Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকাপে ফিরলো প্রাণ, মরা গাঙে ডাকলো বান!

উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য ইংল্যান্ডের আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূল। এখানকার আবহাওয়াই তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া, পেস এবং বাউন্সের সামনে উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের নড়বড়ে থাকাটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপমহাদেশের দলগুলোর নিজেদের শক্তিমত্তার উপর নির্ভর করে সাবধানে খেলা উচিৎ ছিল। সেখানে তারা রানের খাতায় বড় সংখ্যা তুলতে গিয়ে রীতিমত মুখ থুবড়ে পড়েছেন।

ইংল্যান্ডের মাটিতে সাম্প্রতিক ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করে বিশ্বকাপের শুরুতে বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিলেন, এইবারের আসরে প্রতিনিয়ত বড় রানের দেখা পাবে দলগুলো। কোনো কোনো ম্যাচে জয়ের জন্য ৩৫০ রানও যথেষ্ট হবেনা। এইবারের আসরে রানবন্যা হবে, এমন ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়ার প্রধান কারণ ছিল ইংল্যান্ড। তারা গত আসরের ব্যর্থতা কাটিয়ে এক অপ্রতিরোধ্য দল গড়ে তুলেছে। প্রতিনিয়ত স্কোরবোর্ডে তিন শতাধিক রান জমা করছে তাদের ব্যাটসম্যানরা। জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টোরা ইনিংসের প্রথম বল থেকেই প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর চড়াও হন। যার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন মরগান, বাটলাররা।

ট্রেন্টব্রিজেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের জন্ম দিয়েছে পাকিস্তান; Image Credit: AFP

সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে পাকিস্তান। টানা তিন ম্যাচে ৩৪০+ রান করেও জয়ের দেখা পায়নি তারা। প্রস্তুতি ম্যাচেও রানের ফোয়ারা ছুটেছিল, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪২১ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’রা ৩৩০ রানে থেমে যায়। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডও প্রস্তুতি ম্যাচে দ্রুত রান তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছিল। বিশ্বকাপের মূল আসরেও এমন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চেয়েছিল দলগুলো।

অথচ বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। সবার প্রত্যাশাকে ভুল প্রমাণ করে দলগুলোকে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতেই হিমশিম খাচ্ছে। স্বাগতিক ইংল্যান্ড আসরের প্রথম ম্যাচে ৩১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সবাই যেমনটা আশা করেছিল যে, ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা দাপটের সাথে রান তুলবে তেমনিভাবে রান তোলেননি ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থেকে শেষ পর্যন্ত ৩১১ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৯.৩ ওভারেই ২০৭ রান গুটিয়ে যায়।

বাজে ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়েছিল শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান; Image Credit: Reuters

আসরের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান এবং তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কা তো দাঁড়াতেই পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাকিস্তান ২১.৪ ওভারে মাত্র ১০৫ রানে সবক’টি উইকেট হারায়। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ১৩.৪ ওভারেই তা টপকে যায়। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা ব্যাট করেছিল মাত্র ২৯.২ ওভার। এতে তারা ১৩৬ রান করে, যা ১৬.১ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই টপকে যায় ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’রা। আসরের চতুর্থ ম্যাচেও আফগানিস্তান কোনো অঘটন ঘটাতে পারেননি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া সহজেই জয় তুলে নিয়েছিল।

বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচশেষে এখন পর্যন্ত মোট ১,৪২০ রান হয়েছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরের প্রথম চার ম্যাচে এর চেয়ে কম রান হয়েছিল শুধুমাত্র ১৯৭৯ সালে। সেইবারও বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে। ১৯৭৯ সালে প্রথম চার ম্যাচ থেকে ব্যাটসম্যানরা মোট ১,৩৬১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এখনকার তুলনায় সে সময়ে রান সংখ্যা কম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে ১৯৭৯ সালের রানের পাশাপাশি উইকেটসংখ্যা ছিল যেকোনো আসরের তুলনায় সবচেয়ে কম, চার ম্যাচে মোট উইকেট পড়েছিল ৪৬টি। ২০১৯ সালেও অবশ্য খুব বেশি উইকেট পড়েনি, প্রথম চার ম্যাচে মোট উইকেট পড়েছে ৫৬টি। কারণ, নিউ জিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেট হাতে রেখে বড় জয়ই পেয়েছিল।

১৯৭৯ সালে প্রথম চার ম্যাচ থেকে এসেছিল সবচেয়ে কম রান; Image Credit: S&G and Barratts/EMPICS Sport

তবে চলতি আসরে চার ম্যাচ শেষে বোলারদের ওভারপ্রতি রান খরচের হার ছিল ঊর্ধ্বগামী। তারা ওভারপ্রতি গড়ে রান খরচ করেছেন (৫.৮৬)। ওভারপ্রতি এর চেয়ে বেশি রান খরচ করার ঘটনা ঘটেছিল ২০১৫ সালের আসরে। সেইবার বোলারদের প্রথম চার ম্যাচে ইকোনমি রেট ছিল (৫.৯৫)। এই আসরে বোলারদের ইকোনমি রেট বেশি হওয়ার কারণ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের ঝড়ো ব্যাটিং।

