব্রিসবেনের হয়ে বিগ ব্যাশ খেলছেন বার্টি; Image Source: Cricket Australia

চার বছর বয়সে কোচ জিম জয়েসের সাথে টেনিস নিয়ে কাজ শুরু করেন। জিম জয়েস এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, প্রচলিত আর দশজন বাচ্চাকে যেভাবে ট্রেনিং করিয়েছেন, বার্টিকে সেভাবে তিনি ট্রেনিং করাননি। অস্বাভাবিক ‘হাত ও চোখের সমন্বয়’ এবং বলের ওপর মারাত্মক মনোসংযোগের কারণে বার্টি ছোটবেলা থেকেই বাকিদের চেয়ে আলাদা হয়ে উঠেছিলেন। নয় বছর বয়স থেকে বার্টি ছেলেদের বিপক্ষে টেনিস খেলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। ১২ বছর বয়সে তিনি সিনিয়র মেয়েদের সাথে নিয়মিত লড়াই শুরু করেন।

১৪ বছর বয়স থেকে বার্টির পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু, আর সেই থেকে পরিবার ও অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে দূরে দূরে থাকার ক্লান্তি শুরু। ১৭ বছর বয়সের সময় দেখা গেলো, বার্টি সারা বছরে মাত্র ২৭ দিন বাড়ি থাকার সুযোগ পেয়েছেন। বাকিটা সময় সফর আর ইউরোপ, আমেরিকায় একটার পর একটা টুর্নামেন্ট খেলে চলেছেন।

জুনিয়র স্তরে বার্টি তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ২ নম্বর র‌্যাংকিংয়ে পৌঁছেছিলেন। ২০১১ সালে তিনি প্রথম জুনিয়র গ্র্যান্ড স্লাম খেলেন; অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। ১৫ বছর বয়সে এসে উইম্বলডনে প্রথম জুনিয়র গ্র্যান্ড স্লাম জেতেন তিনি। ১৯৮০ সালে ডেবি ফ্রিম্যানের পর প্রথম অস্ট্রেলীয় বালিকা হিসেবে এই শিরোপা জেতেন তিনি।

সিনিয়র স্তরেও খেলা শুরু করেন খুব কম বয়সে। নিজের মাত্র দ্বিতীয় এটিপি টুর্নামেন্টেই সেমিফাইনালে খেলে চমকে দিয়েছিলেন টেনিস বিশ্বকে।  

তবে আসল সাফল্যটা পেতে শুরু করেন মেয়েদের ডাবলসে এসে। চেসি ডেলাকুয়ার সাথে জুটি বেঁধে একটার পর একটা ডব্লুটিএ ট্যুর জিততে শুরু করেন। এই জুটি বেঁধে তারা দুটি গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালও খেলে ফেলেন। এর পাশাপাশি বার্টির সিঙ্গেল লড়াইও চলতে থাকে। কিন্তু এরকম একটা সম্ভাবনাময় সময়েই দারুণ ক্লান্তি এসে ভর করে বার্টির ওপর। তিনি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য টেনিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে যান। ক্লান্তির সাথে লড়াই করে আর পারছিলেন না।

নিজের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বলতে গিয়ে বার্টি বলছিলেন,

“আমি এত ছোটবেলা থেকে এত বেশি সফর করে বেড়াচ্ছিলাম যে, সবকিছু আমার জীবনে খুব বেশি তাড়াতাড়ি ঘটছিলো। আমি একবার অন্তত স্বাভাবিক একটা টিনেজ মেয়ের মতো জীবন কাটাতে চাচ্ছিলাম। কিছু স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা চাচ্ছিলাম জীবনে।”

সেই স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা পেতেই সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু খেলা যার জীবন, তাকে কি খেলা ছেড়ে দিতে পারে?

