Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সাফল্যের রহস্য মাশরাফি: মোহাম্মদ আশরাফুল

বাংলাদেশের প্রথম সুপারস্টার মোহাম্মদ আশরাফুল।

বাংলাদেশ দলের হয়ে আশরাফুলের অনেক স্মৃতি। একটা সময় বাংলাদেশের জয়গুলো আসতোই এই আশরাফুলের হাত ধরে। হঠাৎ করেই একটা অন্ধকার অধ্যায় গ্রাস করেছিলো তাকে। বিপিএলের ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশের এই সাবেক অধিনায়ক। এখনও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট ও জাতীয় দলে আছে তার নিষেধাজ্ঞা।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছেন আগেই। গত দুই বছর নিজেকে সেভাবে আবার প্রমাণ করতে না পারলেও অবশেষে এই মৌসুমে আশরাফুল খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে। এক মৌসুমে ক্যারিয়ার সেরা চারটি সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে।

নিজের বর্তমান ফর্ম, জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন এবং এই ফর্মের রহস্য উন্মোচন করেছেন একান্ত সাক্ষাতকারে-

পুরোনো ফর্মের আশরাফুলকে দেখা যাচ্ছে?

পুরোনো ফর্মের বলি কীভাবে! আগেও তো কখনো এত নিয়মিত রান করিনি। সেদিক থেকে বলতে হবে, যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো ফর্মে। হা হা হা…

এই মৌসুমটা আপনার বিবেচনায় কেমন কাটলো? এই চার সেঞ্চুরি, এত রান কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আমি বলতে চাই, আমার ভক্তরা আমাকে এভাবেই দেখতে চেয়েছে। তিন বছর পর আমি যখন ক্রিকেটে ফিরলাম, তারা চেয়েছেন, আমি যেন এমন নিয়মিত রান করতে পারি। এমন সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি যেন করতে পারি। আমি নিজেও এরকম একটা মৌসুমের অপেক্ষায় ছিলাম। সেটা ফেরার পরের মৌসুমেই পারিনি। আল্লাহর রহমতে অবশেষে সেটা পারছি। এ জন্য আমি খুব খুশি। যে প্রত্যাশা নিয়ে সবাই আমার দিকে তাকিয়েছিলেন, সেটা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পেরেছি।

এই রানে ফেরা, একটার পর একটা সেঞ্চুরি করা; এর পেছনের রহস্যটা কী?

পেছনের রহস্য যদি বলতে হয়, তাহিলে আমি মাশরাফির কথা বলবো। ওর একটা কথা আমার এই মৌসুমটা বদলে দিয়েছে।

কী কথা ছিলো সেটা?

এই মৌসুমের শুরুতেও আমি রান পাচ্ছিলাম না। আমি বুঝতে পারছিলাম না কেন পারছি না। সেদিন আমাদের (কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের) খেলা ছিলো সেদিন বিকেএসপিতে আবাহনীর বিপক্ষে। আমি অল্প রান করে আউট হয়ে গিয়েছিলাম। ইনিংস শেষে মাশরাফি আমাদের ড্রেসিংরুমে এসেছিলো। বললো, “দোস্ত, তোর তো এতো কম রান করার কথা না। স্কিলের দিক থেকে তো তুই আগের মতোই আছিস। সমস্যা অন্য কোথাও।” আমি বললাম, “তুই বল, সমস্যা কী?” ও বললো, “আমার মনে হয়, সমস্যা তোর ফিটনেসে। তোর আরও ফিট হওয়া দরকার। ফিট হলে তুই নিয়মিত রান পাবি।” আমি চিন্তা করে দেখলাম, কথাটা খুব সত্যি। ফিটনেস আমাকে খুব পিছিয়ে দিচ্ছে। সেদিন রাত থেকেই ভাত একরকম বন্ধ করে দিলাম। সেটা আমাকে খুব এগিয়ে দিয়েছে।

বন্ধু মাশরাফির সাথে; সোর্স: ক্রিকইনফো

ফিটনেস নিয়ে খুব কাজ করছেন তাহলে?

গত কয়েক বছর ধরেই স্কিল নিয়ে বেশি কাজ করছিলাম। ফিটনেস নিয়ে সে তুলনায় কম কাজ করেছি। মাশরাফি বলার পর থেকে খুব জোর  দিয়েছি। এখন ফিটনেস একটা লেভেলে এসেছে। এটা আরও বাড়াতে হবে। সেজন্য অনেক কাজ করছি।

ঠিক কী ধরনের কাজ করছেন?

এমনিতে জিমে কাজ করা বা এগুলো আগে থেকেই করছিলাম। মাশরাফির সাথে ঐদিন কথা বলার পর থেকে খাওয়া খুব কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি। আর সেটা কাজেও দিয়েছে। এমনিতে ক্যাচিং বা ফিল্ডিং সমস্যা ছিলো না। ফিটনেস বাড়াতে আমার রানিং বিটুইন দ্য উইকেট অনেক ভালো হয়েছে। আর এখন বড় ইনিংস খেলতে পারছি বেশি।

বাংলাদেশে কোনো জাতীয় দলে না থাকলে ফিটনেস ধরে রাখা তো খুব কঠিন?

