Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বার্সেলোনা: ট্রেবল স্বপ্ন থেকে পতন

২ মে ২০১৯, চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বার্সেলোনা ঘরের মাঠে মুখোমুখি হবে লিভারপুলের। লা লিগা শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই, কাতালানরা কোপা দেল রে এর ফাইনালেও পৌঁছে গেছে। শুধু বাকি অধরা চ্যাম্পিয়নস লিগকে ন্যু ক্যাম্পে আনা। ম্যাচের আগে ফুরফুরে মেজাজে আরনেস্তো ভালভার্দের দল। দলের সেরা খেলোয়াড় এবার দারুণ ছন্দে, বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লিগে। এ পর্যন্ত করে ফেলেছে সর্বোচ্চ ১০ গোল।

ন্যু ক্যাম্পে সেই মেসির দারুণ পারফর্মেন্সে লিভারপুলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো তারা। কিন্তু এমন বড় জয়ের পরও দ্বিতীয় লেগ নিয়ে অস্বস্তিতে সমগ্র বার্সেলোনা সমর্থক। কারণ নিজের মাঠে জিতে পরের লেগে প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে নিজেরাই বিধ্বস্ত হয়ে আসার লজ্জার রেকর্ড তখনও তরতাজা।

রোমার বিপক্ষে বিহ্বল বার্সা; Image Source: foxsports

লিভারপুল কোনো অ্যাওয়ে গোল পায়নি। তাই তাদের মাঠে বার্সেলোনা একটি মাত্র গোল করলেই আর কোনো চিন্তা থাকে না তাদের। কিন্তু গোল করা তো বহু দূরের কথা, লিভারপুল এক গোল ফেরত দিতেই বার্সেলোনা খেই হারিয়ে ফেললো। সেই সুযোগে লিভারপুলের প্রত্যাবর্তন। আবারও বার্সেলোনা বড় ব্যবধানে হারলো প্রতিপক্ষের মাঠে।

এই হারের লজ্জার পরে বার্সেলোনা খেলেছে তিন ম্যাচ। লিগ আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো। তাই লিগে বাকি দুই ম্যাচে একটি হার ও একটি ড্র তেমন সমস্যা করেনি। কিন্তু এই দুটি ম্যাচেই বোঝা যাচ্ছিলো এই বার্সেলোনা হতাশায় নিমজ্জিত, কোনোমতে ম্যাচ শেষ করা যেন তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। লিভারপুলের মাঠ থেকে লজ্জাজনকভাবে হেরে আসার পর দলটি যেন দাঁড়াতেই পারলো না। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে কোপা দেল রে এর ফাইনালও হারলো তারা। পুরো মৌসুমে দলটির খেলার ধরন যেখানে ট্রেবলের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলো, সেখানে বার্সেলোনা মৌসুম শেষ করলো শুধুমাত্র একটি শিরোপা দিয়ে! কী হতে পারে এই অধঃপতনের কারণ?

আর্নেস্তো ভালভার্দে ও তার ভূমিকা

একজন কোচের দায়িত্ব কী? শুধু দলকে মাঠের ফুটবলে ঠিকমতো খেলানো? লিভারপুলের মাঠে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হবার পর বার্সেলোনা হতাশায় ডুবে ছিলো। এবং সেই হতাশার চক্র থেকে কোপা দেল রে এর ফাইনাল ম্যাচেও তারা বের হতে পারেনি। একজন কোচ হিসেবে তার দায়িত্ব দলের প্রাণ ফেরানো। কিন্তু মানসিকভাবে ভেঙে পড়া দলটিকে বিন্দুমাত্র চাঙা করে তুলতে পারেননি ভালভার্দে।

বার্সেলোনা আসার আগে আর্নেস্তো ভালভার্দে লা লিগার অ্যাটলেটিকো বিলবাও ক্লাবের দায়িত্বে ছিলেন। বিলবাও দলে তিনি যে কৌশলে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন, একই কৌশল প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন বার্সেলোনার উপর। অ্যাটলেটিকো বিলবাও শুধু ম্যাচ জিতলেই খুশি। তাই সেখানে তার কৌশল ছিলো রক্ষণাত্মক। কিন্তু বার্সেলোনার মতো দলে শুধু ম্যাচ জিতলে চলে না। তবুও ভালভার্দে মধ্যমানের ক্লাব এবং বার্সেলোনার পার্থক্য বুঝতে পারেননি। তাই তিনি তার পুরনো রক্ষণাত্মক কৌশলই ব্যবহার করে যাচ্ছেন। প্রতিপক্ষের জালে গোল দিতে পারলেও তার কৌশল রক্ষণাত্মক, গোল হজম করলেও একই। এবং এই কারণেই শেষ মুহূর্তে বিরূপ পরিণতি ভোগ করছে বার্সেলোনা।