পুরোনো সঙ্গী ডেলাকুয়ার সাথে; Image Source: Tennis Australia

টেনিস একটু বিরতি নিলো, কিন্তু খেলা থেকে দূরে থাকতে পারলেন না বার্টি। না, নেটবল কিংবা পছন্দের সকার নয়; একেবারে ক্রিকেট খেলা শুরু করলেন বার্টি।

এই টেনিস বিরতির সময়ে তার সাথে পরিচয় হলো কুইন্সল্যান্ডের মেয়েদের দলের কোচ অ্যান্ডি রিচার্ডসের সাথে। রিচার্ডস একদিন তাকে নিয়ে গেলেন ক্রিকেটের নেটে। আর সেখানেই চমকে গেলেন এই অভিজ্ঞ কোচ। তিনি বলছিলেন প্রথম দিনের সেই অভিজ্ঞতা,

“একজন কোচের দৃষ্টিকোন থেকে বলতে পারি, প্রথম দিন থেকে, ও যখন প্রথম ব্যাট ধরেছে, তখন থেকে ওর ব্যাটিং স্কিল আমার কাছে অসামান্য মনে হয়েছে। প্রথম ট্রেনিং সেশনে সে একটা বলও মিস করেনি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে ওর প্রতি মুগ্ধ হওয়ার আমার এটাই কারণ ছিলো। সে যেকোনো কিছু চোখের পলকে করে ফেলতে পারে।”

বার্টির এক নতুন জীবনের শুরু হলো। প্রথম মেয়েদের বিগ ব্যাশে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেলেন ব্রিসবেন হিটের সাথে। আর প্রথম ম্যাচেই প্রমাণ করে দিলেন, এই খেলাটা কোথায় যেন তার রক্তে মিশে আছে। মেলবোর্ন স্টার্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ২৭ বলে ৩৯ রানের এক ইনিংস খেললেন। যদিও তার দল টুর্নামেন্টে ষষ্ঠ হলো। কিন্তু বার্টি দারুণ পারফর্ম করলেন মৌসুম জুড়ে। তাকে রেখে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলো ব্রিসবেন। তারও এই দলটা ছাড়ার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু ততদিনে বার্টির রক্তে আবার সেই টেনিসের দোলা এসে লেগেছে। আবার টেনিসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।

এবার অবশ্য শুরুতে ঠিক করলেন শুধু ডাবলস খেলবেন। এবারের ফেরাটাও দারুণ হলো। ফিরে প্রথম যে পাঁচটা টুর্নামেন্ট খেললেন, তার মধ্যে তিনটাই জিতলেন তিনি ও ডেলাকুয়া। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত বদলে সিঙ্গেলসেও খেলতে শুরু করলেন। সেখানে বড় কোনো ট্রফি না জিতলেও সাফল্য আসতে শুরু করলো।

২০১৭ সালে শুরু করেছিলেন র‌্যাংকিংয়ে ২৫০-এর বাইরে থেকে। আর সেই বছরই শেষ করলেন সিঙ্গেলস ও ডাবলস, দুই বিভাগেই ২০-এর নিচে থেকে।

ইউএস ওপেন জেতার পর; Image Source: WTA

এই বছরে ভেনাস উইলিয়ামস, জোহানা কোন্তা, ক্যারোলিনা পিসকোভার মতো খেলেয়াড়কে হারিয়েছেন। যদিও সিঙ্গেলসে তার দারুণ উন্নতি হচ্ছিলো, কিন্তু ডাবলসই সেরা ভরসা ছিলো। এই ফেরার পর ডেলাকুয়ার সাথে আরও একটা গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালে উঠলেন-ফ্রেঞ্চ ওপেন। কিন্তু এই সময় জুটিটা গেলো ভেঙে। এই জুটির সিনিয়র সঙ্গী ডেলাকুয়া ২০১৮ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফলে নতুন সঙ্গী খুঁজতে হলো বার্টিকে।

খুব দ্রুতই ভ্যান্ডওয়েগেকে পেয়ে গেলেন বার্টি। আর শুরু থেকেই এই জুটি একদম জমে উঠলো। মিয়ামি ওপেনের শিরোপা জিতলেন তারা। অল্পের মধ্যেই হয়ে উঠলেন মেয়েদের ডাবলসের ফেবারিট। আর এবারের ইউএস ওপেন জিতে বুঝিয়ে দিলেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব।

এখন টেনিস নিয়েই মজে আছেন বার্টি। বলছিলেন,

“আপাতত টেনিস ছাড়ার কথা আর ভাবছি না। ভবিষ্যতে যখন ছাড়বো, তখন হয়তো কোচিং করাবো বা অন্য কিছু।”

কে জানে, এই অন্য কিছুটা হয়তো ক্রিকেট। আবার হয়তো এক পলকের জন্য ফিরে আসবেন ক্রিকেটে। আবার হয়তো টেনিসের নরম বলটা ছেড়ে চামড়ার শক্ত বলটায় চার-ছক্কা মারার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবেন।

Related Articles