Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাংলাদেশ বনাম নেপাল: ফাইনালের ব্যবচ্ছেদ

গত ২৯ মার্চ নেপালের তিন জাতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের বিজয়মঞ্চ ছিল প্রস্তুত, কেননা এই ম্যাচটি জিততে পারলেই ঘুচে যাবে বাংলাদেশের দীর্ঘ ১৮ বছরের শিরোপা-খরা। কিন্তু স্বাগতিক দর্শকদের সামনে উজ্জীবিত হয়ে দুর্দান্ত ফুটবল খেলা নেপালের সাথে কোনোদিকেই পেরে উঠলেন না বাংলাদেশের ফুটবলাররা, বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে গেল ১-২ ব্যবধানে। ২০১৫ সালের ঘরের মাঠের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের পর আরেকবার সন্তুষ্ট থাকতে হলো রানার্সআপ শিরোপা নিয়েই।

টুর্নামেন্টের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের কোচ জেমি ডে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। তার কাছে এই টুর্নামেন্টে ট্রফি জয়ের চেয়ে মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল তরুণ ফুটবলারদের পরখ করে দেখা। এজন্য এই টুর্নামেন্টের ফলাফলের চেয়েও জেমির চোখ ছিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আফগানিস্তান, ভারত এবং ওমানের বিপক্ষে ম্যাচের দিকে। এই টুর্নামেন্টে তরুণ ফুটবলারদের কেমন পরখ করে দেখলেন জেমি? চলুন দেখা যাক।

নেপালের তিন জাতির টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে কিরগিজস্থান অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সাথে ১-০ গোলে জয় দিয়ে শুরু করলেও বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স মোটেও আশাজাগানিয়া ছিল না। পরের ম্যাচে নেপালের সাথেও বাংলাদেশ ০-০ গোলে ড্র করে। ফাইনাল ম্যাচে নেপালের সাথে বাংলাদেশের ফুটবলারদের পারফরম্যান্স ছিল চরম হতাশাজনক। খেলোয়ারদের বেসিক টেকনিক্যাল স্কিল কিংবা বাজে পজিশনিং সেন্স নিয়ে বলা যেতেই পারে, কিন্তু জেমি ডে’র টিম সিলেকশন এবং ট্যাকটিক্সও ছিল কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ। 

নেপালের সাথে ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কেমন ছিল? কেমন ছিল বাংলাদেশের একাদশ? ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে কাছাকাছি দল (নেপালের ফিফা র‍্যাঙ্কিং ১৭১ এবং বাংলাদেশের ফিফা র‍্যাঙ্কিং ১৮৬) হওয়ার পরও নেপালের সাথে অসহায় আত্মসমর্পণের কারণই বা কী ছিল? চলুন দেখে নেওয়া যাক।

নেপালের সাথে ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশ ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলতে নামলেও অন দ্য ফিল্ডে ৪-২-২-২ অথবা ৪-২-৪ ফর্মেশনেই বেশি দেখা গেছে। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে সুমন রেজার জায়গায় টুটুল হোসেন বাদশা নামলে বাংলাদেশের ফর্মেশন ৩-৪-৩ এ পরিবর্তিত হয়।

ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশের লাইনআপ; image source: sofascore

