Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সেবার শহরে ‘বাংলাওয়াশ’ এসেছিলো…

অনুভূতিটা ঠিক বোঝানো যাবে না। ২০১৫ সাল থেকে ক্রিকেট দেখতে শুরু করা দর্শকদের তো কোনোভাবেই না। সাকিব আল হাসান তখনও তিন ফরম্যাটে এক নম্বর অলরাউন্ডার হবার স্বাদ পাননি, তামিম ইকবালের ব্যাট ধারাবাহিকতার প্রতিমূর্তি হয়নি, মুশফিকুর রহিমের ব্যাট আস্থা যোগাতে শেখেনি, মাশরাফির মূল্য তখনও এতটা পারদ চড়েনি। আর… আতাহার আলী খানের ‘বাংলাওয়াশ’ শব্দটাও তেমন চর্চিত হয়নি।

বাংলাদেশ সফরে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল এসেছিলো সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। প্রথমে ২ টেস্ট আর ৩ ওয়ানডে খেলবার কথা থাকলেও বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে টেস্ট ছেঁটে ফেলা হয় সূচি থেকে, বদলে যোগ হয় অতিরিক্ত আরও দুই ওয়ানডে। তা নিয়ে পত্রপত্রিকার পাতায় লেখা হয়েছে বিস্তর। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির চেয়ে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট খেলার সুযোগ হাতছাড়া করাটাই যেখানে আলোচনা-সমালোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছিলো।

সেই সিরিজ নিয়ে আলোচনা অবশ্য এখনও হয়, দেশের ক্রিকেটের বাঁকবদলের সিরিজ হিসেবে। সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশের প্রাণ হয়ে ওঠার সিরিজ হিসেবে।

সিরিজ শুরুর আগেই ধাক্কা, ইনজুরির কারণে পাওয়া যাবে না তামিম ইকবালকে। তৎকালীন পরিসংখ্যান দলে তার ভূমিকা বোঝাতে ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুসরণ করা লোকমাত্রই জানেন, বাংলাদেশ দলে তামিমের অবদান বোঝাতে পরিসংখ্যান এক আস্ত গাধা ছাড়া আর কিছুই নয়। সে বছর আবার তামিম ছিলেন উত্তুঙ্গ ফর্মে, ইংল্যান্ড কাঁপিয়ে এসেছিলেন মাস তিনেক আগেই। তাই সে বছরে খেলা ১৭ ওয়ানডেতে মাত্র ২ ম্যাচ জয়ী দলের জন্যে এ এক বিরাট ধাক্কা।

অক্টোবরের বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিলো নিউজিল্যান্ডের জন্যে আয়োজন করা দুইটি প্রস্তুতি ম্যাচই, পুরো সিরিজই ভেসে যায় কিনা, সেটাই তখন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো প্রশ্ন। ভেসেছিলো অবশ্য, তবে সাফল্যবৃষ্টিতে।

প্রভাত নাকি দিনেরই পূর্বাভাস দেয়। যেমন দিয়েছিলো সে সিরিজে। মিরপুরের মাঠে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মোর্তাজা। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করতে, আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন ব্যাটসম্যানেরা, সাত ব্যাটসম্যানের দুই অঙ্কের রানে পৌঁছানো সেটারই প্রমাণ। কিন্তু শতক দূরে থাক, অর্ধশতকের দেখাই পেয়েছিলেন একজন, সাকিব আল হাসান।

তার ৫১ বলে ৫৮ রানের ইনিংস, আর বাকিদের টুকরো টুকরো কিছু ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিলো ২২৮।

সে সিরিজ দিয়েই ওয়ানডে দলে ফেরা জেসি রাইডার আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামের জুটিতে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস পঞ্চাশ ছাড়িয়েছিলো ষষ্ঠ ওভারেই। কিন্তু রানের স্রোতে বাঁধ দিতে সাকিব আল হাসান তো ছিলেন!

