Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আইপিএলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের আদ্যোপান্ত

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আবির্ভাব ছিল ক্রিকেট বিশ্বে একরকম রেনেসাঁর মতো। সেই রেনেসাঁর সহযাত্রী হয়েই ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগের সূচনা। এক্ষেত্রে নতুন স্বাদ আনে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। ২০০৮ সাল থেকে শুরু করা লিগটি এই মুহূর্তে ১১তম আসর পার করছে। এই আইপিএলের সূত্র ধরেই টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোও হেঁটেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টের পথে। যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ টি-টোয়েন্টি লিগ, পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), উইন্ডিজের ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), শ্রীলঙ্কার এসএলপিএল (শ্রীলঙ্কান প্রিমিয়ার লিগ) অন্যতম। এসব লিগের ধারাবাহিকতায় মাত্র টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ আফগানিস্তানও হাঁটছে একই পথে।

ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলো আয়োজনের মাধ্যমে দুটি ব্যাপার একরকম প্রমাণিত। প্রথমটি হলো, জাকজমকপূর্ণ এ টুর্নামেন্টগুলোতে অর্থের ঝনঝনানি আছে। তাতে ব্যবসা ভালো হয়, লাভবান হয় ক্রিকেটাররাও। দ্বিতীয়ত, দেশি-বিদেশি ক্রিকেটার একই ড্রেসিংরুম শেয়ার করার মাধ্যমে বিশ্বায়ন ঘটে, স্থানীয় তথা জাতীয়  দলের বাইরের ক্রিকেটাররাও তারকা হওয়ার পথে এগিয়ে যায়।

আইপিএল ট্রফি; Source: IPL

এসব ভালো দিকের পাশাপাশি খারাপ দিকও কম নয়। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো দুর্নীতির বাড়াবাড়িটাও লক্ষণীয়। আর বাড়তি উপার্জনের আশায় জাতীয় দলে খেলার ক্ষেত্রেও ক্রিকেটারদের আশা তুলনামূলকভাবে কমছে বলেই ভাবনা সাবেক তারকা ক্রিকেটারদের। বিশেষ একটি ব্যাপার বারবার বলা হচ্ছে, এই টি-টোয়েন্টির কারণেই আবেদন হারাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট। তবে দিন শেষে খেলা একটি বিনোদনের মাধ্যম। সেখানে ২০ ওভারের এই ফরম্যাট তুমুল জনপ্রিয় তাতে সন্দেহ নেই। আর আইপিএলও এখন পর্যন্ত আলোচনার শীর্ষে। পুঁজিবাদকে ‘পুঁজি’ করে অন্তত নির্মল বিনোদনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই দুই মাসব্যাপী টুর্নামেন্টটি। যেখানে দেশি-বিদেশি শত শত ক্রিকেটার মুখিয়ে থাকে খেলার জন্য। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই। আইপিএলে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে খেলছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তবে এখন পর্যন্ত মোট ৬ জন ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের পারফরম্যান্স নিয়েই এই আয়োজন।

আব্দুর রাজ্জাক

আব্দুর রাজ্জাক; Source: BCB

এ মুহূর্তে জাতীয় দলের বাইরে থাকা বাঁহাতি স্পিনার আব্দু রাজ্জাক আইপিএলে সুযোগ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার। টুর্নামেন্টের প্রথম আসর, অর্থাৎ ২০০৮ সালে ৫০ হাজার ডলারে (৪১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুতে ডাক পান। কিন্তু ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র একটি। ২ ওভার বল করে খরচ করেছিলেন ২৯ রান।

মোহাম্মদ আশরাফুল

মুম্বাই ইন্ডিয়ানস্-এর হয়ে একটি ম্যাচে রান আউট থেকে বাঁচার চেষ্টায় মোহাম্মদ আশরাফুল; Source: Sportskeeda

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম ‘বিশ্ব তারকা’ মোহাম্মদ আশরাফুল আইপিএলে সুযোগ পান ২০০৯ আসরে। নিলামে তাকে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলারে (প্রায় ৬২ লক্ষ ১২ হাজার টাকা) কেনে শচিন টেন্ডুলকারের মুম্বাই ইন্ডিয়ানস্‌। কিন্তু রাজ্জাকের মতো তিনিও একটি আসরে এবং একটি ম্যাচেই সুযোগ পেয়েছিলেন, ছিলেন রাজ্জাকের মতোই ব্যর্থ। একটি ম্যাচে মাঠে নেমে ২ রান তুলেই ফিরেছিলেন ড্রেসিংরুমে।

মাশরাফি বিন মুর্তজা

বাংলাদেশ জাতীয় দলের বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও ২০০৯ আসরেই আইপিএলে সুযোগ পান। নিলামে তাকে নিয়ে অর্থযুদ্ধ শুরু করেছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্স ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। ৫০ হাজার ডলার ভিত্তিমূল্য থেকে দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে করতে পৌঁছায় ৬ লাখ মার্কিন ডলারে! অর্থাৎ, বাংলাদেশি মূল্যমানে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। সেই যুদ্ধে জয় পায় নাইট রাইডার্স। এখন পর্যন্ত যেকোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে মাশরাফিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি এত বেশি মূল্যে আইপিএলে সুযোগ পেয়েছিলেন। মূলত, শুধু ক্রিকেটীয় পারফরম্যান্স নয়। এই ফাস্ট বোলারকে দলে টানার অন্যতম কারণ ছিল বাংলাদেশের ফ্যানবেজকে কব্জা করা। এখনকার মতো সেই সময়েও দারুণ জনপ্রিয় ছিল নড়াইল এক্সপ্রেস। পাশাপাশি বিশ্ব ক্রিকেটেও মাশরাফির আলাদা আবেদন ছিল তখন থেকেই।