এবার টিম লাইনআপে আসা যাক। সেন্টারব্যাক রোলে ছিলেন রিয়াদুল হাসান রাফি এবং মেহেদি হাসান, যাদের মধ্যে কারোরই তেমনভাবে বল-প্লেয়িং অ্যাবিলিটি নেই। এর মধ্যে মেহেদী অনেক সময়ই তার ক্লাব মুক্তিযোদ্ধায় ফুলব্যাক রোলে খেলায় তার ম্যান-মার্কিং অ্যাবিলিটিও ছিল ভয়াবহ। দুই ফুলব্যাক সাদ উদ্দীন এবং রিমন হোসেন দুজনই মূলত উইঙ্গার। তবে দু’জনকেই তাদের ক্লাব আবাহনী এবং বসুন্ধরা কিংসে ফুলব্যাক রোলেই খেলতে দেখা যায়। কিন্তু সাদ এই টুর্নামেন্টে কিরগিজস্থান অনূর্ধ্ব-২৩ এবং নেপাল উভয় ম্যাচেই রাইট উইঙ্গার রোলে খেলেছিলেন। এ কারণে ফাইনাল ম্যাচে রাইটব্যাক রোলে খেলার প্রভাবও দেখা গেছে সাদের খেলায়। মিডফিল্ডে ডাবল পিভট রোলে ছিলেন জামাল ভূঁইয়া এবং মানিক মোল্লা। সাধারণত ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলা ডাবল পিভটের একজন হয়ে থাকেন ডিপ-লায়িং প্লেমেকার এবং অন্যজন বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার। কিন্তু জামাল এবং মানিক দু’জনই একই টাইপের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হওয়ার কারণে মিডফিল্ড থেকে একেবারেই বল প্রোগ্রেস হয়নি। অথচ মানিকের জায়গায় সোহেল রানা কিংবা মাসুক মিয়া জনি খেললে বাংলাদেশের মিডফিল্ড অনেক বেশি কার্যকর হতো। ইনজুরি থেকে ব্যাক করার পর জনি অনেকটা স্লো হয়ে গেলেও তার বল-হোল্ডিং অ্যাবিলিটি কিংবা পজিশন সেন্স মানিকের চেয়ে এখনো অনেক এগিয়ে। আর ফরোয়ার্ড বল প্রোগ্রেসিংয়ে এই টিমে নিঃসন্দেহে সেরা ফুটবলার সোহেল রানা, অথচ ফাইনাল ম্যাচে এক মিনিটের জন্যই সোহেলকে মাঠেই নামালেন না জেমি। ফরোয়ার্ড লাইনে সুমন রেজা এবং মেহেদী হাসান রয়েলের মধ্যে কেউই বোধহয় তাদের পজিশন নিয়ে পরিষ্কার ছিলেন না, যে কারণে দু’জনের কেউই ঠিকভাবে মিডফিল্ডে ড্রপ করে নেপালের ওভারলোড ব্রেক করার চেষ্টাও করেননি কিংবা কাউকেই অপোনেন্ট থার্ডে লাইন হোল্ড করে থ্রেট তৈরির চেষ্টাও করতে দেখা যায়নি। রয়েলের জায়গায় বিপলু থাকলে হয়তো ইন-বিটুইন দ্য লাইনের গ্যাপ খুব ভালোভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হতো।

ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ডিফেন্সলাইন ছিল ছন্নছাড়া। নেপালের দিকে যদি খেয়াল করি, বিল্ডআপের সময় নেপালের দুই ফুলব্যাক হাইলাইনে চলে যাচ্ছিলেন এবং দুই সেন্টারব্যাক কিছুটা ওয়াইড হয়ে যাচ্ছিলেন। তখন সেন্টার মিডফিল্ডার তেজ তামাং নিচে ড্রপ করে সেই গ্যাপ কভার করে বিল্ডআপ কন্টিনিউ করছিলেন। অফ দ্য বল পজিশনে নেপালের ডিফেন্ডাররা খুব সুন্দরভাবেই ফোর ম্যান ব্যাকলাইন মেনটেইন করছিলেন।

এই ছবিতে বাংলাদেশের ডিফেন্সিভ লাইন দেখা যাচ্ছে। যেখানে চারজন ডিফেন্ডারের পজিশনই ছিল ছন্নছাড়া, সম্পূর্ণ ম্যাচেই স্পেসিফিক ডিফেন্সিভ লাইন মেইনটেইন করতে পারেননি (রিমনকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে না)।

এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপের সময়ই লেফটব্যাক রিমন অপোনেন্ট থার্ডে চলে গিয়েছেন। ফলে লেফট সেন্টারব্যাক মেহেদী হাইলাইনে উঠে আসলে নেপালের ফ্রন্টলাইনের প্রেসিংয়ের সামনে কোনো পাসিং অপশন খুঁজে পায়নি। তখন উইঙ্গার রাকিবও নিচে ড্রপ করে মেহেদীর পাসিং অপশন বাড়ানোর জন্য। কিন্তু নেপালের ফরোয়ার্ডদের হাই-ইন্টেনসিভ প্রেসিংয়ের সামনে মেহেদী ব্লাইন্ড লং বল খেলতে বাধ্য হন এবং বাংলাদেশ বল পজেশন লস করে।

বাংলাদেশের দুই সেন্টারব্যাকের কেউই বল প্রোগ্রোসর না হওয়ায় ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপের সময় জামাল ভূঁইয়া নিচে ড্রপ করে বিল্ডআপে সাহায্য করছিলেন। যে কারণে সেন্টারব্যাকদের বল পায়ে দুর্বলতা খুব একটা চোখে পড়ছিল না।

এই ছবিটা ভালোভাবে বোঝার জন্য একটু আগের ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপের সময় জামাল দুই সেন্টারব্যাকের মাঝে ড্রপ করে থ্রি-ম্যান ব্যাকলাইন ক্রিয়েট করছিলেন যেহেতু দুই সেন্টারব্যাকের মধ্যে কেউই বল হোল্ডিংয়ে দক্ষ না৷ কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে জামাল নিচে ড্রপ না করে উপরেই পজিশন হোল্ড করে রয়েছেন। ফলে দেখা যাচ্ছে, দুই সেন্টারব্যাকের মধ্যে বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়ে গেছে। তখন রাফির লুজ পাস খুব সহজেই অঞ্জন বিস্তা ইন্টারসেপ্ট করে ফেলেন এবং নেপাল খুব ভালো একটা আক্রমণের সুযোগ পেয়ে যায়।

এখানে নেপালের কাউন্টার অ্যাটাকের সময় বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের পজিশনিং দেখা যাচ্ছে। এখানে দেখা যাচ্ছে যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরেও রাইটব্যাক রোলে থাকা সাদ নিচে ড্রপ করে নিজের পজিশন হোল্ড না করে নেপালকে বক্সের লেফট সাইডে ফ্রি স্পেস তৈরি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে সাদের পজিশনিংয়ের খুব বেশি দোষ দেওয়াও যায় না৷ আগের দুই ম্যাচেই রাইট উইঙ্গার রোলে খেলে হঠাৎ করে এরকম ফাইনাল ম্যাচে রাইটব্যাকে শিফট হলে যে কারোরই পজিশনিংয়ে সমস্যা হবারই কথা!

এই ছবিতে রিমন নিজের মার্কারের থেকে অনেক দূরে পজিশন নিয়ে তাকে মুক্তভাবে বল কন্ট্রোল করার সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং একই সাথে তার মুভমেন্টও অনেক লেইট ছিল, যে কারণে নেপালের উইঙ্গার সুনীল বাল খুব সহজেই বলের কন্ট্রোল নিতে পেরেছেন।

এই ছবির শুরুতে নেপালের ফরোয়ার্ড রোহিতকে রিমন দুর্বলভাবে মার্ক করার কারণে রোহিত স্পেস পেয়ে লো ক্রস করেন। অনেকটা স্পেস পাওয়ার পরেও মেহেদীর একেবারেই দুর্বল ক্লিয়ারেন্স করেন, যে কারণে বক্সের বাইরে নেপালের মিডফিল্ডার বল রিগেইন করে আবার অ্যাটেম্পট নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায় এতে।

নিজেদের থার্ডে বল রিট্রিভ করে জামাল বল নিয়ে কুইক ফরোয়ার্ড মুভ করেন। কিন্তু তার সামনে কোনো খেলোয়াড়ই ফরোয়ার্ড রান নেননি। এক্ষেত্রে রাইট সাইডে প্রচুর ফ্রি স্পেস ছিল। রাইট উইং ধরে কেউ ফ্রি রান নিলে জামালের থ্রু থেকে একটা ভালো কাউন্টার অ্যাটাক করার সুযোগ ছিলে। কিন্তু কাউকে না পাওয়াতে বাধ্য হয়ে জামাল লেফট সাইডে রিমনকে ব্যাকপাস দেন।