ছবিতে ম্লান দেখালেও সমস্ত আলো কেড়ে নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানই!  Image Credit: Associated Press

জেসি রাইডারকে তুলে নিয়ে রানের পাগলা ঘোড়ায় লাগাম টেনেছিলেন। আবদুর রাজ্জাক, নাঈম ইসলামের মিতব্যয়ী বোলিংয়ে আর সাকিব আল হাসানের নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নেয়ায় নিউজিল্যান্ডের সমীকরণ কঠিন হচ্ছিলো ক্রমশই। মাঝে নেমেছিলো বৃষ্টি, সুযোগে ওভার কমেছিলো ১৩টি, টার্গেট দাঁড়িয়েছিলো ২১০।

শেষ ওভারে নাজমুল ইসলাম যখন বল করতে এলেন, রান লাগতো ১৮। মিলস আর সাউদি মিলে তুলতে পেরেছিলেন ৮, বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিলো ৯ রানে। বিনিময়ে হারিয়েছিলো মাশরাফি আর নাজমুল হোসেনকে। মাশরাফি পড়েছিলেন গোড়ালির চোটে, ইনিংসের শেষ বলে ফিরতি বল ধরতে গিয়ে হাত ভেঙেছিলেন নাজমুল হোসেন।

আবারও অধিনায়কত্ব, আবারও চোট!  Image Credit: Associated Press

দ্বিতীয় ম্যাচে আর মাঠে নামা লাগেনি কোনো দলের, কারণ বৃষ্টি।

টস ভাগ্যটা সেবার যেন বাংলাদেশের পক্ষেই কথা বলবার জন্য তৈরি ছিলো। তৃতীয় ম্যাচেও টসে জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ, ম্যাচেও।

ফিল্ডিংয়ে নেমে বিপদজনক ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে শফিউল উপড়ে ফেলেন প্রথম ওভারেই। ম্যাচের বাকি দায়িত্ব নিজেদের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন সে ম্যাচে খেলতে নামা তিন বাঁহাতি স্পিনার। সাকিব আল হাসান, আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন ১ম ম্যাচের মতোই কৃপণ, তবে ম্যাচের নায়ক বনে যান প্রথম ম্যাচে বেঞ্চ গরম করা সোহরাওয়ার্দী শুভ। পুরো দশ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছিলেন মোটে চৌদ্দ, উইকেটের কলামে লিখতে হয়েছিলো জেসি রাইডার, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আর স্টুয়ার্টের নাম। রস টেলরের ৭২ বলে ৬২ রানের ইনিংসের পরও নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ১৭৩ রানে।

হঠাৎ দলে, সুযোগ পেয়েই দৃশ্যপটে! Image Credit: AFP

অন্য যেকোনো দল হলে এ ম্যাচে রান তাড়া করতে নামা দলকে জয়ী ঘোষণা করে দেয়া যেতো মাঝবিরতিতেই। কিন্তু যে দলের আগের ২৩১ ম্যাচের ইতিহাসে টানা দুই ম্যাচে বড় দলকে হারাবার কোনো রেকর্ড নেই, তাদের উপরে মানুষের বিশ্বাস জন্মায় কোথায়!

বিশ্বাস জন্মাতে বাধ্য করেছিলেন ইমরুল কায়েস আর শাহরিয়ার নাফীস। তাদের উদ্বোধনী জুটি যখন ভাঙে, স্কোরবোর্ডে রানটা ১২৭। বাকি পথটুকু পাড়ি দিতে আর ক’জনকেই বা লাগে! বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে সাত উইকেটে। আগের ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়াতে নিশ্চিত হয়, ‘যাক, সিরিজটা অন্তত হারা লাগবে না!’