আর্নেস্তো ভালভার্দে; Image Source: msn.com

বার্সেলোনায় ভালভার্দে কৌশলের সাথে কতটা অযোগ্য তার অন্যতম উদাহরণ চ্যাম্পিয়নস লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো। প্রথমে গত বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচের কথা ধরা যাক। প্রথম লেগে ৪-১ গোলের ব্যবধানে জিতলেও ভালভার্দে পরের লেগেও একই ৪-৪-২ ফর্মেশনের একাদশ মাঠে নামিয়েছিলেন। বেঞ্চে উসমান দেম্বেলের মতো উইংগার রেখেও ভালভার্দের এই রক্ষণাত্মক ফুটবলের তিক্ত ফল ভোগ করেছে তারা। তার উপরে দলকে ঘুরিয়ে ফিরিয়েও ব্যবহার করেননি তিনি। লিগেও টানা ব্যবহার করেছেন প্রথম পছন্দের স্কোয়াডকে, তাই দ্বিতীয় লেগে বার্সেলোনার নিয়মিত খেলোয়াড়দের অধিকাংশ খেলোয়াড় ছিলো চূড়ান্তমাত্রায় ক্লান্ত।

গতবারের এই হার থেকে শিক্ষা নেননি তিনি। ৩ গোলে এগিয়ে থাকার পর গোল না খেয়ে শুধুমাত্র রক্ষণাত্মকভাবে খেলে লিভারপুলের বিপক্ষের দ্বিতীয় লেগ পার করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। ফিলিপে কৌতিনহোকে মধ্যমাঠে খেলিয়েছেন, এমনকি আর্তুরো ভিদালকেও। অথচ তিনি উপেক্ষা করে গেছেন আর্থুর মেলোকে, যিনি লিভারপুলের কাউন্টার অ্যাটাকের বিপরীতে রুখে দেবার সামর্থ্য রাখতেন।

দ্বিতীয় লেগে দল নির্বাচনেও ভুল ছিলো কাতালান কোচের। কাগজে-কলমে সার্জি রবার্তো থেকে নেলসন সেমেদো বেশি রক্ষণাত্মক। কিন্তু চারজন মিডফিল্ডারের ভরসায় ভালভার্দে খেলিয়েছেন রবার্তোকে, যাকে নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করেছে লিভারপুলের আক্রমণভাগ।

সার্জি রবার্তোকে পুরো ম্যাচজুড়ে নাচিয়েছে লিভারপুল আক্রমণ; Image Source: The Independent

সাবস্টিটিউশন যে ফুটবলের কৌশলের পর্যায়ে পড়ে, তা প্রায় ভুলেই গেছেন ভালভার্দে। প্রতি ম্যাচ তার সাবস্টিটিউট দেখে মনে হয় ইচ্ছার বিরুদ্ধে তা করতে হচ্ছে তাকে। প্রতি ম্যাচে তার খেলোয়াড় বদল করাও হয়ে গেছে একঘেয়ে, যা আগে থেকে সম্পূর্ণ আন্দাজ করা যায়। অথচ এই বার্সেলোনার বিপক্ষে লিভারপুলের রাইট-ব্যাক রবার্টসন যখন ইনজুরিতে পড়েন তখন ভাইনালদুমকে নামিয়ে ম্যাচের ফলাফলই বদলে দেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। এমনকি সেই ম্যাচে জয়সূচক গোল এসেছিলো ট্রেন্ট-আলেক্সজান্ডার আর্নল্ডের পরিবর্তে নামা ডিভক অরিগির পা থেকে।

