Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এথলেটিকো মাদ্রিদ ২০১৮-১৯: সিমিওনের দল কি এবার ভাঙতে পারবে দুর্ভাগ্যের শেকল?

২০১৭-১৮ মৌসুমটি ছিল এথলেটিকো মাদ্রিদের জন্য একটি ‘বিটার-সুইট’ মৌসুম। মৌসুমের শুরুটা হয়েছিল খুব বাজেভাবে; চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে। মাদ্রিদের প্রলেতারিয়েত শিবির যদিও মৌসুম শেষ করেছে হাসিমুখেই। ঘরে তুলেছে ইউরোপা লিগের শিরোপা, লা লিগাতে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামনে থেকে শেষ করেছে।

ভালোভাবে শেষ করলেও এথলেটিকোর জন্য মৌসুমের শেষটা একরকম বিষণ্নই ছিল। কেননা মৌসুম শেষে ক্লাব ছেড়ে গিয়েছেন ক্লাবের দীর্ঘদিনের দুজন বিশ্বস্ত যোদ্ধা ফার্নান্দো তোরেস ও অধিনায়ক গ্যাবি। তবে ক্লাব দ্রুতই তাদের শূন্যস্থান পূরণ করেছে নতুন কিছু প্রতিভা দিয়ে। এর বাইরেও এই মৌসুমে ট্রান্সফার মার্কেটে বাজিমাত করেছে এথলেটিকো। থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গ্রিজমান। বলা হচ্ছে, স্মরণকালের সবচেয়ে লাভজনক ট্রান্সফার উইন্ডো পার করেছে এবার এথলেটিকো মাদ্রিদ, যা ক্লাবের ফ্যানদের নতুন আশা দেখতে বাধ্য করছে। তবে কি এবার এথলেটিকো ভাঙতে পারবে দুর্ভাগ্যের শেকল?

Image result for farewell fernando torres
ইউরোপা জিতে দলকে বিদায় জানিয়েছেন তোরেস; source: Goal.com

দুর্ভাগা মাদ্রিদ

এথলেটিকো মাদ্রিদকে বলা যেতে পারে ইউরোপের সবচেয়ে দুর্ভাগা ক্লাব। সিমিওনের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ইউরোপের সেরাদের সাথে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে রোজি ব্ল্যাঙ্কসরা। ২০১১ সালে সিমিওনে যখন দায়িত্ব নিলেন তখন এথলেটিকোর লীগে অবস্থান ছিল ১৭। ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছিল রেলিগেশন জোন। সেখান থেকে গত সাত বছরে দলকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন। বর্তমানে ইউরোপীয় আসরে সবচেয়ে ধারাবাহিক দলগুলোর একটি এথলেটিকো মাদ্রিদ। গত পাঁচবছরে চ্যাম্পিয়নস লীগে দুইবার ফাইনাল, একবার সেমি-ফাইনাল ও একবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়া এথলেটিকো গতবার ধরে তুলেছে ইউরোপা লীগের ট্রফি।

পরিসংখ্যান বলবে চ্যাম্পিয়নস লিগে গত পাঁচ বছরে বার্সা, বায়ার্নের মতো মহারথী ক্লাবদের চেয়েও উজ্জ্বল ছিল এথলেটিকো।  কিন্তু পরিসংখ্যানের অপর পাতায় রয়েছে সাদা-লাল শিবিরের হতাশা। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রত্যাবর্তনের পর প্রত্যেকবারই যে তারা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়েছে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে হেরে। এর মধ্যে আছে দুটি ফাইনাল।

Image result for atletico's champions league final defeat against real madrid
দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে সিমিওনের এথলেটিকোকে; Source: The Japan Times

চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কথা বাদ দিয়ে লীগের কথায় আসি। এখানে এথলেটিকো জন্ম থেকেই অভাগা। কেননা স্প্যানিশ লীগের সূচনালগ্ন থেকেই যে রাজত্ব চালিয়ে আসছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রতাপশালী দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। ইউরোপের অন্য যেকোনো লিগ হলে এথলেটিকো নিঃসন্দেহে নিয়মিত শিরোপা প্রত্যাশী হিসেবেই থাকতো। কিন্তু এ যে লা লিগা!