যে জুটি বিশ্বাস করিয়েছিলো! Image Credit: AFP

সাকিব আল হাসান ম্যাচপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে উচ্চারণ করেন,

৪-০ এখন খুবই সম্ভব।’ 

হয়তোবা প্রথম বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবে, বিশ্ব ক্রিকেটের বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে।

র‍্যাঙ্কিংয়ের উপরের সারির দলগুলোকে হারানোর স্বাদটা পাওয়া হয়ে গিয়েছে ততদিনে। সে বছরই ইংল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়ে বৃত্তপূরণ হয়েছে যে চক্রের। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাইয়ের গল্পও লেখা হয়েছে। তবে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধরাশায়ী করার কথা বলতে গিয়ে মনের কোণে কেমন যেন খচখচানি জাগে, ওই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২য় সারির দল বলতেও যে কষ্ট হবে অনেকের!

তাই, ২০১০ সালের ১৪ অক্টোবর তারিখটি হাজির হয়েছিলো অন্যরকম এক অনুভূতির স্বাদ পাবার স্বপ্নে।

স্বপ্নপূরণের শুরুটা অবশ্য সেই চিরকালীন চিত্রনাট্য মেনেই। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই উইকেটের পতন, সাতাশে দ্বিতীয়, চুয়াল্লিশে তৃতীয়। এরই ফাঁকে ফাঁকে যা রান হলো, তাতে ইমরুল কায়েস এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে কিছুটা কৃতিত্ব দেয়া যায়, আর সাকিব আল হাসানকে ম্যাচের নায়ক বানাতে হয়।

১১৩ বল খেলেছিলেন, তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের ২য় সেঞ্চুরি। অবশ্য এমন রসকষহীন পরিসংখ্যানের সাধ্য কী, সাকিবের ইনিংসের মাহাত্ম্য বুঝায়!

মিরপুরের উইকেটকে বরাবরই দুটি বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়, ‘স্লো অ্যান্ড লো’। এই উইকেটেই সেদিন রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছিলেন তিনি, প্রতিপক্ষের বোলারদের চেপে বসতে দেননি কখনোই। রান আর বলের মাঝে ব্যবধানটা খুব বেশি বড় হয়ে উঠতে দেননি কখনোই।

তবে, অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যানদের নিয়মিত আসা-যাবার মিছিলে, ফিফটির পরেও উদযাপনের সুযোগ পেলেন কোথায়! দর্শক অভিবাদনের জবাব দিতে হয় সেঞ্চুরি করে। অথচ দল যে ভীষণ চাপে!

৪৩তম ওভারে তিনি ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হবার পর বাকিরা মিলে তুলেছিলেন মোটে পঁচিশ। ভাগ্যিস, আমাদের একজন সাকিব ছিলেন।

রানটা তাই সাকিবের চাওয়ামতো ২৬০য়ের কোটা পার না হলেও মিরপুরের সেদিনের পিচে ২৪১ রান তাড়া করাও সেদিনের পিচে যথেষ্টই কঠিন এক কাজ ছিল।

ফিল্ডিং দিয়ে সেই কঠিন কাজটা অসম্ভব করে দেবার সমস্ত দীক্ষায় দীক্ষিত হয়েই যেন সেদিন মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তাইতো, মাত্রই হাত খুলতে শুরু করা ‘বাজপাখি’ বনে যাওয়া শফিউলের রিফ্লেক্স ক্যাচের শিকার হন, তাঁর ভাই নাথান ম্যাককালাম সীমানাদড়ি থেকে নাঈম ইসলামের সরাসরি থ্রোতে রান আউটের শিকার হন। ব্ল্যাক ক্যাপসদের ১০০ পেরোয় ২৪তম ওভারে, দুইশ ৪৬এ। শেষতক দুই দলের ব্যবধানটা রয়ে যায় ৯ রানের, আবারও।

যে ছবি বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার হয়েছিলো; Image Credit: Associated Press

মাঝ দিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেনে কেন উইলিয়ামসন, ক্যারিয়ারের প্রথম। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে পুরোটা ইনিংস ব্যাট করে, নিউজিল্যান্ডকে শেষ অব্দি লড়াইয়ে রাখার পরও তার অনবদ্য ইনিংসের শেষটাই যেন সবার মনে গেঁথে আছে। শফিউলের বলে রকিবুল হাসানের ডিপ মিড উইকেটে নেয়া সেই ক্যাচ, চাইলেও কি ভোলা যায়!