পুরো মৌসুমে লা লিগা থেকে চ্যাম্পিয়ন লিগ ম্যাচগুলোতে এসব সমস্যা ঘুরেফিরে এসেছে ভালভার্দের ট্যাকটিসে। যদিও মাঝে সেগুলো বুঝতে দেননি লিওনেল মেসি বা টের স্টেগানের মতো খেলোয়াড়েরা। কিন্তু যখনই ক্লপের মতো মাস্টারমাইন্ড কোচের দলের বিপরীতে বার্সেলোনা খেলেছে, তখনই বার্সেলোনা এমন দুরবস্থার শিকার হয়েছে।

মধ্যমাঠের দুরবস্থা ও কৌতিনহো সমস্যা

জাভির পরে ইনিয়েস্তা চলে যাবার পর প্রথম মৌসুম খেলছে বার্সেলোনা। জাভি, ইনিয়েস্তা বিদায়ের পর তাদের ছন্দে খেলার মতো খেলোয়াড়ও পেয়ে গেছে তারা। গ্রেমিও থেকে আসা ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার আর্থুর মেলোর এ মৌসুমের পারফর্মেন্স সে কথাই বলে। তার ডিফেন্সচেরা পাস, ৩৬০ ডিগ্রি টার্ন বা মধ্যমাঠকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেখা গেছে মৌসুমজুড়ে। অথচ সেই আর্থুর মেলো উপেক্ষিত থেকে গেছেন মৌসুমের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে।

কাতালানদের মধ্যমাঠে বাকি থাকে সার্জিও বুসকেটস ও ইভান রাকিটিচ। দুজনই ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে এসেছেন। ফর্মটাও আর আগের মতো নেই। সার্জিও বুসকেটসের মতো খেলোয়াড়ের ভুলে এ মৌসুমে ভুগতে হয়েছে বার্সেলোনাকে। আর ইভান রাকিটিচ এ মৌসুমে টানা খেলে আসছেন। মাঝে বিশ্বকাপের মঞ্চেও টানা ম্যাচ খেলেছেন। পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব ও বয়সের কারণে এ মৌসুমে অধিকাংশ সময় তার কাটছে ফর্মের সাথে যুদ্ধ করে।

আর আছেন আর্তুরো ভিদাল। যদিও ন্যু ক্যাম্পে প্রথম মৌসুম হিসেবে তার পারফর্মেন্স মন্দ নয়। তবে ভিদাল ঠিক বার্সেলোনার খেলার ধরনের সাথে যায় না। যদিও ভালভার্দে আসার পর বার্সেলোনার খেলার ধরন আর বার্সেলোনাসূলভ নেই। প্রতি মৌসুমেও “ডেস্ট্রয়ার” ঘরনার ফুটবলার ভালভার্দের স্কোয়াডে দেখা যাচ্ছে। সেখানে ভিদালই এ মৌসুমের মধ্যমাঠে সবথেকে নির্ভরযোগ্য ছিলেন।

এরপর, ফিলিপে কৌতিনহো, যাকে বার্সেলোনা না ব্যবহার করতে পারছে একজন পূর্ণাঙ্গ উইংগার হিসেবে, না পারছে মিডফিল্ডার রূপে। কৌতিনহোর জন্য কোনো পজিশন বার্সেলোনার স্কোয়াডে নেই বললে চলে। তবুও মৌসুমজুড়ে চললো কোনো এক পজিশনে কৌতিনহোকে স্থায়ী করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা।

কৌতিনহোর ফর্ম পুরো এক মৌসুমেও ফেরেনি; Image Source: Sports English

লিভারপুলে বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগ অথবা ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে কোপা দেল রে ফাইনাল। উভয় ম্যাচে বার্সেলোনার মধ্যমাঠ ত্রিফলা ছিলো চূড়ান্তরকমের ব্যর্থ, যা বার্সেলোনার এ মৌসুমের শেষমুহুর্তে অঘটনের অন্যতম বড় কারণ। আসন্ন মৌসুমে বার্সেলোনায় যোগ দেবেন ফ্রেঙ্কি দি ইয়ং। হয়তপ রাকিটিচকে বিক্রি করে নতুন মিডফিল্ডার কিনতেও পারে বার্সেলোনা। তখন যদি বার্সেলোনার এই মধ্যমাঠের দুরবস্থা দূর হয়!

