Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

২০১৯ বিশ্বকাপ, শ্রীলংকা সফর এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ

দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ দল নিয়েও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হলো দশ দলের মধ্যে অষ্টম হয়ে। ২০১১ কিংবা ২০১৫ – গত দুই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিলো তিনটি করে জয়, এবারও হয়নি তার ব্যতিক্রম। 

তিন জয়, একটি পরিত্যক্ত ম্যাচ আর পাঁচটি হার – পয়েন্ট টেবিলে এই হচ্ছে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান। কিন্তু বাস্তবে দেখলে, বিশ্বকাপে এবার বাংলাদেশ বলতে সাকিব আল হাসান আর একটুখানি মুস্তাফিজ, ব্যস, বাংলাদেশের বিশ্বকাপ এতটুকুই। 

আর বিশ্বকাপ-পরবর্তী শ্রীলংকা সফর? আরেক বিভীষিকা। সাকিব-মাশরাফিকে ছাড়া তামিম ইকবালের অধিনায়কত্বে অথৈ সাগরে ডুবে মরেছে বাংলাদেশ দল, একটি ম্যাচেও পারেনি বিন্দুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে, বলতে গেলে হেসেখেলেই সিরিজ জিতেছে শ্রীলংকা।

বিশ্বকাপে কোনটি ঠিকমতো করেছে বাংলাদেশ- সেই উত্তর খুঁজতে বেগ পেতে হলেও, কী কী ভুল করেছে বাংলাদেশ- সেই তালিকাটা বেশ লম্বা। ভুলের আলোচনার পাশাপাশি উঠে আসে কিছু প্রশ্নও। এই বিশ্বকাপ কি তবে বদলে দেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের গতিপথ? এই বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ঠিক কত বড় দাগ ফেলে যাবে ভবিষ্যতের জন্য? প্রশ্নগুলোর উত্তর অজানা, তবে বিশ্বকাপ-ব্যর্থতা বিশ্লেষণ করলে মিলতে পারে উত্তরগুলো খুঁজে পাবার পথ।

অন্ধকারাচ্ছন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ধ্রুবতারা হয়ে ছিলেন সাকিব; Image Source : Reuters

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ জিজ্ঞাসা করলে উত্তরটা আসে সহজেই, নখদন্তহীন বোলিং এবং ফিল্ডারদের ‘মাখন-মাখানো’ হাত।

প্রথমে আসা যাক বোলিং-এর ব্যাপারে। বিশ্বকাপজুড়েই বাংলাদেশ দল করে গেছে নির্বিষ বোলিং। শুরুর ওভারগুলোয় যেখানে অন্য দলগুলো চেষ্টা করেছে প্রতিপক্ষের ওপেনারদের প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে, বাংলাদেশ সেখানে চেষ্টা করেছে কেবল রান আটকানোর। যদিও বা কোনোভাবে উইকেটের সুযোগ তৈরি করা গেছে, ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাতে সে সম্ভাবনাও গুড়েবালি।

ডেভিড ওয়ার্নার, রোহিত শর্মা, বাবর আজম – এই তিনজনের ক্যাচই ফেলে দিতে সমর্থ হয়েছেন বাংলাদেশি ফিল্ডাররা। অথচ এমন নয় যে, ক্যাচগুলো খুব কঠিন ছিল! বরং, রোহিত শর্মা এবং বাবর আজমের ক্যাচ দুটোকে সহজ ভাষায় ‘লোপ্পা ক্যাচ’ বলা যায়। কিন্তু সে ক্যাচগুলোও ধরা গেলো না, বাংলাদেশেরও জেতা হলো না।

বোলিং-এর কথায় ফেরত আসা যাক। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজুর রহমান ২০ উইকেট নিয়েছেন বটে, কিন্তু তার অর্ধেকই শেষ দুই ম্যাচে। আগের ছয় ম্যাচ মিলিয়ে গোটা দশেক উইকেট নিলেও উইন্ডিজ ম্যাচ বাদে কোনোটায় আদৌ কোনো প্রভাব রেখেছেন কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তার চেয়ে বরং ধারাবাহিকভাবে কার্যকর ছিলেন সাইফউদ্দিন, যিনি সাত ম্যাচে তুলে নেন ১৪ উইকেট।