লা লিগা হওয়া সত্ত্বেও এক মৌসুমে কিন্তু এথলেটিকো ঠিকই রিয়াল-বার্সার অজেয় দুর্গ ভাঙতে সক্ষম হয়েছিল। রোজি ব্ল্যাঙ্কসরা দ্বিতীয়বারের মতো সেই মিরাকল করে দেখানোর স্বপ্ন দেখছে এই মৌসুমে। ক্লাব ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে হারানোর পর নগর প্রতিপক্ষরা যাচ্ছে ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ এর মধ্য দিয়ে। আর বার্সেলোনাও এবার লীগ শুরু করছে তাদের মধ্যমাঠের কারিগর ইনিয়েস্তাকে ছাড়া। এই অবস্থায় বার্সা যদি লিগা পা হড়কায় তাহলে অবশ্যই সে সুযোগ কাজে লাগাবে এথলেটিকো।

দুই লিজেন্ডের বিদায় এবং একটি ব্যবসা সফল ট্রান্সফার উইন্ডো

গত মৌসুম শেষে এথলেটিকো মাদ্রিদকে বিদায় জানিয়েছেন দুই ক্লাব লিজেন্ড ‘এল নিনো’ ফার্নান্দো তোরেস ও অধিনায়ক গ্যাবি। ছেড়ে দেয়া হয়েছে বয়স্ক স্ট্রাইকার গ্যামেরোকেও। তাদের শূন্যস্থানও দ্রুত পূরণ করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। সিজন হওয়া মাত্রই ২০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে ভিলারিয়াল থেকে দলে ভিড়িয়েছে লা লিগার সেরা তরুণ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের একজন রদ্রি হার্নান্দেজকে। গ্যাবির সরাসরি রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে তাকে। এছাড়া মোনাকো থেকে ক্লাব রেকর্ড ৭০ মিলিয়ন ইউরোতে দলে যোগ দিয়েছেন মোনাকো উইঙ্গার টমাস লেমার। স্পোর্টিং থেকে ফ্রি ট্রান্সফারে ভাগিয়ে আনা হয়েছে তরুণ পর্তুগিজ উইঙ্গার গেলসন মার্টিনসকেও। বিকল্প স্ট্রাইকার হিসেবে ইন্টার মিলান থেকে আনা হয়েছে ক্রোয়েশিয়ান ফরওয়ার্ড নিকোলা কালিনিচকে।

গত গ্রীষ্মেও ট্রান্সফার নিষেধাজ্ঞায় পোহানো এথলেটিকো সম্ভবত সিমিওনে যুগ তথা তাদের ইতিহাসেরই সবচেয়ে সফল ট্রান্সফার উইন্ডোগুলোর একটি অতিবাহিত করলো এবার। নতুন ট্যালেন্টদের দলে আনা নয়, এথলেটিকোর জন্য এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে সবচেয়ে স্বস্তির খবর ছিল দলের সবচেয়ে বড় তারকা আতোঁয়ান গ্রিজমানের থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া। গত গ্রীষ্ম থেকেই কানাঘুষা চলছিল মৌসুম শেষে বার্সায় পাড়ি জমাবে। এমনকি বার্সা তাদের ৭ নাম্বার জার্সিটিও ফাঁকা রেখেছিল এই অলিখিত ট্রান্সফারের কথা ভেবে। কিন্তু মৌসুম শেষ হওয়ার পর গ্রিজমান নাটকীয়ভাবে ক্লাবে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তা-ও জানান একটি ডকুমেন্টারির মাধ্যমে। এই সিদ্ধান্তে যেন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল পুরো মাদ্রিদ শহর।

