Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ত্রিমুকুট জয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

ত্রিমুকুট। সাধারণত টেনিস, ব্যাডমিন্টনের মতো খেলায় এই শব্দের ব্যবহার চোখে পড়ে। একক, দ্বৈত, মিশ্র দ্বৈত ইভেন্ট জয়ের ঘটনাকেই ত্রিমুকুট বগলদাবা করা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্লাব ফুটবলেও আছে। সেখানে এমন সাফল্যের পরিচায়ক শব্দ হলো ‘ট্রেবল’। একই মৌসুমে ঘরোয়া লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং সুপার কাপ-জাতীয় তিন টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতাকে অ্যাখ্যায়িত করা হয় ‘ট্রেবল’ জয় হিসেবে। সেই অর্থে ক্রিকেট খেলাটায় ত্রিমুকুট বা ট্রেবল শব্দগুলোর প্রচলন খুব কম।

গত ২২ ডিসেম্বর পৌষের শীতের সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হারিয়েছে ত্রিমুকুট জয়ের সুবর্ণ সুযোগ। নতুন ইতিহাস, অনন্য কীর্তি গড়ার মিশন এবারও পূর্ণতা পেলো না। তীরে এসে তরী ডুবলো আবারও, অধরাই থেকে গেল অসামান্য সেই অর্জন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হোম সিরিজে দুই ফরম্যাটেই জিতেছিলো বাংলাদেশ। টেস্টে ক্যারিবিয়ানদের ২-০ তে এবং ওয়ানডেতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছিলো টাইগাররা। সিলেটে আট উইকেটের হার দিয়ে শুরু করলেও মিরপুরে গত ২০ ডিসেম্বর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো স্বাগতিকরা। দাপুটে পারফরম্যান্সে ৩৬ রানের জয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছিলো সাকিব আল হাসানের দল। আর তাতেই মঞ্চ তৈরি হয়েছিলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরেকটি ইতিহাস গড়ার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশে বা দেশের বাইরে এক সিরিজে কোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তিন ফরম্যাটেই সিরিজ জেতা হয়নি বাংলাদেশের। টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পর থেকে শুরু করে গত ১৮ বছর ধরে এমন অর্জন অধরাই থেকে গেছে। ঘরের মাঠে উইন্ডিজদের বিরুদ্ধে এই কীর্তি গড়ার সুযোগ ছিলো, টি-টোয়েন্টি সিরিজটা জিতলেই তা সম্পন্ন হতো। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ৫০ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। তাতেই টেস্ট-ওয়ানডে হারলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজটা ২-১ এ জিতে গেল ক্যারিবিয়ানরা। খুব কাছে এসেও আরেকবার সুযোগ হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের।

খুব কাছে এসেও আরেকবার সুযোগ হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের; Image Credit: RANDY BROOKS

এভিন লুইসের বিস্ফোরক, দানবীয় ব্যাটিং থামিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছিলো স্বাগতিকরা। আড়াইশ’ রানের ভিতে চড়ে বসা সফরকারীদের শেষ অব্দি ১৯০ রানে অলআউট করেছিলো সাকিব বাহিনী। লিটন দাসের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনাও পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচের মাঝপথে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে হওয়া আট মিনিটের বিরতিতে ছন্দপতন হয় স্বাগতিকদের। মিডল অর্ডারেও দায়িত্ব নিতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যান, যার ধাক্কা হিসেবে বছরের শেষ ম্যাচে পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশ দলকে।

নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে অতীতে ১৭বার (উইন্ডিজ সিরিজের আগে) প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তিন ফরম্যাটে খেলেছিলো বাংলাদেশ। সব ফরম্যাটে সিরিজ জেতা হয়নি কখনোই, এবার ১৮ তম বারের চেষ্টাও বিফলে গেলো। ঘরের মাঠে বলেই ইতিহাস গড়ার এত কাছ থেকে ফিরে আসার কষ্টটা বেশি। তিন ফরম্যাটেই জিততে পারলে সিরিজটা অবশ্যই সোনায় সোহাগা বনে যেত, গৌরবের অধ্যায় হিসেবে টিকে থাকতো।

তিন ফরম্যাটে খেলার সিরিজগুলো

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এক সিরিজে তিন ফরম্যাটেই খেলা শুরু করেছিলো বাংলাদেশ ২০০৮ সালে। সেবার নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ১টি টি-টোয়েন্টি, ২টি ওয়ানডে এবং ২টি টেস্ট খেলেছিলো টাইগাররা। বলা বাহুল্য, সবগুলো ম্যাচই জিতেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।