তবে বাংলাদেশ আসল সমস্যায় পড়েছে আরেক জায়গায়। বিশ্বকাপে দলের কাপ্তান মাশরাফির ফর্ম ছিল একদম তলানিতে।

গত চার বছরে বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম কারিগর ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে তিনিই বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। অথচ সেই ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিক পুরো বিশ্বকাপে নিতে পারলেন মাত্র এক উইকেট, তার গড় ছাড়িয়ে গেলো তিনশো। বাংলাদেশের বোলিং ঠিক কতটা দুর্বল, তা প্রকাশ পেলো পুরো বিশ্বের সামনে।

এই ছবিটি যেন মাশরাফির বিশ্বকাপের প্রতীকী ছবি; Image Source : Dhaka Tribune

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং প্রশংসা পাবে নিশ্চিতভাবেই, তবে তারপরও কয়েকজনকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। অবধারিতভাবে তাদের একজন- তামিম ইকবাল।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক তামিম, বিশ্বকাপের আট ম্যাচে রান করেছেন মাত্র ২৩১। তদুপরি সেই রান তিনি করেছেন মাত্র ৭০ স্ট্রাইকরেটে! এমন নয়, পিচ খুব কঠিন ছিল, কেননা তার সতীর্থদের মাঝে পাঁচ জনের স্ট্রাইকরেট নব্বইয়ের ওপরে, তিন জনের স্ট্রাইকরেট একশো-এর বেশি!

প্রচুর ডট বল খেলায় তামিমকে নিয়ে হাসাহাসিও হয়েছে প্রচুর। সেই পরিমাণ তাচ্ছিল্য তার প্রাপ্য কিনা, সে আলোচনা পরে করা যাবে; তবে নিশ্চিতভাবেই, তামিম এই বিশ্বকাপে ব্যর্থ। ব্যর্থ তার ওপেনিং পার্টনার সৌম্য সরকারও, যিনি কিনা আট ম্যাচে করেছেন মাত্র ১৬৬ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকা আর উইন্ডিজের সাথে শুরুর দিকে সৌম্যর ঝোড়ো ইনিংসেই দল বড় রানের দিকে ছুটেছে বটে, কিন্তু বাকি ছয় ম্যাচে তার অবদান শূন্যের কোঠায়। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে তিন উইকেট নিলেও সেটি তো তার মূল কাজ নয়। তার আসল কাজ দলকে উড়ন্ত সূচনা দেওয়া, যেখানে তিনি বেশিরভাগ ম্যাচেই ব্যর্থ।

সহজ হিসেবে বাংলাদেশের ব্যর্থতার দায় ছড়িয়ে রয়েছে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- তিন ডিপার্টমেন্টেই। তবে তুলনামূলক বিচারে, বোলিং বিভাগের দোষের পাল্লাটাই বেশি ভারী।

মুস্তাফিজ দারুণ করলেও বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার দায়ভারটা বোলিং ডিপার্ট্মেন্টেরই; Image Source : News18