কলকাতার সতীর্থদের মাঝে মাশরাফি; Source: KKR

কিন্তু প্রিয় দুই বন্ধু আশরাফুল-রাজ্জাকের মতো তিনিও আইপিএলে নিজের নামের সঙ্গে সুবিচার করতে পারেননি। তিনিও এক ম্যাচেই সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখানেও ছিল বিপত্তি। শেষ ওভারে তার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (সাবেক নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের অধিনায়ক)। নিজের চার ওভারের কোটার প্রথম ওভারে ৩৩ রান খরচ করেছিলেন মাশরাফি। ম্যাচটি ছিল ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষে। শেষ ওভারে তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২১ রান। মাশরাফি খরচ করেছিলেন ২৫ রান। শেষ বলে এক রান দরকার ছিল। ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা মাশরাফিকে ছক্কা হাঁকান। ৪ ওভারে মোট ৫৮ রান খরচ করেন। সেই আসরের পর আর আইপিএলের জার্সি গায়ে তোলা হয়নি মাশরাফির।

তামিম ইকবাল

পুনের জার্সিতে তামিম ইকবাল; Source: Pune worriers India

২০১২, ২০১৩ আসরে পুনে ওয়ারিয়র্সে সুযোগ পান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। তার ভিত্তিমূল্য ৫০ হাজার ডলারেই সুযোগ পেয়েছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটিতে। আইপিএলে পাওয়ার পর এই ওপেনার নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তামিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “সৌরভ গাঙ্গুলি-মাইকেল  ক্লার্কদের মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবো বলে আশা করছি। ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে আমি সবসময়ই পছন্দ করি। আমি ভাগ্যবান যে তাদের সঙ্গে খেলতে পারছি। নতুন কিছু শেখার জন্য মুখিয়ে আছি।”

কিন্তু দূর্ভাগ্য তামিমের। কেবলই অভিজ্ঞতাই অর্জন হয়েছে। মাঠে নামা হয়নি। ২০১২ সালে কোনো ম্যাচে সুযোগ পাননি। ২০১৩ আসরে সব ম্যাচে দলের সঙ্গে মাঠেও আসার সুযোগ হয়নি তার। সময় কেটেছে টিম হোটেলে। শোনা যায়, অনেকটা রাগ করেই সেবার ব্যাগ গুছিয়ে দেশে ফিরেছিলেন তিনি।

সাকিব আল হাসান

সতীর্থদের সঙ্গে সাকিব আল হাসান; Source: Daily Star

আইপিএলে সবচেয়ে সফল বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কেবল একটি আসরে খেলেননি তিনি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত খেলেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। সবগুলো আসর মিলিয়ে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৪৩ ম্যাচ। ব্যাটে রান করেছেন ৪৯৮। সর্বোচ্চ ৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। হাফ সেঞ্চুরি আছে দুটি। বল হাতে বাঁহাতি এই স্পিনার নিয়েছেন ৪৩ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ১৭ রানে ৩ উইকেট।

২০১১ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স সাকিবকে কিনেছিল প্রায় ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকায়। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে তিন কোটিতে। এই দামেই খেলছিলেন সাকিব। কিন্তু ২০১৮ আসরের আগে আইপিএল কতৃপক্ষ নতুন নিয়ম বেঁধে দেয়। প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে মাত্র পাঁচজন ক্রিকেটার ‘রিটেইন’ (ধরে রাখা) করার সুযোগ দেয়। যার মধ্যে তিনজন ভারতীয় ও বাকি দুজন বিদেশি ক্রিকেটার। এই নিয়মের মারপ্যাঁচে পড়ে সাকিবকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় কলকাতা।

আবারও নিলামে ওঠে সাকিবের নাম। নতুন ঠিকানা হয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদে। ‘মারকুই’ ক্যাটাগরিতে সাকিবের ভিত্তিমূল্য ছিল ১ কোটি রুপি। সেখানে নিলামের মাধ্যমে সানরাইজার্স তাকে কেনে ২ কোটি রুপি দিয়ে যা বাংলাদেশি মানে ২ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকায়।

মুস্তাফিজুর রহমান

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে মুস্তাফিজ; Source: Sportzwiki

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে ২০১৬ সালে একরকম আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসার ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত কাটার মাস্টার হিসেবে। তাকে ‘দ্য ফিজ’ নামেও ডাকা হয়। এই নামটি পেয়েছেন আইপিএল থেকেই। দলে তার অধিনায়ক অজি ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার তাকে এই নাম দেন। নিজের রহস্য বোলিং দিয়ে ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর একই বছরে এই টুর্নামেন্টে জায়গা পান। নাম লেখান সানরাইজার্স হায়দরাবাদে। ফ্র্যাঞ্চাইটি তাকে কেনে ২ লাখ ৮ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মানে ১ কোটি ৭২ হাজার টাকায়।

পরপর দুই আসরে হায়দরাবাদের হয়ে খেলেন মুস্তাফিজ। প্রথম আসরেই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি শিরোপা জেতে যেখানে দারুণ অবদান ছিল মুস্তাফিজের। দুই আসরে দলটির হয়ে মোট ১৭ ম্যাচ খেলেছেন। উইকেটও নিয়েছেন ১৭টি। সেরা বোলিং ফিগার ১৬ রান খরচে ৩ উইকেট। ২০১৮ আসরে হায়দরাবাদে জায়গা হারিয়েছেন তিনি। নতুন ঠিকানা মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে। প্রায় ২ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকায় তাকে দলে ভিড়িয়েছে শচিন টেন্ডুলকারের দল।

ফিচার ইমেজ- Yahoo

Related Articles