Image Credit: Gallo Images

তবে ঠিক পরের সিরিজেই তিন ফরম্যাটে সিরিজ জেতার সুযোগ এসেছিলো বাংলাদেশের সামনে। মোহাম্মদ আশরাফুলকে সরিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার হাতে নেতৃত্বের ভার তুলে দিয়েছিলো বিসিবি ২০০৯ সালে। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই অধিনায়ক মাশরাফি যান ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। জুলাই-আগস্টের ওই সফরে উইন্ডিজরা নামিয়ে দিয়েছিলো খর্বশক্তির একটি দল। প্রথম টেস্টেই চোটে পড়েন মাশরাফি। তাকে ছাড়াই পরে সাকিবের নেতৃত্বে টেস্টে ২-০ এবং ওয়ানডেতে ৩-০ তে সিরিজ জিতেছিলো বাংলাদেশ, কিন্তু সিরিজের শেষান্তে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে হেরে যায় সাকিবের দল।

Image Source: Cricinfo

আরও একবার এমন সুযোগ পেয়েছিলো বাংলাদেশ, সেটা ২০১৫ বিশ্বকাপের পরপরই। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাশরাফির নেতৃত্বে তিন ওয়ানডেতে ৩-০ ও একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে জিতেছিলো টাইগাররা। সিরিজের শেষদিকে ছিল দুই টেস্ট। খুলনায় প্রথম টেস্টে তামিম ইকবালের ডাবল সেঞ্চুরি ও ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরিতে দাপুটে ড্র নিশ্চিত করেছিলো মুশফিকুর রহিমের দল। তামিম-ইমরুল গড়েছিলেন ৩১২ রানের মহাকাব্যিক এক জুটি।

তামিম-ইমরুলের সেই মহাকাব্যিক জুটির পর; Image Credit: Munir Uz Zaman

খুলনায় ওই ড্রয়ের পর ঢাকার মিরপুরে চতুর্থ দিনে ৩২৮ রানে ম্যাচ হেরে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। আজহার আলীর ডাবল সেঞ্চুরির পর লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ’র ঘূর্ণিতে আর পেরে ওঠেননি মুশফিক-তামিমরা। সীমিত ওভারের দুই ফরম্যাট হারলেও ১-০ তে টেস্ট সিরিজ জিতেই দেশে ফেরে মিসবাহ-উল হকের দল। পাকিস্তানের মান বাঁচানো টেস্ট সিরিজ জয়টাই বাংলাদেশকে তিন ফরম্যাটে না জেতার আক্ষেপে পুড়িয়েছিলো সেবার।

সব ম্যাচ হারের পাঁচ সিরিজ

পাঁচটি সিরিজ ছিল, যেখানে প্রতিপক্ষের কাছে তিন ফরম্যাটে সব ম্যাচ হেরেছিলো বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে একমাত্র টি-টোয়েন্টি, ৩ ওয়ানডে ও একমাত্র টেস্টে স্বাগতিকদের কাছে হেরেছিলো বাংলাদেশ। পরের বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হোম সিরিজেও এমনটা হয়েছিলো। ১টি-টোয়েন্টি, ৩ ওয়ানডে ও ২ টেস্ট জিতেছিলো পাকিস্তান।

দলে ফিরেই নিল ব্রুম হাঁকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি; Image Credit: Getty Images

২০১৪ সালটা বাংলাদেশের জন্য ছিল কঠিন সময়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বছর জুড়ে ব্যর্থতার বৃত্তে সময় কেটেছে মুশফিকের নেতৃত্বে। বছরের শুরুতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে ২ টেস্ট, ২ টি-টোয়েন্টি, ৩ ওয়ানডেতে হেরেছিলো বাংলাদেশ। পরে ২০১৬-১৭ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে আবারও ৩ ওয়ানডে, ৩ টি-টোয়েন্টি, ২ টেস্টে হেরেছিলো টাইগাররা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটাও বাজে কেটেছিলো। এই সফরশেষে বাংলাদেশের হেড কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। প্রোটিয়াদের কাছে বিধ্বস্ত হওয়া সফরে ২ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে, ২ টি-টোয়েন্টি হেরেছিলো বাংলাদেশ।