শ্রীলংকা সিরিজে সাকিব-মাশরাফি ছিলেন না, ছিলেন না লিটন দাস এবং সাইফউদ্দিনও। তাতেই এহেন ভরাডুবি? কাপ্তান তামিম ইকবাল তিন ম্যাচ মিলিয়ে রান করতে পারলেন ২১, সৌম্য-সাব্বির একটি করে ফিফটি হাকালেও বাকি দুই ম্যাচে ব্যর্থ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তাকে নিয়ে তৈরি হওয়া প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেন না, মুস্তাফিজও ঠিক মুস্তাফিজ ছিলেন না আবারও। আর ফিল্ডিং? সে কথা না বলাই ভালো, একের পর এক ক্যাচ মিস, ফিল্ডিং মিস, দেখে অনেকটা মনে পড়ে যায় এক যুগ আগের বাংলাদেশের কথা। বোলিং আক্রমণের এতটাই বেহাল দশা, এক সময় দলের স্ট্রাইক বোলার বনে গিয়েছিলেন পার্ট-টাইমার সৌম্য সরকার! শ্রীলংকা সফরটায় তাই বাংলাদেশ দারুণ খেলে বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন ভোলার আশা নিয়ে গেলেও, ফিরতে হয়েছে আরও কয়েক ডালি দুঃস্বপ্ন নিয়ে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাই আশার আলোর চেয়ে এখন হতাশার আধারটাই বেশি। 

প্রশ্ন আসে বিশ্বকাপ-পরবর্তী বাংলাদেশ দলের গতিপথ নিয়ে, ভবিষ্যৎ যাত্রায় এর প্রভাব নিয়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেট কি গত বিশ্বকাপের পর নিজেদের খোলনলচে বদলে ফেলা ইংল্যান্ডের পথ ধরবে? নাকি এখন যে রাস্তায় আছে, সে রাস্তায়ই চলতে থাকবে?

এসবের উত্তর হতাশাজনক হওয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি আছে বদলে যাওয়ার সম্ভাবনাও। তবে বদলানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ মনে হয়, যখন দেখা যায়, দলের অধিকাংশ সদস্যেরই অষ্টম হয়ে বিশ্বকাপ শেষ করায় তেমন অনুতাপ নেই! তাদের হাবভাবে মনে হচ্ছে, “একটা বিশ্বকাপই তো, কী এমন ব্যাপার!”

আশ্চর্যজনকভাবে, বিসিবির চিন্তাভাবনায় খুব বেশি পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। স্টিভ রোডস, সুনীল যোশি, কোর্টনি ওয়ালশদের ছাঁটাই করেই যেন তাদের দায়িত্ব শেষ। দলে পরিবর্তন আনতে হবে- এরকম কোনো চিন্তা ভাবনাই যেন তাদের মধ্যে নেই। 

বিশ্বকাপ পরবর্তী শ্রীলংকা সিরিজের দল ঘোষণার পর থেকেই মনে হচ্ছিল, দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত বিসিবির চিন্তাভাবনায় নেই। অথচ ২০১৫ বিশ্বকাপ-হতাশার পরবর্তী সিরিজেই ইংল্যান্ড দলে এসেছিল আটটি পরিবর্তন, ইংলিশদের হাতে ছিল একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা।

শ্রীলংকা সফরে, দল চূড়ান্ত বাজে খেলার পর বিসিবির টনক নড়বে, সেই আশায় বুক বাঁধতে সকলেই চাইবেন। কিন্তু আশার মধ্যেও ভরসার অভাব যেন রয়েই যাচ্ছে।

২০১৫ বিশ্বকাপের ধাক্কা সামলে ভালোমত পরিকল্পনার ফল হিসেবেই এবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড!; Image Source : Hindustan Times

দলের সদস্যদের ভাবলেশহীনতা প্রসঙ্গে পুনরায় আসা যাক। মোসাদ্দেক হোসেন যেমন বলে দিলেন, “একটা বিশ্বকাপই শেষ না”। অবশ্যই একটা বিশ্বকাপেই সব শেষ হয়ে যায় না, কিন্তু আশাভঙ্গ হওয়ার অনুতাপের অনুপস্থিতিই সবচেয়ে বেশি চোখে লাগছে।

অধিনায়ক মাশরাফি, সাকিবের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বটে, কিন্তু দলের জবাবদিহিতার ব্যাপারটি কেন অনুপস্থিত? দলের কাউকে কি তাদের এই হতাশাজনক পারফরমেন্সের জন্য প্রশ্ন করেছে? দুঃখজনকভাবে, উত্তরটি না।

বিসিবির এখন যেটি দরকার, সেটি হলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। গত কয়েক বছরে বিসিবির পরিকল্পনার মূলমন্ত্র ছিল ‘ধর তক্তা, মার পেরেক’ ঘরানার। টি২০ বিশ্বকাপ আসছে? এক গাদা টি২০ খেলো! ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসছে? তো, খেলো ওয়ানডে!

