Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হাথুরুকে চাপের রং দেখাতে হবে

ম্যাচটিকে অনেকেই বলছেন ‘সেমিফাইনাল’।

আসলেও ব্যাপারটি প্রায় তা-ই। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচে যে জিতবে, সে ফাইনাল খেলবে। এই ম্যাচের আগে দুই দলের শিবিরেই চাপ থাকার কথা। বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেছেন, চাপ থাকবে শ্রীলঙ্কার ওপর। কারণ, তাদের ঘরের মাঠে খেলা।

এর জবাবে শ্রীলঙ্কার এখনকার কোচ, সাবেক বাংলাদেশী কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে বলেছেন, চাপ কী জিনিস, তা-ই তিনি জানেন না। চাপের রং কী, সেটাই কখনো দেখেননি।

এবার বাংলাদেশ দলকে তাহলে চাপের রংটা কী, সেটা দেখিয়ে দিতে হবে!

আমরা আলোচনাটা আরেকটু বড় করার আগে রিয়াদ আর হাথুরুসিংহের কথা দুটো দেখে নেই।

রিয়াদ বলেছেন,

“নতুন দিনে সবকিছুই নতুন হবে। তবে চাপের কথা বললে হয়ত সেটা শ্রীলঙ্কাই অনুভব করবে। তাদের ঘরের মাঠ। তাদের দর্শক। প্রত্যাশা বেশি। আবার দর্শকের সমর্থন একটা শক্তিও। আমাদের জন্য নতুন একটি খেলা। নতুনভাবে মাঠে নেমে পরিকল্পনা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি, সেটা নিয়েই ভাবতে হবে।”

রিয়াদ বলছেন, চাপ শ্রীলঙ্কার ওপর; Source: The Daily Star

জবাবে হাথুরুসিংহে বলেছেন,

“আমি কখনো চাপের রং দেখিনি। চাপ কাকে বলে আমি জানি না। এটা স্রেফ আরেকটা ম্যাচ খেলার চেয়ে বেশি কিছু নয়। এটা ভার্চুয়াল সেমিফাইনাল হোক আর না-ই হোক, আমাদের ম্যাচটা জিততে হবে। আমার এবং আমার দলের জন্য এটাই শেষ কথা। ব্যক্তিগতভাবে কে কী করবে, আমি জানি না। তবে এটা বলতে পারি যে, আমাদের দলীয় মনোভাব হলো, আমরা প্রথম ম্যাচটা যেভাবে খেলেছি, এই ম্যাচটাও সেভাবেই খেলব।”

চাপের রং কী, তা-ই জানেন না হাথুরুসিংহে; Source: Cricinfo

এই দুজন যেটি করলেন, সেটাকে একটা মনস্তাত্বিক খেলাও বলা চলে।

বাংলাদেশ দল ও হাথুরুসিংহের মধ্যে একটা মানসিক লড়াই যে থাকবে, সেটা নতুন কিছু নয়। হাথুরুসিংহে বিখ্যাত কোচ হয়ে উঠেছেন এই বাংলাদেশ দলের সাথে কাজ করেই। শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটার ছিলেন। একসময় শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলে ‘ছায়া কোচ’ হিসেবে কাজ করেছেন। সে দফা বোর্ডের সাথে মনোমালিন্য হলে শ্রীলঙ্কায় তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এরপর হাথুরুসিংহে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়।

অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া দলগুলোর সাথে ভালো করছিলেন কোচ হিসেবে। সেখান থেকে ২০১৪ সালের শেষদিকে আসেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশ দলকে নিয়ে অসামান্য কিছু সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এই দলকে নিয়ে দেশের মাটিতে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট জিতেছেন। এই দলের সাথেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলেছেন।

শেষাবধি বাংলাদেশ থেকে তার বিদায়টা অবশ্য খুব মসৃণ হয়নি। আগে থেকে কিছু না জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তারপর একটি চিঠি পাঠিয়ে পদত্যাগ করেছেন। সেই সাথে কিছু কথোপকথনও দুই পক্ষের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের সাথে হাথুরুসিংহের একটা দূরত্বের খবর প্রায়ই মিডিয়াতে এসেছে।

এরপর আবার দুই পক্ষ যখন মুখোমুখি হয়েছে, তখন দুই ধরনের ফলাফল এসেছে।

প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে গুড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টেই আবার হাথুরুসিংহের শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে পরপর দুই ম্যাচ হারিয়ে ট্রফি জিতেছে, টেস্ট জিতেছে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে। লড়াইটা এখানেই শেষ হয়নি।

বাংলাদেশ আবার পরপরই গেছে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলতে।

এমনিতেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের রেকর্ড যাচ্ছেতাই। তার সাথে যোগ হয়েছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা পরাজয়ের ক্ষত। ফলে এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরার লোক কম ছিল। এর সাথে আরও দুটো বড় ধাক্কা। প্রথমত দলে নেই কোনো স্থায়ী কোচ। আরেকটি বড় ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ দলের বড় ভরসা সাকিব আল হাসান দলে ছিলেন না।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ তো ব্যাকফুটে আগে থেকেই।