অযৌক্তিক দল-বদল এবং খেলোয়াড়দের মনোভাব

নেইমার প্যারিস পাড়ি দেবার পরপর বার্সেলোনা খুব দ্রুত বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে কিনেছিলো ফরাসি উইংগার উসমান দেম্বেলেকে। দেম্বেলের মতো তরুণ প্রতিভাবান কখনোই বাজে সাইনিংয়ের কাতারে পড়বেন না। তবে প্রত্যাশিত পারফর্মেন্স তিনি এখনও দিতে পারেননি।

বার্সেলোনার প্রথম পছন্দের লেফট-উইংগার তিনি। তবুও বার্সেলোনায় আসার পর একটা সময়ে তার কর্মকান্ড দেখে মনে হতো একজন পেশাদার ফুটবলারের কোনো নমুনা নেই তার ভেতরে। এরপর চলতি মৌসুমে শুরু হলো ইনজুরির সাথে যুদ্ধ। ফলে বার্সেলোনা যে লক্ষ্যে তাকে কিনেছিলো তার কোনো অংশ এখনও পূরণ হয়নি। দেম্বেলের ইনজুরিতে পড়ার প্রবণতা তার ভবিষ্যতকেও অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়। লেফট-উইং নিষ্প্রভ থাকার পর বার্সেলোনার অধিকাংশ গোল এসেছে মেসি ও সুয়ারেজের পা থেকে।

বারবার ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে ধারাবাহিকভাবে খেলতেই পারেননি দেম্বেলে; Image Source : Euro Sports

বার্সেলোনার রেকর্ড পরিমাণ আরেক সাইনিং ফিলিপে কৌতিনহোর অবস্থাও একই। লেফট-উইং বা লেফট-মিড কোনো পজিশনেই সুবিধা করতে পারছেন না। সেমি-ফাইনালে নিজের প্রাক্তন ক্লাবের বিপক্ষে খেলেছেনও ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে ম্যাচগুলোর একটি। তাই বার্সেলোনার এই রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বদলে কেনা দুই খেলোয়াড়কে আপাতত ফ্লপ ট্রান্সফারই বলা যায়।

ভালভার্দের স্কোয়াডে আরেক হতাশার নাম ম্যালকম। রোমার হাত থেকে প্রায় ছিনিয়ে আনা হয়েছিলো এ ব্রাজিলিয়ানকে। অথচ ম্যালকমও মৌসুমের অধিকাংশ সময়ে কাটিয়েছেন বেঞ্চে বসে। বার্সেলোনা যখন উইং হতাশায় ভুগছে তখন তাকে ব্যবহার করা হয়নি। অথচ অল্প যে সময়ে ম্যালকম সুযোগ পেয়েছেন তাতে তার নির্ভরযোগ্য পারফর্মেন্স ছিলো।

জর্ডি আলবা ও লুইস সুয়ারেজের বিকল্প

কোনো পজিশনে মাত্র একজন খেলোয়াড় নিয়ে লা লিগার মতো দীর্ঘ মৌসুম খেলা সম্ভব না। একজন খেলোয়াড় কোনো বিরতি ছাড়া টানা ভালো পারফর্মেন্সও দিতে পারেন না। এজন্য যেকোনো ক্লাব বিকল্প খেলোয়াড় তৈরি না রেখে মৌসুম শুরু করে না। অথচ বার্সেলোনা এবার এই ঝুঁকি নিয়েছে। জর্ডি আলবার বিকল্প খেলোয়াড় লুকাস দিনিয়ে বার্সাকে বিদায় জানালেও পরবর্তীতে বার্সেলোনা আর বিকল্প খেলোয়াড় কেনেনি। ভালভার্দেও কোনো উপায় না দেখে প্রতি ম্যাচে আলবাকে ব্যবহার করে গেছেন।

মৌসুমজুড়ে জর্ডি আলবা টানা খেলে গেছেন। লা লিগা থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যাচ অথবা স্পেনের হয়ে ম্যাচগুলোতে তার উপস্থিতি ছিলো। টানা খেলার ধকল বোঝা গেছে মৌসুমের শেষের ম্যাচগুলোতে। চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় লেগে লিভারপুলের দুই গোলের পেছনে তার প্রত্যক্ষ অবদান ছিলো। এমনকি তার শিশুসুলভ ভুলের সুযোগ নিয়ে কোপা ডেল রে এর ফাইনালে গোল করেছে ভ্যালেন্সিয়া।