আসরের প্রথম চার ম্যাচে কোনো ব্যাটসম্যান শতক হাঁকাতে পারেননি, সর্বোচ্চ ৮৯ রানের ইনিংস খেলেছেন দুইজন। ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস এবং অস্ট্রেলিয়া ডেভিড ওয়ার্নার। এর আগে বিশ্বকাপের আসরে প্রথম সেঞ্চুরিয়ানের সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৯৯ সালের আসরে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের প্রথম ১৪ ম্যাচে কোনো ব্যাটসম্যান শতক হাঁকাতে পারেননি। ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপ আসরগুলোতে প্রথম সেঞ্চুরিয়ানের জন্য অপেক্ষা করার ঘটনা নতুন না। ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপে প্রথম চার ম্যাচে শতক এসেছিল দুইটি, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে যার সংখ্যা মাত্র একটি। 

১৯৭৫ বিশ্বকাপে সুনীল গাভাস্কার; Image Credit: Getty Images

২০১৯ সালের বিশ্বকাপে প্রথম চার ম্যাচে দর্শকরা বিশ্বকাপের আমেজ খুঁজে পায়নি। প্রতিটি ম্যাচই শেষ হয়েছিল একপেশে ফলাফলে। একটি ম্যাচেও পুরো ১০০ ওভার খেলা হয়নি। নিউ জিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ দুইটিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের চেয়ে কম সময়ে শেষ হয়ে যায়। অবশেষে প্রাণহীন বিশ্বকাপের প্রাণ ফিরে বাংলাদেশের হাত ধরে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের শক্তিমত্তার উপর আস্থা রেখে খেলে মাশরাফি বাহিনী। অন্যান্য দলগুলো যেখানে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাট করে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল, সেখানে বাংলাদেশের ওপেনাররা দেখেশুনে খেলে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৬০ রান যোগ করেন। ওপেনারদের ভালো সূচনার পর অন্যান্য ব্যাটসম্যানরাও রানের দেখা পান। যার দরুন বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে ছয় উইকেটে ৩৩০ রান সংগ্রহ করে। পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার তো বাংলাদেশকে দেখে বাকি এশীয় দলগুলোকে শিক্ষা নিতেই বলে ফেলেছেন! 

ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে শুধুমাত্র নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানই জমা করেননি। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে যে ৩৫০ রানের ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিল সবাই, তারও সূচনা করে গিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যদিও কোনো ব্যাটসম্যান শতকের দেখা পাননি, তারপরও এইরকম দলগত পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপের উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। দলে কোনো এক্সপ্রেস পেসার এবং লেগ স্পিনার না থাকা সত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট তুলে নিয়ে তাদেরকে ৩০৯ রানের মধ্যে আটকে রেখে ২১ রানের দুর্দান্ত জয় তুলে নেয়।

Image Credit: AP

বিশ্বকাপের প্রথম চারটি নিষ্প্রাণ ম্যাচের পর সবাই যখন হতাশ হয়েছিল, তখনই ত্রাতা হয়ে আসে বাংলাদেশ। দর্শকদের দারুণ উত্তেজনাকর এক ম্যাচ উপহার দিয়ে শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেয়। অনেক প্রথমের এই ম্যাচে বাংলাদেশ শেষ হাসি হাসে। এই জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা সাকিব আল হাসান প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন এবং তিনি প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে টানা চার বিশ্বকাপে দলের উদ্বোধনী ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকানোর কীর্তি গড়েন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এর আগেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সুখস্মৃতি রয়েছে। ২০০৭ সালের পর ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে মাশরাফি, সাকিবের বাংলাদেশ। যার ফলে প্রথম এশিয়ান দল হিসাবে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুইবার পরাজিত করার কীর্তি গড়ল বাংলাদেশ।

এই জয়ে বিশ্বকাপের প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ অনেক নাকউঁচু ক্রিকেটবোদ্ধাদেরকেও সাময়িকভাবে মুখ বন্ধ করে দেয়। সম্প্রতি ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জেতা বাংলাদেশ যে বিশ্বকাপে খালি হাতে ঘরে ফিরবে না, তারই জানান দিয়েছে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই।

আজ ট্রেন্টব্রিজে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে নামবে টাইগাররা। গত ম্যাচের দারুণ এক জয়ের পর নিঃসন্দেহে তুঙ্গস্পর্শী আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে তারা। সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে এই ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কিছুর কথা ভাবতে পারছে না বাংলাদেশ, ভাবতে চাইছেও না। স্বপ্নটা যে এবার অনেক বড়! 

This article is in Bangla language. In this article, the facts about this world cup, on how it's gonna be a batsman-friendly one, is discussed. the article shows how Bangladesh brought the world cup back into life. 

Featured Image: The Daily Star

Related Articles