সেই বাংলাদেশ আবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ড করে জিতল। যে বাংলাদেশ দল আগে কখনো টি-টোয়েন্টিতে দুইশ’ রান করতে পারেনি, তারা কিনা ২১৪ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতল! ফলে লড়াইটা আরও জমে উঠল।

শেষ ম্যাচটা রেকর্ড করে জিতেছে বাংলাদেশ; Source: Bangladesh Cricket Board

পরাজয়টা শ্রীলঙ্কাকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে। হাথুরুসিংহে এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, এরকম একটা ম্যাচ তার দলের পক্ষে হারা সম্ভব। আজকের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন,

“দ্বিতীয় ম্যাচটা আমাদের একটু চাপে ফেলে দিয়েছে। আপনি ২১৪ রান করে রোজ রোজ পরাজয় দেখতে পাবেন না। তারা আমাদের বোলারদের চাপে ফেলে দিয়েছে। আমার মনে হয় না, আমরা খুব একটা ভালো বল করেছি। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। এটাও মানতে হবে যে, সব ক’জন বোলার ওভারপ্রতি ১০ রানের বেশি করে খবর করবে, এটা পুরো ক্যারিয়ারে খুব একটা দেখতে পাবেন না। তারপরও তারা যেভাবে ব্যাটিং করেছে, সেজন্য আমাদেরকে বাংলাদেশকেই কৃতিত্ব দিতে হবে।”

এখন সেই লড়াই একেবারে টক্করে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে হারটা মানতে পারছেন না হাথুরুসিংহে; Source: Cricketcountry

শুক্রবার দুই দলের জন্য এই টুর্নামেন্টের বিচারে জীবন-মরণ ম্যাচে পরিণত হয়েছে। ম্যাচটি সম্পর্কে হাথুরুসিংহে বলছিলেন,

“এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলা। কিন্তু আমরা স্বাভাবিকভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সুবিধা হলো, আমরা দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে সম্প্রতি অনেক ম্যাচ খেলেছি। আমরা ওদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানি। আবার ওরাও আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। ফলে চমকে দেওয়া বলতে যা বোঝায়, সেটা আমরা পরস্পরকে উপহার দিতে পারব না।”

এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশ শিবিরে বড় একটা খবর এসে পৌঁছেছে, সাকিব আল হাসান খেলার জন্য পৌঁছে গেছেন দলের কাছে।

সাকিব ঢাকায় অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে আঙুলে চোট পান। তার সেই ধাক্কা অল্পেই কেটে যাবে বলে মনে করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, সাকিব প্রথম টেস্ট না হলেও দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারবেন। সেটা হলো না। এরপর সাকিব মিস করলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ।

শুরুতে মনে করা হয়েছিল, শ্রীলঙ্কায় হয়তো শেষদিকে কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারবেন সাকিব। কিন্তু সে আশাও একসময় ম্লান হয়ে গেল। সাকিব চিকিৎসা করাতে গেলেন অস্ট্রেলিয়াতে। সাকিবের বদলে টুর্নামেন্টে অধিনায়ক করে দেওয়া হলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। সাকিবের আশা সকলে ছেড়েই দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ হয়ে এসেছেন সাকিব; Source: The Daily Star

সেই সাকিব হঠাৎ করেই ফিরে এলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলের সাথে যোগ দেওয়ার কথা তার। শ্রীলঙ্কা থেকে দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠেও দেখা যেতে পারে এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। সুজন জানান,

“আমরা সাকিবের ব্যাপারে আগেই চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু উনার ইনজুরিটা একটু সেনসিটিভ ছিল, এজন্য আমরা তাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠাই। অস্ট্রেলিয়ার ডাক্তার গ্রেগ হয় উনাকে দেখেন উনার চিকিৎসা এবং মেডিক্যাল এডভাইস নিয়ে উনি দেশে ফিরেন। আমরা আশা করছি আজকেই জাতীয় দলের সঙ্গে যোগদান করবে। আমরা তার জন্য যে অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছিলাম তার সঙ্গে যোগাযোগ আছে আমাদের মেডিক্যাল টিমের। হি ইজ কমফোর্টেবল। খেলতে পারবেন এ ধরনের একটা এডভাইজ আছে। আমরা আশা করছি সাকিব জাতীয় দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারবে। প্রাথমিক পর্যায়ে কলোম্বোতে থাকা পার্ট অব আওয়ার প্ল্যানিং।”

সুজনের আশাবাদ সত্যি হলে শ্রীলঙ্কার অন্তত একটা চমক পাওয়ার কথা। আর এই চমক থেকেই কে জানে, চাপটা তৈরি হয় কিনা।

চাপের তো একটা রং আছে। বাংলাদেশ এখন সেই রংটা ফোটাতে পারে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

ফিচার ইমেজ: Cricinfo

Related Articles