টিমের দুইজন মিডফিল্ডারই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এবং মানিক মোল্লার দুর্বল অফ দ্য বল মুভমেন্টের কারণে পুরোটা ম্যাচ ধরেই এভাবে নেপাল মিডফিল্ডে ওভারলোড করে পজিশন রিগেইন করার চেষ্টা করেছে। এজন্য বাংলাদেশের মিডফিল্ডাররা সেন্টার এরিয়া দিয়ে কোনো কার্যকর বিল্ডআপ আক্রমণ করার সুযোগও তৈরি করতে পারেননি।

 অপোনেন্ট থার্ডে প্লেয়ার না থাকায় স্পেস পাওয়ার পরও এভাবে বারবার পজিশন লস করতে হয়েছে এবং অপোনেন্ট থার্ডের সেন্টার এরিয়া পুরো ম্যাচজুড়েই ডেড হয়ে ছিল।

এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নেপালের ডিফেন্স এবং মিডফিল্ড লাইনের মধ্যের গ্যাপে বাংলাদেশের কোনো প্লেয়ার নেই। এই ছবিটাই ছিল সম্পূর্ণ ম্যাচের চিত্র। মিডফিল্ড এবং ফরোয়ার্ড লাইনে এরকম হিউজ গ্যাপ থাকার কারণে জামালের প্রায় সবগুলো লং বল থেকেই কোনো এফেক্টিভ থ্রেট তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

এই ছবিতে মতিন রাইট উইং থেকে বল নিয়ে সেন্টার এরিয়ায় কাট-ইন করে মানিকের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান করার চেষ্টা করেন। জোন ১৪-তে প্রচুর স্পেস থাকার পরও মানিক জামালকে ব্যাকপাস দেন। এ কারণে মতিনের ফরোয়ার্ড রানও কোনো কাজে লাগেনি৷ অথচ মানিক যদি ওয়ান টাচে একটা ফরোয়ার্ড বল রিটার্ন করতেন মতিনের কাছে, সেটা থেকে একটা ভালো আক্রমণ হওয়ার খুব ভালো সম্ভাবনা ছিল।

নেপালের ম্যান-টু-ম্যান মার্কের মধ্যে জামাল ফরোয়ার্ড বল দেওয়ার চেষ্টা করলে রয়েল তার পজিশন থেকে পুরোপুরিভাবে আউট অব পজিশনে চলে আসেন, এবং এ সময় তার কোনো মুভমেন্টও দেখা যায়নি। অথচ মার্ক করা ফ্রি স্পেসে পজিশন নিয়ে থাকলে সেখান থেকে কুইক পাসিং করে ডিফেন্স ব্রেক করার সুযোগ ছিল।

রয়েল মিডফিল্ডে বল পেলে নেপালের ৩ জন ডিফেন্ডার এসে প্রেস করতে থাকে। এ সময় মানিক মোল্লা কোনো মুভমেন্ট না দিয়ে তার পজিশনেই দাঁড়িয়ে থাকেন। মার্ক করা স্পেসে মুভ করলে রয়েলের জন্য পাসিং অপশন ক্রিয়েট হতো এবং নেপালের প্রেসিং বিট করাও সম্ভব হতো।

লং বল থেকে নেপালের আরেকটি আক্রমণে আবারও মেহেদী আউট অব পজিশনে, এবং অঞ্জন বিস্তাকে ঠিকভাবে ট্র্যাক করার পরও রাফি ট্যাকল করতে পারেননি। অঞ্জন বিস্তার চিপ শট অন-টার্গেট হলে তখনই বাংলাদেশ ২ গোলে পিছিয়ে পড়ত।

ব্যাকলাইন থেকে জামালের বিল্ডআপের সময় আবারও মানিক আউট অব পজিশনে থেকে বল চেয়ে জামালের উপর চাপ তৈরি করতে থাকেন।