সময় হয়ে গেছে লুইস সুয়ারেজের বিকল্প খোজার; Image Source : Getty Image

একই কথা লুইস সুয়ারেজের জন্য। একসময়ের সেই গোলক্ষুধা দীর্ঘদিন ধরে নেই তার। এ মৌসুমে ছিলেন আরও বেশি নিষ্প্রভ। ফর্ম ও থাকেনি ধারাবাহিকভাবে। এরপরও তাকে মাঠে নামতে হয়েছে নিয়মিত। কারণ দলে কোনো বদলি স্ট্রাইকার নেই। পাকো আলকাসেরকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। রাখা হয়নি মুনির এল হাদ্দাদিকেও। তাই ভালো ফর্ম অথবা বাজে, লুইস সুয়ারেজকে নামতে হয়েছে প্রতি ম্যাচেই।

পরিকল্পনার সবকিছু যখন মেসি

লিওনেল মেসির মতো একজন খেলোয়াড় যেকোনো দলের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তির ব্যাপার। কিন্তু পেপ গার্দিওয়ালার আমলের পর থেকে প্রত্যেক কোচ তাকে মুখ্য চরিত্র বানিয়ে ফেলেছে। সবাই মেসির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল। যখন মেসি গোল করেন, দল সহজে জিতে যায়, আবার মেসি নিষ্প্রভ থাকলে জয় ধরা দেয় না। মেসির উপর এই অতিরিক্ত আস্থা থেকে বার্সেলোনা বের হতে পারেনি দীর্ঘদিন ধরে। গোল করে ম্যাচ বের করে দেয়ার দায়িত্ব অবশ্যই দলের আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়দের। কিন্তু দেম্বেলে, কৌতিনহো বা সুয়ারেজ কেউই মেসির ফর্মহীনতার সময়ে বার্সাকে জয় এনে দিতে পারেননি।

চ্যাম্পিয়নস লিগে সেমি-ফাইনালের প্রথম ম্যাচে কৌতিনহো বা সুয়ারেজ কেউই আহামরি খেলেননি, শুধু মেসি ছিলেন উল্টো। তিনিই ২ গোল করে প্রথম লেগে জিতিয়েছিলেন। কিন্তু অ্যানফিল্ডে মেসিকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিলো লিভারপুল রক্ষণ। মেসিকে শট নেবার সুযোগই তারা দেয়নি। মেসি নিষ্প্রভ থাকার সাথেই থমকে গিয়েছিলো বার্সেলোনার আক্রমণভাগ। পরবর্তীতে গোল হজম করার পর পুরো বার্সেলোনা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।

এক মেসি সবসময় জয় এনে দেবে না; Image Source : Marca

বার্সেলোনার ভুলগুলোর শুরু তাদের বোর্ড থেকেই। নেইমার থাকাকালীন সময়ে তিনি অন্তত প্রতি মৌসুমে ২০ গোলের নিশ্চয়তা দিতেন। তার স্থানে নতুন খেলোয়াড়কে আরও ভেবে-চিন্তে আনা উচিত ছিলো। কৌতিনহোর পেছনে বিপুল অর্থ খরচ করা, কোনো প্রয়োজন ছাড়া বোয়েটেং ও মুরিয়োর মতো খেলোয়াড় লোনে আনার সিদ্ধান্তগুলোও সঠিক ছিলো না।

পাশাপাশি কাতালানদের কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে, যিনি বিগত বছরের ভুল থেকেও কোনো শিক্ষা নেননি। ভালভার্দে বার্সেলোনার জন্য যোগ্য কোচ নন, পরিষ্কারভাবে বলা যায়- তার ফুটবল দর্শন এই দলটির সাথে যায় না। আগামী মৌসুমে তিনি থাকুন বা না থাকুন, মানসিকভাবে যেমন বার্সেলোনাকে আর দৃঢ় হতে হবে, তেমনি কিছু খেলোয়াড়কে তাদের খেলার ধরনের প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। আর পরিবর্তন তো আবশ্যক।

This article is in Bangla language. It is about and Barcelona's recent flop performance in UCL and Copa Del Rey. References are hyperlinked inside the article.

Feature Image: Getty Image

Related Articles