সোহানের উইকেটের মতোই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স; Image Credit: Matthew Lewis

২০১৪ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছিলো বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের কাছে ৩ ওয়ানডে, ২ টেস্ট হেরেছিলো দলটি। তিন ফরম্যাটে পরাজয়ের লজ্জা থেকে সে যাত্রা নিস্তার পাওয়া গিয়েছিলো একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি বৃষ্টিতে পন্ড হওয়ায়।

সব ফরম্যাটে ড্র

সব ম্যাচ জেতা হয়নি, এমন সিরিজের কথা গেলো। সব ম্যাচ হারা হয়েছে, এমন সিরিজের কথাও হলো। আবার তিন ফরম্যাটেই সিরিজ ড্র করার নজিরও রয়েছে বাংলাদেশের। সেটা ২০১৭ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে, যেই সফরে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছিলেন মাশরাফি। সফরে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ২ টেস্টে ১-১, ৩ ওয়ানডেতে ১-১ (একটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত), এরপর ২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজও ১-১ এ ড্র করেছিল বাংলাদেশ।

এই সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে যবনিকা টানেন মাশরাফি; Image Credit: ICC

অবশিষ্ট সাত সিরিজ

আর সাতটি সিরিজ ছিল, যেখানে তিন ফরম্যাটের একটি সিরিজ জয়, ড্র বা অন্তত একটি ম্যাচ জিতেছিলো বাংলাদেশ। ২০১১ সালের অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হোম সিরিজের শুরুতে একমাত্র টি-টোয়েন্টি জিতেছিলো বাংলাদেশ মুশফিকের নেতৃত্বে। পরে ৩ ওয়ানডে, ২ টেস্ট জিতে নেয় ক্যারিবিয়ানরা। ২০১২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হোম সিরিজে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ৩-২ এ জিতেছিলো বাংলাদেশ, কিন্তু একমাত্র টি-টোয়েন্টি এবং ২ টেস্ট জিতেছিলো উইন্ডিজরা।

২০১৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে ২ টেস্ট ১-০ তে, একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিকদের কাছে হেরেছিলো বাংলাদেশ। তবে ৩ ওয়ানডের সিরিজটা ১-১ এ ড্র হয়েছিলো। ওই সফরেই গলে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক।

Image Credit: AFP

একই বছরের এপ্রিল-মে মাসে জিম্বাবুয়ে সফরে ২ টেস্ট ১-১ ড্র, দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১ এ ড্র করেছিলো বাংলাদেশ। তবে ৩ ওয়ানডের সিরিজটা ২-১ এ জিতেছিলো জিম্বাবুয়ে। ২০১৩ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হোম সিরিজে ৩ ওয়ানডের সিরিজটা ৩-০ তে জিতেছিলো বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে ২ টেস্ট ০-০ ড্র হয়েছিলো। একমাত্র টি-২০তে জয় পেয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হোম সিরিজে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-১ এ জিতেছিলো বাংলাদেশ। দুইটি টি-টোয়েন্টি দক্ষিণ আফ্রিকা জিতলেও বৃষ্টির কারণে ২ টেস্ট ০-০ ড্র হয়েছিলো।

চলতি বছরের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দারুণ সাফল্য পেয়েছিলো বাংলাদেশ। ২ টেস্ট ক্যারিবিয়ানরা জিতলেও বাংলাদেশ ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ এবং ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছিলো।

Image Credit: UNB

সাধারণত তিন ফরম্যাটে খেলার সিরিজ কমই পায় বাংলাদেশ। সম্প্রতি অনেক সাফল্যের রথে হেঁটে চলা বাংলাদেশের জন্য এই অর্জনটা হতে পারতো উন্নতির ধারাবাহিকতাকে আরেক ধাপে উন্নীত করার মতোই। হয়তো কোনো সময় এই কীর্তির ধারক ঠিকই হবে বাংলাদেশ। আপাতত এতটুকু পরিষ্কার, এক সিরিজে প্রতিপক্ষকে তিন ফরম্যাটেই সিরিজ হারানোর অভিজাত ক্লাবে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশের অপেক্ষাটা এখন আরও দীর্ঘায়িত হলো।

This article is in Bangla language. It lists the occasions when Bangladesh lost opportunities to win a treble. 'Treble' in cricket refers to the consecutive series win in all formats against an opposition.

Feature Image:  Getty Images

Related Articles