ভুল বললাম, ভুলতে কে’ই বা চায়!

ম্যান অব দ্যা ম্যাচ পুরষ্কার অবশ্য কেন উইলিয়ামসন, শফিউল ইসলাম বা রকিবুল হাসানের কেউ পাননি। সাকিব আল হাসান নামের এক সুপারম্যান যে সেদিন মাঠে নেমেছিলেন, সেঞ্চুরির পর ৩ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দিয়েছিলেন কিউইদের।

তখন অব্দি বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছিলো ৪৪টি, যার ৩১টি সিরিজের ফলাফলই ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। এর মাঝে ২৫ বার হতে হয়েছিলো ধবলধোলাই। নিজেরাও অবশ্য বারছয়েক প্রতিপক্ষকে এই স্বাদ পাইয়েছে, তবে কেনিয়া, জিম্বাবুয়ের সোনালি সময় ততদিনে যে গত হয়েছে!

তাই, ২০১০ সালের অক্টোবর মাসটার পরিচিতি অনেকের কাছে অনেক রকম হতে পারে। তবে, বাংলাদেশের ক্রিকেট পাগল জনগোষ্ঠীর কাছে এর পরিচয় একটাই, ‘বাংলাওয়াশের মাস!’

সিরিজের শেষ ম্যাচের গল্পটা অবশ্য বাকি ম্যাচগুলোর মতোই। আবারও বাংলাদেশের টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা, আবারও ইমরুল কায়েসের ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলা, আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া এবং সাকিব আল হাসানের ব্যাটে রক্ষা পাবার ‘চেষ্টা’। হ্যা, চেষ্টাই। কারণ, পুরো ইনিংসশেষে দলের রানটা যখন ১৭৪, তখন তাকে চেষ্টাই বলতে হয়।

চাইলে প্রতীকী ধরতে পারেন, সিরিজটিকে তালুবন্দী করেছিলেন যেভাবে; Image Credit: Associated Press

দর্শকেরা একই চিত্রনাট্য বারেবারে মঞ্চস্থ হতে দেখে রুষ্ট, বিরক্ত। এমন রান করে কি আর ইতিহাস গড়া যায়!

কিন্তু, বিধাতা যে ভিন্ন কিছু ভেবে রেখেছিলেন। ম্যাচের বাকি অংশের পরতে পরতে যে কেবলই উত্তেজনা আর অনিশ্চয়তার ছড়াছড়ি!

ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, জেসি রাইডার, কেন উইলিয়ামসনকে তুলে নিয়ে রুবেল হোসেন ছড়িয়েছিলেন আশার বাণী, ‘হতে পারে!’ ফাঁকে ওয়াটলিং আর রস টেলরও যখন ফেরত গেলেন, নিউজিল্যান্ডের রান বহু কষ্টে-ক্লেশে ২০ ছুঁয়েছে, মিরপুর ছাড়িয়ে পুরো দেশে তখন গর্জন উঠেছে, ‘হবেই এবারে!’

অতঃপর কিউই অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আর গ্রান্ট এলিয়টের ব্যাটে প্রতিরোধের দেয়াল। ১৪৪ বল খেলে দুজনের ৮৬ রানের জুটি। ধীরগতির, কিন্তু ম্যাচের প্রেক্ষাপটে অমূল্য!