এরকম পরিকল্পনা যে আপনাকে কোথাও বেশি দূর নেবে না, সেটা বুঝতে মহাকাশবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। দল সাজাতে হবে ২০২৩ বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করে। এমন সব খেলোয়াড়দের নিয়ে দল সাজাতে হবে, যারা পরের বিশ্বকাপে নিজেদের সেরাটা দিতে পারবেন।

এরকম ২০-২৫ জন খেলোয়াড়দের একটি পুল তৈরি করে তাদের নিয়মিত খেলার মধ্যে রাখাটাই হবে সুষ্ঠু পরিকল্পনা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, প্রতিভার সাথে প্রয়োজন হয় অভিজ্ঞতারও। হুট করে বিশ্বকাপের মঞ্চে নামিয়ে দিলেই দুর্দান্ত খেলবেন কোনো খেলোয়াড়- এরকম আশা করাটা নিতান্তই বাতুলতা।

অনেকে হয়তো জোফরা আর্চারের কথা তুলবেন। তাদের উদ্দেশ্যে পাল্টা প্রশ্ন, আর্চার যে কাউন্টি ক্রিকেট খেলেছেন, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট কি সেই মানের কাছাকাছিও রয়েছে? উত্তরটি যখন না, তখন এ ধরনের প্রশ্নও অবান্তর।

বিসিবিকে তাদের হুটহাট খেলোয়াড় নির্বাচন কিংবা বাদ দেওয়ার পন্থা থেকেও সরে আসতে হবে। কাউকে যদি পরবর্তী বিশ্বকাপের জন্য সঠিক খেলোয়াড় মনে হয়, তবে তাকে সুযোগ দিতে হবে প্রস্ফুটিত হবার। আবার স্রেফ ঘরোয়া ক্রিকেটে কেউ দুই-এক ম্যাচ ভালো খেললেই, তাকে দলে নিয়ে আসার অভ্যাসটিও ত্যাগ করতে হবে।

সাবেক বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এক

6 Head Coaches of @BCBtigers have departed over past 8 years – Siddons, Law,Pybus, Jurgensen, Hathurusingha, Rhodes. Coaches come and go but those you have chosen and appointed them, remain. WHY should the Board be above accountability?

— Saber H Chowdhury (@saberhc) July 11, 2019

“>টুইটে বলেছেন, গত আট বছরে বাংলাদেশ কোচ বদল করেছে ছয়বার, কিন্তু যারা কোচ নির্বাচন করেন তারা রয়ে গিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, বোর্ড কেন যাবতীয় প্রশ্নের উর্ধ্বে থাকবে?

মোটেও অবান্তর নয় তার বক্তব্য। কিন্তু যখন আপনি দেখবেন, টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা খেলোয়াড়দেরই বোর্ড প্রশ্ন করছে না, তখন সেই বোর্ডের কাছ থেকে জবাবদিহি আশা করাটাও অর্থহীন। 

সাবেক বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছেন বিসিবির জবাবদিহিতা নিয়ে; Image Source : Dhaka Tribune

তবে আশার ব্যাপার এই, বিসিবি কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। এই পরিবর্তনগুলো আসলেই এদেশের ক্রিকেটকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে কিনা, সে প্রশ্ন সময়ের জন্য তোলা থাক। তবে এবারের বিশ্বকাপটি যে বাংলাদেশের জন্য কোনো মধুর স্মৃতি হয়ে থাকবে না, সে বিষয়ে তো কোনো দ্বিমত নেই, তাই না?

 

This article points out what went wrong for Bangladesh in the ICC Cricket World Cup 2019 and tries to answer the question of what lies ahead. 

Feature Image : Reuters

Related Articles