Image result for antoine griezmann la decision
ডকুমেন্টারি বানিয়ে দলে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেন গ্রিজমান; Source: The42

স্কোয়াড ডেপথ

এই মৌসুমে বলতে গেলে মেঠে নেমেছে ‘নিউ লুক’ এথলেটিকো মাদ্রিদ। গ্যাবি-তোরেস নেই। দলে এসেছে অনেকগুলো তরুণ প্রতিভা। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সুন্দর মিশ্রণ হয়েছে এই দলে। দলে রয়েছে বেশ কিছু চ্যাম্পিয়ন ফুটবলারও। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলে ছিল এই এথলেটিকোর তিন সদস্য- গ্রিজমান, লেমার ও লুকাস হার্নান্দেজ। আর দলের সার্বিক বিচারে রক্ষণ আগের মতোই নিশ্ছিদ্র রয়েছে, মধ্যমাঠ আরও জমাট হয়েছে, আক্রমণভাগ আরও ক্ষিপ্র হয়েছে।

Image result for griezmann lucas hernandez lemar with world cup
ওয়ান্দা মেট্রোপলিনোতে বিশ্বকাপ হাতে এথলেটিকোর তিন বিশ্বজয়ী; Source: Twitter

নিঃসন্দেহে ইউরোপের সেরা রক্ষণভাগ এথলেটিকো মাদ্রিদের। এই রক্ষণের দুর্গ শুরু হয় গোলকিপারকে দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরেই এথলেটিকোর গোলপোস্ট পাহারা দিচ্ছেন অতন্দ্র প্রহরী ইয়ান ওবলাক। লা লিগার ইতিহাসে সফলতম গোলকিপারদের একজন হওয়ার পথে আছেন এই স্লোভেনিয়ান। সেন্টার ডিফেন্স পজিশনে আছেন উরুগুইয়ান যুগল ডিয়েগো গডিন ও জোসে জিমনেজ। তাদের বিকল্প হিসেবে আছেন স্যাভিচ। লেফট ব্যাক পজিশনে আছে্ন দুজন চ্যাম্পিয়ন লেফট ব্যাক- ফিলিপে লুইস ও লুকাস হার্নান্দেজ। রাইট ব্যাক পজিশনে আছেন হুয়ানফ্রান ও তার বিকল্প হিসেবে আছেন সান্তিয়াগো আরিয়াস।

এথলেটিকোর মধ্যমাঠে তারুণ্যের ছড়াছড়ি। মধ্যমাঠে কারো পজিশনই স্থায়ী না। এই মৌসুমে সিমিওনে ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলা অব্যাহত রাখবেন বলেই মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে থাকবেন টমাস পার্টে বা রদ্রি হার্নান্দেজ। তার সাথে হোল্ডিং মিড হিসেবে থাকবেন সাউল বা কোকে। যেহেতু লেমার দুই উইংয়েই খেলতে পারেন, সুতরাং লেফট মিড বা রাইট মিড; এই দুই পজিশনের একটায় প্রতি ম্যাচে দেখা যাবে লেমারকে (ক্লাবের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়কে বেঞ্চে বসিয়ে রাখার সম্ভাবনা খুব কম কি না)। লেমার লেফট মিড হিসেবে নামলে রাইট মিডে দেখা যাবে আনহেল কোরেইরাকে, আর রাইট মিড হিসেবে নামলে অপর প্রান্তে দেখা যাবে সাউল, কোকের যেকোনো একজনকে।