দু’জনের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সুযোগ এসেছিলো অনেক। জুনায়েদ সিদ্দিকী ক্যাচ ফসকেছেন স্লিপে, বারকয়েক আম্পায়ারের মনেও ছুঁয়ে গিয়েছে অনিশ্চয়তার দোলাচল। দু-তিনটি ক্লোজ এলবিডব্লিউয়ের আবেদন খারিজ করেছেন দুই আম্পায়ার, আলিম দার আর নাদির শাহ। এই জুটি যখন ভাঙলো, ম্যাচ তখন অনেকটাই নিউজিল্যান্ডের পানে হেলে।

কিন্তু ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে শফিউলের ক্যাচ বানাবার পর সাকিব যখন নাথান ম্যাককালামকেও তুলে নিলেন, মিরপুরে আবারও স্লোগান উঠেছে, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া একই স্বপ্নে বিভোর হয়েছে।

এরপর পথের কাঁটা হয়ে থাকা গ্রান্ট এলিয়টও যখন ফিরলেন, জয়ের জন্য তখনও দরকার ত্রিশ রান, হাতে কেবল দুই উইকেট। তার চেয়েও বড় কথা, স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের কেউই আর ক্রিজে নেই।

কাইল মিলসকে বোলিং অলরাউন্ডার বলতে গেলেও অহমে বাঁধবে অনেকের। সে ম্যাচে যেন কি হলো, সোহরাওয়ার্দী‌ শুভ আর শফিউল ইসলামকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেললেন দুবার। রুবেল হোসেনের বলেও যখন চারের মার এলো, বারকয়েক সিঙ্গেলস-ডাবলস এলো, শেষ ওভারে জয়ের জন্য আট রান লাগতো। 

রুবেল হোসেনকে ক্রিকেট ঠিক কীভাবে মনে রাখবে, বলা কঠিন। যে বোলারের টেস্ট বোলিং গড় ৮০.৩৩, তাকে মনে রাখবার কোনো কারণই নেই। তবুও বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রচ্ছদে বোধহয় বারেবারেই ফিরে ফিরে আসবেন তিনি! কখনো বা মুরালির ব্যাটসম্যান বনে যাবার কারণ হিসেবে, কখনো বা অ্যাডিলেডে এলইডি বাতি জ্বালিয়ে, আর কখনো বা…

শেষ ওভারের প্রথম বলটাই পায়ের উপর ফুলটস। ফলাফল ফাইন লেগ দিয়ে চার, ৬ বলে ৮ রানের প্রয়োজনটা কমে দাঁড়িয়েছিলো ৫ বলে চার রানে। দর্শকেরা উঠে দাঁড়িয়েছেন, আরও একবার হাতের মুঠোয় এসে জয় ফসকে গেলো এই ভেবে। তবে পরের বলটায় আর ভুল হয়নি। একেবারে নিখুঁত ইয়র্কার যাকে বলে।

৩য় বল। থার্ডম্যান আর পয়েন্ট ফিল্ডার সীমানাদড়ির ভেতরেই ছিলেন। তা দেখেই কিনা কাইল মিলস একটু সরে জায়গা বানিয়ে বলটা সেখান দিয়েই খেলতে চাইলেন। কিন্তু রুবেল মার্ক খুঁজে পেয়েছিলেন। লেগ স্ট্যাম্পে পারফেক্ট ইয়র্কার লেংথ ডেলিভারি।

সেই বল; Image Credit: Associated Press

লেগ স্ট্যাম্পটা দু-তিনবার গড়াগড়ি খেলো। রুবেল হোসেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টের মতো পাগলাটে দৌড় শুরু করলেন। ম্যান অব দ্য সিরিজ সাকিব আল হাসান চিরকালই পরিমিত, সেবারেও একই রকম পরিমিত উদযাপন। বাকিরা এদিক-সেদিক দৌড়াচ্ছেন, ল্যাপ অফ অনারে পতাকা নিয়ে কাড়াকাড়ি করছেন।

ইতিহাস গড়ার আনন্দে; Image Credit: Associated Press

ইতিহাস গড়ার আনন্দে, এতটুকু তাঁরা করতেই পারেন। যে ইতিহাস, বাংলাওয়াশের ইতিহাস!

this article is on the bilateral series between New Zealand vs Bangladesh, which was held in 2010. Bangladesh won the 5-match series by 4-0. Shakib Al Hasan was adjugded as man of the series.

Featured image © Associated press

Related Articles