ছবিতে লেফট ফ্লাঙ্ক থেকে রাকিবের লো ক্রস দেখা যাচ্ছে । এক্ষেত্রে অপোনেন্টে বক্সের ভেতরে কোনো টার্গেট ম্যান ছিল না, যার কারণে ক্রস থেকে কোনো থ্রেট ক্রিয়েট করা সম্ভব হয়নি।

নেপালের ডিফেন্স লাইন থেকে লং ক্লিয়ারেন্সে মানিকের ভয়াবহ দুর্বল টাচ এবং সেটা থেকে নেপালের ফরোয়ার্ডরা কুইক কাউন্টার করার সুযোগ পেয়ে যান।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে রঞ্জিত ধিমালের থ্রু বলে সঞ্জক রাই লাইন থেকে নিচে নেমে আসেন, এবং তার সাথে মার্কার মেহেদীও লাইন ব্রেক করে উপরে উঠে আসেন। ফলে ডিফেন্স লাইনে বিগ হোল তৈরি হয়। সেখান থেকে রিমন নেপালের বিশাল রাইকে ট্র্যাক করতে ব্যর্থ হন এবং ওপেন স্পেসে নেপাল তাদের দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায়।

আবারও জামালের বিল্ডআপের সময় মানিক লাইন থেকে নিচে পজিশন হোল্ড করে রাখে। ফলে বাধ্য হয়ে জামালকে উইংয়ে স্কয়ার পাস দিতে হয়। কিন্তু তখন মানিক যদি ফরোয়ার্ড মুভ করতেন, তাহলে জামালের ডায়াগনাল পাস থেকে অ্যাটাকিং থ্রেট তৈরি করার ভালো সুযোগ তৈরি হতে পারতো।

আবারও মানিক মোল্লা আউট অব পজিশনে জামালকে বলের জন্য চাপ দিতে থাকেন। এই একই চিত্র পুরো ম্যাচে অন্তত ৬ থেকে ৭ বার দেখতে পাওয়া যায়। এই ম্যাচে জামালের ডিপলাইন থেকে স্বাভাবিক বিল্ডআপ প্লে ডেস্ট্রয় করার একটা বড় কারণ ছিল মানিক মোল্লার অফ দ্য বল পজিশনিং।

সেকেন্ড হাফে ফরোয়ার্ড সুমন রেজার জায়গায় সেন্টারব্যাক টুটুল হোসেন বাদশা নামলে বাংলাদেশ থ্রি-ম্যান ব্যাকলাইনে অপারেট করতে শুরু করে।

এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে মেহেদী তার লাইন ছেড়ে অনেকটাই উপরে উঠে আসেন, যার কারণে লেফট সাইডে হিউজ ফ্রি স্পেস তৈরি হয়ে যায়। মানিক মোল্লাকে নেপালের বিশাল রাই ইন্টারসেপ্ট করলে নেপাল রাইট উইং দিয়ে আরেকটি কাউন্টারে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়।

অফ দ্য বলে থাকার পরও মেহেদী আবারও ডিফেন্সলাইন ছেড়ে হাইলাইনে উঠে এসে নিচে নেপালের ফরোয়ার্ডদের জন্য হিউজ ফ্রি স্পেস তৈরি করে দেয়।

এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বক্স এরিয়ায় নেপালের ২ জনের জন্য বাংলাদেশের ৪ জন মার্কার এবং দুই উইংয়ে নেপালের ২ জন প্লেয়ার মার্কিং ফ্রি রোলে।

সেকেন্ড হাফে ইনজুরড রিমনের জায়গায় ইয়াসিন আরাফাত নামে৷ ইয়াসিনের রোল অনেকটা লেফট উইংব্যাক হলেও তার পজিশনিং নিয়ে বেশ কনফিউড দেখা যায় বারবারই।

মাঠে নামার কিছুক্ষণ পরই জামালের থ্রু বল থেকে মিডফিল্ড ধরে ওভারল্যাপ করে বক্সের ফ্রি স্পেসে ইয়াসিন বুদ্ধিদীপ্ত ক্রস করেন৷ এবারও অনেক ওপেন স্পেস থাকলেও বক্সে কোনো টার্গেট ম্যান না থাকায় কোনো থ্রেট তৈরি করার সুযোগ হয়নি।