অবশ্যই। এটা খুব কঠিন। বিশেষ করে ব্রেকগুলোতে সমস্যা হয়। ধরেন, আমি এনসিএল খেললাম। শুরুতে একটা সেঞ্চুরি করলাম। তারপর ডেঙ্গু হলো। এরপর বিপিএলের সময় আমার কোনো খেলা ছিলো না। এই সময়ে নিজেকে ধরে রাখা শক্ত। ব্যক্তিগতভাবে অনেক কাজ করতে হয়।

এবারে এখন অবধি যে পারফরম্যান্স, তাতে কী এখনই জাতীয় দলের স্বপ্ন দেখতে পারেন?

নাহ। চার সেঞ্চুরি করেই জাতীয় দলে চলে আসা যাবে, এটা আমি ভাবি না। আমি এখনই জাতীয় দলের জন্য রেডি, সেটাও বলবো না। আমাকে সেজন্য আরও অনেক কাজ করতে হবে। হ্যাঁ, আমার স্কিলটা হয়তো আগের মতোই আছে। কিন্তু অন্যান্য দিকেই নিজেকে তৈরি করতে হবে। হ্যাঁ, একটা বিপিএল যদি এরকম ফর্মে খেলতে পারি, তখন হয়তো নিজেকে রেডি মনে করতে পারবো।

বিপিএলকে এত গুরুত্বের সাথে দেখার কারণ কী?

বিপিএল হলো প্রায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মতো কম্পিটিটিভ একটা আসর। এখানে প্রতি দলে পাঁচজন বিদেশি খেলে। হ্যাঁ, এবার হয়তো কমতে পারে। কমলেও চার জন তো থাকবে। ফলে ওখানে পারফর্ম করতে হলে প্রায় জাতীয় দলের মতো প্রস্তুতি লাগে। বিপিএলে যদি দুটো সেঞ্চুরি করতে পারি, তখন বোঝা যাবে যে, আমি মোটামুটি তৈরি। এরপর তো নির্বাচকদের ব্যাপার যে, ওনারা বিবেচনা করবেন কিনা।

পুরোনো সেই আশরাফুল; সোর্স: নিউজ বাংলাদেশ

বিপিএলের জন্য খুব অপেক্ষা করছেন তাহলে?

হ্যাঁ, নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করছি। আগামী পাঁচ মাস আমার চ্যালেঞ্জটা হলো নিজেকে টপ লেভেলের জন্য একেবারে রেডি করে ফেলা, যাতে সুযোগ পেলেই আমি নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারি।

জাতীয় দলের স্বপ্ন তাহলে অনেক প্রবলভাবেই আছে?

অবশ্যই। পাঁচ বছর ধরে এই স্বপ্ন নিয়েই তো আছি। জাতীয় দলে খেলাটা তো প্রত্যেক খেলোয়াড়ের স্বপ্ন। আর আমার জন্য তো এটা আরও বেশি। আমি জাতীয় দলে ছিলাম, ওখানে পারফর্ম করেছি, লোকজন আমাকে চিনেছে, কিছু ম্যাচ জিতিয়েছি; আমি ওই পরিবেশটা মিস করি। প্রবলভাবে মিস করি। সেজন্য আবার ফিরতে চাই। তবে এখনই সেটা নিয়ে বেশি ভাবছি না। এখন ভাবছি ধাপে ধাপে পারফর্ম করা নিয়ে।

যেমন?

যেমন আমার সামনে ঢাকা লিগে আরেকটা ম্যাচ আছে। ওখানে ভালো করতে হবে। এরপর বিসিএলের কয়েকটা ম্যাচ আছে। সেখানে সুযোগ পেলে ভালো করতে চাই। তারপর বিপিএলের আগে একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হতে পারে, সেখানে সুযোগ পেলে ভালো করতে চাই। এভাবে ধাপে ধাপে চিন্তা করছি।

এই চেহারায় ফিরতে চান আশরাফুল; সোর্স: গেটি ইমেজ

বয়সটা কী একটু প্রতিকূলে কাজ করছে?

কেন! আমি বয়সকে একটা সংখ্যার চেয়ে বেশি কিছু মনে করি না। মাশরাফিকে দেখেই আমি শিক্ষা নেই। ২০১১ সালে ও যখন বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়লো, তখন অনেকে ভেবেছে, মাশরাফি শেষ। তারপর মাশরাফি আগের চেয়েও ভালোভাবে ফিরে এসেছে। দুই পায়ে সাতটা অপারেশন নিয়ে খেলছে। এবার ঢাকা লিগে দেখেন, এখন অবধি সেরা বোলার। কী অসাধারণ বল করছে ও। ২০১১ সালে শেষ দেখা মাশরাফি ২০১৫ বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করেছে। এটা কেউ ভাবতে পেরেছিলো? ও পারলে আমি পারবো না কেনো!

সব মিলিয়ে নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর ক্রিকেটটা কেমন উপভোগ করছেন?

খুব, খুব ভালো লাগছে। ফেরার পর থেকে বিশেষ করে মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সেটা অসাধারণ ছিলো। কত মানুষ যে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কত মানুষ আমার খেলা দেখতে কষ্ট করে মাঠে গেছেন। আর ক্রিকেট মাঠে নামলে এখনও সেই প্রথম জীবনের মতোই আনন্দ লাগে।

ফিচার ইমেজ: জি নিউজ

Related Articles