আক্রমণভাগেও সিমিওনের হাতে বিকল্পের অভাব নেই। স্ট্যান্ড আউট পারফর্মার হিসেবে সামনের দুই অটোমেটিক চয়েস হচ্ছে আতোঁয়ান গ্রিজমান ও ডিয়েগো কস্তা। ডিয়েগো কস্তার বিকল্প হিসেবে আছে নিকোলা কালিনিচ, গ্রিজমানের জায়গায় খেলতে পারেন কোরেইরাও। এছাড়া ফরওয়ার্ড কিংবা উইংয়ে সুপার সাব হিসেবে নামতে দেখা যাবে গেলসন মার্টিনসকে।

বোঝাই যাচ্ছে, এই মৌসুমে সিমিওনেকে দলের ডেপথ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এক-দুইটা ইনজুরিও হয়তো তার কপালে ভাঁজ ফেলতে পারবে না। তবে সিমিওনেকে এই মূহুর্তে যে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে তা হচ্ছে সবার গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা করে দল হিসেবে যেন এথলেটিকো সমান ছন্দ পায়, তা নিশ্চিত করা। এ কথা সিমিওনেও বারবার বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে সবাই সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু এটাই সব না। আমাদের দল হিসেবে সেরা হতে হবে।

সিমিওনের ট্যাকটিস ও নক-আউট স্পেশালিস্ট এথলেটিকো

আধুনিক ফুটবলের সবচেয়ে কার্যকরী ট্যাকটিসটাই মেনে চলেন সিমিওনে। রক্ষণ নিশ্ছিদ্র রেখে সামনে প্রেশার দেয়া, প্রতিপক্ষকে জায়গা না দেয়া। সিমিওনের দর্শন যত খুশি তত গোল দেয়া না, বরং কোনো গোল না খাওয়া। যে কারণে এথলেটিকোর প্রায় ম্যাচের ফলাফলই হয় ১-০। দল যত বহুমুখীই হোক না কেন, এথলেটিকো এখনো সব ম্যাচ ১-০ তে শেষ করতে পারলেই খুশি থাকবে। লীগের শুরুটা অন্তত তা-ই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সিমিওনের এই ট্যাকটিস সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে নক-আউট রাউন্ডের ম্যাচগুলোয়। যার উপর ভিত্তি করেই বিগত বছরগুলোতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এথলেটিকোর এই ধারাবাহিকতা। হোম ম্যাচ ১-০ তে শেষ করেই সাধারণত খুশি থাকেন সিমিওনে। কেননা, এতে প্রতিপক্ষ কোনো অ্যাওয়ে গোল পেলো না এবং ফিরতি লেগে কোনোমতে ড্র তুলতে পারলেই হলো। এক গোল দিলে এই ম্যাচ বের করা প্রতিপক্ষের জন্য প্রায় অসম্ভব হবে যাবে। কারণ, তখন প্রতিপক্ষকে দিতে হবে তিন গোল, পূর্ণশক্তির এথলেটিকোর জালে তিন গোল জড়ানো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

শুরুতে অ্যাওয়ে ম্যাচ থাকলেও প্রায় একই ট্যাকটিস। যেকোনোভাবে হোক একটি অ্যাওয়ে গোল জোগাড় করতে হবে এবং সর্বনিম্ন ব্যবধান বজায় রাখতে হবে। তাহলে ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে জিতলেই হবে।

এ বছর চ্যাম্পিয়ন্স লীগেও এথলেটিকো ফ্যানরা চাইবে এই ট্যাকটিসের সফল প্রয়োগ। আর তাদের চির প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ যখন ট্রানজিশন পিরিয়ড পার করছে, তখন একেও বড় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চাইবে তারা। উয়েফা সুপার কাপ দিয়ে এবার প্রথমবারের মতো উয়েফার কোন টুর্নামেন্টে নগর প্রতিপক্ষদের হারালো এথলেটিকো। এই জয়ের ধারা চ্যাম্পিয়ন্স লীগেও অব্যাহত থাকবে সে-ই আশাও তাই করাই যায়। দুর্ভাগ্যের শেকল ভাঙার এটাই মোক্ষম সময় সিমিওনের দলের।

Related Articles