আবারও মেহেদী তার ডিফেন্সলাইন ছেড়ে টোটালি আউট অব পজিশনে চলে যান, যে কারণে তার মার্কার সুনীল বাল একেবারেই ফ্রি হয়ে যায়।

সুফিল মাঠে নামার পর থেকেই নেপালের ব্যাকলাইনকে কন্টিনিউয়াস প্রেস করতে থাকেন, যে ব্যাপারটা সুমন রেজা বা মেহেদী হাসান রয়েলের মধ্যে একেবারেই অনুপস্থিত ছিল।

এই ছবিতে সুফিল রোহিদ চাঁদের পাস ইন্টারসেপ্ট করে কুইক কাউন্টারের সুযোগ তৈরি করেন এবং সুফিলের সাথে কুইক ওয়ান-টু-ওয়ান করে মতিন অপোনেন্ট থার্ডে ঢুকে পড়ার সুযোগ পান।

এই ম্যাচে ইয়াসিন মাত্র ৩৫ মিনিটের মতো মাঠে থেকেই ৩টি ক্রস এবং একটি ডিরেক্ট অ্যাটেম্পট নেন, যেখানে ৫৫ মিনিট মাঠে থেকেও রিমনের অ্যাটাকিং আউটপুট এক কথায় শূন্য।

অপোনেন্ট বক্সের বাইরে কুইক মুভ করে রবি পাসওয়ানকে ট্যাকেল করে বল পজেশন নিয়ে বক্সের বাইরে ক্রাউডেড এরিয়ার মধ্যেই দুর্বল ডান পায়ে ইয়াসিনের দুর্দান্ত শট। শটটি একটুর জন্য অফ-টার্গেট হলেও এটিই ছিল তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বেস্ট গোলস্কোরিং সুযোগ।

সুফিল নিচে নেমে বল রিগেইন করে কুইক সার্কুলেট করার চেষ্টা করেন। এবারও যথারীতি মানিক মোল্লা আউট অব পজিশনে, যার কারণে সুফিলের সামনে ফরোয়ার্ড কোনো পাসিং অপশন নেই এবং সুফিলকে বাধ্য হয়ে ব্লাইন্ড লং বল খেলতে হয়।

মানিক মোল্লার পরিবর্তে জনি নামার পরই সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন দেখা যায়, তা হলো জনির অফ দ্য বল পজিশনিং। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে জনি নিজের পজিশন ছেড়ে ফরোয়ার্ড মুভ করেছেন বাদশার পাসিং অপশন বাড়ানোর জন্য। এই জায়গাটায় পুরোটা ম্যাচ ধরেই ঘাটতি ছিল মানিকের মধ্যে, যে কারণে জামালের পক্ষে তার স্বাভাবিক খেলা কঠিন হয়ে পড়ছিল বারবার।

তিন জাতির টুর্নামেন্টে জেমির উদ্দেশ্য কতটুক সফল হয়েছে, তাতে বেশ ভালোভাবেই প্রশ্ন থেকে যায়। এই টুর্নামেন্টে যেসব তরুণরা সুযোগ পেয়েছিলেন, তাদের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনিভাবে ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে তরুণদের সুযোগ দেওয়াটা ভালো ছিল কি না, সেটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা যায়। লিগে রেলিগেশন জোনে ধুঁকতে থাকা মুক্তিযোদ্ধার ৩ জন ফুটবলার কীভাবে সুযোগ পেলেন, কিংবা দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কোনো ফুটবলারই কেন স্কোয়াডে সুযোগ পেলেন না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। সেটার উত্তর হয়তো স্রেফ জেমি ডে-ই দিতে পারবেন!

This article is in Bangla language. It is a tactical analysis of the three-nations football cup final match between Bangladesh and Nepal.

Feature image source: Bangladesh Football Federation

Other image source: Media Hub Youtube Channel

Related Articles